ব্লগের পরিবেশ কয়েকদিন ধরে বেশ উত্তপ্ত। হতে পারে, লকডাউনে সবার কাজকর্ম কমে গেছে। স্বাভাবিক যাপিত জীবন ব্যাহত হওয়ায় সবাই একটু হলেও বিরক্ত। তদুপরি, করোনার আতংক তো আছেই। আবার গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাবদাহে সবার মেজাজ চরমে থাকাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এহেন অবস্থায় মনে হলো, একটু উরাধুরা টপিক এনে সবাইকে হালকা করি। যেহেতু রমজান মাস। ইফতারিতে বেশ প্রয়োজনীয় একটা অনুষঙ্গ হলো 'মুড়িমাখা।' আমার খুব পছন্দের একটা খাবারও বটে। সেজন্য আজ মুড়িমাখা নিয়ে দু'চার লাইন বাজে বকে যাই। অনাকাঙ্খিত কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।
আমার মনে হয় প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ের ঝালমুড়ি বিক্রেতা মামার সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে সেই স্কুল থেকেই। তা থেকে যায় একদম ভার্সিটি অবধি বিশেষ করে যারা বাড়ি ছেড়ে হল /মেসে থাকে। ক্লাসের ফাঁকে মুড়িমাখা খাওয়া, বিকেলের আড্ডায় ঝালমুড়ি সেইসাথে এককাপ চা এগুলো মনে হয় ভার্সিটি পড়ুয়াদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রবাস জীবনের শুরুতে এসে দেখলাম এখানে মুড়ি নেই, সরিষার তেলও নেই। আমার তো মাথায় হাত। ভীষণ মিস করতে থাকলাম- বৃষ্টির দিনে ''আজি ঝড়ো ঝড়ো মুখর বাদল দিনে'' গান ছেড়ে চানাচুর, পেঁয়াজ আর কাঁচামরিচ কুঁচি করে সরিষার তেল দিয়ে মুড়িমাখা খাওয়া; শীতের সকালে সেই কাঁচাসোনা রোদে বসে আব্বুর হাতে মাখানো সুস্বাদু মুড়িমাখা খেতে খেতে বাড়ির অন্য সবার সাথে আড্ডায় মেতে ওঠা। প্রচন্ড স্মৃতিকাতর করে তুললো ব্যাপারটা। এভাবে কেটে গেল প্রায় দেড় বছর। অবশেষে নতুন শহরে পাড়ি জমানোর সুবাদে বাঙালি কলিগ মারফত জানতে পারলাম, এখানে মুড়ি, চানাচুর, সরিষার তেল এমনকি বাংলাদেশী মাছ ও পাওয়া যায়। কালক্ষেপণ না করে সেদিন বিকেলেই চলে গেলাম ওই দোকানে। বরকে বললাম অফিস শেষ করেই যেন দোকানটাতে চলে আসে। দোকানে যাবার পর বাংলায় ''রুচি চানাচুর,'' '' রুচি মুড়ি'', মাছের প্যাকেটে ‘’বাংলাদেশের নদী থেকে ধৃত’’ লিখা দেখে আমি রীতিমত আপ্লুত হয়ে গেলাম। যা পাচ্ছিলাম, পাগলের মত ঝুড়িতে ভরছিলাম। খানিকক্ষণের মধ্যে বর হাজির। আমার কর্মকান্ড দেখে তার চোখ ছানাবড়া। তবে আমার আবেগ বুঝতে পেরে বেচারা কিছুই না বলে ঐদিন সব কিনতে দিয়েছিল।
বাসায় এসে সাথে সাথেই ধনেপাতাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে মুড়ি মাখালাম। অতঃপর দু'জনে মিলে পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে কখন এক গামলা পরিমাণ মাখা শেষ করলাম, টের-ই পেলাম না। মনে হলো, দু’-চার চামচ খেয়েছি মাত্র। তারপর থেকে মন চাইলেই মুড়ি কিনে নিয়ে এসে মাখিয়ে খাওয়া হয়।
তবে রাস্তার ধারের খোলা দোকানের মামাদের হাতে মাখানো ওসব ঝালমুড়ির টেস্ট টা যেন একটু বেশি- ই স্পেশাল লাগে। ওসব দোকানে খেতে গিয়ে দোকানদার মামাকে বলতাম, বেশি করে ঝাল দিতে। এতবেশি ঝাল দিতেন যে মুখে ভরতেই জিহবা একদম জ্বলে যেতো, চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তো; তবুও খাওয়া থামাতাম না। আরো মনে পড়ে, আমাদের কলেজের কমনরুমে একজন মহিলা আচারের তেল দিয়ে মাখানো বেশ মজার ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। বান্ধবীরা মিলে প্রায় প্রতিদিন ই দশ টাকার করে কিনে খেতাম। আহারে ... আমার সেই স্বর্ণালী অতীত!!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০২০ রাত ৯:২৬