somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমস্যাটা সমাজের না......

০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমস্যাটা সমাজের না, কোন রাজনৈতিক দল কিংবা সহিংস পরিস্থিতিরও না। সমস্যাটা হলো আমাদের ছোটবেলা থেকে পেয়ে আসা 'শিক্ষায়/শিক্ষা ব্যাবস্থায়'। মূল সমস্যাটা আমাদের গোড়াতেই গেঁথে আছে, সমাধান আসবে কোথা থেকে? ছোটবেলা থেকেই আমাদের শেখানো হয়-"পড়ালেখা করে যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে", আমাদের বলা হয় না-"জ্ঞান বৃদ্ধি করে যে ভালো মানুষ হয় সে।" বাল্যকাল থেকেই আমাদের অন্তরে গেঁথে দেয়া হয় লোভ-লালসা, ভালো মানুষ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা না। পাঠ্য বইয়ের বিষয়বস্তু বাচ্চা বুঝুক আর না বুঝুক তাকে পড়া গলধঃকরন করতেই হবে। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও এর ছাড় নেই। স্কুলের বাচ্চাদের চকোলেট দৌড় প্রতিযোগিতার মত বিশ্ব-বিদ্যালয়গুলো সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে রাখবে আর আমরা দৌড় দিয়েই যাব। বিদ্যা কেবল গিলেই গেছি আমরা, অন্তরে আর এর প্রতিস্থাপন হয়ে উঠেনি। আজ যে নাস্তিককে দেখে নাক সিটকাই, কেন তার এত অবিশ্বাস তা খুঁজতে যাইনা। প্রকৃত ধর্মের শিক্ষা আমাদের কেবল স্কুল আর কলেজেই দিয়ে আসা হয়, বিশ্ব-বিদ্যালয়গুলোতে না। অথচ ভার্সিটির জীবনেই আমাদের যত অবিশ্বাস জন্মে। ২০ এর পরের বছরগুলো আমাদের দ্বিধার সময়, অথচ এই সময়টাতেই ভালো মানুষ হওয়ার যথেষ্ট শিক্ষা পাই না আমরা। বরং আমাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার উপদেশ দেয়া হয়, কিন্তু এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে যে কোন অসাধু পথ অবলম্বন করা যাবে না তা আমাদের সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়না, গেঁথে দেয়া হয়না অন্তরে যেন জীবনের কোন অবস্থাতেই সেটা ভুলে না যাই।
'ক্ষমতা' ভয়াবহ একটা ব্যাপার। হিংসা, অহংবোধ, নিজেকে বড় ভাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষার মত "জটিল সমস্যা"র মূলগুলোর সাথে মোকাবেলা করার মত যথেষ্ট শিক্ষা আমরা পাইনা। আমাদের শেখানো হয়না রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল। ক্যাম্পাসে সিনিয়র হওয়া মানেই র‍্যাগ দিতে হবে, 'দোস্ত তোরে মারছে? আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন। ওরা চাপাতি নিয়া আসলে আমরা বন্দুক নিয়া যামু'... অন্যের/রাজনৈতিক দলগুলোর দোষ ধরতে পারদর্শী কিন্তু নিজেদের ভুলগুলো না। আমাদের যতটুকু ক্ষমতা আছে তার কতটুকু সঠিক ব্যবহার করছি এবং এটা নিয়ে কতটুকুই বা ভাবছি তা কদাচিৎ এর বাহিরে চিন্তায় আসছে না।


আমাদের সমস্যাটা হচ্ছে আমরা ভালোবাসতেই জানি না, ভালোবাসতে শেখানো হয় না আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে; যতটুকুও বা শেখানো হয় তাও বিষয়বস্তু গলধঃকরন তুলনায় নগণ্য। তাই তো আজও প্রাপ্ত বয়স্ক গ্র্যাজুয়েট হয়েও আমরা ভালোবাসা বলতে কেবল নারী-পুরুষের সম্পর্ক ভেবে নিয়ে মনে মনে একদফা হেসে নেই। পাওলো কোয়েলহো একদা দারুন একটা কথা বলেছিলেন-"Love itself can move a mountain." শুধুমাত্র এই একটা লাইনের প্রকৃত অর্থ যদি আমরা আমাদের অন্তরে বিদ্ধ করে নিতে পারতাম আমাদের জীবনের ইতিহাসটাই বদলে যেত। আজ যে ছেলে একটা মেয়ের ওড়না ধরে টান দিল, তার বাসায় বোন আছে কিনা এই প্রশ্ন তোলা সম্পূর্ণ নিরর্থক, কেননা যদিও বা তার বোন থেকে থাকে এবং তার বোনের সাথে ভুল কিছু ঘটেও থাকে, সে তার 'ক্ষমতা'র দাপট দেখিয়ে অনেক কিছু করে বেড়াবে কিন্তু এর মানে এটা নয় যে সে তার বোনকে ভালোবাসে, এটা কেবল একটা টান যা এক সাথে অনেক বছর থাকার ফলে চলে আসে। কারন যে হৃদয় ভালোবাসার প্রকৃত মানে বোঝে, সে হৃদয় সম্মান করতে জানে। আর যে হৃদয় সম্মান করতে জানে সে হৃদয় নিজেকে সকল অন্যায় থেকে বিরত রাখতে জানে। আজ যারা একে অন্যের উপর ক্ষমতার প্রভাব ফেলতে পারছে, মানুষ হয়ে অন্য মানুষের উপর বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালাতে দ্বিধাবোধ না করে আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে, মূলতঃ তাদের অভ্যন্তরীণ ভালোবাসা অনেক আগেই মরে গেছে, তাদের ভেতরকার দানবের কাছে তাদের বিবেক হেরে গেছে। কারন তারা কখনই ব্যাক্তির মধ্যকার দানবের সাথে মোকাবিলা করার উপযুক্ত শিক্ষা পায়নি। তারা কেবল টাকা আর ক্ষমতাই চিনে এসেছে। তাই আফসোসটা আমাদের শিক্ষা আর শিক্ষা ব্যাবস্থার। কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক তা কেবল আমাদের বলেই গেল আর আমরা কেবল শুনেই গেলাম, অন্তরে আর গাঁথা হলো না। কি করে গাঁথা হবে? সেই ছোটবেলা থেকেই তো আমাদের মনে কেবল 'বাড়ি-গাড়ি আর ক্ষমতার' স্বপ্নই দেখিয়ে গেল আর আমরা কেবল টাকার পিছনেই ছুটে গেলাম, ভালো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন আর দেখলাম না।

ছাত্র-সে লীগ হোক, দল বা শিবির হোক আর যাই হোক, তার হাতে কলমের পরিবর্তে চাপাতি কেন? তার অন্তরে ভালোবাসার পরিবর্তে ক্ষমতার লোভ কেন? রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আগে নিজেদের স্বার্থ কেন? সত্যিকার অর্থে আমাদের কাছে ব্যাক্তিস্বার্থ প্রাধান্য কেন? এর উত্তর এখন আর খুঁজে লাভ নেই, কারণ সমস্যা গোড়াতেই থাকা অবস্থায় একে উগড়ে ফেলা হয়নি, এখন শিকড় গজিয়ে এটা বটগাছে পরিণত হয়েছে। তাই আফসোস আমাদের ছোটবেলা থেকে পেয়ে আসা শিক্ষা/শিক্ষা ব্যাবস্থাকে, যে শিক্ষা আমাদের সভ্য জাতির খেতাব তো দিয়েছে কিন্তু এই সভ্যের আড়ালের কালো অসভ্য দানবকে দমন করতে পারেনি।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:১৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×