somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাস : অনন্ত কুয়ার জলে চাঁদ পড়ে আছে

২৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১। এই লেখাটাকে আমার উপন্যাস বলতে ইচ্ছে করে না, গল্পও না, বলতে ইচ্ছে করে স্বরলিপি, কিংবা আড়াই তিন হাজার লাইনের কোন কবিতা। হাজার হাজার লাইনের এই মানসাঙ্ক কষতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। আমার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা করে স্বপ্নের কোন কিছু করে ফেলতে। স্বপ্নের কোন গান, কোন সুর, কোন কবিতা কিংবা কোন গল্প। যেটা এক মুহুর্তের জন্যে হলেও সবাইকে আবেগী করে দেবে, বদলে দেবে। সেটা কি হবে? আমি প্রতিদিন চাতক পাখির মত তারই আশায় থাকি। যা আমি বিশ্বাস করি তার বেশী কখনো কিছু আমি বলতে পারি নি। জীবনটা একদম সাধারন বলেই আমি মানি। এখানে উচুঁ উচুঁ কিছু দর্শন দিয়ে থাকতে হবে, কত সাধারন সব হাসি-কান্না, আনন্দের মাঝে যুদ্ধকে টেনে আনতে হবে এমন কিছু আমার ভাল্লাগেনা। আমার চাওয়াগুলিও একদম অল্প। আর দশটা মানুষের মত আমারও ভাল লাগে রোদেলা দুপুরে ধুলো চিকচিক করা মাঠ দেখতে, সবুজ শ্যাওলার পদ্মপাড় দেখতে, তোমাকে দেবার জন্য কৃষ্ণচূড়া হাতে নিতে, মেঘহীন আকাশের নিচে ঘাসের মখমলে হাঁটতে।

যাদের জন্য আমার লিখতে ভাল লাগে, যাদের জন্য স্বপ্নের কোন কিছু করে ফেলতে ইচ্ছে করে শুধু তাদের জন্য আমার সিসিফাসের মতই এই পাথর টেনে যাওয়া। তারা এই লেখা পড়ে কেউ কাঁদবে, হাসবে, দীর্ঘশ্বাস ফেলবে তাতেই আমি সুখী। তাতেই পাওয়াগুলি পেয়ে আমি কাতর হয়ে উঠবো।

২। আমি একবারো অস্বীকার করবো না মিনার মাহমুদের “পিছনে ফেলে আসি”, আখতার আহমেদের “সভেরা” অথবা অদিতি ফাল্গুনীর বিহারীদের নিয়ে করা গবেষনাকর্মের কাছে আমি ঋনী নই।

৩। দিপ্তী নামটা যে আসলে “দীপ্তি” এটা বোঝার জন্য ভাষাবিজ্ঞানীকে প্রয়োজন হবে না। তবু দিপ্তীর কেন জানি এভাবেই “দিপ্তী” লিখতে ভাল্লাগতো। ভাষাবিজ্ঞানের “দিপ্তী”র জন্য তাই এই দিপ্তীকে ছোট করতে ইচ্ছে হল না আমার।

৪। শেষমেষ বলি আমাকে অকারনে আনিস ভেবে নেয়ার অবকাশ নেই।



____ রুমেল চৌধুরী

দেয়ালীর আলো মেখে নক্ষত্র গিয়েছে পুড়ে কাল সারারাত
কাল সারারাত তার পাখা ঝরে পড়েছে বাতাসে
চরের বলিতে তাকে চিকিচিকি মাছের মতন মনে হয়
মনে হয় হৃদয়ের আলো পেলে সে উজ্জ্বল হতো।

সারারাত ধরে তার পাখাখসা শব্দ আসে কানে
মনে হয় দুর হতে নক্ষত্রের তামাম উইল
উলোট-পালোট হয়ে পড়ে আছে আমার বাগানে।

এবার তোমাকে নিয়ে যাবো আমি নক্ষত্র খামারে নবান্নের দিন
পৃথিবীর সমস্ত রঙ্গিন
পর্দাগুলি নিয়ে যাবো, নিয়ে যাবো শেফালীর চার্
াগোলাবাড়ি থেকে কিছু দূরে রবে সূর্যমূখী পাড়া
এবার তোমাকে নিয়ে যাবো আমি নক্ষত্র খামারে নবান্নের দিন।

যদি কোন পৃথিবীর কিশলয়ে বেশে থাক ভালো
যদি কোনো আন্তরিক পর্যটনে জানালার আলো
দেখে যেতে চেয়ে থাকো, তাহাদের ঘরের ভিতরে-
আমাকে যাবার আগে বলো, তা-ও, নেবো সঙ্গে করে

ভূলে যেও নাকো তুমি আমাদের উঠোনের কাছে
অনন্ত কুয়ার জলে চাঁদ পড়ে আছে।

(ধর্মে আছো, জিরাফেও আছো; অনন্ত কুয়ার জলে চাঁদ পড়ে আছে; শক্তি চট্টপাধ্যায়)

০৬/০৭/২০০২
আপনচরিত

দিপ্তী, বেঁচে থাকাটা কেমন যেন তাই না! কত কারনে তুমি নারী, কত কারনে আমি পুরুষ জানি মরে যাব তবু বাঁচতে ইচ্ছা করে। জানি বার্ধক্য আসবেই তবু প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে, জানি পড়বে না তবু কবিতা আমি লিখবই। এসব কেমন যেন তাই না। কখনো মনে হয় জেদ, কখনো মনে হয় প্রতিবাদ কিন্তু কার উপর, কার বিরুদ্ধে কিছুই জানি না। তুমি বেঁচে আছ, আমি বেঁচে আছি কিসের জন্য (হয়তো বা কিসের আশায়)? জানি তুমি বলবে ভাল কিছুর আশায়। অথচ তুমি আমি কেউ জানিনা ভাল কিছুর সঙ্গা কি? ভাল খাওয়া আর ভাল থাকা তো সামগ্রিক ভাবে ভাল কিছুর সঙ্গা হতে পারে না। কত কিছু মনে হয় না তবু নিয়ত হজম করছি। মানুষের নিয়ম কিন্তু এটা না। তাঁর নিয়ম হচ্ছে যুক্তি খোঁজা। অথচ এসবই আমরা চোখের সামনে, পেছনে লুকিয়ে বেঁচে থাকব স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে । কি অদ্ভুত তাই না !

আসলে একা থাকলেই এসব চিন্তা মাথায় ধরে বেশি । স্বপ্ন দেখা মানুষের কখন বাড়তে পারে বলতে পারো? ইদানিং আমার স্বপ্ন দেখাটা বেড়ে গেছে। আসলে একা থাকাও না আলসেমি বেড়েছে বলে এসব হচ্ছে । কাজ না থাকলে ঘুমাতে ইচ্ছা করে শুধু। মানুষের বা তোমার ভাবনা গুলোর সাথে আমার কিছুই মেলে না তখন ।

এখন আবার ইচ্ছে করে খোলাদিগন্তে বিলীন হওয়া আকাশ দেখতে। রঙ্গটা গোলাপী হলে কেমন হয়? না,না নীলই থাক । সত্য সব সময় সুন্দর। যদি সামনে সাগর থাকে তাহলে তো কথাই নেই। এই সময়ের কাছে পৃথিবীর সব কিছু তুচ্ছ। তুমি চাইলে সেদিন যতটা পথ চাও হাঁটব, গলা ছেড়ে গান গাইব, বারবার ইচ্ছে করে তোমাকে .... পাগলামী তাই না !

এবারের ১৯ শে আগষ্ট কেমন কাটবে তোমার? অতদুরে খারাপ লাগছে না? কত কিছু মিস করবে তুমি। কত উপহার, কত শুভেচ্ছা, আমাকে (?) তাই না ! আমিও ভেবেছি সারাদিন ঘরে থাকব। হয়তো কাগজে কলম ঘষবো, প্রতিদিনের মত এমনি এমনি সময় চলে যাবে। তবে একটা হাহাকার থাকবে। কিছু একটা না পাওয়ার হাহাকার। একটা ধন্যবাদ অন্তত। যাক দু’জনের খারাপ লেগে ক্ষতি নেই।

আজকে প্রচুর বাতাস দিচ্ছে বাইরে। বারান্দার পর্দাটা বুয়া ধুতে নিয়েছে। এখনো লাগায়নি। সার্টের ভেতর বাতসটা সূঁচের মত লাগছে। দু তিন দিনের প্যাচপ্যাচে বৃষ্টিতে বাতাস এখন খুব ঠান্ডা। বারান্দায় দাঁড়ালে কুচকুচে অন্ধকার অলা সরূ রাস্তাটা এখন চোখে পড়েনা। রাস্তার সোডিয়াম বাতিটা তিন দিন ধরে নষ্ট। রাতে এই সময আগে কুকুর চিৎকার শুরু করতো। এখন বৃষ্টির জন্যে বের হয় না। এই সময় চা খাওয়াটা আমার চরম অভ্যাসের একটা। আজ পারছিনা। ঘরে চাপাতা নেই। সকালেও আনতে মনে ছিল না। এখন ভুগছি। এখন ক’টা বাজে আমি ঘড়ি না দেখেই বলে দিতে পারব। আমি যে নিশাচর এটা তার প্রমাণ। তবে প্রতিদিনই এভাবে লিখতে বসি না। যেদিন ইচ্ছা করে সেদিন। তোমার কথা আমি এত লিখি তবু ক্লান্তি আসে না। এই যে এতক্ষণ লিখছি তবু সারারাতই লিখতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু সেটা দমে যাচ্ছে। কারন খুব খিদে পেয়েছে। দেখি ফ্রিজে কিছু আছে কি না। খেলে ও ঘুম আসবে না এখন। কারন এই বারোটার পর যে দিন শুরু হল এটা একটা বিশেষ দিন। আজ আমার মায়ের মৃত্যু দিবস। মায়েদের আদর কেমন হয় আমার জানা নেই। কারণ মাকে হারিয়েছি সেই কুড়ি বছর আগে। তখন বয়স ছিল ছয়। কিছু বুঝে উঠতে না উঠতেই মা আমায় ছেড়ে চলে গেলেন। কখনো আমার তাকে মনে করার প্রয়োজন পড়েনি। জানি না কেন? তবে মা পাগল ছেলে-পেলে দেখলে আমার গা-টা কেমন জ্বলে ওঠে। মায়েরা এত উপরে উঠলে বাবারা কেন নিচে থাকবে? মায়ের চেয়ে বাবারা কি কম কিছু? এজন্য আমাকে কত জায়গায় যে হুমকি-ধমকি শুনতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। যা হোক আমার উত্তর একটাই। মার জন্য টান না থাকলে আমি কি করব।

তুমি সামনে থাকলে অবশ্য এভাবে আমি কথা গুলি বলতাম না। তুমি তো আবার মা ছাড়া কিচ্ছু বোঝ না। তোমার মনে আছে প্রতি বছর এই দিনে তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করতে, মার কথা মনে পড়ছে? আমি অবলীলায় বলতাম, না। তবে আজ মনে পড়ছে। পাশে তুমি নেই বলে হয়তো।
খুব ঘুম পাচ্ছে লীলা। উফ্ একটা কথা তোমাকে কখনো বলা হয় নি। আড়ালে তোমাকে আমি লীলা বলি। ময়মনসিংহ গীতিকার সেই লীলা। কেন, তা কিন্তু জানি না। তাই বলে আমি কিন্তু কঙ্ক নই।

আজকের সকালটাও ছিল প্রতিদিনকার মত। ঘরে কারো মধ্যে কোন হা-হুতাশ নেই কারন আমি ছাড়া আমাদের সংসারে মায়ের আপন কেউ নেই। বাবারও মনে নেই কুড়ি বছর আগের এই দিনে তিনি তাঁর স্ত্রী কে হারিয়েছেন। বড় মা হুড়োহুড়ি করে ন’টার সময় জাগিয়ে দিলেন। একসাথে সবাই নাস্তা খেলাম। বাবা কখনোই থাকেন না। সাতটা সময় উঠে নাস্তা খেয়ে তিনি অফিসে চলে যান। টেবিলে আমরা মোট পাঁচজন থাকি। বড় মা (সৎ মা), ভাইয়া (সৎ ভাই), ভাবী আর নীরা (সৎবোন)। নাস্তার পর আমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বাজার করা। তাও করলাম। তবু কারো মনে পড়লো না আজ একটা বিশেষ দিন। আশ্চর্য বাবারো না! হয়তো আমি ভুল করছি।

সবাই জানে যে যায় সে ফিরে আসার জন্য যায় না আর নারীদের জন্য কথাটা চিরন্তন। কিন্তু তিনি তো আমার কাছে শুধু নারী ছিলেন না। তিনি ছিলেন আমার মা। ঠিকই আছে আমারই তো মনে পড়ার কথা। আর কার মনে পড়বে?

মার সঙ্গে বাবার সম্পর্কটা গড়েছিল একদম অন্যভাবে। আজকালকার মেয়েরা যে লাইনে পড়াশোনা করে মা দু যুগ আগের মেয়ে হয়েও পড়াশোনা করেছেন পুরো ভিন্ন বিষয়ে। সাংবাদিকতায়। তখনকার যুগের মেয়েরা যে বিষয়ে সাহস করেনি মা তখন সে বিষয়ে পড়ে অসামান্যতা দেখিয়েছেন। খুব ভালভাবেই পাশ করলেন তিনি।

ও দিকে বাবা বিভিন্ন ব্যবসায় পোড় খেতে খেতে খুলে বসলেন নতুন ব্যবসা। ট্রাভেল এজেন্সি। এ ব্যবসায় তাকে আর পোড় খেতে হল না। হু হু করে টাকা কামাতে লাগলেন তিনি। কিছুদিন এভাবে যাবার পর মাকে সংবাদপত্র থেকে দায়িত্ব দেয়া হল ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার ফিচার তৈরী করতে। মা খুঁজে খুঁজে এলেন বাবারটাতেই। আমি এতটুকুই জানি। এর পরের টুকু বাবা আর আমাকে বলেন নি। শুধু বলেছেন দু’জনের দু’জনকে পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু মার পরিবার থেকে অনেক আপত্তি ছিল। তবু মা কাউকেই না জানিয়ে চলে এসেছেন বাবার কাছে। একটা দীর্ঘ জটপাকানো সংসারে......।

বড় মা ডাকছেন। সামনাসামনি আমি ওনাকে মা বলি। আড়ালে বলি বড় মা।

আনিস, এই আনিস।
তড়িঘড়ি করে সামনে গিয়ে দাড়াঁলাম।
কি হয়েছে?
সকাল বেলা আলু কি দেখে আনিস নি? কি রকম পোকায় খাওয়া দেখেছিস? কেনার সময় থাকিস কোথায়? টাকা দিয়ে কেনা হয় না এগুলো?
আমি জানি বড়মার এসব ধমকানোর আড়ালে থাকে ভালবাসার ছোঁয়া। তিনি সবসময় চান আমাকে তাঁর ছেলের মত করে আগলে রাখতে।
দেখেই তো এনেছিলাম।
তা হলে এগুলো কোত্থেকে এল?
আমি নিশ্চুপ। নীরা কোত্থেকে দৌড়ে এসে বড় মার পিছনে দাঁড়িয়ে খিক খিক করে হাসতে শুরু করল। বড় মা আবার খেঁকে উঠলেন।
আরে বাবা এখানে দেখি উনি দাঁড়িয়ে খ্যা খ্যা করে হাসছেন। ক্লাসে যাচ্ছিস না কেন?
যাবো তো, ওরকম করছো কেন? নীরার উত্তর।
মা আবার আলু বাছায় মনোযোগ দিলেন। একটু এগিয়ে জোর গলায় বললাম,
কাল থেকে বেছে বেছে আনব।
শোন, তুই কি কোথাও বেরুবি?
না।
তাহলে নীরার সঙ্গে যা।
ঠিক আছে।

আধঘন্টা সেজে তারপর বেরুল নীরা। দেখলে মনে হবে ভার্সিটির চেয়ে র‌্যাম্প মডেলিংয়েই ওকে বেশী মানাবে। রাস্তায় নামলেই ছেলেপেলে চোখ দিয়ে গিলে গিলে খায়। বনানী পর্যন্ত রিকশা নিলাম। নীরার হাতে হ্যান্ডব্যাগ ছাড়া কিছুই নেই। সম্ভবত বই খাতার ব্যাগ ওর ওটাই।

তোর বই খাতা কোথায়?
আনিনি।
মানে?
আনিনি মানে আনিনি! প্রতিদিন ক্লাস করতে হবে এমন কোন কথা আছে? আজ ঘুরতে যাব সব বান্ধবী মিলে।
কোথায়?
ডিসিশান হয় নি। জানো ভাইয়া আমার বান্ধবীরা তোমাকে কি বলে?
কি?
তোমাকে নাকি মেয়েদের মত লাগে। শাড়ি আর চুড়ি পরালেই নাকি ছেলেরা পাগল হয়ে যাবে বিয়ে করার জন্য।
কি!

আজকালকার মেয়েগুলি যে কি হচ্ছে? কুড়ি বছর হতে না হতেই পেকে ঝুনো। নীরা হাসতে হাসতে বোধ হয় পড়ে যাবে এমন অবস্থা। নিজেকে সামলে নিল আবার।
ভাইয়া একশ টাকা দিতে পারবে?
সত্তর টাকা হবে।
ওমা, এত গরীব হলে কবে?
টাকা বাসায়।
আচ্ছা ওটাই দাও। রিকশা ভাড়া আছে তো? আমারটা লাগবে।
বাসায় গিয়ে দিতে হবে।
আমি কিন্তু ভার্সিটি পর্যন্ত যাব না এর আগেই নেমে পড়ব।

সত্যিই খানিকক্ষণ পর নেমে পড়ল নীরা। অগত্যা রিকশাঅলাকে পিছন দিকে যেতে বললাম। রিকশা অলা কথা বাড়াল না। যেতে শুরু করল পুরোনো জায়গায়। আমার মনটা কি খারাপ? তাহলে বাসায় যাচ্ছি কেন? না, না রিকশাঅলার ভাড়া মেটাতে হবে তো। তবে বাসায় গিয়ে ঘুম দেব। কাল টেবিল থেকে ওঠার পর রাতে ঘুমাতে পারিনি। সারারাত বসেছিলাম জানালার পাশে জ্যোস্নাহীন আকাশও মাঝে মাঝে সুন্দর হয়। সেসব রাতে গলায় যেন নরম সুর এসে জমা হয়। গাইতে ইচ্ছা করে সারাক্ষণ।

স্যার, স্যার
এই থামাও তো।
মেয়েটা প্রায় দৌড়ে এল। ঝকমকে কালো শাড়ি পরা।
স্যার চিনেছেন?
কে শর্মি না?
জি স্যার। কোথায় যাচ্ছেন আপনি? কত দিন পরে দেখা, বাসায় যে আসেন না?
তুমি এদিকে কোত্থেকে?
শপিংয়ে এসেছিলাম। ওকে চিনেছেন?
একটু পেছনে দোকানের সামনে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। চিনতে পারলাম না। তবে খুব ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা চুলগুলো পরিপাটি করে আচঁড়ানো, শ্যামলা রঙ্গ।
না, চিনতে পারছি না।
চেনার কথা না, আমার স্বামী।
ও আচ্ছা, বিয়ে হলো কবে তোমার?
এই তো তিন-চার মাস হলো। আপনাকে দাওয়াত দেবার জন্য খুঁজেছিলাম। আপনার ঠিকানাতো জানি না তাই পারি নি।
অসুবিধা নেই। যেখানে যাচ্ছিলে যাও আমি বাসায় যাব।
স্যার আপনার ঠিকানাটা একটু বলুন না?
আচ্ছা, ফোন নম্বর লেখ। ডাবল এইট টু জিরো ........

মেয়েটাকে আমি অনেক আগে পড়াতাম। তখন ও ম্যাট্টিকে পড়ত। আমি মাত্র ভার্সিটির ফার্ষ্ট ইয়ারে অনেক লোক আছে যাদের জীবনের প্রথম রোজগার শুরু হয় টিউশনি দিয়ে? টিউশনির মধ্যে প্রথম টিউশনি বলে একটা ব্যাপার আছে না? এই মেয়েটাকে পড়ানো ও আমার সেরকম।
রাস্তায় যত মুখ দেখি বলতে গেলে সবই আমার অপরিচিত। কিন্তু আমি আবার অনেকের পরিচিত। হুট করে হয়তো কেউ এসে বলবে, আপনি আসিফের বন্ধু না? আরে কোন আসিফ, কোথাকার আসিফ কিচ্ছু মাথায় আসে না। হয়তো সামনের পাঁচ বছরেও সেই আসিফের ঠিকানা পাওয়া যাবে না।

(চলবে..)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:২৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×