আমার দেশের পাহাড়
এক মাসে তিন জন এভারেস্ট জয়ী............ বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে মাউন্টেনিয়ারিং এখন রীতিমত একটা ক্রেজ! তবে এটাও সত্য, এখনও পর্যন্ত অফিসিয়ালী আমরা ঠাহর করতে পারিনি দেশের উচ্চতম পিক কোনটা। বইপত্রে তাজিংডং এর বিজয় পিক, আরও পুরাতন নথি......... সাধারণ মানুষের ধারণা এবং সিআইএ’র রেকর্ডে (!!!) সেটা কেওক্রাডং, আর ট্রেকারদের মতে সাকা হাফং। ওদিকে আবার প্রথম বাঙ্গালী হিসেবে ওয়াসফিয়া নাজরীন নেমেছেন সেভেন সামিটের মিশনে। আর আমরা ? একে তো পোষমানা বাঙ্গাল এ প্রাণ শান্তিতে শয়ান, তার উপর পকেটেও অর্থকড়ির ব্যাপক টান। তবে ছবিতে ছবিতে ঐ চূড়াগুলো ঘুরে আসতে দোষ কি?
বাংলাদেশের সম্ভাব্য উচ্চতম সাতটি পাহাড় -
১। সাকা হাফং
পাহাড়টার নাম তল্যাং ময় (বম ভাষা), মোদক থুয়াং এবং সাকা হাফং (ত্রিপুরে ভাষা), সাকা হাফং শব্দটার অর্থ পূবের পাহাড়। বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তঘেষে মোদক রেঞ্জের এই পাহাড়ের হাইট ১০৬৩ মিটার।
২। ডুম লোং
রাঙ্গামাটির এই পাহাড়টির উচ্চতা ১০০৮ মিটার।
৩। মোদক মুয়াল
এর উচ্চতা ৯৮১ মিটার। মোদক রেঞ্জের এই পাহাড়টিও বান্দরবানের থানচিতে অবস্থিত।
৪। কেওক্রাডং
কিছু পুরাতন নথি, বইপত্র আর সাধারণ মানুষের বেশিরভাগের ধারণা অনুসারে এটি বাংলাদেশের উচ্চতম পাহাড়, যদিও এর উচ্চতা ৯৫৪ মিটার। বান্দরবানের রুমায় অবস্থিত পাহাড়টি এখন অনেকটা পিকনিক ট্রেইলের মত হয়ে গেছে !!
কেওক্রাডং........ চূড়া থেকে তোলা
৫। র্যাং তল্যাং (Rang Tlang)
বান্দরবানের এই পাহাড়ের উচ্চতা ৯৫২ মিটার।
৬। মোদক -২
বান্দরবানের থানচির মোদক রেঞ্জের এই পাহাড়ের উচ্চতা ৯৪৬ মিটার
৭। কাপিতাল
বান্দরবানের থানচির রাইক্ষং অঞ্চলের কাপিতাল পাহাড়টির উচ্চতা ৯৩৯ মিটার।
৮। তিন মাথা
রাঙ্গামাটির এই তিন মাথা পিকের উচ্চতা ৯৩৬ মিটার, এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, এর চূড়ায় একটা সীমানা পিলার বসানো আছে যা একই সাথে ভারত, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সীমানা নির্দেশ করছে!
এবারে আরও দু’টি পাহাড় চূড়া দেখা যাক, যা বাংলাদেশী হাইকারদের কাছে জনপ্রিয়।
সিপ্পি আরসুয়াং
বান্দরবানের রোয়াংছড়ীতে অবস্থিত পাহাড়টির উচ্চতা ৮৯৬ মিটার। এটি একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট রেঞ্জের পিক। সিপ্পি আরসুয়াং শব্দটার অর্থ - মোরগের ঝুটি।
তাজিনডং বা লুংফে থুয়াং
অফিসিয়ালী বাংলাদেশের বেশির ভাগ কাগজপত্রে এই তাজিনডং এর বিজয় পিককেই উচ্চতম পাহাড় হিসেবে দেখানো হয়। থানচিতে অবস্থিত এই তাজিনডং পাহাড়ের তিনটা পিক রয়েছে............ তাজিন্ডং, চিঞ্চিরময় এবং লং ফে ডং, উচ্চতা ৮২৯ মিটার।
এবার আসুন দেশ ছেড়ে সেভেন সামিটে যাওয়া যাক। বিশ্বের সাত মহাদেশের সাতটি উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ জয় করার নামই হলো সেভেন সামিট।
অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ - মাউন্ট কোসিয়াস্কো (হাইট ২২২৮ মিটার)
ইউরোপ মহাদেশ - আল বুরুজ (হাইট ৫৬৮১ মিটার
আফ্রিকা মহাদেশ - মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো (হাইট ৫৮৯৫ মিটার)
উত্তর আমেরিকা মহাদেশ - মাউন্ট ম্যাককিনলী (হাইট ৬১৯৪ মিটার)
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ - মাউন্ট অ্যাকোঙ্কাগুয়া (হাইট ৬৯৬২ মিটার)
বরফ রাজ্য অ্যান্টারকটিকা মহাদেশ - মাউন্ট ভিনসেন্ট ম্যাসিফ (হাইট ৪,৮৯২ মিটার)
এশিয়ার উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গটা তো জানিই, তাই তাকে দেখবার আগে চলুন দেখে নেই আমাদের ঘরের পাশে যে মাথা উচিয়ে আছে, তাকে।
মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা (হাইট ৮৫৮৬)
আর এবার এশিয়া মহাদেশ - রাজাধিরাজ মাউন্ট এভারেস্ট (হাইট ৮৮৪৮ মিটার)
মাউন্ট এভারেস্ট
২০১০ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বের মাত্র ২৭৫ জন পর্বতারোহী সম্পন্ন করেছেন এই সেভেন সামিট। স্বল্পতম সময়ে (মাত্র ১৩৬ দিন !!) সাত মহাদেশের সাত চূড়া জয় করার রেকর্ড হেনরিক ক্রিশ্চিয়ানসন নামক এক ড্যানিশ যুবকের, ২০০৮ এ এই রেকর্ড করেন তিনি। প্রথম মহিলা হিসেবে মিস জুনকো তাবেই ১৯৯২ সালে সম্পন্ন করেন সেভেন সামিট। জুনকো তাবেই কিন্তু বিশ্বের প্রথম মহিলা এভারেস্টজয়ীও বটে। আমাদের ওয়াসফিয়া আপুও নেমেছেন সেভেন সামিট সম্পন্ন করার মিশনে।
তার জন্য রইলো শুভকামনা।
# বাংলাদেশী পিকগুলোর কিছু ছবি ও তথ্য http://www.banglatrek.org থেকে নেয়া। তালিকাটিকে সম্ভাব্য উচ্চতম বলছি............... কারণ এ পোড়া দেশে এখনো আমাদের পিকগুলোর উপর কোন অফিসিয়াল সার্ভে করা হয়নি।
# আমি নিজে কেওক্রাডং ছাড়া কোন পাহাড়ে এখনও উঠিনাই, তবে বছর দুইয়ের মধ্যে বাংলাদেশী সেভেন পাহাড় সামিটের ইচ্ছা আছে। আর ঘুমের মাঝে স্বপ্নে মাঝে মাঝেই এভারেস্টে উঠি, সকালে নিজেকে ফ্লোরে পতিত অবস্থায় আবিস্কার করি :p :p :p

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


