ফেসবুক ব্যান করা নিয়ে ব্লগে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মতামত পড়েছি। যারা ফেসবুক ব্যান করার পক্ষে, তাদের যুক্তি এতে সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। আর যারা ফেসবুক ব্যানের বিপক্ষে, তাদের যুক্তি এত বেশি যে, সেগুলো পুরোপুরি লেখা সম্ভব না। সামগ্রিকভাবে দেখা গেছে, ফেসবুকের পক্ষে-ই সবার মত। খোদ প্রথম আলো ১১৮৫ জনের মধ্যে জরিপ চালিয়ে ৩৬.৮৮% ফেসবুক ব্যানের পক্ষে এবং ৬২.৫৩% ফেসবুক ব্যানের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। বাকি ০.৫৯% কোন মন্তব্য প্রদান করেনি। (উৎস : ৩১/০৫/২০১০ এর প্রথম আলো)
একটি বিদেশী পত্রিকায় (আমার বন্ধুর বাসায় দেখেছিলাম। নাম মনে নেই।) দেখলাম, সারা বিশ্বের শুধু ফেসবুক ব্যবহারকারীগণ যদি আলাদা দেশ গঠন করে, তাহলে সেটা জনসংখ্যার বিচারে চার নম্বরে অবস্থান করবে যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান সাত/আট এর ঘরে।
আমি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলি ২০০৬ এর শেষের দিকে। প্রথম প্রথম আমার কাছে এটা বেশি সাদামাটা মনে হতো। তাছাড়া ঐ সময় ইন্টারনেটও খুব একটা সহজলভ্য ছিল না। যাই হোক, ২০০৭ এর শুরুতে আমার ভার্সিটির বন্ধুদের পাই এই ফেসবুকে। তখনও খুব একটা ফেসবুক চেক করতাম না। ২ কি ৩ সপ্তাহ পর পর। তারপর ২০০৭ এর আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে ঘটে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। দীর্ঘ ৭-৮ বছর পর আমার প্রাইমারি স্কুলের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের খুঁজে পাই। তারপর একে একে পাই হাইস্কুল-কলেজ ফ্রেন্ডদের। শুধু তাই নয়। ২০০৮-এও পুরাতন প্রতিবেশি এবং আত্নীয়-স্বজনদের-ও পেতে শুরু করি ফেসবুকে। একটা কথা সবাইকে বলে রাখি। আমি নিকট পরিচিত ছাড়া কাউকে আমি অ্যাকসেপ্ট করি না। তারপরেও আমার ফ্রেন্ডের সংখ্যা ২০০-র কিছুটা উপরে। এরপর থেকেই ফেসবুক আমি নিয়মিত ব্যবহার করি। সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি (বিশেষ করে ফেসবুক ব্যানের পক্ষে যারা, তাদের উদ্দেশ্যে) যে এটা ব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে আমার কি লাভ হয়েছে :-
১. ফেসবুকে গ্রুপ করেই আমাদের প্রাইমারি-হাইস্কুলের পুরাতন বন্ধুদের একত্র করে রিইউনিয়ন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়েছে।
২. আমার এক বন্ধুর দূর্ঘটনার সময় ফেসবুকের মাধ্যমেই রক্ত চাওয়া হয়েছিল। তিন ঘন্টার মধ্যেই প্রচুর সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। এভাবেই ঐ দিন তিন বন্ধুর কাছ থেকে কমপক্ষে তিন ব্যাগ একই গ্রুপের রক্ত পেয়েছিলাম।
৩. আমার মোবাইল একবার লোকাল বাস থেকে হারিয়ে গিয়েছিল (২০০৮-এ)। ফলে আমি সবার নম্বর হারিয়ে ফেলি। কিন্তু এই ফেসবুকের মাধ্যমেই আমি দুই দিনের মধ্যেই আবার সবার নম্বর সংগ্রহ করতে সক্ষম হই।
৪. এমনিতেই ব্যস্ত জীবনের কারণে সবার জন্মদিন মনে থাকে না। কিন্তু ফেসবুক-ই সবার আগে আমাকে মনে করিয়ে দেয়। সে কারণে তাদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতে কখনোই ভুলে যাই না।
৫. অনেকেই মনে করে, ফেসবুক চ্যাটরুম সময় নষ্ট করায়। কিন্তু এর সাহায্যে আমি কাউকে টাকা খরচ করে ফোন কল না করেই অনলাইনে থাকা কারোর কাছে তাৎক্ষনিকভাবেই বিনামূল্যে আমি জেনে নিতে পারছি কালকের ক্লাশ/অফিস/বিজনেস শিডিউল।
৬. সবশেষে অবসর সময়ে অনলাইন গেমিং। যারা ফেসবুক ব্যানের পক্ষে, তারা অবসর সময়ে কি করেন জানি না। আমার এলাকায় পরিচিত হাতেগোনা কিছু লোক আছে (৩ কি ৪ জন) যাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নাই। তারা অবসর সময়ে কি করে জানেন? একজন সারাদিন ঘুমায়। আর একজন শেয়ারবাজার নিয়ে সারাদিন নেটে ঘাটাঘাটি করে। ভাবখানা এমন যে, এই বুঝি শেয়ারের মূল্য কমে গেল। আর বাকি দুইজন তো জুয়া-গাঞ্জা...! থাক... ব্যানের পক্ষে-রা ইতিমধ্যে ক্ষেপে গেছেন। তাহলে তো আর লিখা সম্ভব নয়। আচ্ছা চলি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




