মালমো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় দেখছি এখানে অনেক পাকিস্থানী, এবং আফ্রিকার ছাত্র পড়লেখা করে, তবে ইন্ডিয়ান ছাত্র নেই বললেই চলে।তাই এশিয়ান হওয়ার কারনে পাকিস্থানি ছাত্রদের সাথে দেখা হলে সালাম বিনিময় হয় প্রায়ই।এরপর সুইডিশ ভাষা শিক্ষা ক্লাসে আরো ৩-৪ জন পাকিস্থানী ছাত্রের সাথে পরিচয়।একদিন আমাদের সুইডিশ কোর্সের শিক্ষিকা আনা বোহমেন এর বাসায় আমাদের দাওয়াত ছিলো এবং আমরা সবাই সেখানে মিলিতো হলাম। আমারা ৩জন বাংলাদেশীর উপর দায়িত্ব ছিল বিরিয়ানী রান্না করার।সেখানে আরো বিভিন্ন দেশের ছাত্ররা ছিল। তাই তাদের সামনে বাংলাদেশের নাম রাখতে হবে এই টেনশন মাথায় নিয়ে বিরিয়ানি রান্না করলাম (যতটুকু সম্ভব ঝাল কম দিয়ে)।আরো বিভিন্ন আইটেমের সাথে বিরিয়ানী ও পেশ করা হল সবার সামনে।আল্লাহর রহমতে সবাই রান্নার বেশ প্রশংসা করল।বিশেষ করে পাকিস্থানি ছাত্ররা। খাওয়াদাওয়া চলছে এরি একপর্যায়ে বিভিন্ন কথার মাঝেই আমরা ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আমাদের কিছু প্রোগ্রামের দাওয়াত দিচ্ছিলাম সবাইকে। হঠাৎ আমাদের এক সুইডিশ বন্ধু পাকিস্থানি ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করল তোমরা কি বাংলাদেশী ছাত্রদের এই প্রোগ্রামে অংশ নিবে? হঠাৎ এই প্রশ্নে ওরা আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে সপ্রতিভ ভাবে জবাব দেয়- "১৯৭১ সালের ঘটনার জন্য আমরা দুঃখিত। এটি ছিল আমাদের কিছু রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতালিপ্সার ফল।আর বাঙ্গালী ভাইদের অধিকার আদায়ের লড়াই। আমরা একে সম্মান করি।আমাদের আগের প্রজন্ম পূর্ব পাকিস্থানিদেরকে ছোট ভাই মনে করত অনেক ক্ষেত্রে সৎ ভাই ভাবত, তবে আমরা বাংলাদেশীদেরকে কখনও সেরকম মনে করিনা, ওরা আমাদের ভাই।ওরা স্বাধীন জাতি। অন্য স্বাধীন জাতিরা যে ভাবে আমাদের কাছে সম্মানিত আমাদের বাংলাদেশী ভাইরাও আমাদের কাছে সেরকম সম্মানিত।আমরা ওদের স্বাধীনতাকে সম্মান করি।"
সেদিন গর্বে বুকটা ভরে গেছে, আজকে ওরা বিশ্বের অন্য ছাত্রদের সামনে আমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করল। আমাদের স্বাধীনতাকে সম্মান জানাল এ যে বিদেশের মাটিতে কত বড় সম্মান তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়।
আমার মনে হল সবাই আমাদের সম্মান করে শুধু আমরাই আমাদের সম্মান করতে জানিনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১০ সকাল ৭:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




