somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন আপনি পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের পক্ষ নিবেন ?

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এটা খুব পরিষ্কার যে পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প থাকবে কি থাকবে না তা সম্পূর্ণই রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। কিন্তু তারপরও জনগন এই বিষয়সহ নানা বিষয়ে তাদের মত গঠন করে এবং জনতার যে কোন মতামতের ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকে। ফলে পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের পক্ষ বিপক্ষ মতামত রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের সাথে বিরোধাত্মক না হয়ে উঠতে পারলেও এই সংক্রান্ত মতভেদ এবং পক্ষ বিপক্ষ রাষ্ট্র যন্ত্রের জন্য সুবিধাজনক। তাই পাহাড়ে সংঘাত সংঘর্ষ ধ্বংসযজ্ঞ এ সমস্তের সমাধান গিয়ে ঠেকছে যে বিন্দুতে তা হলো পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প থাকা না থাকার বিষয়ে। এটা কৌশল এবং রাষ্ট্র অথবা কোন না কোন স্বার্থপক্ষীয় রাজনীতি। এর বেড়াজাল থেকে বের হয়েই সমাধান খুঁজতে হবে।

আজ থেকে কয়েক দশক আগে অসংখ্য বাঙালি সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। আশ্রয় মানেই কেবলমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই বা অন্ন সংস্থান নয়। এর সাথে স্থানচ্যূত মানুষের আচার-সংস্কৃতি-বিশ্বাস এবং জীবনদর্শনও থাকে। আমাদের রাষ্ট্র কখনোই মানুষকে এই সকল প্রপঞ্চ দিয়ে বিচার করেনি। ফলে সমতলের মানুষদের পাহাড়ে তুলে দেবার আহাম্মকি সিদ্ধান্ত নিতে তাদের সমস্যা হয়নি। পাহাড়ে বাঙালি এবং সেনাবাহিনীর উপস্থিতি জোরদার করবার পেছনের কারণ সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার এবং পার্বত্য চট্রগ্রামও যে বাংলাদেশের তা প্রমাণ করা। এই সমস্ত যুক্তি হাস্যকর মনে হয় যখন আমাদের বাজার-অর্থনীতি-রাজনীতি-সরকার গঠন-সরকারী সিদ্ধান্ত-সমুদ্রসীমা-আকাশ পথ-পণ্য-পাট-মানব সম্পদ সবকিছুই আসলে শোষিত এবং বর্হিদেশ নিয়ন্ত্রিত ও তাদেরই চক্রান্তে ধ্বংসপ্রায়। সীমান্ত বাহিনী দিয়ে রক্ষা হয় না, রক্ষা করতে লোকাল পিপলদের প্রয়োজন হয়। সাদ্দাম তার বাথ পার্টিকে নিয়ে ইরান-কুয়েতের মতো দেশগুলোকে মোকাবেলা করে গেছে কারণ ইরাকের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর জনগণের সশস্ত্র অবস্থান। এবং ইরানের অনেক ষড়যন্ত্র সীমান্ত এলাকাতেই মার খেয়ে যায়। আমাদের দেশেও ওই লোকাল পিপলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ছাড়া কেবলমাত্র সেনাবাহিনী সীমান্ত রক্ষা করতে পারবে না।

যে বিষয়টি সাধারণ, সীমান্ত নিয়ে কোন বিরোধ তৈরি হয়নি। বিরোধ হয়েছে ভূমি নিয়ে। দুইমাস আগে থেকেই বাঙালি কিছু পরিবার পাহড়িদের আবাসস্থলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। এই নিয়েই বিরোধের শুরু। সেই বিরোধ এতোটা রক্তক্ষয়ী হয়ে উঠলো কেন। বাঘাইহাটিতে বাঙালি হোক পাহাড়ি হোক তাদের হাতে অস্ত্র আসলো কিভাবে। কেন এই ক্রোধ বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংস করলো। আগুন জ্বললো কেন? তার মানে কি জনতা বিশৃঙ্খল-এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন সেনাবাহিনী। এটাই রাষ্ট্রের কৌশল। সেনাবাহিনী কেন সমাধান হবে-ইতিহাস কি বলে। তারাই অশান্তির কারণ হয়ে উঠেছে পাহাড়ে বারবার। যে বিরোধের শুরু হয়তো কোন পাহাড়ি বা বাঙালিকে মারধরের মধ্য দিয়ে সেই বিরোধে রক্ত গড়ায় কেন। কিভাবে। আভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যারা ব্যার্থ তারা কিভাবে সীমান্ত রক্ষা করবে।

জরুরী সমাধান কোনটা। ভূমির সমস্যা নিরসন করা। সেটা কে করবে? কিভাবে করবে? ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘর-মন্দির এসবরে ক্ষতিপূরণ কি হবে। বাঙালিরা কি আসলেই পাহাড়ে থাকতে চায়? যারা চায় না তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা কি। বাঙালিদের যে সামাজিক বিপর্যয় মোকাবেলা করতে হল তার দায়িত্ব কে নিবে। কয়েকমাস আগেই ম্রোদের ওপর সেনাদের নিপীড়ণ আমরা দেখেছি। পাহাড়ে পাহাড়ে এমনই অনেক নিপীড়ণ আর নির্যাতনের ইতিহাস জমা হয়ে আছে। পাহাড়ে জীব বৈচিত্র-সংস্কৃতি-জীবনাচার ধ্বংসের জন্য দায়ী কে ? এসবের বিচার না করতে পারলে কি পাহাড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে? সাম্প্রতিক সময়ের হত্যা ধ্বংসের বিচার কি হবে? দোষীরা কি শাস্তি পাবে? ইতিহাসে কি এমন কোন নজির আছে? ভারত আজ পর্যন্ত আমাদের যে সকল পাহাড়-নদী-ভূমি দখল করে আছে সেসব বিষয়ে কোন আওয়াজ না তুলে কেবলমাত্র মানুষ মেরে হলেও পার্বত্যচট্রগ্রামের সীমানা রক্ষার কথা বলার উদ্দেশ্য কি? ভারত কি চাইলেই আমাদের দেশের কোন অঞ্চল দখল করে নিতে পারবে। বারে বারে এই জুজুর ভয় দেখিয়ে ফায়াদা লুটছে কারা। কেন পার্বত্যচট্রগ্রাম রক্তপাত হলেই কেবল খবর হয়ে ওঠে।

পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প না থাকলে কি হবে? ভারত ধীরে ধীরে আমাদের ভূমি দখল করে নিবে? এমন কোন প্রয়োজন ভারতের থাকতেই পারে। কিন্তু সমস্তরকমভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে থাকা ভারতকে মোকাবেলা করতে পারে না যে রাষ্ট্র, পাহাড়ে নিজ দেশের সীমানা রক্ষায় তার এতো তোড়জোড় কেন ? আমাদের দেশের সরকারগুলো কি সেনাবাহিনীর ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। তাহলে সেই বাহিনীই কেন তাদের ভরসাস্থল হয়ে উঠবে। আর পাহাড়িরা বাঙালি নয় বলে মুসলমান নয় বলে তাদের বিশ্বাস করতে নেই, তাদের রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত ভাবতে নেই? তারা কেবলই প্রাণী হিসেবেই বেঁচে থাকবে। পাহাড়ে অবস্থিত বাঙালিরাও তাই। তারাও আসলে প্রাণী। রাষ্ট্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার। পাহাড়ি-বাঙালি বিরোধ যে অমানবিকতার এই বোধ যে রাষ্ট্রের নাই তার কাছে প্রত্যাশা কি থাকতে পারে।

সীমানা নয়-সীমানার অভ্যন্তরে বসবাসরত মানুষই প্রধাণ। তাদের জান মালের নিরাপত্তা দেয়াই রাষ্ট্র এবং সেনাবাহিনীর কাজ। মানবতা আর মনুষ্যবিহীন সীমানার পাহারাদার হয়ে উঠতে চায় আমাদের রাষ্ট্র এবং সহযোগী সেনাবাহিনী। পাহাড়ি বাঙালি কথা নয় তারা ঘটনা তৈরি করে অথবা ঘটনার ফলাফর নিজেদের পক্ষে টেনে নেয়। এটাই ইতিহাস। সেই ইতিহাস থেকে বের হয়ে আসতে হবে।


২৮টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×