
এক
পয়ষট্টি বছরের বিপত্নীক সোলায়মান সাহেব গত কয়েক দিন ধরে বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথ্যা নিয়ে। এই মহামারীতে কেউ কাছে আসছে না, দুই মেয়েই বিদেশে স্বামী সন্তান সহ, তারাও ভীষন উদ্বিগ্ন, কিন্তু অত দূর থেকে কিছুই করার নেই, মেয়েরা নিজেরাও আছে বিরাট শঙ্কায়। এত উন্নত দেশ মানুষ মারা যাচ্ছে টপ টপ করে। সোলায়মান সাহেব অনেকটা কোমায় চলে গেছেন, অসহায় মৃত্যুকে বরন করার জন্য প্রস্ততি নিয়ে ফেলছেন। এমন এক সময় –
“স্যার, আস সালামুয়ালাইকুম, আমি আশরাফুল ইসলাম, আপনাকে ইউনিভার্সেল হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য এসেছি। কোন চিন্তা করবেন না। আপনার সুচিকিৎসা হবে” সোলায়মান সাহেবের বিছানার পাশ দিয়ে কেউ একজন বলে উঠল।
সোলায়মান সাহেব বুঝে উঠতে পারছেন না, আসলেই আশরাফুল নামক কেউ কি এসেছে, নাকি জ্বরের ঘোরে অলীক কল্পনা, এর থেকেও খারাপ হল তিনি কি মৃত্যুর অপর পাশে চলে গিয়ে এই সব কল্পনা করছেন কিনা? “তুমি আমার বাসায় আসলে কিভাবে?” কোন রকম উচ্চারন করলেন।
“স্যার আমি রহমান গ্রুপের মালিক সাব্বির রহমান স্যারের নির্দেশে আপনাকে নিতে এসেছি, বাসার দারোয়ানের কাছ থেকে চাবি নিয়ে বাসায় ঢুকছি, এগুলো নিয়ে আপনি ভাববেন না, আপনার চিকিৎসা দরকার, আমি আপনার চিকিৎসার জন্য রহমান গ্রুপের হাসপাতাল ইউনিভার্সালে নিয়ে যাব” পরম মমতায় আশরাফুল নামক ছেলেটি বলল।
“যা ভালো মনে কর, তাই কর বাবা” সোলায়মান সাহেব নিশ্চিন্তে জ্ঞান হারাবার আগে বুজলেন এখনো তিনি জীবিত এবং কোন এক আশরাফুল নামক ছেলে তাকে ইউনিভার্সেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে এসেছে। আচ্ছা ইউনিভার্সেল হাসপাতালটা যেন কোথায়………
দুই
মহামারীতে সরকারী ত্রান দেবার জন্য, সরকার থেকে যে চাল ডাল দেয়া হয়েছে, স্থানীয় জন প্রতিনিধি মালেক উকিল তার প্রায় পুরোটাই নিজস্ব গোডাউনে ঢুকিয়ে রেখেছে পরে কালো বাজারে বিক্রি করবেন। মনে মনে হিসাব করছেন কত লাখ টাকা বিনা শ্রমে পাচ্ছেন –
“স্যার, একটু আলাপ ছিল” মালেক সাহেবের দিবা স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল সামনে দাঁড়ানো যুবককে দেখে।
“এই ছেলে তুমি কে? এখানে কি চাও? কিভাবে ঢুকলে” চিৎকার করে উঠলেন মালেক সাহেব।
“স্যার আমার নাম আশরাফুল, আমি রহমান গ্রুপের সাব্বির স্যারের নির্দেশে এসেছি” যুবকটি নিজের পরিচয় দেয়।
মালেক সাহেব এই রহমান গ্রুপের সাব্বির স্যারকে কোন ভাবেই স্মরন করতে পারলেন না, “কি চাও তুমি?” অনেকটা আতংকিত হয়েই জিজ্ঞাস করলেন।
“স্যার চাওয়ার বেশী কিছু নাই আপনার ব্যাক্তিগত গোডাউনে যে চালের আর ডালের বস্তাগুলো আছে তার সব ছবি এই যে আমার হাতে, আপনি যদি আগামী আধা ঘন্টায় এই চাল যাদের প্রাপ্য তাদের না দিয়ে দেন তবে সব ছবি বিভিন্ন নিউজ মিডিয়ায় এবং স্যোসাল মিডিয়ায় চলে যাবে, সেটা কি ঠিক হবে?” আশরাফুল খুব ধীরে ধীরে উচ্চারন করল।
মালেক উকিল চোখের সামনে অন্ধকার দেখা শুরু করলেন তার সামনের ছবি গুলো দেখে। এই ছবি তো এই ছেলের পাওয়ার কথা না, এমন কি একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনি চালের বস্তা তদারকি করে নিজের গোডাউনে ডুকাচ্ছেন। “তুমি এই ছবি কোথায় পেলে?” অনেকটা চি চি করে জিজ্ঞাস করলেন।
“স্যার আপনার হাতে আর সাতাশ মিনিট উনিশ সেকেন্ড সময় আছে এরপর এই ছবি সব জায়গায় প্রচারিত হবে। আমি কোথায় পেয়েছি সেটা বড় ব্যাপার না” আত্মবিশ্বাসের সাথে জবাব আশরাফুল।
এত সহজে হার মানলে আজকের মালেক উকিল হতে পারতেন না, হাতের কাছে বড় সড়কিটা তুলে আশরাফুলের পেটের মাঝে ঢুকিয়ে দিলেন মালেক সাহেব। সড়কিটা শুধু টং করে একটা শব্দ তুলল এবং মালেক সাহেব নিজের চোখে যা দেখলেন তাতে নিজের ওপর সমস্ত নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ওই অবস্থায় পরবর্তী সাতাশ মিনিট উনিশ সেকন্ড বসে ছিলেন এবং যথারীতি ছবি গুলো সব মিডিয়ায় প্রকাশিত হয় এবং মালেক উকিল কে পুলিশ গ্রেফতার করে তার গুদাম থেকে দুই হাজার বস্তা ত্রানের সামগ্রী উদ্ধার করে। মালেক উকিল তখন মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলছে।
তিন
কাশেম ড্রাইভার, বাস চালাত। সর্দি কাশি আর জ্বরে মারা গেছে। কেউ এগিয়ে আসছে না লাশ দাফন করতে। কাশেম ড্রাইভারের বউ তার তিন বছরের ছেলেটাকে নিয়ে ঘরের এক কোনে বসে আছে আর কিছুক্ষন পর পর এত দিনের জীবন সঙ্গীর নিথর দেহটা দেখছে।
আধা বস্তি টাইপের ঘরের দরজা ঠেলে টুপি মাথায় এক যুবক ঘরে ঢুকল, “বোন আপনি ভাববেন না, আমরা এসেছি আপনার স্বামীকে দাফন করার জন্য।” টুপি মাথার যুবক বলে উঠল।
“আপনি কেডা?” কাদতে কাদতে আচলে মুখ লুকাতে লুকাতে কাশেম ড্রাইভারের বউ জিজ্ঞাস করল।
“আমি আশরাফুল, বাইরে আরো কয়েকজন আছে, আমাদের কে রহমান গ্রুপের মালিক সাব্বির স্যার পাঠিয়েছেন আপনার স্বামীকে দাফন করার জন্য।” যুবকটি নিজের পরিচয় দেয়
কাশেম ড্রাইভারের বউ কিছুই বুঝতে পারছে না কি বলবে, দেখতে দেখতে ওই যুবকের মত আরো তিন জন যুবক ঘরের মধ্যে একটা খাটিয়া নিয়ে ঢুকে কাশেম ড্রাইভারের লাশ তাতে তুলে দিয়ে কাধে নিয়ে বের হয়ে গেল।
চার

রহমান গ্রুপ এর ইনিষ্টিটিউট অভ সায়েন্টিফিক ডিভিশানের বোর্ড মিটিং চলছে সেখানে সাব্বির রহমান ছাড়া আরো পাঁচ জন উপস্থিত। এদের চার জন পরিচালক একজন হেড অভ রোবোটিক ডিভিশান মানব ভট্টাচার্য্য।
“মানব বাবু রিপোর্ট দিন” গম গম করে উঠল সাব্বির রহমানের কন্ঠ।
“স্যার, আশরাফুল-৫ সিরিজের তৃতীয় প্রজন্মের রোবট অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে তাদের কাজ করছে, তবে তারপরো কিছু দুর্বলতা চোখে পড়ছে, ত্রান চোর মালেক উকিল যখন তার কাছে পাঠান আশরাফুলকে আঘাত করে তখন আশরাফুল সেটা প্রতিহত করেনি, অনেকটা চোরের মত পালিয়ে এসেছে। রোবোটিক্সের থার্ড নিয়ম অনুযায়ী এরা কাউকে পাল্টা আঘাত করতে পারে না। অত্যান্ত ধারালো কিছুর আঘাতে ওই আশরাফুল যার সিরিয়াল নাম্বার SRA-19 এর পেটের কৃত্রিম চামড়ার আবরন উঠে যায় যাতে তার ভেতরের শক্ত আবরন উন্মুক্ত হয়ে কাশেম উকিলের দৃষ্টি গোচর হয় এবং সে তা মানসিক ভাবে সহ্য না করতে পেরে মানসিক ভারসম্যহীনতার শিকার হয়।” এক নিঃশ্বাসে বলে গেল হেড অভ রোবোটিক্স মানব ভট্টাচার্য্য।
“সেক্ষেত্রে প্রতিটা মডেলকে নতুন করে প্রোগ্রামিং করুন রোবোটিক্সের চতুর্থ নিয়ম ইন পুট করে, আর চতুর্থ নিয়মটা তো জানেন নিশ্চয়ই কোথাও আক্রান্ত হলে সে যেন প্রতিরক্ষার জন্য যেটুকু দরকার ততটুকু শক্তি খাটাতে সমর্থ হয়।” আস্তে আস্তে বলে গেলেন সাব্বির রহমান সাহেব নিজের কাচা পাকা চুলে হাত চালাতে চালাতে। “ এবং এই মুহুর্তে রোবোটিক্সের শেষ এবং পঞ্চম নিয়ম মানে প্রতি আক্রমনের প্রোগ্রামিংটা চালু করতে চাচ্ছি না, তবে ভবিষ্যতে অবস্থা বুঝে ব্যাবস্থা, আর প্রতিটা জায়গায় আশরাফুলরা আমার পরিচয় দিয়ে আসছে, আমি চাই না, এই মুহুর্তে কেউ জানুক প্রজেক্ট আশরাফুল চালু হয়েছে আমাদের দ্ধারা। তাই আমাদের পরিচয় যেন প্রকাশ না পায়।”
“পাশাপাশি আমি আশরাফুলদের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের আরো উন্নতি চাই যেন আরো মানবিকভাবে এরা মানুষের বিকল্প হিসাবে কাজ করে, শুধু মাত্র যন্ত্রর মত কাজ করলে চলবে না, অচিরেই পৃথিবী থেকে মানবিকতা উঠে যাবে আমি ওই মানবিকতার একচেটিয়া বাজারটা ধরতে চাই মানব বাবু, আমি কি আপনাকে বুঝিয়ে বলতে পেরেছি?” সাব্বির সাহেব সামনে ঝুকে এলেন নিজের কথার ওজন বোঝানোর জন্য।
মানব বাবু ভাবছেন এই মানুষটার অগোচরে কি কিছুই থাকে না? নিশ্চয়ই প্রতিটা আশরাফুলের ডিটেইলস এ্যাকশান রিপোর্ট পড়ছেন। তবে এগুলো খুব বড় কোন ব্যাপার না, সামনে হাতে অনেক কাজ। আশরাফুলদের আরো মানবিক বানাতে হবে, এবং মানবিকতার বাজারটা ধরতে হবে।
(একটি গল্প লেখার অপচেষ্টা মাত্র)
অতীতের অপচেষ্টাঃ একটি অলৌকিক প্রেম কাহিনী
জাতিস্মর
ভাই
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




