সান্তা রোশা থেকে দুপুর বেলা আমরা নাপা ভ্যালি দেখতে বের হলাম। সুন্দর রাস্তা। রাস্তার দুপাশে সবুজের সমারোহ। একটু ঠাণ্ডা থাকলে ও সূর্যের আলো ছিল অকৃপণ। দিনটা বেশ আনন্দের মধ্যে দিয়ে কাটছিল। সকালে ঈদের নামাজ পড়ে বাসায় এসে একটু খেয়েই তাই বেরিয়ে পড়লাম।
নাপা ভ্যালি সারা বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং মর্যাদাপূর্ণ ওয়াইন অঞ্চল এবং ওয়াইন উৎপাদনে আমেরিকার একটা সেরা এলাকা। নাপা ভ্যালি ওয়াইন অঞ্চলটি সান ফ্রান্সিসকো থেকে ৫০ মাইল উত্তর-পূর্বে, উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। ১৯ শতক থেকে নাপা উপত্যকায় ওয়াইন মেকিং চলছে। ১৯৬০ সাল থেকে এই অঞ্চল বিশেষ মানের ওয়াইন তৈরির সুখ্যাতি অর্জন করে। নাপা উপত্যকায় ওয়াইন শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জর্জ সি. ইয়েন্ট, জন প্যাচেট এবং তার ওয়াইন নির্মাতা চার্লস ক্রুগ যারা তাদের কোম্পানি ক্রুগ ওয়াইনারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রবার্ট মন্ডাভি, নাপা ভ্যালির ওয়াইন শিল্পের একজন পথপ্রদর্শক, ১৯৬৬ সালে তিনি তার ওয়াইনারি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ভ্যারাইটাল লেবেলিংকে চ্যাম্পিয়ন করেন এবং আধুনিক ওয়াইন শিল্পের অগ্রগামীদের মধ্যে একজন হিসেবে বিবেচিত হন।
নাপা উপত্যকা একটি ছোট কিন্তু অনন্য এলাকা দখল করে আছে। এটি উত্তর থেকে দক্ষিণে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫ কিলোমিটার চওড়া। পশ্চিমে, মায়াকামাস পর্বতমালা নাপা এবং সোনোমার মধ্যে একটি প্রাকৃতিক সীমানা তৈরি করেছে। পূর্বে, ভাকা পর্বতমালা নাপাকে মধ্য উপত্যকার উত্তর অংশ থেকে পৃথক করেছে। ছোট আকারের সত্ত্বেও, এই এলাকার মাটির প্রকারের বৈচিত্র্য এবং জলবায়ু বিভিন্ন ভৌগলিক দিক থেকে প্রভাব ফেলে, যার ফলে নাপা উপত্যকায় জন্মানো আঙ্গুর থেকে বিভিন্ন ধরণের উন্নত মানের ওয়াইন উৎপন্ন হয়। নাপা উপত্যকায় ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু রয়েছে, যা এই এলাকায় আঙ্গুর চাষে সহায়ক।
নাপা ভ্যালীকে সঞ্জীবিত করছে এর মাঝে দিয়ে এঁকেবেকে বয়ে চলা নাপা রিভার। রাস্তা থেকে ফিতার মত স্বচ্ছ পানির এই নদী দেখা যায়। কয়েক জায়গায় এর উপর দিয়ে ব্রিজ রয়েছে। আমরা কিছুক্ষণ পর ডোমেইন কারনেরস এ আসলাম। এটা একটা ফরাসি দুর্গ বা শ্যাতো।
এটা এই এলাকার একটা প্রধান ওয়াইনারি যারা ঐতিহ্যবাহী মদ বানায়। এটা একটা বিশাল আঙ্গুর বাগানের স্টেট, সুন্দর করে সাজানো এলাকা। দুর্গের সামনে সাজানো বাগান ও ফোয়ারা রয়েছে। বেশ কিছু সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে উপরে উঠ তে হয়। উপরে বসার জন্য বাগানের ভেতর সুন্দর আয়োজন রয়েছে, এখানে মদ টেস্টিং হয় এবং এর সাথে রেস্টুরেন্ট ও আছে। সেখানে ইচ্ছে করলে ওয়াইন টেস্ট করে ভাল লাগলে সাথে অন্য কিছু খেয়ে দুপুর কিংবা সন্ধ্যা উপভগ করা যায়। আমরা টেস্ট করিনি তবে এলাকা ঘুরে দেখে সুন্দর কিছু ছবি তুললাম।
সেখান থেকে একটু দূরে আরেকটা এলাকা, এখানে ও আঙ্গুরের বাগান। একটু পাহাড়ের মত উঁচু জায়গায় একটা মূর্তি রয়েছে। এটাকে নাপা ভ্যালির মেট ক্রাস ম্যান মূর্তি বলে। এখানে দাসদেরকে দিয়ে অমানবিক ভাবে আঙ্গুর থেকে রস বের করে পরে তা থেকে মদ বানানো হত। সেই পরিশ্রমের চিত্র এই মূর্তি দেখে বোঝা যায়। পাহাড়ের ঢালুতে সুন্দর সবুজ ঘাস। মনে হয় কার্পেট বিছানো। বিকেলের সূর্যের আলো তখন সেই ঢালে সোনালি রঙ ছড়াচ্ছিল। আমরা সেই ঘাসে কিছুক্ষণ বসে পরিবেশটা উপভোগ করলাম। কিছু ছবি তোলা হলো। এখানে একটু দূরে হোটেল কিংবা থাকার জায়গা আছে। সেখানে ওয়াইন কিনতে আসা মানুষেরা থাকে। তাদের দু’এক জন পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছে। সব কিছু সুন্দর ও পরিকল্পিত। বিকেলটা নাপা ভ্যালিতে কাটিয়ে শেষ বিকেলের সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে বাসায় ফিরে এলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৪