সেদিন পত্রিকায় পড়ছিলাম চিত্রনায়িকা ববিতা আর চম্পা যাচ্ছেন সিঙ্গাপুর নিয়মিত চেকআপের জন্য। এটা অবশ্য খুব সাধারন খবর। আমাদের দেশের উচ্চবিত্ত লোকজন উনাদের চেকআপ সিঙ্গাপুর গিয়ে করান। যারা উচ্চ মধ্যবিত্ত তারা যান মাদ্রাজ। আমরা নিম্ন মধ্যবিত্তরা দোয়া দুরুদ পড়ি যেন ডাক্তারের কাছে যেতে না হয়। নিম্নবিত্তের লোকজনের কথা না বলি, তারা পথে বসেন এইখানে বিভিন্ন রকম টেস্ট আর ডাক্তারের খরচ যোগার করতে করতে। কিন্তু রোগ আর সেরে উঠে না। বহু বছর পর জানা যায় এতদিন ভুল চিকিৎসা হয়েছিল। এর জন্য ডাক্তারকে কোনও জবাবদিহি করতে হয় না। এগুলো খুব সাধারন ঘটনা আমাদের জন্য। এখন তো প্রাইভেট মেডিকেলের যুগ, টাকা থাকলে ডাক্তারী পড়া কোন সমস্যা না।
আমার বাবার হার্টে ব্লক ছিল, ডাক্তার বলেছে ওপেনহার্ট সার্জারি করতে হবে। বাবা ভীতু ছিলেন, উনি রাজি হলেন না। উনার হাই প্রেসার, ডায়বেটিস, কিডনির সমস্যা; উনার শরীর এই অপারাশনের ধাক্কা সামলাতে পারবে না। উনি বুঝেছিলেন, আমরা বুঝি নাই, ডাক্তার বোঝেন নাই। অপারাশনের ১১ দিনের মাথায় উনি মারা যান। আমাদের একজন নিকট আত্মীয় মাদ্রাজ গিয়েছিলেন একি অপারাশন করানোর জন্য, ওখানকার ডাক্তার উনাকে ফেরত পাঠিয়েছিলেন, কারন উনি ফিট ছিলেন না। ডাক্তারদের কথাতেই উনি অনেক সুস্থবোধ করছিলেন। এক বছর পর উনার অপারাশন হয়, উনি এখন ভাল আছেন। হয়তো মাদ্রাজ নিতে পারলে আমার বাবাকে এভাবে বিদায় দিতে হতো না আমাদের।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ভুল চিকিৎসায়, দেশের মাথাদের কোন চিন্তা নাই কারন তারা বাথরুমে আছাড় খেলে, সদলবলে সিঙ্গাপুর যান সরকারী খরচে চিকিৎসা করতে। চিকিৎসাক্ষেত্রে দুর্নীতি বেড়েই চলেছে, ভুয়া চিকিৎসক বের হচ্ছে, কোথাও কোনও তৎপরতা নাই এর প্রতিকারের।
আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী হতে শুরু করে প্রতিটি সরকারী কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক করা উচিত দেশে চিকিৎসা নিতে হবে। তাদের দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। নিয়মিত চেকআপের জন্য তারা কেন সরকারী খরচে বিদেশ যাবে? এমনকি নিজ খরচেও যেতে পারবে না। আমি নিশ্চিত এটা করা হলে চিকিৎসাক্ষেত্র থেকে দুর্নীতি দূর করতে তারা মনোযোগী হবেন। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক বেশী উন্নতি লাভ করবে। আহা এমন যদি হতো!