somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিডিয়ার বিদ্রোহ প্রসঙ্গ: ক্ষুদ্র মনের সামান্য প্রত্যাশা

০১ লা এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ কয়েকদিন যাবৎ পত্রিকায় অনেকটা দামাচাপা দিয়েই বিডিয়ার মৃত্যুর খবর ছাপা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে বুঝা যায়-তদন্তকারী হরেক কমিটি, সরকার, সেনাবাহিনীসহ সব ধরনের গুইপোকা এখনো পর্যন্ত ব্যর্থ; যারা এখনো পর্যন্ত কোনো সুর্নিদিষ্ট কারন বাহির করতে পারছে না। এই ইসুতে আমলাদের লাগামহীন বক্তব্য, সরকার – সেনাবাহিনী মতবিরোধ, বহি গোয়েন্দা দলের অদৃশ্য তদন্ত, জেএমবি সম্পৃক্ততা, তথ্য প্রবাহে বিঘ্নতা সহ অনেক বিষয় আজ উল্লেখযোগ্যভাবে কানেকানে কানেমুখে মুখেমুখে চারদিকে প্রধান টকশো হিসেবে বিরাজমান। ঘটনা পরর্বতীতে কয়েকজন বিডিয়ারের মৃত্যু নতুন কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি করছে। এ পর্যন্ত ৬৯৪ জন বিডিয়ার সদস্য বিডিয়ার বিদ্রোহের তরে ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে হয়তো সবাই বিদ্রোহের সাথে জড়িত নেই। কিন্তু আইন বলে কথা!
ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন মুখ মিডিয়ার মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে—বিডিয়ার বিদ্রোহে জড়িতদের মার্শাল’ল কোর্টে বিচার করা হবে। এমনকি গত ১১মার্চ আইনমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক আন্তমন্ত্রনালয়ের সভায় ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারী সেনা হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িতদের সেনা আইনে বিচারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়; যে হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তা এবং ১০জন বিডিয়ার জওয়ান ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। তাতে যুক্তি হলো-১৯৫২ সালের আর্মি অ্যাক্টের ৫(১) ধারা অনুযায়ী সরকার নির্বাহী আদেশ দিয়ে সেনা আইন অন্য যে কোনো বাহিনীর ক্ষেত্রে প্রয়োগের বিধান করতে পারবে।
একদিকে র্নিমমতার স্মৃতিজড়িত শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্ত্রী-সন্তান আত্বীয়-স্বজন আজ অভিভাবকহীন এক আধা-মৃত্যুর পথ-যাত্রী। কষ্টের লোনা সাগরে বারবার তারা আজ র্মূছা যায়। হাজারো সান্তনা আজ তাদের দমাতে পারছে না। হাজারো স্বপ্নে বিভোর এসব পরিবারগুলো আচমকা এ ঝড়ে পথের দিশা হারাতে বসেছে। নিষ্পাপ সন্তানরা আজ কচিমনে এসব সহ্য করতে হবে বলে কখনো তারা ভাবেনি। নৃশংস এই হত্যাযজ্ঞে শোকে-পাথর এই পরিবারগুলোর সাথে সারা জাতি আজ শোকে বিহ্বল। অন্যদিকে বিডিয়ার সদস্যদের পরিজনেরা রীতিমতো হতাশায় দুশ্চিন্তায় পাগলপ্রায়। সারাদিন পিলখানার আশেপাশে ঘুরঘুর করে স্বজনের ভালথাকার কোনো খবর জানার জন্য।
-----আপাত দৃষ্টিতে এই হলো একটি কেসের fact । যা কেউ কোনোদিন কল্পনা ও করেনি তাই বাস্তবে ধরা দিলো ২৫ ফেব্রুয়ারী কাক ডাকা ভোর শেষ হওয়ার খানিকটা পর। অমিত সম্ভাবনার এ দেশের প্রতি আজ শকুনের দৃষ্টি বারবার হানা দিচ্ছে। চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্রের জাল বুনে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রনে নেয়ার অবিরাম প্রচেষ্টা আজ অব্যাহত। তাদের একটিই ফন্দি- বাংলাদেশকে কিভাবে দুর্বল থেকে দুর্বলতর করা। ২৫ ফেব্রুয়ারির পিলখানা তান্ডবের তরে বিডিয়ার জওয়ানদের যেসব অভাব-অভিযোগের কথা শোনা গেল, তা কি এমন নৃশংসতা সৃষ্টি করতে পারে ? এমন র্নিমম হত্যাকান্ড ? নারী ও শিশুদের প্রতি এমন জগন্য বর্বরতা ? চক্রান্তকারীরা পেছনে থেকে অতি সন্তর্পণে নিখুতভাবে এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে, তাদের জন্য রহিল মনের গহীন থেকে ধিক ধিক্কার, সীমাহীন ঘৃণা আর প্রচন্ড অর্ন্তজ্বালা।
এখনো র্পযন্ত প্রায় ৫০০ জন বিডিয়ার জওয়ানকে বিদ্রোহে জড়িত সন্দেহে দরবার হলে থাকতে হচ্ছে। র্সাবক্ষণিক পাহারায় থাকছে সেনা-সদস্যবৃন্দ । গনতান্ত্রিক এ দেশে কোনো ব্যক্তি অভিযুক্ত হলেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়ার কোনো বিধান নেই। প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তি ন্যায়বিচার কামনা করার নিজস্ব অধিকার আমাদের দেশে স্বীকৃত। ক্রিমিনাল’ল (c.r.p.c.(1898), penal code (1860)), সাক্ষ্য আইন, 1872 অনুসরন করে বিচার বিভাগ এসব অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করার ক্ষমতা রাখে। তেমনিভাবে এ দেশের নাগরিক হিসেবে দন্ডপ্রাপ্ত সকল আসামী নিজেকে র্নিদোষ দাবি করে উচ্চ আদালতে আপিল করার অধিকার রাখে। মুলত এটাই একটি গনতন্ত্র রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট।
অন্যদিকে র্মাশাল’ল কোর্টে উপরোক্ত আইনগুলো যর্থাথভাবে অনুসরন করা হয় না। এসব কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কোনো বেসামরিক আদালতে আপিল বা চ্যালেন্জ করা সম্ভব হয় না। সামান্য লগু অপরাধে গুরুতর শাস্তি হতে ও দেখা যায়। ১৯৫২ সালের সেনা আইনের ১৩৪ ধারা অনুযায়ী গুলি বা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বিধান রয়েছে। এসব কোর্টের সব কার্যক্রমের খুব সামান্যই জনগন জানার ক্ষমতা রাখে। তা মুলত রাতের আধারে খোলা মাঠে গোল করার মতই বলে মনে হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে অনেক আইন নিজের মত করে- পাশ করাতে সেনাবাহিনীর একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রয়োগ করার অভিযোগ ও আজ পাওয়া যায়। এসবগুলো হলো গনতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ বিপরীত বৈশিষ্ট্য।
এতসব কথা প্রকৃতপক্ষে একটি ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় জ্ঞাপন করছি। প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হোক-তা আমার মত প্রত্যেক বিবেকবান মানুষের আকুল প্রত্যাশা । এমন নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে কখনো জাতি আর না দেখে তাই মোর প্রকৃত চাওয়া। দেশের সোনার ছেলেদের এমন মৃত্যু জাতি কখনো কাম্য করেনি। জাতির যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কখনো শোধযোগ্য ও নয়। সুতরাং প্রকৃত দোষীদের যর্থাথ বিচার এ দেশের মাটিতে না করার কোনো অযুহাত থাকতেই পারে না। -----------
আমার প্রকৃত কথাটি মুলত এই একটি স্থানেই আবদ্ধ। বিচারের নামে যাতে কোনো প্রহসন জাতি দেখতে না হয়- তাই নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। জওয়ানরা কামড় দিয়েছে বলে সেনাবাহিনী ও তেমন আচরণ করবে- তা কিন্তু প্রকৃত সমাধানের কোনো পথ নয়। প্রতিশোধ-পরায়ণ হওয়ার পথ যদি খোলা রাখা হয় তাহলে জাতি নেতিবাচক কিছু দেখার জন্য অপেক্ষা করতেই পারে। জাতি কোনোদিন তা কামনা করে না। অন্যদিকে যদি তদন্তে প্রকৃত কোনো সত্য বাহির হয় বা কোনো ষড়যন্ত্র অংকুর মেলে—তাহলে সরকারের উচিৎ হবে দল-মত সবশেষে শক্তহাতে তা প্রতিহত করা। সবশেষে জানা যাবে, কাদের প্রতিহিংসার শিকার হতে হলো এদেশের বীর সেনা র্কমর্কতাদের। এসব সেনা সদস্যদের প্রতি শান্তি কামনা আর তাদের স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি রহিল মনের গভীর ভালবাসা আর সহর্মমিতা।
এ ঘটনার পাশাপাশি আমরা যখন জাতির বীরদের হারাতে বসেছি; ঠিক তখনি রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে একের দোষ অন্যের কাধে চাপানোর নোংরা প্রতিহিংসা লক্ষ্য করা যায়। এ প্রতিযোগিতা যেন শেষ হবার নয়। যারা আওয়ামী পন্থী তাদের স্পষ্ট বিশ্বাস- এ কাজ বিএনপি-জামাত জোটের কাজ। তাদের হিসাব হলো- সরকারকে ক্ষমতা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলার এ-ই সবচেয়ে সুবর্ণ সুযোগ। অন্যদিকে বিএনপির দাবি-এটা আওয়ামী ষড়যন্ত্র। আমাদের সেনাবাহিনীকে র্দুবল করতেই তারা এমন জগন্য কাজ পেছন থেকে কলকাঠি নাড়িয়ে সম্পন্ন করেছে। এছাড়া ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের মনে হাজারো সম্ভাবনার ছায়া উকি মারছে।
একটি জাতির যখন ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন, ঠিক তখনি আমাদের রাজনীতিবিদরা চরমভাবে বিভক্ত; কিন্তু সুযোগ-সুবিধা আদায়ের ক্ষেত্রে তারা হয় ঐক্যবদ্ধ। জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য, প্রায় চার দশকে আমরা আমাদের ভিতটাকে শক্ত করতে পারিনি, পারিনি নিজের ঘরটিকে সামলিয়ে রাখতে। পারিনি শক্ত মাটিতে পা রেখে পথ চলতে। কে আমাদের বন্ধু এবং কে আমাদের শত্রু তা ও আমরা চিন্হিত করতে ব্যর্থ । আজ জাতির জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো-ঐক্যবদ্ধ জাতিয় শক্তি, অন্তরঙ্গ পরিবেশ,সহনশীলতা আর পরস্পরের মাঝে অত্যধিক সহযোগিতা। হিংসা প্রতিহিংসার রাজনীতির কোনো প্রয়োজন নেই। তাহলেই গড়ে উঠবে সুখ-সমৃদ্ধিময় কল্পনার সোনার বাংলা; যেখানে থাকবে না কোনো বিদ্রোহ, থাকবে না কোনো বিভক্তি, থাকবে না বিচারের নামে কোনো প্রহসন; এবং জাতি দেখবে না মরু-ভূমির কোনো ঝড়।

বি:দ্র: লেখালেখিতে তেমন নয়। মনের আনমনে ভাল না লাগলে জীবনী লিখি। তাই ভুলগুলো উবে ফেলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৩:২১
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×