আমি খেলা দেখতে চাইনি, কিন্তু সোহান বার বার ডাকছিল।আমি খেলা দেখি না কারন খেলা আমার স্নায়ুতে যে চাপ আর টেনশন তৈরি করে তা আমার ভাল লাগে না। আমি ক্রিকেটভক্ত নই, ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে আমি গতকালের আগে একটা শব্দও ফেবুতে লিখিনি। ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ খেলার সময় সোহান বলছিল,
-মাশরাফির পায়ে অনেক অস্ত্রপাচার হয়েছে, জানো?
-জানি আমি জানি;
-ডাক্তার বলেছে, ক্রিকেট খেললে, জীবনের একটা অংশ হুইল চেয়ারে কাটাতে হবে।
মোচড় দিয়ে উঠলো বুকের ভিতরটা, এই পাগল ছেলেটা কি করছে? আমি নরাধম মানুষ, ডাক্তারের এরকম ভবিষৎবাণী নিয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়ার কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পেলাম না। টিভি স্ক্রিণে মাশরাফির দিকে তাকাতে পারছিলাম না; শোবার ঘরের দিকে গেলাম। সোহান পিছু পিছু আসলো,
-এই ঝরা তুমি কাঁদ নাকি?
-আরে ধুর কাঁদবো কেন?
আপনারা কি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলা দেখেছেন, দেখেছেন নিশ্চয় আমাদের এই কাণ্ডারি পথ দেখিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে এসেছে; সততা, পরিশ্রম, দেশপ্রেম দিয়ে লাল সবুজের ভালোবাসার আমাদের ক্রিকেট দলকে শিখিয়েছে, কিভাবে নিজেকে উজাড় করে দিতে হয়।
সোহান ডাকছিল, বাংলাদেশ ভালো খেলছে; ব্যাটিং পিচে ২৫ ওভারে মাত্র ৯৯ রান ২ উইকেট, চাপে আছে ইন্ডিয়া। মাশরাফির এলবিডাব্লউএর আবেদন। মাশরাফি খুব আত্ত্ববিশ্বাসি ছিল। থার্ড আম্প্যায়ারের বিবেচনায় সেটা আউট ছিল না।মাশরাফি কি হতাশ হলো? মন ভাংলো? না তখনো হয়তো শুরু হয়নি মন ভাঙ্গা। ধারাভাষ্যকাররা ২৫০ কে ভালো স্কোর বলা শুরু করেছে। রুবেলের বলে রোহিত ক্যাচ তুলে দিল কায়েসের হাতে, ‘আউট’; না আম্প্যায়ার জানায় এটা নো বল। পুরো দলটা ভেঙ্গে পরে, খেলার ছন্দ হারাতেই থাকে, হারাতেই থাকে। ৩ জন আম্প্যায়ারকে দলে নিয়ে ভারত ৩০০ পাড়ি দেয়। তামিম রিয়াদের আউটের সিদ্ধান্ত দিতে থার্ড আম্প্যায়ারের কোন সময় লাগেনি, সব থেকে দ্রুততম সিদ্ধান্ত ছিল! রিয়াদ আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা, বেশ মূল্যবান উইকেট যে কোন দিক থেকে!! ততক্ষণে সবার বোঝা হয়ে গিয়েছে, বাংলাদেশ খেলছে ভারত, ৩ আম্প্যায়ার আর আইসিসির বিপক্ষে। আইসিসি, যারা ভেন্যু পরিবর্তন করে ভারতের সুবিধার্থে!!
আমি খেলা দেখতে চাইনি, কিন্তু দেখে ফেললাম; আমরা কত অসহায় শক্তি আর টাকার খেলায়! আমরা হারিনি, আমাদের হারানো হয়েছে। ম্যাচ পাতিয়ে খেলতে খেলতে তারা কোথায় নেমেছে! এত দুর্গন্ধ লাগছিলো; এখনো সে দুর্গন্ধ যায়নি।
আমরা বাঙালি, আমাদের হাত অনেক লম্বা না; কিন্তু আমাদেরও ক্ষোভ হয়, হাত নিশপিশ লাগে, বুকের মাঝের ধুম্রজালে শ্বাস বন্ধ করা কষ্ট লাগে মাশরাফিদের জন্য; শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যার খেলার কথা ছিল, লাল সবুজ পতাকা ছিল মাথায়, কতগুলো ধনী ব্যবসায়ির কাছে তার কিইবা মুল্য আছে :/
আমি খেলা দেখতে চাইনি, কেন যে সোহান ডাকলো; স্নায়ুতে এই মনখারাপ চাপটা ভালো লাগছে না, কেন যে খেলাটা দেখলাম, ভালো লাগছে না।