'পুরুষ' মানে মেয়েদের প্রথম হিরো ও শক্তিশালী প্রেরণাদাতা বাবা, খুঁনসুটি আর সারাক্ষণ জ্বালিয়েও দিনশেষে বিপদে ভরসা হয়ে থাকা ভাই, সুখে -দুঃখে পাশে থাকা বন্ধু, পরম নির্ভরতায় হাতে হাত রেখে একসাথে পথচলা জীবন-সঙ্গী। এসব মানুষগুলোই কিন্তু আমাকে, আমাদেরকে সামনে এগিয়ে দেয় সাহস জুগিয়ে, অভয় দিয়ে। আমরা মেয়েরা হয়তো খুব সহজে নিজেদের মনের কষ্ট সবার সামনে এক্সপোজ করতে পারি। কিন্তু একটা ছেলে সবার সামনে কাঁদতে পারেনা। তাহলে মানুষ তার 'পৌরুষত্ব' নিয়ে কথা তুলবে। এমনকি আমারো যে এমন মেন্টালিটি ছিলোনা তা নয়। কিন্তু সময়ের সাথে উপলব্ধি করতে পেরেছি যে আবেগ তো সব মানুষেই থাকে। তা হোক পুরুষ কিংবা নারী। আমার মনে হয়, কান্না পেলে কাঁদতে হবে। মন খুলে কাঁদতে হবে তাতে বরং রিল্যাক্সড লাগবে। সাইকোলোজিস্টরাও কিন্তু কেঁদে মন হালকা করতে বলেন। 'পুরুষ মানুষ কেন কাঁদবে' এই ধারণা বদলের সময় এসেছে। যখন-তখন সবার সামনে কান্নাকাটি করা মেয়ে-ছেলে যে কারো জন্যই হয়তো খুব একটা শোভনীয় নয়। কিন্তু একান্তে একজন মানুষ (নারী অথবা পুরুষ) তার কাছের মানুষদের সামনে যেন মন খুলে কাঁদতে পারে, অবলীলায় সব দুর্বলতা শেয়ার করতে পারে সেই সুযোগটা তৈরী হওয়া উচিত।
আমার পরিচিত একজন জার্মান মহিলার সাথে একদিন বেশ লম্বা সময় ধরে গল্প করছিলাম। ওদের আর আমাদের কালচার, সামাজিক রীতিনীতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ, নারী-পুরুষের বৈষম্য ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ চলছিল। কথায় কথায়, পুরুষের কান্নার প্রসঙ্গ এলো। ভদ্র মহিলার তিন সন্তান। হঠাৎ ই লক্ষ্য করলেন যে তার নয় /দশ (সঠিক বয়স মনে করতে পারছিনা) বছর বয়সী ছেলের কোনো এক কারণে খুব কান্না পেয়েছে কিন্তু সে শক্ত হয়ে আছে। ভদ্র মহিলা তার ছেলেকে বারবার বুঝানোর চেষ্টা করছিলেন, ''কাঁদতে ইচ্ছে হলে তুমি কাঁদবে। অবশ্যই কাঁদবে।'' তিনি বারবার ফোকাস করছিলেন যে তার ছেলে সন্তানটি যেন 'ছেলে মানুষ' হবার দায়ে সব কষ্ট একা চেপে রেখে মানসিক অবসাদে না ভুগে সে ব্যাপারে মা হিসেবে তিনি খুব সচেতন। সুস্থ প্যারেন্টিং এর এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। প্রতিটি পুরুষ মানুষ সুস্থ মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠুক, সামনে এগিয়ে চলুক এমনটাই প্রত্যাশা। সেইসাথে আরো চাইবো, সকল পুরুষ ই যেন 'মানবিক মানুষ' হয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে।
সবাইকে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের শুভেচ্ছা।
ছবি সূত্র: গুগল
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ২:২৫