বুড়িগঙ্গা তাঁর আপন গতিতে বইছিল।
তার বুক ভরা ছিল বেদনা, ক্লেদ নিয়ে তাঁকে বয়ে চলতে হচ্ছে।
তারপর ও তাঁর বুক চিরে চলছে কত নৌ যান, ছোট, বড়, মাঝারী, বেশিরভাগ এখন যান্ত্রিক বাহন। এক সময় ছিল তাঁর বুক চিরে পাল তোলা নৌকা চলত।
এপার ও পারে খেয়া চলত। মনের সুখে মাঝি গান গাইত।
নদীর দুপাশের মানুষেরা নদীর বুকে সাঁতার কাটত।
ছোট ছোট শিশুরা খেলত নদীর ধারে। সেই সুদিন আর নাই এখন।
মানুষের ভালবাসাহীন কৃত্রিম আর জাগতিক ভোগের জীবনের ভারে নদী আজ প্রায় মরে গেছে। মাছ এখন এই নদীতে নেই, কাল তরল নিয়ে বয়ে চলছে এই নদী।
সুখের কথা বলার আগে দুঃখের কথা বলা ঠিক না। তাই কিছু আনন্দের কথা বলি।
সকাল থেকে শুরু করে এই নদীর বুক চিরে এগিয়ে গিয়ে প্রথমে শীতলক্ষ্যা পরে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত ভ্রমন করে দিনশেষে গোধূলি লগ্নে আবার ফিরে আসা।
নদী দিয়ে চলছে বালুবাহি অনেক ট্রলার, ডুবি ডুবি অবস্থায় এগুলো চলছে তাঁদের গন্তব্যে।
নারায়ণগঞ্জের কাছে ডক ইয়ার্ডে দেখলাম কয়েকটা ছোট জাহাজ বানানোর ও মেরামতের কাজ চলছে।
সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকা বেশ ধুলো ময় পরিবেশ, দূষিত বাতাস।
বেশ কিছু জাহাজ সিমেন্ট নেয়ার অপেক্ষায় আছে।
কয়েকটা জাহাজ কাঁচামাল নিয়ে এসেছে।আমাদের বাহন তরতর করে এগিয়ে চলছে।
পথে এই রুটে চলাচল করা কিছু জাহাজ আমাদেরকে ক্রস করে গেল।
ওদিক থেকেও আসা কিছু জাহাজের দেখা পেলাম।
ছোট কিছু যন্ত্র চালিত নৌকা ও চলছে মাঝে মাঝে।
বরযাত্রী নিয়ে মাইক লাগিয়ে গান বাজিয়ে চলছে মাঝারী নৌকা।
আনন্দ বেদনা নিয়ে মানুষ এই নদীপথে চলছে অবিরত।
চলতে চলতে বুড়িগঙ্গা ছেড়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে পড়লাম।
সেখান থেকে মেঘনার দিকে চলছি।
মোহনপুর এসে দেখি নদীর পারে সুন্দর বীচের মত বানানো।
বীচ বেড সাথে ছাতা, এখানে রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়েছে।
মানুষ নদীর পাড়ে বিনোদনের জন্য পরিবেশ তৈরি করে নিয়েছে।
এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবী রাখে।
নদী ভ্রমনে আড্ডা ও বিনোদনে সময় কেটে যাচ্ছিল।
সাথে খাওয়া দাওয়া তো আছেই।
মেঘনার মোহনার কাছে এসে আবার ফিরে চলা।
নদীর বুকে আনন্দময় কিছু সময় পার করলাম।
গোধূলি লগ্নে আবার ঢাকার কাছাকাছি।
নদীর বুক থেকে পাড়ের সূর্যের আলোর খেলা অপুর্ব দৃশ্য সৃষ্টি করছিল।
এত ময়লা পানি তারপর ও তাকিয়ে দেখছিলাম অস্তমান সূর্য আর দুপাশ।
একসময় শেষ হল এই নদী ভ্রমন।
নদী বয়ে চলে অনন্তকাল আর মানুষ আসে আর যায়।
এটাই চিরন্তন, এটাই শাশ্বত। যুগ থেকে যুগে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:৪০