somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"রাষ্ট্র কোনো এথিকস্ মানে না। রাষ্ট্র দেখবে আপনি তার পক্ষে না বিপক্ষে। বিপক্ষে গেলেই আপনার ওপর নির্যাতন নেমে আসবে।" ব্লগার আসিফকে শিক্ষা দিলেন এক দেশহিতৈষী গোয়েন্দা কর্মকর্তা, ,

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আসিফের অভিযোগ, চোখ বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদ, কোনো খাবার এমনকি পানিও খেতে না দিয়ে সারারাত বসিয়ে রেখে, ঘুমাতে না দিয়ে আটকে রাখার পর রাজধানীর মিন্টু রোডে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে এএসপি রফিকুল ইসলাম তাকে বলেন, "আপনি আর লিখতে পারবেন না। লেখালেখির দরকার কী, চাকরি-বাকরি করেন। বিয়া-শাদী করেন। লেখালেখি করে কেউ কিছু করতে পারে নাই।"

তার ব্লগিং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন উসকে দিচ্ছে অভিযোগ করে তাকে ব্লগে এবং ফেইসবুকে লেখালেখি করতে নিষেধ করেন রফিকুল ইসলাম।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে এও বলেন, "বাকস্বাধীনতা-নীতিনৈতিকতা দিয়ে জীবন চলে না"।

এসময় "নীতি আদর্শের জগৎ থেকে বাস্তব জগতে ফিরে আসতেও" তাকে পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানান আসিফ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে এএসপি রফিকুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, প্রথমে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান এবং তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

পরে তিনি আসিফকে লেখালেখি ছেড়ে দিয়ে বিয়েশাদী-চাকরিবাকরি করতে বলেছেন কেন জানতে চাইলে রফিকুল বলেন, "ভালই তো বলেছি। আমি আপত্তিকর লেখালেখি ছেড়ে দিতে বলেছি।"

আসিফ জানান, তাকে বলা হয়েছিল, ফেইসবুক, ব্লগ বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ সাইটে তিনি কিছু লিখবেন না বলে অঙ্গীকার করে মুচলেকা দিতে। কিন্তু অনেক আপত্তির পর আর পেরে না উঠে শেষ পর্যন্ত তিনি "জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন নিয়ে ফেইসবুক-ব্লগ বা অনলাইনে আর সমাবেশ ডাকবেন না" বলে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কার্যালয়ে এসে এসব বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন আসিফ। তিনি জানান, "ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো" বাদ দিতে নানা বক্তব্যের একপর্যায়ে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আসিফকে বলেন, "রাষ্ট্র কোনো এথিকস্ মানে না। রাষ্ট্র দেখবে আপনি তার পক্ষে না বিপক্ষে। বিপক্ষে গেলেই আপনার ওপর নির্যাতন নেমে আসবে।"

রাত বারোটা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা চোখ বাঁধা অবস্থায় আসিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এক কর্মকর্তা, তবে তিনি আসিফকে তার পরিচয় দেননি। এর আগে রফিকুল তাকে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেখিয়ে বলেন যে এটা ডিজিএফআই এর প্রতিবেদন এবং সংস্থাটির লোকজন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসবে।

অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আসিফকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি নামাজ পড়েন কি না, ঈদ পালন করেন কি না, পূজায় যান কি না, শুকরের মাংস খান কি না।

এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের পক্ষে অনলাইনে জনমত সৃষ্টির কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি বামপন্থী দলগুলোর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন কি না তাও জানতে চান ওই কর্মকর্তা।

রফিকুল তাকে বলেছেন, ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার লেখালেখিতে তরুণরা উসকে উঠতে পারে এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে অর্থায়ন সংক্রান্ত ২৭(৪) ধারা বাতিলসহ অন্যান্য দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানাতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ৩০ সেপ্টেম্বর বিকালে ব্লগার-লেখক-সংস্কৃতিকর্মীদের একটি সংহতি সমাবেশ আয়োজনে অনলাইনে লেখালেখি করেন ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন।

সামহোয়ারইনব্লগ-এ 'প্রসঙ্গ-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ' শিরোনামে আসিফের একটি লেখা প্রকাশ হয়। পরে উন্মোচন' ও 'আমার ব্লগ' এও প্রকাশ হলে লেখাটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেইসবুকসহ অনলাইনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যুতে লেখাটি বহুবার পঠিত ও শেয়ার হয়।

আসিফকে গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি ফেইসবুক গ্র"পে তার লেখার সূত্র ধরেই তার বিষয়ে খোঁজখবর করতে তাকে ডেকেছেন তারা।

আসিফকে খুঁজতে ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে তিনটায় প্রথমবার আজিমপুরে তার বোনের বাসায় যায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। তাকে না পেয়ে পরদিন সকাল সাড়ে আটটায় তারা আবার আসেন এবং একটি ফোন নম্বর দিয়ে আসিফকে দেখা করতে বলে আসেন।

০১ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আসিফ ও তার বড় বোন মিন্টু রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে দেখা করতে যান। রাত সাড়ে এগারোটায় তার বোনকে বাসায় চলে যেতে বলা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের কম্পিউটারে আসিফকে তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট এবং ব্লগ আইডি-গুলো খুলে দেখাতে বলা হয়। পরে তার বিগত দিনের অনলাইন কর্মকাণ্ডের (স্ট্যাটাস আপডেট, ব্লগ) ইত্যাদির প্রিন্ট নেওয়া হয়। আসিফের মোবাইল ফোনটিও সারারাতের জন্য জব্দ করে রেখেছিল গোয়েন্দারা।

আসিফ জানান, সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে বাধ্য হওয়ার কারণে পড়ালেখার খরচ জোগাতে যেয়ে তাকে হিমশিম খেতে হয়েছিল। সে অভিজ্ঞতা থেকেই পড়ালেখার খরচ 'সাধ্যের বাইরে' চলে যাওয়ার বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে এগিয়ে আসতে চান তিনি।

২০০০ সালে এসএসসি পাশ করার পর ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন আসিফ। পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এইউআইবি-তে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিগ্রি নিয়ে এখন একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তিনি।

অনলাইনে বিপ্লব একবার চাঙ্গা হয়ে উঠলে তা আর থামানো যায়না এ ধরনের শিক্ষা যদি সম্প্রতী ঘটে যাওয়া মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাগুলো থেকে পেয়ে সরকার ব্লগারদের উপর নির্যাতন, বাকস্বাধীনতায় আঘাত হানে তে মস্ত বড় ভুল হয়ে যাবে কেননা দেশটা আমাদের সবার আর একে নিয়ে ভাবনা-চিন্তার অধিকার আমাদের রয়েছে আর এই চিন্তার প্রকাশে বাঁধা হতে গেলেই ফুঁসে উঠতে পারে এ দেশের জনগণ আর এভাবে বিপ্লব থামাতে গিয়েই সবচাইতে বড় অঘটনগুলো ঘটেছে ইতিহাসে। আসুন আমরা পারিবারিক রাজনীতির মায়াজাল ছেড়ে জনগণের প্রত্যাশার রাজনীতি করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ২:০৫
১৮টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×