somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিকিৎসক ধর্মঘটের সময় যদি কেউ মারা যান তবে তার দায় কার?

০৭ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১২ সালের ৩০ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমিনুল ইসলামেরমলদ্বারের অস্ত্রোপচার করার সময় শরীরের ভেতর সুচ রেখে দেন চিকিৎসক মো. সুরমান আলী। তিনি চট্টগ্রামমেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাপারোস্কপিক, কলোক্টেরাল ও জেনারেল সার্জন। অস্ত্রোপচারের পর প্রচণ্ড ব্যথায় ভুগতে থাকেন আমিনুল। তাঁর মনে হতে থাকে, অপারেশনের স্থানে কিছু একটা রয়ে গেছে, একথা চিকিৎসককেওজানান তিনি। পরে আরও দুই দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়। আমিনুলের ধারণা, এই দুই দফা অস্ত্রোপচারে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করে আসলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতারণা করা হয়েছে তাঁর সঙ্গে। শারীরিকঅবস্থা আরও খারাপ হলে চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে হয় তাঁকে। গত বছরের ৩০ জুন অ্যাপোলো হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে শরীর থেকে সুচটি বের করেন সেখানকার চিকিৎসক। এ ঘটনায় গত ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলাকরেন আমিনুলের মা। আরেকজন চিকিৎসক জাকির হোসেন অবশ্য দাবি করেন, যে অস্ত্রোপচারটির সময় শরীরে সুচ রেখে দেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন। তাঁর কাছে আমিনুল এসেছিলেন অন্য একটি সমস্যা নিয়ে। তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন।আত্মসমর্পণের পর সুরমান আলীর জামিন বাতিল করে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
চিকিৎসকদের পেশা ঝুঁকিপূর্ণ এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। চিকিৎসার ত্রুটি বা অবহেলার কারণে রোগীর নানা সমস্যা এমনকি মৃত্যু পর্যন্তহওয়ার ঘটনা এ দেশে যেমন ঘটছে, বিদেশেও এর নজির আছে। কিন্তু ব্যতিক্রম তো নিয়ম নয়। আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা প্রায় নিয়মে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেকি না, এ প্রশ্নটিই আজ বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভুলচিকিৎসার কারণে, অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ আত্মীয়স্বজন হাসপাতাল বা বেসরকারি ক্লিনিকে ভাঙচুর চালানোরঘটনা পত্রপত্রিকায় দেখা যায় প্রায়ই। এটা কাঙ্ক্ষিত নয় মোটেই, এতে শেষ পর্যন্ত ভোগান্তিতে পড়তে হয় অন্যান্য চিকিৎসাপ্রার্থীকে। তদুপরি অনেক সময় চিকিৎসকদের ত্রুটি ছাড়াও রোগীর আকস্মিক মৃত্যু তো ঘটতে পারে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ আত্মীয়স্বজনের এসব হামলা-ভাঙচুরের সঙ্গেচিকিৎসকদের ওপরএকধরনের অবিশ্বাস বা আস্থাহীনতার সম্পর্ক আছে কি না ভেবে দেখতে বলি চিকিৎসক সমাজকে।
অধিকাংশ রোগ নির্ণয়কেন্দ্রের সঙ্গে চিকিৎসকের যোগসাজশ আছে বলে অভিযোগ আছে। এসব কেন্দ্রে রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের শতকরা ৩০ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ান্তে চিকিৎসকের কাছেপৌঁছে দেওয়া আজ অলিখিত নিয়ম। বেশির ভাগ রোগনির্ণয় কেন্দ্রে টেকনিশিয়ানদের দেওয়া রিপোর্টের ওপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা শুধু স্বাক্ষর করে দায়িত্ব সারেন, এমন অভিযোগও নতুন নয়। ফলে একেকটি রোগনির্ণয় কেন্দ্র থেকে একেক রকম রিপোর্ট পাওয়া যেমন আজ স্বাভাবিক ঘটনাহয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনি রোগীর দেহে ভুল করে দুরারোগ্য রোগের অস্তিত্বআবিষ্কারের মতোঘটনাও তো ঘটছে। এ ছাড়া ওষুধ কোম্পানিগুলোর ‘উপহার-উপঢৌকন’ গ্রহণ যেখানে নিয়মিত ও স্বাভাবিক ঘটনাহয়ে দাঁড়ায়, সেখানে চিকিৎসকদের নৈতিকতার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।
আমিনুলের মায়েরমতো সবাই আদালতে যান না বটে, কিন্তু বিশ্বাসে তো ফাটল ধরে। বলি না এ দেশে যোগ্য,দক্ষ ও ভালো চিকিৎসক নেই। কিন্তু নানা কারণে দেশের চিকিৎসক ও পুরো চিকিৎসাব্যবস্থা আজ ভাবমূর্তির সংকটে। চট্টগ্রামের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ‘প্রতিবাদ কর্মসূচি’ সেই সংকটকে আরও গভীর করবে।
সুরমান আলীর বিরুদ্ধে মামলাও গ্রেপ্তারের বিষয়টি যদি অন্যায় ও অন্যায্য মনে হয়, আদালতে যেতে পারত বিএমএ। আইনি লড়াইয়ের পরিবর্তে রোগীদের জিম্মিকরে ‘পেশাগত মর্যাদা অটুট রাখার’ প্রক্রিয়াটি তাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েই থাকল। আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত যেমন বলেছেন, ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের নামে চিকিৎসকদের এই আন্দোলন বেআইনি। এর মাধ্যমে তাঁরা আদালত অবমাননারধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে অপরাধীকে ছাড়ানোর জন্য আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টির প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।’
মাত্র কয়েক দিন আগে ইন্টার্নি চিকিৎসকদের ধর্মঘটে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চমেক শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতির ওপর ছাত্রশিবিরের কর্মীদের হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতিতে গিয়েছিলেন ইন্টার্নি চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। এতে একদিকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন রোগীরা, অন্যদিকে তাঁদের আত্মীয়স্বজন পড়েছিলেন কঠিন দুর্ভোগে। রোগীর দেখভাল করা, দোকান থেকে ওষুধ বা বাড়ি থেকে খাবার আনা-নেওয়ার সুযোগও পাননি অনেকে।
ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ আমাদের দেশে নিয়মিত ঘটনা। সতীর্থেরওপর হামলা-সহিংসতা হলে তার প্রতিবাদ নিশ্চয়ই করবেন ছাত্রসংগঠনের কর্মীরা। কিন্তু মেডিকেলকলেজের শিক্ষার্থীদের তো মনে রাখতে হবে, তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি মানুষের সবচেয়ে দুঃসময়ের আশ্রয়স্থলও!
যা-ই হোক, চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের প্রসঙ্গটিতে ফিরে আসি। আর কদিন এ কর্মসূচি চলবে এমন এক প্রশ্নের জবাবেবিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি বলেছেন, যত দিন পর্যন্ত এ মামলা প্রত্যাহার ও আটক চিকিৎসককে মুক্তি দেওয়া না হবে, তত দিন এই কর্মসূচি চলবে।
সবিনয়ে প্রশ্ন করি, এই সময়ের মধ্যে যেসব রোগী চিকিৎসার অভাবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়বেন, মৃত্যুবরণ করবেন—তার দায়কার? এই রোগীদেরঅনেকেই দিনের পর দিন এই চিকিৎসকদের চেম্বারে গিয়ে টাকা দিয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন, চিকিৎসার ধারাবাহিকতা রক্ষার ন্যূনতমদায়টাও কি অস্বীকার করতে পারেন তাঁরা? মানুষের জীবন-মরণের ব্যাপারটি সামনে রেখে যাঁরা ‘সংশ্লিষ্ট মহল’-এর সঙ্গে দর-কষাকষি করতে চান, তাঁদের কর্মসূচিকে আর যা-ই হোক ‘মানবিক’ বলার উপায় নেই।
৩০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×