somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিশোধ (গল্প )

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমিনের লাশটা জানাজার জন্য নিয়ে যাবার আয়োজন চলছে । বাদ আসর তার নামাজে জানাজা হবে । গ্রামের লোকজন ;তা আছেই, আশপাশ থেকেও প্রচুর লোক জমা হয়েছে মসজিদে । হাজার হোক গ্রামের ছেলে। ছেলেটা ছিল অমায়িক, সাধ্যমত সবার উপকার করতো ।
নিজ গ্রাম ছাড়াও আশেপাশে সবাই এক নামে চিনতো তাকে । কোথায় কার অসুখ, হাসপাতালে নিতে হবে, রোগীর সাথে হাসপাতালে থাকতে হবে, খবর পেলেই আমিন হাজির । কারো বাড়িতে বিয়ের বা অন্য কোন আয়োজনে সামাল দেবার দ্বায়িত্ব নেওয়ার জন্য হাজির থাকে আমিন । তাকে যে কোন কাজ দিয়ে নিভর্র করা যায় । সবার সাথেই তার আন্তরিকতা ।
সবার আজ প্রশ্ন ছেলেটা আত্মহত্যা করলো কেন ?
সবেমাত্র ইণ্টার পাশ করেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্ত্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে ।
সেই ছেলে হঠাৎ করে এমন কাজ- করবে কেন?
তার বন্ধুদের কাছেও এর কোন জবাব নেই ।
বিধাব মায়ের একমাত্র অবলম্বন এই ছেলে । বাবা সামান্য রোগে ভুগে গত হয়েছে বছর পাঁচেক আগে, সেই থেকে বিধবা মায়ের অন্ধের যষ্টি ।
লেখাপড়ায় বেশ ভালো, সবার আশা জীবনে অনেক দূর এগিয়ে যাবে সে। তার বয়সি উঠতি ছেলেদের মধ্যে আদর্শ ছেলেহিসাবে ধরা হতো তাকে । অনেক পিতামাতা তার ছেলেদের আমিনের উদাহরন দিতো ভাল হবার জন্য ।
এহেন ছেলে কেন যে হঠৎ আত্মহত্যা করে বসলো তা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে ।
আত্মহত্যার আলামত হিসাবে পুলিশ জব্দ করেছে তার ঘর থেকে পাওয়া একটা খালি বোতল। ধারণা করা হচ্ছে বোতলটাতে ছিল বিয । পুলিশ, ময়না তদন্ত ইত্যাদি পর্ব শেষ করে আজ বাদ আসর তার জানাজার প্রস্তুতি চলছে ।
আস্তে করে দু একজন অবশ্য বলছে, আত্মহত্যা করলে তার জানাজা পড়া উচিত কি না ?
তবে তা জোর দিয়ে বলার মত সাহস হচ্ছে না তাদের ।
কিন্তু একজন ইতিমধ্যে ইমাম সাহেবের কাছে এ ব্যাপারে আওয়াজ দিলো, তিনি জহির সাহেব , গ্রামের সব বিষয়ে তিনি মাথা গলাবেনই । তার কাজ সহজ বিষয়টি যতটা পারা যায় জটিল করে তোলা ।
ইমাম সাহেব পাল্টা জানতে চাইলো , আত্মহত্যা যে করেছে তা আপনি নিশ্চিত কি ?
অবস্থা দেখে তাই তো মনে হচ্ছে । জহির সাহেবের জবাব ।
ইমাম সাহেব বলল্লো পুলিশ কিন্তু এখনো কনর্ফাম করেনি । তা ছাড়া আমি শুনেছি আপনার ছেলে শরীফ তার সাথে সে রাতে ছিল । আপনার ছেলে কিন্তু কিছু বলেনি পুলিশকে ।
লোকটা আর কথা না বাড়িয়ে কেটে পড়লো, অবশ্য বলে গেলো, সে কোন অধর্মের সাথে নেই।
কি জানি কোথা থেকে কি হয়ে যায় ।
আমিনের মায়ের আর্তনাদ সবাইকে অশ্রুশিক্ত করছে, গ্রামের সব মহিলারা তাকে শান্তনা দিচ্ছে । তাতে কি ।
বিধবার কান্না হাহাকার থামছে না । আজ দু দিন ধরে এ মাতম চলছে । সে খালি চিৎকার করছে , আমার ছেলে কখনো এ কাজ করতে পারে না । সে কখনো আত্মহত্যার মত পাপ কাজ করবে না । আমার বাজান কে কেউ মেরে ফেলেছে । আল্লাহ বিচার করবে । আমার বুকের ধন যে কেড়ে নিলো হে আল্লাহ তাকে তুমি কেড়ে নাও ।
নানান কথায় তার আর্তনাদে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে ।
মসজিদের পাশেই কবরস্থান ।
জানাজা শেষ হয়ে গেছে ।
জহির সাহেব রাস্তার পাশের চায়ের দোকানের লম্বা বেম্চিতে সিগারেট ফুকতে ফুকতে তাচ্ছিল ভাবে জানাজা দেখলেন।
ছেলে শরীফকে জানাজায় অংশ নিতে মানা করা সর্ত্তেও সে জানাজা পড়েছে ।
উপচে পড়া ভীড় দাড়িয়ে আছে কবরগাঁর পাশে ।
সব কিছু ছাপিয়ে আমিনের মার আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে ।
বাবা আমার । তুই আমাকে কেন ছেড়ে চলে গেলি । আমি কি নিয়ে থাকবো । কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো । বাবা আমিন । আমিন । ্আমিন । আমি জানি বাবা তুই নিজেকে মারিস নি । তোকে কেউ না কেউ খুন করেছে । বাবা প্রতিশোধ নে । প্রতিশোধ নে বাবা ।
তার কণ্ঠস্বর কেমন যেন বদলে যেতে শুরু করলো ।
অভিসম্পাত দিতে দিতে সমস্ত পরিবেশকে ভয়ার্ত করে তোলে । তার কণ্ঠস্বরশুনে মনে হতে লাগলো অন্য কেউ কথা বলছে । কবরগাঁর বাইরে মাটিতে বসে সমানে চিৎকার করে কাঁদছে আর অভিসম্পাত করে চলেছে ।
কবরে মাটি চাপা দেওয়া হয়ে গেছে। কবরের উপরে একটা খেজুর পাতাও যত্ন করে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
বন্ধুদের কজন কবরের মাটিগুলো ঠিক করে দিলো ।
ইমাম সাহেব মুনাজাতের জন্য হাত তুললো । উপস্থিত সবাই হাত তুললো । ইমাম সাহেব বলছে, হে আল্লাহ এ ছোট ছেলেটার সব গুনাহ মাফ করে দাও , সে না বুঝে অপরাধ করেছে হয়তো, তুমি পরওয়াদেগার , তুমি ক্ষমাশীল মহান, তুমি মাফ করে দাও আমাদের এ ছোট ছেলেকে । আমাদের সবার জন্য সে কাজ করতো, তুমি নিজেই দেখেছো , সে যদি অপরাধ করে থাকে তাকে মাফ করে দিও, তাকে বেহেস্ত দিও , ।
তার পর আবারো ইমাম সাহেব যোগ করলেন , আর তাকে যদি কেউ হত্যা করে থাকে, অথবা কারো কথায় সে কষ্ট পেয়ে আত্মহত্যা করে থাকে, তবে তাকে শাস্তি দিও, সে অপরাধীকে আমাদের চিনিয়ে দিও । ইত্যাদি, ইত্যাদি ।
ইমাম সাহের মুনাজাত ছাপিয়ে হঠাৎ তার মায়ের কণ্ঠস্বর শোনা যেতে লাগলো, বাবা প্রতিশোধ নে বাবা, প্রতিশোধ নে বাবা, ছেড়ে দিস নে, ছেড়ে দিস নে ।
ইতিমধ্যে ইমাম সাহেব মুনাজাত শেষ করলেন ।
লোকজন আস্তে আস্তে কবরস্থান ছাড়তে শুরু করলো ।
আমিনের বন্ধুরা কবরটার উপর একটা ফুলের চাদর বিছানোর আয়োজন করছে, অল্প কিছু লোক তখনো দাড়িয়ে আছে । তারাও দেখছে ।
ওদিকে আমিনের মা তখন ও আর্তনাদ করে চলেছে, বাবা প্রতিশোধ নে বাবা, প্রতিশোধ নে বাবা, ছেড়ে দিস নে, ছেড়ে দিস নে । । তাকে ও তোর সাথে নিয়ে যা বাপ । তাকেও তোর সাথে নিয়ে যা ।
আস্তে আস্তে তার কণ্ঠস্বর কেমন যেন ভর্য়া ত হয়ে যাচ্ছে ।
উপস্থিত সবার মধ্যে কেমন ভয় ভয় ভাব দেখা যাচ্ছে ।
জহির সাহেব সেই লম্বা বেঞ্চিতে আয়েশ করে পা তুলে বসতে বসতে হালকা হাসির সাথে মন্তব্য করলো শুকুনের বদদোয়ায় কি কখনো গরু মরে ।

হঠাৎকরে কবরস্থানের ভেতরে থাকা লোক জনের ভীষণ চেচামেচি, শোরগোল শোনা গেলো ।
যারা ফিরছিলো , তারাও থমকে দাড়িয়ে গেলো ।
আমিনের মার আর্তনাদ তখন ও থেমে থেমে চলছিল ।সেও হঠাৎ থেমে গেছে, সে ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ।
কবরস্থানের ভেতর থেকে আমিনের এক বন্ধু বেরিয়ে এলো ভর্য়াত চেহারায় ।
তার কাছে জানা গেল, কবরের উপর ফুলের চাদর বিছানোর সময় কবরের ভেতর থেকে একটা হাত বেড়িয়ে এসে, শরীফকে কবরের ভেতর টেনে নিয়ে গেছে ।
অনেকে ভয়ে ভয়ে কবরের কাছে ফিরে গেলো, দেখা গেলো , কবরের নরম মাটিতে শরীফ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, একটা হাত কবরের ভেতর ঢুকে আছে । সাহস করে করে একজন একেবারে কবরের উপর নেতিয়ে থাকা শরীফের দেহটা কবরের উপর থেকে টেনে তুললো ।
নিয়ে যাওয়া হলো বাজারে ডাক্তারের চেম্বারে , দেখে শুনে ডাক্তার সাহেব জানালো, সব শেষ ।
শরীফ মারা গেছে ।
তা হলে কি প্রতিশোধ নেওয়া হলো । মায়ের আর্তনাদে আমিন কি প্রতিশোধ নিলো ।
তবে কি সে আত্মহত্যা করে নি।
শরীফই তাকে খুন করেছে ।
ধর্মেও বিধিবিধানের প্রতি শরীফের বাপের অবঙ্গা ।
অবশ্য কেউ কেউ বল্লো অন্য কথা, আমিনের মায়ের আর্তনাদ আর অভিসম্পাত সবার মনে একটা ভয় ঢুকে গেছিলো ।
শোকার্ত অবস্থায় আর্তনাদ করলে তার কণ্ঠস্বর অদ্ভুদ রকম বদলে যায়্ , অচেনা মনে হয়।
উপস্থিত অনেকের মধ্যে তার প্রভাব ফেলে । সে রকমই হয়তো শরীফের উপর প্রভাব ফেলেছে ।
ফুলের চাদর দিতে গিয়ে কোন ভাবে হয়তো , হাত ফস্কে কবরের নরম মাটিতে গেথে গেছে আর আগে থেকে প্রভাবের কারণে, সাথে সাথে প্রচণ্ড ভয়ে হার্ট এর্টাক করে মারা গেছে ।
অন্যজন যুক্তি দিলো, কিছু না করে ও ভয় পাবে কেন ।
যত লোক তত মত ।
তবে আমিনের মাকে এরপর কেউ কাঁদতে দেখিনি ।
শরীফের বাপকেও কেউ হাসতে ও দেখিনি ।
হত্যার আলামত হিসাবে পুলিশ জব্দ করেছে তার ঘর থেকে পাওয়া একটা খালি বোতল ।
ধারণা করা হচ্ছে বোতলটাতে ছিল বিয ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৪
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×