somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

রহস্যময় খিজির (আঃ) কে নিয়ে কোরান এবং হাদীসের আলোকে আলোকপাত

২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রথমেই আসুন দেখি পবিত্র কোরান শরীফে খিযির (আঃ) (আমি এখানে তার নাম উল্লেখ্য করছি বোঝার স্বার্থে, লেখার সাথে থাকলে আপনি নিজেই বুজতে পারবেন আসল ঘটনা) কে নিয়ে কোন সুরায় উল্লেখ্য আছে? সুরা আল কাহফে একজন জ্ঞানী ব্যাক্তির কথা উল্লেখ্য হয়েছে কিন্তু কোন নাম বলা হয়নি, চলুন দেখি “এরপর তারা সাক্ষাৎ পেল আমাদের বান্দাদের মধ্যে একজনের, যাকে আমরা আমাদের কাছ থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম ও আমাদের কাছ থেকে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান (সুরা আল কাহফ, আয়াত ৬৫)। তার মানে নাম বিহীন একজন জ্ঞানী ব্যাক্তির উল্লেখ্য আছে এই সুরায়, তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে কেন ইনাকে খিজির বা খাদির (আঃ) নামে অভিহিত করা হচ্ছে?



এখানে চলে আসে হাদীসের প্রসঙ্গ। বুখারীর হাদীসে তার নাম “খাদির” উল্লেখ করা হয়েছে। খাদির অর্থ “সবুজ শ্যামল” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নামকরণের কারণ প্রসঙ্গে বলেন যে, তিনি যেখানে বসতেন, সেখানেই ঘাস উৎপন্ন হয়ে যেত, মাটি যেরূপই হোক না কেন। [বুখারীঃ ৩৪০২]। তার মানে আমরা সুরা আল কাহফে উল্লেখিত একজন জ্ঞানী ব্যাক্তির সন্ধান পাই এবং সহীহ হাদীস দ্ধারা তার একটি নাম পাই। এ পর্যায়ে আমি অনুরোধ করব আপনাকে সুরা আল কাহফ পড়ার জন্য (সুরা কাহফের লিঙ্ক বাংলা অনুবাদ সহ সূরাঃ আল-কাহফ )। সুরা আল কাহফের ৬৫-৮২ আয়াত পর্যন্ত সুস্পষ্ট ভাবে মুসা (আঃ) এর সাথে এই জ্ঞানী ব্যাক্তির (খিজির আঃ) এর কিছু কর্মকান্ড বর্ননা আছে। চলুন সহজ ভাবে তা জেনে নেই।

একদিন হযরত মুসা (আঃ) বনী ইসরাইলীদের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় বক্তব্য দিচ্ছিলেন, এমন সময় একজন তাকে জিজ্ঞাস করেন “এ জমানায় সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম কে?” জবাবে মুসা (আঃ) বলেন “আল্লাহপাক আমাকেই সর্বাপেক্ষা অধিক ইলম (জ্ঞান) দান করছেন।” আল্লাহ পাক এই জবাব পছন্দ করলেন না, সাথে সাথে আল্লাহ পাক বললেন, “ তোমার তো উচিত ছিল উক্ত প্রশ্নের উত্তর আল্লাহর জ্ঞানের ওপর সোপর্দ করে দিয়ে বলতে, আল্লাহ পাকই অধিক অবগত আছে।” অতঃপর তার ওপর ওহী নাযিল করলেন, দু’ সাগরের সংযোগ স্থলে আমার এক বান্দা আছে, সে কোন কোন বিষয়ে তোমার থেকে অধিক জ্ঞানী। হযরত মুসা (আঃ) জিজ্ঞাস করলেন, “হে পরওয়ারদিগার, আপনার সে বান্দার নিকট কোন পথে যাওয়া যাবে?”

আল্লাহপাক বললেন তোমার থলের ভেতর একটা ভাজা (রান্না করা) মাছ রাখ, যে স্থানে ওই মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানেই আমার ওই বান্দাকে পাবে। যথাবিহিত, হযরত মুসা (আঃ) তার খলিফা ইউশা ইবনে নুন ( এই নামটাও কিন্তু কোরান শরীফে নাই, তবে তাফসীর কারকদের মতে ইনিই হবেন) কে নিয়ে সমুদ্র অভিমুখে যাত্রা করে, এক জায়গায় গিয়ে হযরত মুসা (আঃ) ঘুমিয়ে পড়লে মাছটিতে প্রানের সঞ্চার হয় এবং লাফ দিয়ে সাগরে পরে সাতরে চলতে থাকে যা ইউশা (আঃ) দেখেন কারন তখন তিনি জাগ্রত ছিলেন। (আমি এখানে এই ঘটনা কিছুটা সংক্ষিপ্ত করে লিখব)। এখানে কিছু ঘটনার পর (যা কোরান শরীফে লিপিবদ্ধ আছে তারা মাছটিকে সাগরের মাঝে অনুসরন করেন, কারন মাছটি যে পথে যাচ্ছিল সে পথের পানি জমাট বেধে শক্ত হয়ে সরু রাস্তার মত হয়ে যাচ্ছিল।

তারা সে রাস্তা অনুসরন দুই সমুদ্রের মিলন স্থালে পৌছালেন এবং সেখানে একজন মানুষ কে দেখলেন বসে থাকতে। ইনিই খিযির (আঃ)। হযরত মুসা (আঃ) তাকে সালাম দিলেন। এবং বললেন তার কাছে ইলম (জ্ঞান) শিখতে এসেছেন যা আল্লাহ পাক শুধু তাকেই দিয়েছেন। খিযির (আঃ) তাকে বললেন, “আপনি আমার আমার সাথে থেকে ধৈর্য্য রাখতে পারবেন না। উত্তরে মুসা (আঃ) বললেন, “আপনি আমাকে ধৈর্য্য শীল পাবেন”। জবাবে খিযির (আঃ) বললেন “আসল তথ্য যখন আপনার জানা নেই, তখন ধৈর্য্য ধরবেনই বা কেমন করে? উদ্দেশ্য এই যে, আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি, তা আপনার জ্ঞান থেকে ভিন্ন ধরণের। তাই আমার কাজকর্ম আপনার কাছে আপত্তিকর ঠেকবে। আসল তথ্য আপনাকে না বলা পর্যন্ত আপনি নিজের কর্তব্যের খাতিরে আপত্তি করবেন।” জবাবে মুসা (আঃ) বললেন তিনি অবশ্যই ধৈর্য্য ধারন করবেন, এবং খিযির (আঃ) কে কোন বিরক্ত করবেন না। খিযির (আঃ) তাকে শর্ত দিলেন তার কাজ মুসা (আঃ) এর কাছে যতই আজব লাগুক না কেন সে কোন প্রশ্ন করতে পারবেন না, পরে তিনি ঐ কাজের ব্যাখ্যা নিজেই মুসা (আঃ) কে দিবেন।

মুসা (আঃ) ওই শর্ত মেনে খিযির (আঃ) এর সাথে চললেন। কিছু দূর যাবার পর তাদের সামনে একটি বড় নদী পড়ল, খেয়া মাঝি খিযির (আঃ) কে চিনতেন তাই তার কাছ থেকে কোন ভাড়া নিল না। খিযির (আঃ) নৌকা দিয়ে অপর পাড়ে নেমেই নৌকার একটা তক্তা খুলে নৌকাটি ফুটো করে দিল। মুসা (আঃ) সাথে সাথে এর প্রতিবাদ করলেন, “বললেন নৌকার মাঝি তার সাথে এত ভালো ব্যাবহার করল আর সে কিনা নৌকাটি ফুটো করে দিলেন?” খিযির (আঃ) বললেন, “আমিতো পূর্বেই আপনাকে সাবধান করে দিয়েছিলাম যে আপনি আমার কার্য্য কলাপের ওপর ধৈর্য্য রাখতে পারবেন না।” মুসা (আঃ) সাথে সাথে তার প্রতিশ্রুতি স্বরন করে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে খিযির (আঃ) এর সাথে চলতে থাকলেন।

কিছুদুর চলার পর তারা দেখতে পেলেন কয়েকটি শিশু খেলা করছে, খিযির (আঃ) তার থেকে একটি শিশুকে হত্যা করলেন। মুসা (আঃ) ধৈর্য্য হারা হয়ে বললেন, “এ আপনি কি করলেন একটি নিস্পাপ শিশুকে হত্যা করলেন?” খিযির (আঃ), মুসা (আঃ)কে তার প্রতিশ্রুতির কথা স্বরন করিয়ে দিলে মুসা (আঃ) ক্ষমা চেয়ে তার সাথে আবার পথ চলতে শুরু করলেন। কিছুদুর চলার পর তারা একটি লোকালয়ে পৌছালে সেখানকার অধিবাসীদের কাছে মুসাফির হিসাবে সাহায্যের আবেদন জানালেন, সেখানকার লোকজন যথেষ্ট স্বচ্ছল হবার পরো তাদেরকে কোনরূপ সহায়তা দিল না, এমতাবস্থায় ওই লোকালয়ের একটি বাড়ীর দেয়াল ভেঙ্গে পরার উপক্রম দেখে খিজির (আঃ) স্বপ্রনোদিত হয়ে কোনরূপ পারিশ্রমিক ছাড়াই তা ঠিক করে দিলেন।

মুসা (আঃ) আর সহ্য করতে পারলেন না, তিনি খিযির (আঃ) কে বললেন, “যে লোকালয় আমাদের ক্ষুৎ পিপাসায় কাতর দেখেও সামান্য সহায়তা দিল না, আপনি কিনা সেই লোকালয়েরই একটি বাড়ির দেয়াল বিনা পারিশ্রমিকে ঠিক করে দিলেন?” খিযির (আঃ) বললেন, “আপনার আর আমার মাঝে আলাদা হবার সময় হয়ে এসেছে, কারন আমি যে কাজ গুলো করছি বা সামনে করব তা বোঝার জ্ঞান আল্লাহ পাক আপনাকে দেয় নি, তবে বিচ্ছেদের আগে আপনি আপনাকে বুজিয়ে দেব কেন আমি এই কাজ গুলো করছি।”

প্রথমতঃ নৌকাটির ব্যাপারে কথা এই যে, ওটা ছিল কতিপয় দরিদ্র ব্যক্তির। তারা সমুদ্রে কাজ করত; আমি ইচ্ছা করলাম নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে, কারণ আমাদের পেছন পেছন আসছিল এক অত্যাচারী রাজা, যে বল প্রয়োগে সকল নিখুঁত নৌকা ছিনিয়ে নিত। আমি যদি এটা না করতাম তবে পেছনের ওই রাজা নৌকাটি দখল করে এই দরিদ্র জেলেদের জীবিকার পথ বন্ধ করে দিত। দ্বিতীয়তঃ শিশুটির ব্যাপার এই যে, এর পিতা মাতা অতিশয় মুমিন বান্দা, বড় হয়ে শিশুটি জালিম এবং কুফরী করে তার মুমিন বাবা মা কে কষ্টে নিপাতিত করবে, তাই এই শিশুকে হত্যা করে আমি আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করলাম তাদের যেন এর পরিবর্তে আর একটি উত্তম শিশু দেয়। তৃতীয়তঃ আর ঐ প্রাচীরটি - ওটা ছিল নগরবাসী দুই পিতৃহীন কিশোরের, তাদের পিতা মাতা তাদের জন্য কিছু সম্পদ ওই প্রাচীরের নিচে রেখে যায়, আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা কিশোর দুজন বড় হয়ে ওই সম্পদের অধিকারী হোক, তাই আমি ভঙ্গুর প্রায় প্রাচীরটি আবার ঠিক করে দেই।

পবিত্র কোরানে সুরা আল কাহফে উক্ত জ্ঞানী ব্যাক্তি ( হাদীস দ্ধারা সমর্থিত নাম খিযির আঃ) সন্মন্ধ্যে এই পর্যন্তই আছে। এর বাইরে যা আছে তা বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত অথবা দুর্বল হাদীস যেগুলোর বিশ্বাস যোগ্যতা নেই। যেমন, অনেকেই বলেন খিযির (আঃ) নাকি এখনো জীবিত আছেন? তিনি নাকি “আবে হায়াত” পান করে কেয়ামত পর্যন্ত অমর হয়ে গেছেন, তার সাথে কোরানে বর্নিত যুলকারনাইন বাদশাহর সম্পর্ক নিয়েও অনেক ঘটনা বর্ননা আছে, কিন্তু এগুলোর কোন ভিত্তি নেই। তার জন্ম নিয়েও আছে নানা মত, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া র প্রথম খন্ডে এ নিয়ে বিষদ আলোচনা হয়েছে তবে তার কোনটাই কোরান হাদীস সমর্থিত না।

চলুন এই সব প্রচলিত কাহিনী কিছু জেনে নেই যেমন খিযির (আঃ) কি এখনো জীবিত আছেন? খাদির ‘আলাইহিস সালাম জীবিত আছেন, না ওফাত হয়ে গেছেঃ এ বিষয়ের সাথে কুরআনে বর্ণিত ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই। তাই কুরআন ও হাদীসে স্পষ্টতঃ এ সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এ ব্যাপারে সর্বকালেই আলেমদের বিভিন্নরূপ মতামত পরিদৃষ্ট হয়েছে। যাদের মতে তিনি জীবিত আছেন, তাদের প্রমাণ হচ্ছে একটি বর্ণনা। যাতে বলা হয়েছেঃ ‘যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওফাত হয়ে যায়, তখন সাদা-কালো দাড়িওয়ালা জনৈক ব্যক্তি আগমন করে এবং ভীড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে কান্নাকাটি করতে থাকে। এই আগন্তুক সাহাবায়ে কেরামের দিকে মুখ করে বলতে থাকেঃ আল্লাহর দরবারেই প্রত্যেক বিপদ থেকে সবর আছে, প্রত্যেক বিলুপ্ত বিষয়ের প্রতিদান আছে এবং তিনি প্রত্যেক ধ্বংসশীল বস্তুর স্থলাভিষিক্ত। তাই তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন কর এবং তাঁর কাছেই আগ্রহ প্রকাশ কর। কেননা, যে ব্যক্তি বিপদের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়, সে-ই প্রকৃত বঞ্চিত। আগন্তুক উপরোক্ত বাক্য বলে বিদায় হয়ে গেলে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেনঃ ইনি খিযির আলাইহিস সালাম। [মুস্তাদরাকঃ ৩/৫৯, ৬০] তবে বর্ণনাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। (পাচ খন্ডে মুস্তাদরাক হাদীস গ্রন্থ খানি লেখা হয় ১০০২-১০০৩ খ্রিঃ, হিজরী ৩৯৩ সালে হাকিম আল নিশাপুরী কর্তৃক যখন তার বয়স ৭২ বছর)

পক্ষান্তরে যারা খিযির ‘আলাইহিস সালাম-এর জীবদ্দশা অস্বীকার করে, তাদের বড় প্রমাণ হচ্ছে-



এক) আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ “আমরা আপনার আগেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি”। [সূরা আল-আম্বিয়ঃ ৩৪] সুতরাং খিযির আলাইহিস সালামও অনন্ত জীবন লাভ করতে পারেন না। তিনি নিশ্চয়ই অন্যান্য মানুষের মত মারা গেছেন।

দুই) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের শেষ দিকে এক রাতে আমাদেরকে নিয়ে এশার সালাত আদায় করেন। সালাত শেষে তিনি দাঁড়িয়ে যান এবং নিম্নোক্ত কথাগুলো বলেনঃ “তোমরা কি আজকের রাতটি লক্ষ্য করছ? এই রাত থেকে একশ’ বছর পর আজ যারা পৃথিবীতে আছে, তাদের কেউ জীবিত থাকবে না।’ [মুসলিমঃ ২৫৩৭]

তিন) অনুরূপভাবে, খিযির আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমলে জীবিত থাকলে তার কাছে উপস্থিত হয়ে ইসলামের সেবায় আত্মনিয়োগ করা তার জন্য অপরিহার্য ছিল। কেননা, হাদীসে বলা হয়েছে “মূসা জীবিত থাকলে আমার অনুসরণ করা ছাড়া তারও গত্যন্তর ছিল না।” [মুসনাদে আহমাদঃ ৩/৩৩৮] (কারণ, আমার আগমনের ফলে তার দ্বীন রহিত হয়ে গেছে।)

চার) বদরের প্রান্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ “যদি আপনি এ ক্ষুদ্র দলটিকে ধ্বংস করেন তবে যমীনের বুকে আপনার ইবাদতকারী কেউ থাকবে না”। [মুসলিমঃ ১৭৬৩] এতে বোঝা যাচ্ছে যে, খিযির নামক কেউ জীবিত নেই।

এ সব দলীল-প্রমাণ দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে, খিযির ‘আলাইহিস সালাম জীবিত নেই। সুতরাং যারাই তার সাথে সাক্ষাতের দাবী করবে, তারাই ভুলের উপর রয়েছে। এটাও অসম্ভব নয় যে, শয়তান তাদেরকে খিযিরের রূপ ধরে বিভ্রান্ত করছে। কারণ, শয়তানের পক্ষে খিযির (আঃ) রূপ ধারণ করা অসম্ভব নয়। [বিস্তারিত দেখুন, ইবন কাসীর প্রথম খন্ড; ইবন তাইমিয়্যাহ, মাজমু ফাতাওয়া ৪/৩৩৭]

এই বার চলুন খিজির (আঃ) কে নিয়ে কিছু প্রচলিত ভ্রান্ত ধারনা জানি, অনেকেই বলেন খিযির (আঃ) বাদশাহ যুলকারনাইন ( অনেকে এই বাদশাহকে সম্রাট আলেকজান্ডার হিসাবে চিহ্নিত করার প্রয়াস পান যার কোন ভিত্তি তো নাইই উপরন্ত এগুলো বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে) এর সিপাহীশালার মতান্তরে তার আত্মীয় ছিলেন এবং তার সাথে আবে হায়াত খুজতে গিয়ে তিনি “আবে হায়াত” পান করে অমর হয়েছেন। সুরা “আল কাহফে” জ্ঞানী ব্যাক্তি (খিযির (আঃ)) এর সাথে মুসা (আঃ) এর ঘটনা বর্ননা করার পরই পর বাদশাহ যুলকারনাইন এর ঘটনা বর্ননা হয়েছে তাই খুব সম্ভবতঃ এমন ভ্রান্ত ধারনা হয়েছে। কিন্তু কোরান শরীফ বা হাদীসের কোথাও এ ব্যাপারে কোন উল্লেখ্য না থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই এই মত গ্রহনযোগ্য হতে পারে না।



আবার অনেক জায়গায় লেখা আছে তিনি তিনি হযরত আদম (আঃ) এর বংশধর (দেখুন আল বিদায়া ওয়ান নিহানা প্রথম খন্ড পৃষ্টা ৭১৯) যাকে অত্যন্ত দুর্বল হাদীস বলা হয়েছে। এর থেকেও মজার ব্যাপার হল কোথাও কোথাও খিযির (আঃ) কে ফেরেশতাও বলা হয়েছে, যা শুধু অযৌক্তিক না নিতান্ত হাস্যকর বলেই প্রতীয়মান।

পবিত্র কোরান আর হাদীসের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট প্রতীয়মান যে খিযির (আঃ) হযরত মুসা (আঃ) এর সমসাময়িক একজন মরনশীল মানুষ মানুষ ছিলেন যাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কিছু বিশেষ ইলম (জ্ঞান) দিয়েছিলেন। কোরান মাজীদ এবং সহীহ হাদীসের বাইরে যাই থাকুক তা কোন মতেই প্রমান্য হতে পারে না। আল্লাহ সবাইকে সঠিকভাবে কোরান এবং হাদীস বোঝার তৌফিক দান করুক।।

খিযির (আঃ) নিয়ে বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন সাংস্কৃতিতে অনেক প্রথা বিশ্বাস প্রচলিত, অল্প কথায় তা জানতে চাইলে দেখুন Khidr
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৪৪
৩০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×