somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কেন এমন অমানবিক হচ্ছি?

১১ ই জুন, ২০২০ সকাল ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশের কোনো এক গ্রামের কথা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার জন্য কয়েকটি বাড়ি পুরোপুরি লক-ডাউন করে দেয়া হয়েছে। খবরটি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আক্রান্ত মানুষজন সবার চক্ষুশূল হয়ে গেছে। যেন মহাপাপ করে ফেলেছে! তাই, তাদের একঘরে করে ফেলা হয়েছে। তারা বাইরে বের হতে পাচ্ছেনা। ওদিকে ঘরে খাবার ফুরিয়ে গেছে। আত্মীয়-স্বজন কেউ ফোন ধরেনা। পাড়া -প্রতিবেশীরাও তাদের ডাকে সাড়া দেয়না। একরকম না খেয়ে থাকবার উপক্রম। শেষমেশ, গ্রামের মেম্বার জানতে পেরে তাদের প্রয়োজনীয় বাজার সদাই করে দিয়ে এসেছে। ঘটনাটা শুনার পর বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। করোনা হবার দায়ে মানুষজনকে তো দেখছি না খেয়ে মরতে হবে!

মানুষ কেন এমন নিষ্ঠুর আচরণ করছে এসব নিয়ে ভাবতে গেলে যে দিকটি উঠে আসে সেটি হলো -আতংক। কখন কে কোথায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছে, তা ঠাওর করতে পারা যাচ্ছেনা। দেখা যাচ্ছে, বড়ো বড়ো কর্তাব্যক্তিরাও আক্রান্ত হচ্ছে। আবার ভাইরাসটি ছোঁয়াচেও বটে! তাই, মানুষ স্বভাবতই ভয় পাচ্ছে এবং আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরে থাকছে। সেক্ষেত্রে, সবাইকে বুঝাতে হবে যে করোনায় আক্রান্ত হওয়া কোনো অপরাধ নয়। নিরাপদ দূরত্বে থেকে সঠিক সুরক্ষা কৌশল অবলম্বন করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানো যেতে পারে। অন্ততঃ তাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর যোগান দেয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করা যেতে পারে। যেমন: আপনার প্রতিবেশী পরিবার কোয়ারেন্টাইনে থাকলে আপনি বাজারে যাবার সময় দূর থেকে জিজ্ঞেস করে নিতেই পারেন তার কোনোকিছু কেনার প্রয়োজন আছে কিনা। তবে, অবশ্যই আপনাকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আরেকটা কারণ হতে পারে- স্বার্থপরতা। মানুষ হিসেবে আমরা ভীষণ রকমের স্বার্থপর, সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সবসময় নিজের ভালোটা বুঝি; তাতে অন্যরা চুলোয় যাক। গুজবে কান দিয়ে জিনিসপত্র স্টক করে বাজার খালি করার প্রবণতা, সেই স্বার্থপর দিকটা স্পষ্ট ইঙ্গিত করে। 'আমি বাঁচলে বাপের নাম' প্রবাদে বিশ্বাসী আমরা সর্বদায় নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। সেজন্য অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে পালিয়ে বেড়াতে আমাদের বাধেনা।

মানুষ কিন্তু নিষ্ঠুর হয়ে জন্মায়না। তার পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন উপাদান তাকে অমানবিক করে, কখনো কখনো হিংস্র করে তোলে। কিছুক্ষেত্রে অমানবিক আচরণ আসে অসহায়ত্ব থেকে। দেশের যে চিকিৎসা ব্যবস্থা তাতে করে সাধারণ জনগণ আক্রান্ত হলে সঠিক চিকিৎসার অভাবে দুর্বিষহ কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে একথা সবার জানা। আর জেনেশুনে কেউ নিশ্চয় বিষপান করতে চাইবেনা। বলা হয়ে থাকে যে যেকোন মানুষকে পরিস্থিতির চাপে ফেললে সে অন্যায় করবে, নিষ্ঠুর আচরণ করবে। তাই, প্রচলিত সিস্টেম এবং পরিবেশ -পরিস্থিতি মানুষকে এমন নিষ্ঠুর আর কঠোর হবার জন্য নিদারুন অসহায় করেছে এমনটি বলা যেতেই পারে।

সবাই অমানবিক আচরণ করছে এমন বললে ভুল হবে। পত্রিকার পাতা উল্টিয়ে যেমন দেখতে পাচ্ছি, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে তার পরিবার দূরে ফেলে দিচ্ছে আবার এও দেখতে পাচ্ছি কিছু মানবিক মানুষ পরম মমতা আর ভালোবাসা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। গরিব, অসহায় মানুষদের সাহায্য করার জন্য অবিরাম ছুটে যাচ্ছে দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। এসব ভালো খবর আমাদের আশা জাগায়। পক্ষান্তরে, আপন মানুষ হয়ে, প্রতিবেশী হয়ে মানুষের সাথে পাষন্ডের মতো আচরণের সংবাদ আমাদের অন্তরে পীড়া দেয়। ভয় হয়, তবে কী মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর যে গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য আমাদের আছে তা দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে! এমন দ্বিধান্বিত ভাবনা থেকেই আসলে মনে প্রশ্ন জাগে যে আমরা এমন অমানবিক হলাম কবে? আমাদের শাশ্বত চিরন্তন পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের সাথে তো এমন আচরণ ঠিক যায়না।

মানুষের মানবিক পরিচয়ের চেয়ে সত্য আর সুন্দর কী হতে পারে! আশাবাদী মানুষ আমি, তাই খুব সহজে হতাশ হতে চাইনা। যদিও নিদারুন হতাশাবোধ থেকে এই পোস্টের অবতারণা। তবুও আমরা ভালোবাসা ও মানবিকতার মশাল জ্বালিয়ে হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতা আর অমানবিকতার অমানিশা দূর করার দৃঢ় মানসিকতা গড়ে তুলবো এমন একরাশ আশা নিয়ে লিখাটি শেষ করতে চাই। সবাই ভালো থাকুন। চারপাশটা ভালোর আলোয় ভরিয়ে দিন।

ফটো ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:০২
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×