somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

মৎসকন্যা- সাগরের রহস্যময়তা

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সাগরে কাজ করি সাগরের রহস্যময়তা আমাকে সব সময় ডাকে

মৎসকন্যাদের জন্মবৃত্তান্ত


মৎসকন্যারা হল অর্ধমানবী অর্ধমাছ। বর্ননায় যাদের উপরের অর্ধেক হল অপরুপ যুবতী। পৃথবীর বিভিন্ন দেশের উপকথায় মৎসকন্যা বর্ননা পাওয়া যায়, যার মধ্যে দূরপ্রাচ্য, ইউরোপ এশিয়া সবাই আছে। মৎসকন্যাদের নিয়ে প্রথম বর্ননা পাওয়া যায় প্রাচীন অ্যাসিরিয়াতে ১০০০ খিঃ পূঃ। এখানে বর্ননা থেকে জানা যায় দেবী অ্যাটারগাটিস ভূল করে যখন তার মানব প্রেমিক কে হত্যা করে ফেলেন লজ্জায় দুঃখে পানিতে পানি ঝাপঁ দেন আত্নহত্যা করার জন্য। কিন্তু দেবী অ্যাটারগাটিস এত সুন্দরী ছিলেন যে সমুদ্র দেবতা পসাইডন তাকে মৃত্যর বাজ্যে যেতে না দিয়ে অর্ধমানবী অর্ধমাছ রুপে নব জীবন দান করেন। একই বর্ননা পাওয়া যায় ব্যাবিলনীয় উপকথায় দেবী “ইয়া” কে নিয়ে। গ্রীক উপকথায় এই অ্যাটারগাটিসই আবার “আফ্রোদিতি” নামে পরিচিত।


সবগুলো উপকথা পড়ার পরে জানা যায় মৎসকন্যারা সংগীতে ভীষন পারদর্শী সুরের মায়াজাল সৃষ্টির মাধ্যমে তারা জাহাজের যাত্রীদের মৃত্যুর দিকে আকর্ষণ করতো। তাদের গানের গলা এতই চমৎকার ছিল যে সেই গান নাবিকদের কানে পৌঁছালে নাবিকরা সেই দ্বীপের দিকেই ধাবমান হতো। ফলে সেই জাহাজ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে সাগরে পতিত হত সবাই। অ্যাটারগাটিস এর মানব প্রেমের অনুকরনে মৎসকন্যারা এরপর ডুবে যাওয়া নাবিক দের তাদের প্রেম এর আহবানে সাড়া দেবার জন্য সাগরের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে তাদের কাছে পৌছে যেত, হায় তারা বুজত না মানব কূল যে পানির নীচে বেচে থাকতে পারে না। ফলস্বরুপ যখন মৎসকন্যারা পানির নীচে দিয়ে ডুবন্ত নাবিকদের উদ্বার করে তাদের সাইরেন দ্বীপে নিয়ে আসত ততক্ষনে তারা মৃত্যু রাজ্যে পৌছে যেত।


কোন কোন উপকথায় এই মৎসকন্যারা মানুষদের প্রতি ভীষন বিদ্বেষপূর্ন আবার কোথাও কোথাও কোথাও প্রেমময়। তবে যাই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত নাবিকরা মারা যেত। হায়! ভালবাসলেও মৃত্যূ না বাসলেও মৃ্ত্যু।


মৎসকন্যাদের মৃত্যু

এখন দেখি রুপকথার এই মৎসকন্যাদের কি ভাবে মৃত্যু হয়ে ছিল।আর্গোনটরা ( সোনালী ভেড়ার চামড়া সংগ্রহ অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের দল ) একবার সাইরেনদের দ্বীপ অতিক্রম করতে যাচ্ছিল। তাদের পরিণতির কথা ভেবে দেবী আফ্রোদিতি অর্ফিউসকে



সাইরেনদের দ্বীপ অতিক্রমনের সময় তাঁর বীনায় মোহময় সুর সৃষ্টি করতে নির্দেশ দেন। অর্ফিউস ছিল সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব সুর স্রষ্টা।
দেবতাদের পর মরণশীলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম সুরের জাদুকর এই অর্ফিউস। সে এক বিশেষ ধরনের বাশি বাজাত, যেটার নাম ছিল লাইর। দেবতা হারমিসের তৈরি এ বাশি পূর্ণতা পেয়েছে অর্ফিউসের কাছে। অর্ফিউস ছিল দেবতা অ্যাপোলোর পুত্র। অর্ফিউসের মা ছিল ক্যালিউপ। অর্ফিউসের বাস ছিল পম্পেলিয়ায় , যেখানে সে তার শৈশব মা এবং বোনদের সাথে কাটিয়েছে। দেবতা অ্যাপোলো অর্ফিউসকে খুব ভালবাসতেন এবং তিনিই প্রথম অর্ফিউসকে লাইর বাজানো শেখান।
জেসন ছিল আর্গোনট দলের নেতা। জেসনের দল যখন সাইরেনিয়া দ্বীপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো , তখন অর্ফিউস তার বাঁশি বাজানো শুরু করেন । তার সুর সাইরেনদের সুরকে ছাপিয়ে গেলো । নাবিকরা নিরাপদে দ্বীপ পার হতে পারলো ।কিন্তু একজন আর্গোনট জাহাজের পাল ওড়ানোর কাজে ব্যস্ত থাকায় তার কানে অর্ফিউসের সুর প্রবেশে ব্যর্থ হয়। ফলে সে উন্মাদের মতো জাহাজ থেকে লাফিয়ে সাগরে পড়ে যায়। আফ্রোদিতি অবশ্য পরে তাকেও ঊদ্ধার করেন।

ট্রয়যুদ্ধ শেষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পথে মহাসমুদ্র দেবতা পোসিডনের ষড়যন্ত্রে দিকভ্রান্ত অডিসিউসও সাইরেনদের কবলে পড়েন। ফলে তিনি সাইরেনদের দ্বীপ অতিক্রম করার আগে প্রত্যেক নাবিকের কান মোম দিয়ে বন্ধ করে দেন এবং নিজেকে মাস্তুলের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। ফলে সাইরেনরা প্রথমবারের মতো ব্যর্থ হয়। ব্যর্থতার লজ্জায় তারা সমুদ্রে ডুবে আত্মহত্যা করে। মৃত্যুর পর সাইরেনরা সমুদ্রশিলায় পরিণত হয়। এভাবেই গ্রীক পূরাণের একটি চমৎকার অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।


বর্তমানে দেখার দাবী

এ তো গেল রুপকথা এখন দেখি নিকট অতীতে কে কে এই মৎসকন্যাদের দেখেছিলেন বলে দাবী করেছেন?
কলোম্বাস, হ্যা ক্রিস্টোফার কলম্বাস এর লগ বুক থেকে জানা যায় তিনি যখন ক্যারিবিয়ান দ্বীপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন নাকি এক অর্ধমানবী অর্ধমাছ কে সমুদ্রবেলায় বসে থাকতে দেখেছেন।


১৯৪৭ সালে ৮০ বছর বয়স্ক একজন জেলে নাকি উপকুল থেকে ২০ গজ দূরে এক মৎসকন্যা দেখেছিলেন যে নাকি গলদা চিংড়ির দাড়া দিয়ে চুল আচড়াচ্ছিলো, কিন্ত যখনই ওই মৎসকন্যা বুজতে পারল কেউ তাকে দেখছে ওমনি টুপ করে পানির মধ্যে তলিয়ে যায়।

১৮৫৭ সালের জুন ৪, ব্রিটিশ শিপিং গ্যাজেট এ লেখা আছে এক স্কটিশ নাবিক নাকি সাগরে মধ্যে ঢেউ এর উপর এক কিশোরী কে বসে থাকতে দেখেছে।

১৮৩৩, আইল অভ ইয়েল, ছয়জন জেলে নাকি এক মেয়ে কে তাদের জালে আটকায়, তিনফুট লম্বা ওই মেয়ে নাকি জেলেদের নৌকায় উঠার পর তিন ঘন্টা ছিল, সে নাকি জেলেদের সাথে কোন প্রতিরোধ এ যায়নি। শুধু আস্তে আস্তে ফোপাচ্ছিল। ওই মেয়ের নাকি কোন মাছের মত লেজ ছিল না। কিন্ত তার দেহে সামান্য আঁশ ছিল। জেলেরা মারাত্নক ভয় পেয়ে যায় নৌকা আর সাগরের মধ্যে তারা আর প্রতিবন্ধকাতা তৈরি করেনা ইশারায় মেয়েটিকে চলে যেতে বলে। কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি হেনে মেয়েটি নিখুত এক ডাইভ দিয়ে সাগরে চলে যায়। সাগরে নেমে কিছুক্ষন পর আবার ঊঠে ঢেউ এর উপর ভেসে ভেসে তাদের কৃতজ্ঞতা জানায় এবং এক সময় সাগরে হারিয়ে যায়। এ গল্প এডিনবর্গ ইউনিভার্সিটির ন্যাচারাল হিষ্ট্রির প্রফেসর ম্যাক্লিহানকে শুনান এডমন্ডসন নামে এক জাহাজের কাপ্তান।

১৮১১, অক্টোবর ২৯ ক্যাম্পবেল টাউন, সাগর কুলে ছোট্ট এক স্কটিশ গ্রাম জন মেসিইক ছুটতে ছুটতে শেরিফ কে এসে বলেন এইমাত্র সে সমুদ্রতটে এক মৎসকন্য বসে থাকতে দেখেছে। শেরিফ তাকে নিয়ে যায় রেভারেন্ড জর্জ রবার্টসন, রেভারেন্ড নরম্যান ম্যাক্লদ, এবং রেভারেন্ড জেমস ম্যাক্সয়েল এর কাছে, জন মেসিইক হলফ করে বলে রেভারেন্ডদের কাছে যা সে শেরিফদের কাছে বলছে। বিজ্ঞ রেভারেন্ড মন্ডলী স্বীকার করে নেয় জন মেসিইক সত্যি বলছেন।

২০০৬ সালে সুনামির পর মালায়শিয়া সাবা উপকূলে একটি মৃত মৎস্যকন্যা ধরা পরে। পরে জানা যায় জুয়ান ক্যাবান নামে এক ফটোগ্রাফার ক্যামেরার কারসাজিতে এটা করে।


হান্না নামে এক অভিনেত্রী সারা দুনিয়ায় সমুদ্র উপকুলে মৎসকন্যা সেজে দুনিয়ার লাখো পুরুষে হ্রিদয় হরন করছেন



ছোটবেলার হ্যান্স ক্রিস্চিয়ান এন্ডারসনের রুপকথার গল্পে পড়া মৎসকন্যার কথা মনে পড়ে? রাজকুমার সহজ সরল মৎসকন্যার ভালবাসার সাথে প্রতারনা করে অন্য এক রাজকুমারীকে বিয়ে করে। মৎসকন্যার কষ্ট এখন ও আমাকে কাদায়।



সুত্রঃ
Click This Link
Click This Link


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:৪৯
৫৩টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×