নোটিশবোর্ডের যে চেহারা মাঝেই মাঝেই আমাদের পোস্ট বা ব্লগের প্রথম পাতায় ঝুলে থাকে আশ্চর্য রকমভাবেই তাতে আবেগ বিষাদ কিছুই পরিস্ফুট হয় না। কারণ সেটা কখনই একটা মুখচ্ছবি নয়-প্রতিষ্ঠান আর নীতিমালা এবং অদৃশ্যমানতায় তা বৈচিত্রহীন হয়ে পড়েছে। অথচ লোগোটির তিনটি রঙের বৈচিত্র আর চরিত্রটা একবার খেয়াল করুন। টিয়া রংটাই প্রধাণ। আমি খেয়াল করেছি টিয়া পাখির গায়েই এই রঙ সবচেয়ে বেশি মানায়। ছোট বেলায় খুব পছন্দের পাখি ছিল টিয়া। কারণ শুনেছিলাম ওরাও আমাদের কথা বলতে জানত। আসলেই কি তাই-কি উত্তেজনা সেই আবেগ ভাসানো দিনগুলোতে। আকাশে ট্যাঁ ট্যাঁ ডাক শুনলেই উৎসুক হয়ে তাকাতাম। টিয়া পাখি অনেক উপর দিয়ে উড়ে যায়-থাকেও অনেক উঁচু কোন গাছের ডালে। আমার মফস্বল আর গ্রামের আকাশেও দেখেছি-প্রতিদিন সন্ধ্যায় একই পথে একঝাঁক টিয়া বিশাল কোন শিরিষ গাছের রহস্যময়তায় অদৃশ্য হয়ে যেত। কতোজন বলেছিল বাচ্চা টিয়া ধরে দিবে টাকা দিলে। কেন যেন উৎসাহ পাইনি-মনে হত টিয়া খুব স্বাধীন-একে ধরে রাখা ঠিক হবে না। তাই টিয়া মুক্ত বিহঙ্গ। সামহোয়্যারের আকাশে আমাদের তবে মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে ওঠা হয় না কেন।
আর আছে বেগুনি। বেগুনি মানেই আমার কাছে জারুল। গ্রীষ্মের জারুল আগুন যারা দেখেন নি তারা বেগুনি দেখেননি। কৃষ্ণচূড়ার দাপটে এর অবস্থান কিছুটা কোনঠাসা। নীরব গ্রীষ্মের মধ্যাহ্নে কোন নিথর জলাশয়ের শিহরিত কম্পন দেখতে থাকা উদ্ভিন্ন যুবতির দাঁড়ানোর ভঙ্গীতে একাগ্রতা আর লাজুকতা নিয়েই জারুল বেগনিতে হেসে ওঠে। ব্লগ জুড়ে অমন কতো লেখকের আবেগ-হতাশা-ভালোবাসা ভেসে যায়, নিশ্চিতে দুদন্ড দাঁড়িয়ে তা উপভোগের রেশ টা কেন যে বার বার নষ্ট হয়। ব্লগাশয়ে অনিশ্চয়তারই দাপট, আকছার কতো পুঁটি কি খোলসের গাত্র বর্ণের রঙধনু ঝিলিক ক্রমশ নাই হয়ে যায়। আমারও আর নিবিষ্ট জারুল হতে পারি না।
বাকি বরণটার গেরুয়া স্বভাব আছে। গেরুয়াকে বাঙালীর রঙই বলা যায়। সন্নাসীদের রঙ। ব্রতী হওয়ার সাধনা। ব্লগও তাই হয়ে উঠতে চায় বলেই কি মুখে গেরুয়া মেখেছে। কোন এক বোষ্টমির মতো-সমাজ সংস্কার ভেঙ্গে একাগ্র থাকবে তার সাধনায়-প্রাপ্তিবিহীন। কেবল তার সাধনাতেই সে মত্ত থাকবে। এমনটাইতো হওয়ার কথা ছিল ব্লগের। যা দরকার আমাদের দেশের জন্য-কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক। ব্লগওতো পারতো স্বপ্ন দেখাতে দুঃখ ক্লিষ্ট জনতাকে। আবেগি করে তুলতো উন্মুল নব প্রজন্মকে। শেকড় চিনিয়ে দিত শিক্ষিতকে, কোথা হতে সে এসেছে। কোন এক লাঞ্চিত বোন নির্দ্বিধায় কেঁদে যেতে পারতো ব্লগের পাতায়। রাষ্ট্রের আমানবিকতার বিরুদ্ধে মানবিক বোধকে তাক করতো। কি ভয়াবহ আমানবিক প্রতিটা দিন কাটায় অসংখ্য মানুষ-তাদের প্রতিচ্ছবিই হয়ে উঠতো পারতো ব্লগ। বাংলা ভাষার প্রথম নিদর্শন চর্যাপদ লিখার সময় থেকেই লেখকরা পলাতক-নিগৃহীত-লাঞ্চিত। হাসান আজিজুল হক-এ এসেও তা শেষ হয়নি। ব্লগ কেন সেই সংস্কৃতির চাষবাস করে নিজের শরীরজুড়ে। ব্লগই ব্যতিক্রম হয়ে উঠুক না এসবের। লেখকের নির্ভার কুঞ্জ হয়ে উঠুক।
নোটিশবোর্ডের কি কখনো ব্যান হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে-কখনো অনুভব করেছেন লিখতে না পারার যন্ত্রণা। মনোযোগ দিয়ে নিশ্চয় নোটিশবোর্ড ব্লগারদের লিখা পড়েন। কাকে কেমন মনে হয় নোটিশবোর্ডের। কোন দিকে যাচ্ছে আমাদের সাহিত্য-ভাষা-শিক্ষা। কখনো কি মন খারাপ হয় না নোটিশ বোর্ডের-ভালো লেগে ওঠে না কোন দৃশ্য-চিত্রকল্প। মনে পড়ে না ছেলেবেলা। কেঁদে ওঠে না বুকটা হু হু করে। রাগে ফেটে পড়ার অবস্থা হয় না কখনোই। নোটিশ বোর্ড মানেই কি আদালতের সংস্কৃতি। নোটিশবোর্ড তবে ভালোবাসতে পারেন না। আবেগে ভাসতে পারেন না। কেবলই দায়িত্ব পালন।
খালি ব্লগারদের নানাবিধ বিরক্তি আর ক্ষোভ গায়ে মাখতে ওই তিনরঙা মুখখানা নিয়ে কেন ব্লগে এসে হাজির হবেন। ব্যান করা আর শাস্তি দেয়ার নোংরা নালাগুলো কেন নোটিশবোর্ড ব্লগে বহমান রাখতে চান। মাঝে মাঝে আমাদের সাথেও একটু মন খারাপ করুন না। লিখুন না, একটা গল্পও লিখুন না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০০৯ রাত ১:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





