আগে ভাবতাম চোর-বাটপারেরা বুঝি শুধু বাংলাদেশের অলিতে গলিতে বসবাস করে।কিন্তু সেই চিন্তা ভুল প্রমানিত হয়েছে ঠিক যখন থেকে আমার দেশের বাহিরে ঘোরাফেরা শুরু তখন থেকেই।চোর বাটপারদের চলাফেরা গোটা জগৎ জুড়েই,শুধু বাংলার চোর বাটপারদের সাথে বিদেশী চোর-বাটপারের পার্থক্য হচ্ছে চুরির এমাউন্ট আর চাহিদা।বাংলার বাটপারেরা খুব অল্পতেই খুশি হয় আর তাদের লেনদেন ও হয় কয়েক টাকার মাইর-প্যাচে,আর বিদেশী বাটপারদের লেনদেন হয় ডলার দিয়ে,মাইর-প্যাচ ও ঠান্ডা মস্তিষ্কের।
সেই বিদেশী বাটপারদের কথা উপলব্ধি কইরা গত কয়েকবার হইলো সেলুনে চুল কাটাইতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম, যখনি নাপিত মশাইরা মুখের ভাষা ভিন্ন আবিস্কার করে ঠিক সাথেসাথেই দাম ডাবল হয়ে যায়,যদি নরমাল দাম দশ ডলার হয় তাইলে ভিনদেশীর জন্য তা বেড়ে গিয়ে দাড়াবে বিশ ডলারে।তাই হঠাৎ করেই গতকয়েক দিন আগে সেলুনে গিয়ে মাথায় কুবুদ্ধি এসে ভর করলো চোরের সাথে বাটপারি করার।যেই ভাবনা সেই কাজ,সাথে সাথেই কোন এক গুরুজির কথা মনে আওরাতে লাগলাম যে, চোরের সাথে মাঝে মধ্যে বাটপাড়ি করা যায়,জায়েজ আছে,তেমন কিছু হয়না!!!
তাই মাথায় বাটপারি চিন্তা ভর করতেই আমি বোবা হইয়া গেলাম, মুখ দিয়ে কোন কথাবার্তা নেই একদম বন্ধ,পাশেই ওয়েটিং চেয়ারে বসে অপেক্ষা করছিলাম সিরিয়াল নিয়ে, আমার ডাক আসা মাত্রই আমি আসন গ্রহণ করিলাম, নাপিত মশাই আমারে লোকাল ভাষায় জিগায় ক্যামনে কাটমু, আমি ইশারা ইংগিত দিয়া বুঝাইয়া দিলাম, খানিকবাদে আবার জিগায়, আবার আমি ইশারা ইংগিত দিয়ে বুঝাইয়া দিলাম,কোন রকমের কথাবার্তা নেই। কিছুক্ষণ পর আয়নায় দেখি নাপিত মশাই আমার দিকে একটু পর পর তাকাচ্ছে,চাহুনিতে দয়ামায়া দিয়ে ভরা, বুঝতে পারলাম যে কাজ হইছে। হালায় অনেক বাটপাড়ি করছ এবার বাংলা বাটপাড় সামাল দাও।চোরের দশ দিন তো গৃহস্থের এক দিন।চুল কাটা মোটামুটি শেষ, আমি আর একটু নিখুঁত ইশারা ইংগিত দিয়ে বুঝাইয়া দিলাম কোন কোন জায়গায় আর একটু চুল ছোট করতে হবে,ও মা এবার দেখি নাপিত মশাই ও আমার লগে ইশারা মারতাছে।হালায় তো ফান্দে পা দিছে!! আমিতো ভিতরে ভিতরে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি, হালায় বাংলা বাটপারের কাছে ধরা খাইছে!!
এবার আসল সময়, টাকা-পয়শা লেনদেনের পর্ব!! আমি ইশারায় কইলাম কত দিমু ,নাপিত মশাই ইশারায় আমারে যা বুঝায় দিল তা শুনে তো আমার চোখ অবাক!!! নরমাল যে দাম নেয় তার চেয়ে আমার কাছে কমাইয়া অর্ধেক দাম চায়।আমি হালারে ইশারায় কইলাম নরমাল দাম নিতে, কিন্তু সে নিবেনা!! সে অর্ধেক রাইখা দিল,হালায় আমারে প্রতিবন্ধী মনে করছে!! আমি হালারে বুঝাইতেই পারলাম না যে আমি প্রতিবন্ধী নই!!!
যাই হোক,কি আর করা,আসার সময় হালারে জোরেসোরে একটা বড় করে থ্যাংকু দিয়ে আসলাম।দেখি চোখ কপালে তুইলা আমার দিকে ড্যাবড্যাব কইরা চাইয়া আছে!! আমি মুচকি একটা হাসি দিয়া ফুরফুরে মেজাজে ললিপপ মুখে দিয়ে হাটা ধরলাম!! আর এদিকে হালা নাপিত আমার দিকে হা কইরা তাকাইয়া রইলো।
হালায় ভিনদেশীদের থাইকা অনেক টাকা বাটপারি কইরা নিছে,এবার খানিকটা উশুল হইলো বাংলা বাটপারের ফান্দে ধরা পইরা !!!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৩