somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরব বিশ্বের করার যেন কিছুই নেই। দরকার আরব বিশ্বের ইস্পাত কঠিন দৃঢ় ঐক্য

১৬ ই জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গাজায় ব্যাপক বোমা হামলা শুরু করলো ইসরাইল ।২০০৬ মার্চে অধিকৃত ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনী সরকার কায়েম করার পর পরই ভীষণ প্রকৃতির আন্তর্জাতিক বয়কটের হুমকির সম্মুখীন হয় হামাস। ইসরাইলের চাপে ও মার্কিন উদ্যোগে এই বয়কটের আয়োজন চলে। বিশ্ব বিচ্ছিন্নতা বা বয়কট ও পরবর্তীতে আরোপিত অবরোধে অসলো শান্তি সমঝোতার অসারতার উপলব্ধিতে প্রতিকূল পরিস্খিতির মোকাবেলার জন্য আরব ও মুসলিম বিশ্বের মুখাপেক্ষী হয় হামাস।
কিন্তু স্বল্পকালেই হামাসের ভ্রমভঙ্গ হয়। তারা উপলব্ধি করে এ যাবৎ বিভিন্ন মহলের উচ্চারিত সহানুভূতি ও একাত্মতার বচনগুলো নিতান্ত প্রতীকী সমর্থন ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। হামাসের প্রত্যাশা কিন্তু অস্বাভাবিক ছিল না। স্মরণীয় যে, গাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে হামাস সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই গাজায় সক্রিয় ইসলামপন্থী আন্দোলনের প্রতিনিধিরা ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বয়কট অকার্যকর প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে আরব ও ইসলামী দেশগুলোর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফিন্সকায় বিভিন্ন দেশে সফরের মধ্যদিয়ে কোথাও সমর্থনের মৌখিক আশ্বাস, কোথাও কুণ্ঠিত সমর্থন উচ্চারণ এবং অন্যত্র আন্তরিক ও প্রতিশ্রুতিভিত্তিক সমর্থন বাক্য সংগ্রহের অভিজ্ঞতা তারা অর্জন করেছিলেন। কিন্তু ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বয়কট ও অবরোধ আরোপে গাজাবাসীর জীবন ও অস্তিত্ব যখন প্রকৃতই পঙ্গু করে দিতে উদ্যত হয়, তখন হামাসের উপলব্ধি হয় যে এ যাবৎ সংগৃহীত সমর্থন ও সহানুভূতি কার্যক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবার জন্য নয় বরং প্রতীকী সমর্থন হিসেবে ব্যক্ত করা হয়েছিল। ইসরাইলী অবরোধ ক্রমশ নিষ্ঠুর প্রকৃতি ধারণা করতে থাকে। জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় রসদ সামগ্রী যখন গাজায় প্রবেশ ব করে দেয়া হয়, গাজায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়, ওষুধ সরবরাহ ব হয়ে যায় এবং বর্জ্য বস্তু অনিষ্কাশিত অবস্খায় যখন গাজার জনজীবনে দোজখ নামিয়ে আনে, তখন উদ্ধারের জন্য ও সাহায্যের জন্য হামাস সরকার আর একবার আরব ও মুসলিম বিশ্বকে আর্ত আহ্বান জানায়। কিন্তু সাড়া তারা পায়নি।
২০০৭ জুনে হামাস ও ফাতাহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। অন্তর্গতভাবে দীর্ঘদিন ধরে তারা বিরোধগ্রস্ত ছিল। এবার সাক্ষাৎ বিরোধ সংঘর্ষ উদ্ভূত হলে আরব বা মুসলিম বিশ্বের কোনো একটি দেশেও ফাতাহ-হামাসের ভ্রাতৃঘাতী সহিংসতা নিরসনে এগিয়ে আসেনি। বিরোধ নিস্পত্তির সৌদী উদ্যোগ অবশেষে প্রভাবশালী সাব্যস্ত হয়নি। বৈধ সরকারের স্বীকৃতি প্রাপ্ত ফাতাহ আরব ও পাশ্চাত্যের আর্থিক ও সামরিক সহায়তায় একদিকে পুষ্ট হতে থাকে, অন্যদিকে সর্বপ্রান্তিক বর্জনে একাকিত্বে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজাবাসীর জীবন ক্রমশ দুর্বিষহ হতে থাকে। একদিকে ইসরাইলী প্রচীর ও পরিখা এবং অন্যদিকে মিশরীয় বেড়ার আড়ালে গাজার ১৫ লাখ মানুষের জীবন ও ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ে অবরুদ্ধ ও সঙ্গ-সহায়হীন। কারা শিবিরের সঙ্গে উপমেয় গাজায় ব্যাপক বিমান আক্রমণে সর্বসম্প্রতি ইসরাইল উদ্যত হলে সংযম ধারণে ইসরাইলকে আহ্বান জানায় মিসর। ইসরাইল মিসরের ডাকে কর্ণপাত করেনি। ইসরাইলী আক্রমণের ভয়াবহতা দৃষ্টে মনে হয় গাজাকে একটি গোরস্তানে রূপান্তরিত করতে উদ্যত হয়েছে ইসরাইল। আরব সংবাদ মাধ্যমে ও গণস্তরে গাজার আক্রান্ত ফিলিস্তিনীদের সমর্থনে ও সহানুভূতিতে আগের মতোই যথারীতি জোয়ার সৃষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরে ও জাতিসংঘ মানবাধিকারের পক্ষ থেকে গাজায় ইসরাইল সৃষ্ট মানবিক সংকটে গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগও ব্যক্ত হতে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু গাজাবাসীর দুর্দশা লাঘবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপের এখনো পর্যন্ত সাক্ষাৎ নেই। ভোট দেয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার অপরাধে গাজার ফিলিস্তিনী জনগণ অসহায় মৃত্যু ও ধ্বংসের সম্মুখীন হয়ে চলেছেন। গাজাবাসীর জন্য আনুষ্ঠানিক সহানুভূতি ও সমর্থন বহুতর আরব রাষ্ট্রপক্ষে ব্যক্ত হলেও যে উৎকট বাস্তবিকতা আজ অনেকেরই অগোচরীভূত নয়, তা হলো, বেশ কিছু আরব দেশ গাজা অবরোধের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে চলেছে। গাজা সংলগ্ন সীমান্ত মিসর সার্বক্ষণিকভাবে ব রেখেছে। নিতান্ত নিরূপায়তায় মিসর হতে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় রসদ সামগ্রী সংগ্রহের জন্য সুড়ঙ্গ খননের মতো অস্বাভাবিক মাধ্যম উদ্ভাবনে বাধ্য হয়েছেন গাজাবাসীরা। রামাল্লাস্খিত ফাতাহ সরকারের পক্ষ থেকে গাজায় ইসরাইলী আক্রমণের প্রকাশ্যে নিন্দা জানানো হলেও ফাতাহর বেশ কিছু কর্মকর্তা, শোনা যায়, গাজায় ফিলিস্তিনী হনন সংঘটনের জন্য হামাসকেই নাকি দায়ী করেছেন। পরিস্খিতি দৃষ্টে মনে হচ্ছে মৌরিতানিয়া থেকে কাজাখস্তান পর্যন্ত আরব তথা সমগ্র মুসলিম বিশ্ব নারকীয় যন্ত্রণায় জর্জরিত ও অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে বিপন্ন প্রায় গাজাবাসীর আকুল আহ্বানে সাড়া দিতে প্রস্তুত নয়। ফলপ্রসূ কোনো উদ্যোগ আরবপক্ষে অনুপস্খিত। অবরোধে ও সর্বাত্মক ইসরাইলী সমরাক্রমণে ফিলিস্তিনের একাংশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ দোদুল্যমান আরব নেতৃত্ব আজো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তহীন, নীরব ও নিûিক্রয়। ইসরাইল ফিলিস্তিন বিরোধের ৬০ বছরের ইতিহাস প্রমাণ করে দিয়েছে যে ফিলিস্তিনী জনগণের জন্য আরব নেতৃত্বের সহানুভূতি ও সমর্থন শুধুমাত্র বাগাড়ম্বরেই সীমিত থাকতে অভ্যস্ত ও বিপন্নের সাক্ষাৎ সহযোগিতায় এগিয়ে আসা তাদের চরিত্রে ও প্রকৃতিতে শামিল নেই।
আরব ও মুসলিম বিশ্বের সহানুভূতি ও কথিত একাত্মতাকে দুর্ভেদ্য রণপশ্চাদভূমি ভেবে হামাস সরকার আজ অবস্খাদৃষ্টে মনে হয় বড় ভুল করেছে। বিপুলায়তন আরব বিশ্বের জনগণ কর্তৃত্ববাদী নেতৃত্বের অঙ্কুশ থেকে আজো মুক্ত নন। মুক্ত স্বাধীন ও অবাধ মানবাধিকার ভিত্তিক গণতন্ত্র চর্চায় পরিবেশ আরব বিশ্বে অধিকাংশত আজো অনুপস্খিত। অন্যথায় ইসরাইলী হঠকারিতার সমুচিত জবাবের জন্য আরব জনগণই দেখা যেতো, পর্যাপ্ত সাব্যস্ত হতেন।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×