somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যৌতুক : নারীর অবমূল্যায়ন রোধ করতে শুধুই সেমিনার / সিম্পোজিয়াম

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে সুন্দর চেহারা দিয়ে শ্রেষ্ঠ করে তৈরি করেছেন। কিন্তু আজ মানুষের কত অধ:পতন। সেই জাহেলিয়াতের যুগের সাথে আজকের সভ্যতার যুগের কোন অমিল খুঁজে পাওয়া ভার। মানুষ যত শিক্ষিত বা সভ্য হচ্ছে ততই যেন অসভ্যতাও বেড়ে চলেছে। সমাজে কিছু কিছু খারাপ রীতি এখনো বিদ্যমান। ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে যেসব রীতি-নীতি সমাজে বহুদিন ধরে অস্তিত্ব বজায় রেখেছে তার মধ্যে যৌতুক প্রথা বিশেষ অগ্রগণ্য। বিয়ে সংক্রান্ত ব্যাপারে বরপক্ষ কন্যাপক্ষের থেকে যে টাকা, অলংকার, গৃহ সরঞ্জাম সামগ্রী এবং বিনোদনমূলক সামগ্রী গ্রহণ করে তাকেই যৌতুক বলে। এই অমানবিক প্রথা মানুষকে অবমূল্যায়ন করছে। বৃদ্ধি করছে সামাজিক সমস্যা নিয়ে আসছে মানব জীবনে বিপুল দু:খ-দুর্দশা। ধনীদের বেলায় এই প্রথা একটা সৌখিনতা বা বিলাস; কিন্তু দরিদ্রদের জন্য এটা একটা অভিশাপ। ধনীরা ইচ্ছে করেই মেয়ে বিয়ে দেয়ার সময় বাড়ি-গাড়ি পর্যন্ত দিয়ে থাকে। ধনীদের দেখাদেখি সমাজের সর্বস্তরে যৌতুক বাধ্যতামূলক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। সাধ্য থাক আর না থাক যৌতুক দিতেই হবে। কঠোর আইন আছে সমাজের ঘৃণাও আছে দুষ্ট ক্ষতের মতো যৌতুক প্রথা সমাজ জীবনে নিরাময় অযোগ্য হয়ে আছে। যৌতুকের জন্য কত নিরপরাধ নারীর জীবন যে বিসর্জন দিতে হচ্ছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আজ যেন মেয়েরা পৃথিবীতে একটা মহাঅভিশাপ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মই যেন তাদের আজন্ম মহাপাপ। যৌতুকের পরিমাণ সন্তোষজনক না হলেই অনেক নিরপরাধ বধূকে অসহ্য নির্যাতন সহ্য করতে হয়। পরিত্যক্ত হতে হয়, এমন কি জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতে হয়। আমাদের সমাজে অহরহ ঘটে যাচ্ছে এরূপ হাজার হাজার গৃহবধূ স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির নির্যাতনে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা যৌতুক দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে না পেরে সেও আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। যে গৃহবধূ স্বামীর সংসারে সোহাগ স্নেহ ও ভালোবাসা পাবার কথা, সেই আজ যৌতুকের কারণে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা তিরস্কারসহ শত-সহস্র যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে।
যৌতুকের ভার যত বেশি কন্যার সমাদরও তত বেশি হবে, এমন একটা প্রত্যাশা মাতা-পিতাকে উদ্দীপ্ত করে।যৌতুকের পরিমাণের সাথে সাথে পাত্রের যোগ্যতার সম্পর্ক বিদ্যমান। আবার কন্যার অযোগ্যতার অবলুপ্তির জন্য যৌতুক শূন্যস্খান পূরণে সহায়তা করে। যৌতুকের সুযোগ আছে বলেই উত্তম পাত্র ধরার ফাঁদ হিসেবে তা ব্যবহৃত হয় অনেক ক্ষেত্রে। পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্খায় বর বা বরপক্ষ মনে করে যৌতুক তার ন্যায্য পাওনা এবং স্বীকৃত শর্তের যদি এক তিলও কম পড়ে তাহলে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায়। আর তার সর্বনাশা পরিণতি ভোগ করতে হয় নিরপরাধ বউটিকেই। ঘর ভাঙ্গাতো অতি সাধারণ ব্যাপার। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনে শিকার বউটির বেঁচে থাকার কোন সার্থকতাই থাকে না। যৌতুকের সর্বনাশা রীতিতে মানুষের মর্যাদা হারিয়ে কন্যা হয় ক্রয় বিক্রয়ের বস্তু আর কন্যার অসহায় অক্ষম পিতা হয় একজন নতজানু ব্যক্তি মাত্র। সমস্ত অত্যাচার প্রয়োগ করে প্রাগৈতিহাসিক মানসিকতার পরিচয় দেয় বরপক্ষ। কিভাবে কন্যাটিকে বিদায় করা যায় প্রয়োজনবোধে পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের ব্যবস্খা করে যৌতুকলোভী মনের ক্ষোভ মেটানো হয়। প্রতিদিনের সংবাদপত্রের পাতা খুললেই এমন অনেক ঘটনা চোখের সামনে সাক্ষী হয়ে দাঁড়ায়। সব নারীর সুন্দর সম্পর্কের মধ্যে কেন যৌতুকের দাবি উঠে তা বিবেচনা করলে নারীকে বস্তুর সাদৃশ্যে বিচার, শোষণবৃত্তি প্রভৃতিকেই কারণ হিসাবে লক্ষ্য করা যায়। সমাজে নারীর অবমূল্যায়ন যৌতুক প্রথার উৎপত্তির উৎস। কন্যাকালে পিতার, যৌবনে পতির, বার্ধক্যে পুত্রের অধীনরূপে নারীর মূল্য দেয় আমাদের সমাজ। কিন্তু ইসলাম কি তাই বলেছে? ইসলাম নারীর ওপরে জুলুম চাপিয়ে দেয়নি বরং নারীকে রক্ষা করেছে। তাই ইসলামের আইন দিয়ে আমরা সমাজের এ কুপ্রথাগুলোকে পরিষ্কার করে শান্তির আশ্রয় খুঁজে পেতে পারি। আর তাই তো আমাদের ইসলামকে জানা এবং মানা একান্ত জরুরি। সমাজে নারীকে ইচ্ছা বা অনুভূতির মানবিক স্বতন্ত্রে মূল্যায়িত না করে জড়বস্তুর মতো ভাবা হয়। এই অবমূল্যায়নের সঙ্গে যৌতুকের অর্থ সমনðয় করে নারীর স্খান নির্ধারণ করা হয়। এখনকার দিনে মূল্যবোধ ঝুলে আছে নীতিবর্জিত টাকার আংটায়। মুসলমান সমাজে মেয়েরা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হলেও উপরি পাওনার মতো যৌতুক সেখানে স্খান করে নিয়েছে। ইসলাম নারীর সকল প্রকার নিরাপত্তার জন্য বাবার কাছে, স্বামীর কাছে, ছেলের কাছে সম্পত্তি অধিকার রেখেছে। ইসলাম যৌতুক নামের জুলুমকে স্বীকৃতি দেয়নি। বরং স্বামীর কাছ থেকে তার মোহর পাওনার পাকাপোক্ত ব্যবস্খা করেছে। দেশের আইন বিভাগ ও সংসদ যৌতুক প্রথা বরে জন্য আইন পাস করেছে। এত কিছু করার পরও এ সমস্যার সমাধান হয়েছে কি? সমাধান হয়নি বরং বলি হচ্ছে অগণিত নিরীহ পরিবার। ধ্বংস হচ্ছে সাজানো সংসার। আমাদর দেশে এ যাবত যে সব গৃহবধূ ও কুমারী মেয়ে আত্মহত্যা করেছে তার প্রায় ৯০ ভাগই যৌতুক প্রেক্ষিত নারী নির্যাতনের কারণ।
যৌতুক-ব্যাধি নির্মূল করার জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবচেয়ে মূল্যবান কথা হচ্ছে তরুণ তরুণীদের শিক্ষিত এবং বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন হয়ে মুসলমান হিসেবে তাকে শিক্ষিত হতে হবে। তারপর সংসারে প্রবেশ করতে হবে। যাতে স্বামী স্ত্রী পরস্পরের আদর্শ যেন ইসলামকে ঘিরে হয়। তবেই তাদের মনের হীনতা দূর হবে। মন-মানসিকতা যৌতুকবিরোধী হবে। আমরা নামধারী মুসলমান না হয়ে সত্যিকারের মুসলমান তথা মুসলিম আইন মেনে চললে আমাদের যৌতুক বা অন্য যে কোন কু-প্রথা বা কুঅভ্যাস থেকে রেহাই পেতে পারি। আর একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, আমরা কন্যা দান করব তার আপন গুণ ও গৌরবে, যৌতুকের মূল্যে নয়। উপরন্তু সামাজিক, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের উন্নতি ঘটানো জরুরি এবং আবশ্যক।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×