somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্য সমাজতন্ত্রই একমাত্র পথ ??

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

''সাম্যবাদী'' একটি পোষ্ট দিয়েছেন
''বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্য সমাজতন্ত্রই একমাত্র পথ ।''
Click This Link

ওনার মতাদর্শে আমার প্রশ্ন নেই । আছে শ্রদ্ধা, তবু দ্বিমত আছে কিছুটা ওনার বিশ্লেষন আর সিদ্ধান্তে ।

=> মুক্তির প্রশ্ন যদি হয় মানবতার, তবে দ্বিমত করবনা । মানবতার প্রশ্নে সমাজতন্ত্রের অবস্থানটা ইউনিকই ।
তবে, মুক্তির প্রশ্ন যদি হয় ব্যাক্তিসত্তার তবে পুজিবাদ আর সমাজবাদ দুটোই সেখানে পরম সমাধানে ব্যর্থ । সমাজবাদের ব্যর্থতা সেখানে গ্রোস, পুজিবাদেরটা তেলা মাথায় তেল দেয়া ।

বিশ্বব্যাপী সমাজতন্ত্র পিছিয়ে পড়েছে ব্যাক্তিসত্তার এই শৃংখল ভাংগার গানে । শোষীত-বন্চিত মানুষ বিপন্ন মানবতার মুক্তিতে খুশী বটে, কিন্তু
পেটের চাহিদা মিটে গেলেই কিংবা মৌলিক চাহিদা মিটে গেলেই সে আপন সত্তার অস্তিত্ব টের পেয়ে যায়, টের পায় সেই সত্তার শৃংখল ।
কার্ল মার্ক্স দেখিয়েছেন আদিম-সাম্যবাদী-গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ কিভাবে ''আমরা'' থেকে ''আমি'', ''আমাদের'' থেকে ''আমার'' সত্তায়
ভাবতে শেখে আর সে ভাবনা কিভাবে তাকে সম্পত্তির অধিকারে আগ্রহী করে তোলে, করে তোলে লোভী, আগ্রাসী । ট্রাজেডী হলো, সমাজতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তির মৌল চাহিদা মিটে গেলে সে এই সংকীর্ন সত্তার কথা মার্ক্সের প্রত্যাশা মত ভুলে যাওয়ার বদলে ভিন্ন আংগিকে তা ফিল করতে শুরু করে । মানুষের তো চাওয়ার শেষ নেই, তার এটা চাই সেটা চাই, অভাব না হলেও সুপারিয়রিটি দেখানো চাই, সামাজিক স্তরায়নের উপরের স্তরে যাওয়া চাই, ইত্যাদি ইত্যাদি । ফলে মানুষের মনে অনিবার্য আসে শৃংখল ভাংগার গান ।

আপনি যদি অর্থনীতি পড়ে থাকেন, তবে দেখবেন গভীরে গেলে, সমাজতন্ত্রের রীতি-নীতি অর্থনীতির ''বন্টন'' প্রক্রিয়ার সংগে যুক্ত । সেখানে মুখ্যত: আলোচনা কিভাবে সম্পদের সুস্ঠু বন্টন হবে, সমতা নিশ্চিত করা হবে । work according to your ability and earn according to your work. অর্থ্যাত এ পর্যায়ে প্রত্যেকে কেবল সেই পরিমান পাবে যে পরিমান কাজ সে করবে । (রাষ্ট্র এখানে বিকলাংগ বা পংগু, বৃদ্ধ বা শিশুর বিষয়ে, যারা কর্মে অক্ষম, কিছুটা উদাসীন )। এটার সম্পুর্নতা আসে সাম্যবাদে যেখানে নীতি হল: work according to your ability and earn according to your necessity. সেখানে বিকলাংগ বা পংগু, বৃদ্ধ বা শিশু, সবাই প্রয়োজন অনুযায়ী অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিতসা-শিক্ষা জাতীয় মৌল চাহিদার নিশ্চয়তা পাবে ।

অন্যদিকে পুজিবাদের অর্থনৈতিক দর্শন ''উৎপাদন'' প্রক্রিয়ার সংগে যুক্ত । সেখানে বন্টনটা অটোমেটিক ধরে নেয়া হয়, অনেকটা ট্রিকল ডাউন থিয়োরির মত, যেখানে টাকা একটা সুনির্দিষ্ট চক্র ঘুরে সবার হাতে পৌছায় । তবে ডারউইনিজম এখানে চালিকাশক্তি: সারভাইবল অব দ্য ফিটেষ্ট, যোগ্যতরই টিকিয়া থাকিবে । পুজিবাদী কাঠামোয় তাই করপোরেট পুঁজি গড়ে ওঠে দ্রুত, দফায় দফায় হাত-পা গজায় ধনকুবেরদের । গড়ে ওঠে বাজার দখলের খেলা, প্রযুক্তি, বিগ্গাপন আর নিত্য নতুন ইনোভেশানের তীব্র প্রতিযোগীতা ।

সমাজতন্ত্রে করপোরেট পুজির আপদ নেই । ছল-চাতুরীর বিগ্গাপন নেই, নেই ইনোভেশান (বানিজ্যিক অর্থে) । ভোক্তারা তাই প্রতারিত হয়না, বিগ্গাপনের বাহুল্য মুল্য আদায়ের শিকার হয়না, ভোক্তার রিয়াল পার্চেজিং পাওয়ার তাই বেশী থাকে ।

অন্যদিকে মুনাফা অর্জনে পিছিয়ে থাকে সমাজতান্ত্রিক দেশের সরকারী বা বেসরকারী কোম্পানী । প্রযুক্তির পেছনে তাই কাড়ি কাড়ি অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেনা যেমনটা মাইক্রোসফটরা পারে । পন্যের উৎকর্ষে তাই পিছিয়ে পড়ে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানেই । বিশ্ববাজারে ক্রমশ: কমপটিটিভনেস হারিয়ে ফেলে । আর এর নিয়ন্ত্রিত বাজারের ভোক্তারা উচ্চমুল্যে ক্রয় করে বিশ্বাজারের পিছিয়ে পড়া দেশীয় পন্য । বাজার ক্রমশ: বিদেশীদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যেতে থাকে, নতুবা চোরাচালান অবশ্যাম্ভাবী হয়ে পড়ে । আভ্যন্তরীন বাজার উন্মুক্ত হয়ে গেলে সমাজতান্ত্রীক দেশের এসকল সরকারী-বেসরকারী কোম্পানী আকস্মিকভাবে বাইরের বড় বড় পুজিবাদী কর্পোরেট পুজির সংগে পেরে উঠতে হিমসিম খেয়ে বসে, ফলে দিতে হয় সরকারী ভর্তুকী নতুবা কোম্পানী দেউলিয়া । অন্যদিকে সরকারী ভর্তুকী দিতে গিয়ে সরকার দেউলিয়া, বেড়ে যায় ঋনের বোঝা, কিংবা পরোক্ষ কর ।

আল্টিমেল্টলী যা দেখা যায় তা হলো একটি বিশেষ অবস্থায় আসার পর
সমাজতন্ত্রের মানবিক-অর্থনৈতিক বন্টন নীতি যুগের সংগে খাপ খেয়ে উঠতে অপারগ হয়, পুজিবাদী ব্যবস্থা টিকে যায় । এটা একটি অর্থনৈতিক বিশ্লেষনে । অর্থ্যাৎ সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক, সামরিক বা ধর্মীয় অন্যান্য কারনাদি যুক্ত হয়ে তা একেক সময়, একেক দেশে একেক রকম হতে পারে, হয়েও থাকে । যতদিন পৃথিবীতে মানুষ ব্যক্তিকেন্দ্রীক, ততদিনই পুজিবাদের জয় অনিবার্য । আর সম্ভবত: মানুষ জন্ম জন্মান্তরে, অন দ্য এভারেজ, ব্যক্তিকেন্দ্রীকই ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:৫৬
৩৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×