somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বান্দরবান - রুমা - বগালেক - কেওক্রাডং...... মেঘকন্যার হাতছানি (ছবি ব্লগ + ট্র্যাভেল হেল্প)

১৭ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃষ্টিভেজা বর্ষায় বা মেঘমেদুর হেমন্তে বাংলাদেশে ঘোরার সবচেয়ে ভালো জায়গা কোনটা ? বান্দরবান, নিঃসন্দেহে। ঘোরাঘুরি করতে করতে আমরা গিয়ে পড়লাম বান্দরবানে............। ট্রেকিং জিনিসটার সাথে পরিচয়, আর পাহাড়ের সাথে প্রেম !!! বোতাম আটা জামার নিচে শান্তিতে শয়ান বাংলা এই প্রাণ কেন এতো উন্মণা হয়ে উঠলো, তারই কিছু কিছু টুকরো স্মৃতি তুলে দিচ্ছি।

রাতের গাড়ীতে যাত্রা শুরু............ আধো ঘুম আধো তন্দ্রায় দেখলাম হানিফের নাইটকোচটা স্রেফ উড়ছে। চট্টগ্রাম হয়ে কেরাণীর হাট পেরিয়ে বান্দরবান বাসস্ট্যান্ডে নেমে গেলাম সকাল সাতটার কিছু আগে। একটা মাহেন্দ্রো অটো (জিনিসটা আসলে সিএঞ্জি আর মিনিজীপের সংকর) ভাড়া করে নেয়া হলো............অভিযান শুরু।


প্রথমেই ট্যুরিস্ট স্পট স্বর্ণমন্দির......... যার ভালো নাম হলো বৌদ্ধ ধাতু জাদি !

স্বর্ণমন্দির - ফুল ভিউ। সকালের রোদে চিকচিক করছে, চোখ ঝলসানো আলো !!! এই মন্দিরের টপে দাঁড়িয়ে শহরের একটা অদ্ভুত ভিউ পাওয়া যায়।
স্বর্ণমন্দির দেখে আমরা গেলাম নীলাচল, মেঘলা। আগে দেখা এই স্পটগুলো এখন কেন যেন আর টানে না। নীলাচলে একটা বাংলা ফিল্ম শুট করা হয়েছিলো, নাম 'আকাশ ছোয়া ভালোবাসা'। বান্দরবান শহরের পাট চুকিয়ে এবার রুমা। দ্রুত আমরা বাস ধরলাম কৈক্ষাংঝিরি যাবার জন্য, যেটার বাংলা নাম নাকি কাঞ্চনঝিরি !!!

সাঙ্গু নদী।

কৈক্ষাংঝিরি থেকে ইঞ্জিন বোট। শান্ত নিস্তরঙ্গ নদীর পানি কেটে আমাদের নামিয়ে দিলো রুমা বাজারে। রাত কাটিয়ে আর্মি ক্যাম্পে হাজিরা দিয়ে বগালেক যাওয়ার জন্য আমরা উঠলাম চান্দের গাড়িতে, গন্তব্য শৈরাডং পাড়া। এরপর আর গাড়ির রাস্তা নাই।

শুরু হলো ঝিরিপথে ট্রেকিং।

সাপটার নাম চেরেক......... আমাদের সাথে চলা একটা বম পরিবারের কর্তাবাবুটি জানালেন, বিষাক্ত সাপ। কে যেন একটু আগেই থেতলে দিয়ে গেছে............ এখনো লেজ নাড়াচ্ছে বেচারা !!!

বগালেকের খুব কাছে এই মারমা পাড়া। ছবিটা বগা লেকের মুখ থেকে তোলা।

প্রায় হাজারখানেক ফুট উঠে এসে হঠাত সামনে যখন এই সুবিশাল জলরাশি হাজির হয়............... তখন “স্তব্ধভাষ রুদ্ধশ্বাস বিপুল বিস্ময়ে স্তম্ভিত” হয়ে যেতে হয়। বছরের কোন একটা সময়ে বগা লেকের পানি নিজে থেকেই ঘোলা হয়ে যায়। বম'রা বলে, লেকে নাকি একটা ড্রাগন থাকে !!! তবে বগা লেকের হাইট নিয়ে ভ্যাজাল আছে। গুগল আর্থে ১১০০+ ফুট হাইট দেখালেও সরকারী নানান সোর্সে এর হাইট ২৬০০-২৭০০ ফুট পর্যন্ত বলা হয়েছে।


তালহা ভাই দিলেন ঝাপ বগা লেকের নীল পানিতে।

আমরা ঘাটের কাছাকাছিই ডুবাডুবি করছিলাম। খুব ছোট ছোট এক ধরণের মাছ আছে এখানে। ঘাটের সিড়িতে পা ডুবিয়ে বসলে টুকুস করে কামড় দিয়ে যায়। দুপুরে বগা লেকের এক্সপেন্সিভ খাবার (ডিম ভাজি, ডাল-ভাত - ১২০ টাকা !!!) খেয়ে খানিকটা জিরিয়ে যাত্রা শুরু কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে।

যাত্রা শুরু

পাহাড়ের বিশালতার এই সৌন্দর্যের কাছে হার মানে সব ক্লান্তি

মাঝে মাঝেই এই ধরণের পাথুরে বোল্ডার ঘেরা ঝিরি পড়ে। আমরা পানির বোতল রিফিল করতে ছোট ছোট বিরতি নিচ্ছি।

বিকেলের নরম রোদ, স্বর্গীয় এই ভিউ......... কেওক্রাডঙ্গের কোলে বম বসতি দার্জিলিং পাড়ার খুব কাছে আমরা।

দার্জিলিং পাড়ায় নেয়া হল একটা চা বিরতি

সূর্য ডুবে গেলো পাহাড়ের ওপাশে। আমরা রাত কাটাবো ৩০০০ ফিট উপরে............ কেওক্রাডং এর চূড়ায়।

আলাপ হলো কেওক্রাডং পাহাড়ের "মালিক" লালা দা'র সাথে। তার পুরো পরিবার ওখানে বাস করে, একটা বোর্ডিং টাইপের ব্যাপারও সেখানে আছে। যা হোক, তার আশ্রয়ে পাহাড়ী মোরগের শক্ত গোশত-ভাত খেয়ে আমরা কাত। কনকনে ঠান্ডা আবহাওয়া আর ভেজা বাতাস......... পাহাড় চূড়ায় ঘুমাতে যে এতো আরাম তা কে জানতো !!!

ভোরের নরোম আলো............ কেওক্রাডং এর চূড়ায়

দুধসাদা মেঘ কন্যারা ঘিরে আছে চারদিক.........

ধোয়াটে মেঘের মধ্য দিয়ে ট্রেকিং - ফিরতি যাত্রা শুরু। সময়ের বড়ই টানাটানি, এযাত্রা জাদিপাই ঝর্ণা না দেখেই ফিরতে হচ্ছে।

দার্জিলিং পাড়া - এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি।

ফিরতি পথে আবার বগালেক হয়ে রুমা বাজারে সাঙ্গু পেরিয়ে চলে এলাম কৈক্ষাংঝিরি। সময়ের টানাটানিতে বগা লেকে এবার নামা হলো না।

ফেরার সময় সাঙ্গু নদী - এই ব্রীজটা এরশাদের আমল থেকেই নাকি এভাবে দাঁড়িয়ে আছে, আর এর কারণ নাকি পাহাড়িরা !!! ওরা চায় না ব্রীজ হোক, তাহলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হয়ে যাবে, আর বাঙ্গালী সেটেলাররা আস্তানা গেড়ে বসবে পাহাড়ে। তাদের এই আশঙ্কা নেহায়েত মিথ্যা নয় !

বান্দরবান পোস্ট অফিসের পাশে হোটেল গ্রীনল্যান্ডে রাত কাটিয়ে আমরা বেরিয়ে গেলাম পরদিন সকালে। এবার নেয়া হলো একটা ল্যান্ড ক্রুজার জীপ, গন্তব্য নীলগিরি, চিম্বুক আর শৈলপ্রপাত।

বান্দরবানের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্পট - শৈলপ্রপাত

নীলগিরি - যেখানে মেঘ ছোয়া যায়। বান্দরবান জেলার ম্যাপ, সাথে একটা স্টেইনলেস স্টিলের মই। আবার বলে - উপরে উঠা নিষেধ। আরে বাবা নিষেধ তো মইটা দিয়া রাখসেন ক্যান?

নীলগিরি - একটু ভাব নিয়ে দাড়ালাম আর কোত্থুকে এক বিশাল মেঘ এসে হাজির হলো

রাম পাহাড় আর সীতা পাহাড় - এ দুইয়ের মাঝখানে নীলগিরি, হাইট ২৭০০ ফুট। দূরে দেখা যায় ধোয়াটে মেঘের আড়ালে সীতা পাহাড়।

বান্দরবান শহরের চৌরঙ্গী। এবারের মত বিদায় !


বিঃদ্রঃ - আমরা এই ট্যুরটা করেছিলাম ২০১১ সালের অক্টোবরে :P:P। পাঁচ রাত চার দিনের এই ট্যুরে সাকূল্যে আমাদের খরচ ছিলো জনপ্রতি ২৯০০ টাকা, টিম ছিলো আট জনের। আর কিছু ছবি আমার ট্যুর গুরু বিশিষ্ট মুভিখোর ব্লগার দারাশিকো ভাইয়ের কপিরাইট করা.........

ট্র্যাভেল হেল্প - বান্দরবান শহরের স্পটগুলো দেখতে জীপ বা চান্দের গাড়ী, টিমের সদস্য অনুসারে নিয়ে নিতে পারেন, সীজন ভেদে খরচ পড়বে ৩০০০-৬০০০, সারাদিনের জন্য। আর কইক্ষাংঝিরি যাবার বাস ভাড়া ৬০-৭০ টাকা, রুমাতে থাকার হোটেল পেয়ে যাবেন আর তারাই গাইড ম্যানেজ করে দিবে। গাইডের সাথে ভালোমত কথা বলে নেয়াটা জরুরী, সাথে তার ফিসটাও। এরপর যত উপরে উঠতে থাকবেন, খাওয়ার খরচ ততই বাড়তে থাকবে। সেক্ষেত্রে শুকনো খাবার নিয়ে যাওয়াটা ভালো হতে পারে।

তবে যেখানেই যান, পলিথিন, প্লাস্টিক বোতল বা অন্যান্য বর্জ্য যত্রতত্র ফেলে প্রকৃতির বারোটা বাজাবেন না............ প্লিজ !

হ্যাপি ট্র্যাভেলিং :)



সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২২
২৬টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×