-"পাখি।"
কেমন আছো পাখি?
-"জী.....ভালো।"
কোন ক্লাশে পড়ো?
-"ক্লাশ থ্রী তে।"
এখানে কত বছর ধরে আছো তুমি?
-"৩ বছর ধরে।"
এখানে কেমন লাগে তোমার?
-"ভালও।"
তোমার কথা কিছু বল...................।
-"ছোটবেলায় গ্রামে থাকতে আমি মাদ্রাসায় পড়তাম। সবার সাথে যখন সকালে সেখানে রওনা হতাম তখন দেখতাম যে, সবাই খুব তাড়াতাড়ি আমার চেয়ে অনেক সামনে চলে যাচ্ছে, আমি একা পেছনে পড়ে আছি। একসময় বুঝতে পারলাম যে, ..... ওরা সবাই তো দেখে দেখে পথ চলে, আর আমি তো চোখে দেখি না, তাই আস্তে আস্তে চলতে থাকি। আর এজন্যই আমি পিছিয়ে পড়ি। একা হয়ে যাওয়ায় তখন আমার খুব মন খারাপ হত "- বলেছে BAPTIST MISSION INTEGRATED SCHOOL এর প্রায় ১০/১১ বছরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী একটি মেয়ে।
BAPTIST MISSION INTEGRATED SCHOOL (BMIS)- ঢাকার মিরপুর ১০ এ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়েদের জন্য বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক স্কুল। ১ম থেকে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত এই স্কুল। প্রায় ৭০/৮০ জন মেয়ে এখানে থেকে শিক্ষার সু্যোগ পাচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থা/ ব্যক্তিবর্গের আর্থিক সহায়তার কারনে দরিদ্র পরিবারের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়েগুলো খুব সামান্য খরচেই এখানে থাকতে এবং পড়তে পারছে।
কমিউনিটি অ্যাকশন এর পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার যাওয়া হয়েছে BMIS এ। উদ্দ্যেশ্য- ওদের সাথে একটু গল্প করা, ওদের জন্য রান্না করে নেওয়া নুডুলস দেয়া, ওদের গান শোনা, ওদের সমস্যার কথা শোনা...........যেন সাধ্যমত তা সমাধানের জন্য একটু চেষ্টা করা যায়।
View this link "সেবার মাধ্যমে বিজয়ের প্রকাশ"- এর ভাবনা মাথায় রেখে গত ১৪ই ডিসেম্বর ২০১০ এ ১০ জন অ্যাকশনিয়ার আবারো গিয়েছিলাম ওদের জন্য কিছু করতে, ওদেরকে কিছু দিতে, ওদের কিছু কথা শুনতে।
ওদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, কোন কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়/ চাকরী ক্ষেত্রে ওদের নিতে চাওয়া হয় না- যদিও ওরা মেধা ও যোগ্যতার অধিকারী। BMIS এর সবার প্রিয় একজন শিক্ষিকা 'ফেরদৌসি'- যিনি নিজেও একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, অনেক সংগ্রামের পর এতদূর এসেছেন, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই ই আর এ পড়ছেন। তার ভাষায়- "আমাদের যোগ্যতা যাচাই না করেই আমাদের যেকোন কিছু থেকে বাদ করে দেয়া হয়, অথচ একজন স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে অনেক অনেক গুন বেশি কষ্ট করে আমরাও সমান যোগ্যতা অর্জন করি।"
আমার মতে আমাদের দেশের এসব দরিদ্র পরিবারের এমন সংগ্রামী সন্তানদের জন্য এমন কিছু একটা করা উচিৎ যেন ওরা সহযেই পড়াশোনা ও কারিগরি দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পায়। যাতে করে ওরা পরিবারের বোঝা না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে এবং নিজেদেরকে আর সমাজের অবহেলিত/ হতভাগ্য অংশ মনে না করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




