somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিতা, চিত্রকর্ম এবং ভ্যান গঘ

২৫ শে জুলাই, ২০১১ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স ঙ গৃ হি ত

কবিতা, চিত্রকর্ম এবং ভ্যান গঘ
লিখেছেন মাহমুদ শফিক, জুলাই ১১, ২০১১ • মন্তব্য (০)

চিত্রকলা ও কবিতা মানুষের মনের ভেতর থেকে বের করে এনেছে সভ্যতার হীরা-জহরৎ। ভাষার প্রতিটি শব্দই প্রতীকধর্মী। মানুষ প্রতীকের মাধ্যমে পৌঁছে যেতে পারে অভিজ্ঞতার গভীরে। যেমন, গোলাপ। ‘গোলাপ’ শব্দের মাধ্যমে আমরা পৌঁছে যেতে পারি আসল গোলাপের কাছে। মানুষের কণ্ঠে যখন অর্থপূর্ণ ধ্বনি ছিল না, তখন সে মনের ভাব ব্যক্ত করেছে চিত্রের মাধ্যমে।
প্রাগৈতিহাসিক যুগেও মানুষ ছবি এঁকেছে। নির্মাণ করেছে ভাস্কর্য। সে ভাষা আবিষ্কারের মাধ্যমে সভ্য হয়েছে। সভ্যতার বয়স যত বেড়েছে, চিত্রকলা ও ভাষার গভীরতা তত বেড়েছে। মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলো হয়েছে জটিল। বিশ হাজার বছর আগেও মানুষ রং ব্যবহার করেছে। কিন্তু তখন অর্থপূর্ণ ধ্বনিসমষ্টি ছিল না। রং ও ধ্বনির সমন্বয়ে মানুষ যে পৃথিবী তৈরি করেছে, সেই জগতের বিস্তৃত ও গভীরতা অনেক বেশি। প্রাচীন কালে বিজ্ঞানও ছিল কল্পনাবিলাস। ধীরে ধীরে তা বাস্তব জগতে বন্দী হয়েছে। অন্যদিকে চিত্রকলা হয়ে উঠেছে মনের চিত্ররূপময় ভাষা, যথার্থ অর্থে চিত্রকল্প, রঙের অবভাসিক প্রকাশ। কবিতা চিত্রকলার পাশে স্থান করে নিয়েছে। মানুষ সেখান থেকে খুঁড়ে বের করে এনেছে বিদগ্ধ সভ্যতা। প্রাগৈতিহাসিক যুগে সন্তান-সম্ভবা স্থূলকায়া নারীর ভাস্কর্যে দেখানো হয়নি নারীর নাক, চোখ ও মুখ। রেনেসাঁসের যুগে নারীর বিষাদ, মর্ম-যাতনা ও বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের লাবণ্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আলো-ছায়ার খেলায়। শিল্পীর হাতে ধরা দিয়েছে প্রতিটি মুহূর্তের বদলে যাওয়া দৃশ্য। তার মনের অন্ধকার খনি থেকে উঠে এসেছে সৌন্দর্যের পরশপাথর। ১৪৭৮ সালে ফ্লোরেন্সের বত্তিচেলি অঙ্কন করেছেন ‘বসন্ত’ নামে একটি চিত্র। এই অপূর্ব চিত্রে রয়েছে কমলালেবুর কুঞ্জে দাঁড়ানো ভেনাস, তার পাশে কিউপিড। ভেনাস বসন্ত রাণীকে স্বাগত জানাচ্ছেন। বসন্ত রানীর সঙ্গে ফুলের রানী ফ্লোরা ও বনের দেবতা জেফিরাস। ফ্লোরার মুখে একটি ফুলের মালা। লতাগুচ্ছের সংস্থাপনে শিল্পীর উদ্ভিদবিদ্যার নিঁখুত জ্ঞান উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। প্রতীক আশ্রিত এই চিত্রকর্মটির মধ্যে বিজ্ঞান ও চিত্রকলার অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে, যা অতীতে ছিল না।
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি তার দেয়ালচিত্র ‘লাস্ট সাপার’-এর (১৪৯৫-৯৮) মাধ্যমে তুলে এনেছেন বিশ্বাস ভঙ্গের এক করুণ কাহিনী। এই দেয়াল চিত্রটির উৎস বাইবেলে বর্ণিত ধর্মপুরাণের কাহিনী- বার জন শিষ্যের সঙ্গে যিশুর শেষ ভোজের দৃশ্য। বাইবেলে আছে, “সেদিন, যখন সন্ধ্যা হলো, তখন যিশু বার জন শিষ্যকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। তারা সকলে আসনে বসেছেন, এবং খাচ্ছেন, এমন সময় যিশু বলে উঠলেন, আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এই তোমাদেরই মধ্যে একজন আমাকে শত্রুর হাতে তুলে দেবে।” যিশুকে শত্রুর হাতে তুলে দেয়ার পরিণতি ভয়াবহ হয়েছে। মথি রচিত বাইবেলে আছে বিশ্বাসঘাতক যুদা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মৃত্যুর আগে যুদা অর্থগুলো মন্দিরে ছড়িয়ে দেয়। তার আত্মহত্যার পর প্রধান যাজকেরা অর্থগুলো কুড়িয়ে নিয়ে বলেন, “এগুলো তো মন্দিরের কোষাগারে দিতে নেই। কেননা, এ যে রক্তের মূল্য।”
এই দেয়াল চিত্রে অপূর্ব আলোর খেলা রয়েছে। যিশুর পবিত্র দেহের চারপাশে পড়েছে আলো। আর যুদার ওপর পড়েছে কালো ছায়া। যে ভোজনালয়ে যিশু তার বার জন শিষ্য নিয়ে বসেছেন, এর পেছনে আছে একটি খোলা দরজা আর দুটি জানালা। এর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে পেছনের দিক- বহু দূরে পার্বত্য ভূমির দৃশ্য। লিওনার্দো মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির অভিন্ন সম্পর্কের কথাই চিত্রিত করেছেন। তিনি বাইবেলের ট্রাজিক কাহিনীকে দেয়ালচিত্রে রূপান্তরের মাধ্যমে চিত্রশিল্পের জগতে যোগ করেছেন বিষ্ময়কর অধ্যায়। জাত মহাকাব্য রচনার মাধ্যমে হোমার কবিতাকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, লিওনার্দো চিত্রশিল্পকে একই উচ্চতায় তুলেছেন। কিন্তু চিত্রশিল্প কখনই জনপ্রিয়তার শিখর স্পর্শ করতে পারেননি। ইলিয়ডের জনপ্রিয়তার কারণেই পেস্নটো তার আদর্শ রাষ্ট্র থেকে কবিদের নির্বাসন দিতে চেয়েছেন। দর্শন যেখানে যুক্তিনির্ভর, কাব্য সেখানে কল্পনা ও আবেগনির্ভর। কাব্যের বিরুদ্ধে পেস্নটোর যুক্তির তীব্রতা এমন এক আবেগে রূপ নেয়, যা তার আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামোকেই দুর্বল করে দেয়।
তখন গ্রিসে কোন ধর্মগ্রন্থ ছিল না। মানুষ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জীবনের সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্ধৃত করেছে হোমারের শ্লোক। ইলিয়ডের পংক্তি মুখস্থ করা ছিল বাধ্যতামূলক। হয়ত কাব্যের এই প্রভাবকে আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরাট বাঁধা হিসাবে মনে করেছেন প্লোটো। আধুনিককালে কবিতার সেই জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু অতি উঁচু মানের শিল্প হিসাবে এর গুরুত্ব কমেনি। মার্কিন সমালোচক জোসেফ এপস্টেইন কবিতার জনপ্রিয়তা হ্রাসে শঙ্কিত হয়ে ‘কবিতা খুন করেছে কে’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, “কবিতা আমাকে অনেক কিছু জানিয়েছে। পরিতৃপ্ত করেছে। এমনকি প্রশংসা করতেও শিখিয়েছে।” একই প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, “কবিতার মতো অন্য কোন সাহিত্য রীতি ঐশ্বরিক নৈকট্য পায় না।”
অপার্থিব আঘাতকে বুক পেতে নিতে সাহায্য করে কবিতা। কবিতা অপার্থিব মুহূর্তগুলোকে পার্থিব বিষয়ে রূপান্তরিত করে বলেই লোকসমাজে এর প্রভাব শেষ হয়ে যায়নি। শিল্পকলা হলো কবিতার শব্দহীন বর্ণিল প্রকাশ। চাঁদকে আমরা চাঁদ উচ্চারণ করেই চিনি; কিন্তু ছবি দেখে যেই চাঁদকে আমরা চিনি তা বাতাসে কম্পন তোলে না। মনে কম্পন তোলে। যখন রং ও আঙ্গিক সংগীতময় সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়, তখন চিত্রকলা হয়ে যায় কবিতা। যখন শব্দ ও আঙ্গিক চিত্রধর্মী অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়, তখন কবিতা হয়ে ওঠে চিত্রকলা। এভাবেই কবিতা ও চিত্রকলার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। যেমন, ভ্যান গঘের ‘দ্য পটেটো ইটারস’ কিংবা জীবনান্দ দাশের ‘বনলতা সেন’।
মানুষ নিজের স্বাথের্র কথা সবার আগে চিন্তা করে। এভাবেই সমস্বার্থের জোট নিয়ে গড়ে ওঠে শ্রেণী স্বার্থ। কবিতার সঙ্গে অন্য শিল্পের বিরোধ একই কারণে। ক্রিস্টোফার কডওয়েল মার্ক্সের কথার পুনরুক্তি করে বলেছেন, “শ্রেণীসমাজ শাসক ও শোষকের সমন্বয়ে গঠিত, এবং সমাজের সচেতনতা মানেই শাসকদের সচেতনতা।” তিনি আরো বলেছেন, “In the theory of consciousness, Man interpretes Nature in images of himself” প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ধরনগুলো বিভিন্ন সময় বদলে যায়। এই বদলে যাওয়ার রং-ই চিত্রকলা ও কবিতায় ধরা পড়ে।
মানুষের মধ্যে অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রচেষ্টা সবসময়ই ছিল। এই জন্যই মানুষ অনেক সাধারণ জিনিস থেকে অসাধারণ জিনিস সৃষ্টি করেছে। যেমন, ‘ছাগলের গান’ থেকে সৃষ্টি করেছে ট্র্যাজেডি। পুরাণভিত্তিক এক ধরনের নাটককে বলা হতো ‘ত্রাগোদিয়া’। শব্দটির মূল অর্থ ‘ছাগলের গান’। প্রাচীন গ্রিসের অভিনেতারা ছাগলের চামড়া পরে অভিনয় করত। তখন থেকেই শব্দটি চালু হয়েছে। এর মূল কারণ ছাগলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব।২ এই প্রতিভাসকে শিল্প সৃষ্টির প্রেরণা হিসাবে ব্যবহার করে মানুষ তার কল্পনা শক্তিকে বাস্তবে রূপ দেয়ার ক্ষমতা প্রমাণ করেছে। অভিজাতদের জয়গান করার কাব্যধর্মী প্রেরণা থেকে মানুষ মহাকাব্যের সৃষ্টি করেছে।
প্রাচীন কৃষিজীবী মানুষের কাছে কাব্য হলো মায়া, যাদুমন্ত্র কিংবা স্বর্গে পৌঁছে যাবার মন্ত্র। কাব্যের নির্দিষ্ট গঠনের মধ্যে এমন বিচিত্র অর্থ ও ধ্বনির ব্যঞ্জনা রয়েছে, যা অনুভব করে মানুষ বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছে; যেমন অভিভূত হয়েছে মুখের গড়নের বৈচিত্র্য দেখে। একজন মানুষ আরেক জন মানুষ থেকে পৃথক, কারণ মানুষ যন্ত্র নয়। একটি বিজলী বাতি সর্বত্রই বিজলী বাতি; কিন্তু মানুষের স্বভাব, ব্যবহার, ভাষা, ভাষার উচ্চারণ রীতি, সংস্কৃতি ও সক্ষমতার দিক থেকে প্রতিটি মানুষ আলাদা। মানুষের চেহারা ও স্বভাবের মতোই শিল্পকর্মও বৈচিত্র্যের পথে চলে। এভনার জিস তার ফাউন্টেশসনস অফ মার্ক্সিস্ট অ্যাসথেটিকস গ্রন্থে বলেছেন, “The nature of art is complex and diverse. Art taken as a whole is not simply a reflection of reality, but also artistic creativity, active creation, a specific type of aesthetic practical-cum-cultural activity.”৩ কাব্য কিংবা যে কোন শিল্পের জন্ম শিল্পীর মনোবিশ্বে এবং তা শিল্পরসিকদের সৌন্দর্যের তৃষ্ণা মিটায়। একই সঙ্গে মানুষের মনের জগৎ-কে প্রসারিত করে। কিছু সংখ্যক নৃতত্ত্ববিদ মনে করে, আদিম মানুষের মনোযোগের বৃত্তি দুর্বল ছিল। ছন্দোগত ছক তাদের বিক্ষিপ্ত মনোযোগ ধরে রাখত। কিন্তু কডওয়েল বলেছেন, মনোযোগ বিশেষ কোন বৃত্তি নয়। তা হলো মানুষের জীবনভাবনার সহজ প্রবৃত্তিগত উপাদান। যে ক্ষেত্রে বুদ্ধি কিছুটা কম, সে ক্ষেত্রে মনোযোগ বেশি শক্তিশালী।
প্রাচীনকালে কাব্য রচিত হয়েছে কর্মের অংশ হিসাবে। বিবর্তনের মাধ্যমে কাজের ভাষা হয়ে উঠেছে গদ্য। রচিত হয়েছে ঈশ্বরতত্ত্ব, দর্শন, ইতিহাস, গল্প ও নাটক। ভাষার মাধ্যমে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং স্বপ্ন ও কল্পনার রূপান্তর ঘটেছে। শিল্পকর্মকে এই পর্যায়ের গদ্যে টেনে আনা যায় না। কবিরা শাসকদের স্তুতি করেও কবিতা লিখেছেন। এরপরও তাদের স্বাধীন সত্তার মৃত্যু ঘটেনি। প্রত্যেক মানুষের মনে এমন কিছু স্বপ্ন আছে, যেখানে আগ্রাসন চলে না। বুলডোজার দিয়ে উপড়ে ফেলা যায না তার কল্পনার জগৎ। এই কারণেই সর্বগ্রাসী বস্তুজগতের প্রাধান্য থাকা সত্ত্বেও ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষের মন থেকে স্বর্গের ধারণা মুছে দেয়া সম্ভব হয়নি। এই বিশ্বাসের সঙ্গেও অর্থনীতির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সনাতন ধর্মের মানুষ গরুকে পূজা করে। এর কারণ, কৃষিজীবী মানুষের কাছে গরু একটি প্রধান সম্পদ।
সভ্যতার সূচনা লগ্নে মানুষের প্রধান সাফল্য ছিল কৃষিকাজের মাধ্যমে শস্য উৎপাদন। সেই সাফল্যের বোধ মানুষকে সৃষ্টিশীল কাজে উৎসাহ যুগিয়েছে। পুরোহিতরা ঈশ্বরের সৃষ্টিশীলতার গুণগান করেই পুরোহিত হয়েছেন। তাদের উচ্চারণগুলো আসলে কবিতা। কবিতার মাধ্যমে ঈশ্বর কথা বলেছেন। কারণ, এর মধ্যে রয়েছে সৃষ্টিশীলতার স্ফুরণ। ভাষার অন্যান্য মাধ্যমে তা ঘটে না। ধর্মগ্রন্থগুলো পাঠ করা পুণ্যের কাজ হিসাবে বিবেচিত। বাল্মীকি রচিত রামায়ণে আছে, “এই পবিত্র পাপনাশক পুণ্যজনক বেদতুল্য রামচরিত যে পাঠ করে সে সর্বপাপ থেকে মুক্ত হয়।”৪ বাল্মীকি সমান অক্ষরবিশিষ্ট তন্ত্রীলয়ে গানের যোগ্য শ্লোক রচনা করেছেন, যা শোকের আবেগ থেকে উৎপন্ন। কিন্তু তার শ্লোক ‘শৃঙ্গার করুণ হাস্য রৌদ্র ভয়ানক বীর প্রভৃতি’ রস সমন্বিত। কবিতার মাধ্যমেই স্বর্গের সিঁড়ি দুনিয়া পর্যন্ত নেমে এসেছে। এই সিঁড়ি দিয়ে পুরোহিতরা দ্রুত উঠে যান স্বর্গে।
চিরসুখের বাসনা থেকে মানুষ তার মনোরাজ্যে স্বর্গের জন্ম দিয়েছে। পুরাণের কাহিনীগুলো আসলে সেই বাসনারই উৎসারণ। মার্ক্স বলেছেন, “All mythology subdues, controls and fashions the forces of nature in the imagination and through imagination; it disapears therefore when real control over these forces is established.” ৫ পুরাণের বীরেরা পরাজিত হয় না।
চিত্রকলা ও কবিতার মাধ্যমে মানুষের মনে সঞ্চারিত হয় বিচিত্র রঙের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন। তাই শ্লোকগুলো এত জীবন্ত। কবিরা শক্তি ও সৌন্দর্যের স্তুতি করেছে সৃষ্টির সাফল্য অনুভব করার জন্য। চীনের প্রাচীনতম কবিতাগুলো এরই জ্বলন্ত উদাহরণ। খ্রিস্টপূর্ব একাদশ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের মধ্যে রচিত চীনের প্রাচীনতম কবিতাগ্রস্থ ‘দ্য বুক অফ পয়েট্রি’-তে এমন অনেক কবিতা রয়েছে, যেগুলো শাসক শ্রেণীর জন্য রচিত এবং শাসকরাও তাদের পূর্ব পুরুষদের গুণগান করে স্তোত্র উচ্চারণ করেছেন। একই গ্রন্থে শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে দাসদের প্রতিরোধের বর্ণনাও বাণীবদ্ধ করেছেন কবিরা।
ভ্যান গঘের শিল্পকর্ম তার বাস্তব অভিজ্ঞতারই প্রকাশ। তার জীবনী পড়ে হতাশ হলেও শিল্পকর্ম দেখে বিস্মিত হতে হয়। ভাব প্রকাশের ভঙ্গির ওপর তার দখল অসামান্য। যন্ত্রণায় মুচড়ে যাওয়া অবস্থায়ও এঁকেছেন সৌন্দর্যের ছবি। তার ছবিগুলো হলো রঙের বিদগ্ধ মানবিক দলিল, যার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গিয়ে গিয়েছে সৌন্দর্যের ঝর্ণাধারা। প্রকৃতির প্রতিটি দৃশ্যের মধ্যে রহস্য রয়েছে। সৃষ্টিতত্ত্বের এই রহস্যকে যারা সকলে অনুধাবন করতে পারে না, তাদের কাছে সৌন্দর্য হয়ে ওঠে নিছক প্রকৃতি বর্ণনা। অথচ প্রকৃতির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে সৃষ্টির রহস্য। বৃক্ষ ধীরে ধীরে মাটির গভীরে শেকড় ছড়িয়ে দেয়। বেড়ে ওঠে উপরের দিকে। বৃক্ষের কি ভাষা আছে? হয়ত বৃক্ষের ভাষা নেই। নির্বাক বৃক্ষের ভাষা ব্যক্ত করেন শিল্পীরা। বাগানে ফুল ফোটার মধ্যে কোন ব্যঞ্জনা নেই। কারণ, বাগানে ফুল ফোটার-ই কথা। কোন প্রেমিক যদি ফুলের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আঙুল রক্তাক্ত করে ফেলেন এবং সেই রক্তে গোলাপ লাল হয়ে ফুটে ওঠে, তবে নিশ্চয়ই তাতে ব্যঞ্জনা রয়েছে। যেমন ভ্যান গঘ তার ছবি লিথোগ্রাফ মাধ্যমে আঁকা ‘দুঃখ’ দিয়ে এক ধরনের ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছেন।
ভ্যান গঘের জীবন ছিল গভীর দুঃখের আক্রান্ত, মানসিক যন্ত্রণায় রক্তাক্ত এবং নিদারুণভাবে শোকাতুর। এমন একজন ব্যথিত মানুষ এঁকেছেন নিসর্গের ছবি। শিল্প ও মানব প্রকৃতির সঙ্গে অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছেন তিনি। তার ছবি আঁকার উদ্যমে কখনো ভাটা পড়েনি। চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় এঁকেছেন বর্ণিল চিত্রমালা। কিন্তু গভীর হতাশা তাকে কুরে কুরে খেয়েছে এবং টেনে নিয়ে গিয়েছে ধ্বংসের দিকে। নিজের জীবন নিয়ে তার কোন স্বপ্ন ছিল না। তিনি স্বপ্নের মাধ্যমে মানুষকে টেনে নিয়ে গিয়েছেন জীবনের রহস্যময় জগতে, যেখানে শূণ্য প্রান্তর পাকা হলুদ শস্যে ভরে ওঠে আর গানের পাখিরা কলরব করে। তার ছবিতে রয়েছে সমুদ্রের ওপারে নেমে আসা হালকা নীল আকাশ, হলুদ সূর্যমুখী, রঙির জিপসি ক্যাম্প কিংবা শ্রমিক পরিবারের সুখিমুখ। রঙের উজ্জ্বলতায় ছবিগুলো মানুষের অভ্যন্তরে জ্বেলে দিয়েছে সৌন্দর্যের সুষমা। তার ছবি অন্ধকারেও আলোর ভাষায় কথা বলেছে, যেমন-‘স্টারি নাইট’। ইংরেজ কবি ডবিস্নউ. এইচ. অডেন (১৯০৭-৭৩) ‘ভ্যান গঘ/অ্যা সেল্ফ পোট্রেট’ (চিঠির সংকলন) গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন, “মানুষ এবং চিত্রকর দুই হিসাবেই অনুভূতির দিক থেকে ভ্যান গঘ ছিলেন প্রচণ্ডভাবে খ্রিস্টান।” ভ্যান গঘ নিজেই ঘোষণা করেছেন, “আত্মসমর্পণ করা তাদের পক্ষেই সম্ভব যারা আত্মসমর্পণ করতে পারে, আর ধর্মবিশ্বাসও তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করতে পারে।”৬ এই কারণেই অডেন তাকে ‘ধার্মিক বাস্তববাদী’ চিত্রকর হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। ভ্যান গঘ বাস্তববাদী এই কারণে যে, তিনি প্রকৃতিকে নিয়মিত পর্যালোচনা করতেন। ধার্মিক এই কারণে যে, প্রতিটি প্রকৃতিতেকে আধ্যাত্মিক মহিমার দৃশ্যগত প্রতীক হিসাবে দেখতেন।৭ তার দেখার মধ্যে ছিল মহৎ চিন্তার উপলব্ধি। সমাজের উঁচু স্তরে অবস্থান করে টলস্টয় কৃষককে নিজের সমান করে দেখেছেন। তাই নিজেকে কৃষকের সমান বলে বিবেচনা করতে পারতেন না। কিন্তু ভ্যান গঘ ছিলেন বিত্তহীন এবং জীবন যন্ত্রণার রক্তাক্ত। কৃষকদের সঙ্গে মিশে তাদের জীবনকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেই বাস্তবতার ছাপ তার ছবিতে স্পষ্টভাবেই রয়েছে।
ভ্যান গঘের ‘দ্য পটেটো ইটারস’ চিত্রে তা গভীর ভাবে ধরা দিয়েছে। এই চিত্র সম্পর্কে তিনি তার ভাই থিওর কাছে লিখেছেন, “I intended to keep conscientiously in mind the suggestion to the spectator that these people eating their potatoes under the lamp and putting their hands in the plate, have also tilled the soil, so that my picture praises both manual labour and the food they have themselves so honestly procured. I intended that the painting should make people think of a way of life entirely different from our own civilised one. So I have no wish whatever for anybody to consider the work beautiful or good.
“In painting these peasants I thought of what had been said of those of Millet, that they ‘seem to have been painted with the very soil they sow’.” ৮
ভ্যান গঘ বলেছেন, “আমাদের চারপাশে, সর্বত্র কবিতা ঘিরে রয়েছে।...সবসময় আমি ভাবি, ছবির চেয়ে কবিতা অনেক সাংঘাতিক...।” তিনি তার লেখায় আরো বলেছেন, “চাষী, কাগজকুড়নী, সব ধরনের শ্রমিক- এদের আঁকার চেয়ে সোজা আর কিছু নেই... এইসব সাধারণ চরিত্রের চেয়েও কঠিন বিষয়ও নেই ছবি আঁকায়।”
ভ্যান গঘ ‘দ্য পটেটো ইটারস’ এঁকেছেন ১৮৮৫ সালে। বাস্তব অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে ছবিটি আঁকেন তিনি। ন্যুয়েনের কর্মজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর পরিশ্রমী শ্রমিক হলো তাঁতীরা। তারা একটানা কাজ করে সপ্তাহে ষাট গজ কাপড় বুনতে পারে। তাদের স্বভাবে নেই কাঠিন্য। মেজাজ থাকে হাসিখুশি।
ন্যুয়েনে থাকার সময় ভ্যান গঘ পরিচিত হন একটি কৃষক পরিবারের সঙ্গে। পাঁচ সদস্যের এই পরিবারে সবাই মাঠে কাজ করে। আলু চাষ করে। আলুই তাদের প্রধান খাদ্য। এই ‘দ্য পটেটো ইটারস’ আঁকার আগে বহু বার এর খসড়া এঁকেছেন। মুখের স্টাডি করেছেন অন্তত পঞ্চাশ বার। শেষ পর্যন্ত ছবিটি চূড়ান্ত করেন। এই ছবিটির রং গাঢ় সবুজ। ঘোরাটোপ দেয়া আলো ঠিকরে এসে পড়েছে ক্যানভাসের চারটি মুখে ওপর। ছবির আরেকটি চরিত্র দাঁড়িয়ে রয়েছে পেছন ফিরে। ছবির চরিত্রগুলো বাস্তব জীবন থেকে নেয়া। তারা একই সঙ্গে উৎপাদক ও ভোক্তা। নিজেদের উৎপাদিত খাদ্য নিজেরা ভোগ করার মধ্যে আনন্দই আলাদা। রাষ্ট্রের কারিগর তারা। তাদের মুখের আলোচ্ছটা মার্ক্সের শ্রমিক রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্নকেই জাগিয়ে তোলে। শিল্পীর এই বোধ বাসত্মবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
যুদ্ধ করা ও যুদ্ধের অভিনয় করা এক কথা নয়, যেমন এক কথা নয়, বাস্তব ও বাস্তবের প্রতীতী। শ্রমের শুভ্রতা মানুষকে অপরাধবোধ থেকে মুক্ত করে। কিন্তু উৎপাদনের অধিকার থেকে বঞ্চিত শ্রমিক সাফল্যের সুখ অনুভব করতে পারে না। ‘দ্য পটেটো ইটারস’-এর চরিত্রগুলো তা পেরেছে। সেই অর্থে এই চিত্রে ভ্যান গঘ আদর্শ শ্রমিকের মুখ এঁকেছেন। এখানেই তিনি একজন সফল শিল্পী। কারণ, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের নিষ্পেষণে চরিত্রগুলোর মৃত্যু হবে না। বাস্তবের দুঃখ মানুষের মন পোড়ায়; কিন্তু স্মৃতির দুঃখ মনকে পোড়ায় না। তাহলে মানুষ দুঃখের ভার বহন করতে পারত না।
অস্থির এক সময়ে জন্ম হয়েছে ভ্যান গঘের। অস্থিরতার মধ্যেই তার কাছে ধরা দিয়েছে চিত্রকলার মহৎ উপাদানগুলো। তিনি ছিলেন কৃষক ও শ্রমিকের শিল্পী। ১৮৫৩ সালে ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ জন্ম লাভ করেন হল্যান্ডের গ্রুট-জান্তার্টে। তার সারাটা জীবন কেটেছে হতাশা ও ব্যর্থতায়। বোথেলের রমণীকে বিয়ে করেও তার পক্ষে সুখী হওয়া সম্ভব হয়নি। কোন নারী তাকে পছন্দ করেননি। এই ব্যর্থ প্রেম তাকে একজন অমর শিল্পীতে পরিণত করেছে।
তিনি বেড়ে ওঠেন চিত্রকলার প্রতি অনুরক্ত একটি পরিবারে। তার দুই চাচা ছিলেন আর্ট ডিলার। তাদের গ্যালারিতেই কাজ করতেন তিনি। পরবর্তীকালে তার পারিবারিক গ্যালারিটি বিক্রি হয়ে যায় প্যারিসের গাউপিলের কাছে। তখন ভ্যান গঘের বয়স ছিল মাত্র ষোল। এর চার বছর পর তিনি গাউপিলের লন্ডন ব্রাঞ্চে চাকুরি নিয়ে চলে যান লন্ডনে। সেখানে গৃহকর্ত্রীর মেয়ের প্রেমে পড়েন। কিন্তু তার মেয়ে ভ্যান গঘকে ফিরিয়ে দেন। এতে তিনি দারুণভাবে মর্মাহত হন। বিশ বছর বয়সের ব্যর্থ প্রেমের এই হতাশা বাকি জীবনেও দূর হয়নি। ১৮৭৫ সালে তিনি যান গাউপিলের হেড অফিস, প্যারিসে। সেখানে তিনি নিমগ্ন হন পড়া-শোনা ও শিল্প চর্চায়। ঘুরে ঘুরে মিউজিয়াম দেখেন। লেখক ও শিল্পীদের সঙ্গে পরিচিত হন। ১৮৭৬ সালে গাউপিলের চাকুরি ছেড়ে দেন এবং ফিরে যান লন্ডনে। এভাবেই তার তারুণ্যে আসে একের পর এক আঘাত। কিন্তু নারী ও নিসর্গের প্রতি প্রবল আকর্ষণ থেকেই যায়।
ভ্যান গঘ মনে করতেন, তার চেহারা কুৎসিত। তাকে নারীরা পছন্দ করে না। তা সত্ত্বেও এঁকেছেন অনেকগুলো আত্ম-প্রতিকৃতি। তিনি ছিলেন একজন প্রতিচ্ছায়াবাদী শিল্পী। দৃশ্য বদলের সঙ্গে সঙ্গে তিনি রঙের ব্যবহার পরিবর্তন করেছেন। এই জন্যই তার পক্ষে যুক্তিবাদের গুমোট অন্ধকার ভেদ করে আলোক প্রাপ্তি সম্ভব হয়েছে। পল গোগ্যাঁ তার সম্পর্কে লিখেছেন, “সে ভালোবাসত হলুদ রং।...এই চিত্রকরের আত্মাকে উষ্ণ করত সূর্যালোকের ঝলক; কুয়াশা সে পছন্দ করত না। উষ্ণতার জন্য এক ব্যগ্র কামনা।”
ভ্যান গঘ কবি বদলেয়াবের মতোই হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। নিজেকে ব্যর্থ মনে করতেন। সবকিছুর মধ্যেই দেখেছেন মৃত্যুর ছায়া। শস্যের জমির পাশে দেখেছেন সাইপ্রাস গাছ। সাইপ্রাস গাছের ওপর দেখেছেন চাঁদের আলো। তার কাছে অনেক সময় মনে হয়েছে বৃক্ষ হলো সবুজ পত্রবিহীন। কিন্তু সেখানে ছড়ানো আলো আর নদী। প্রকৃতি সম্পর্কে অনুভূতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন “প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই না করলে বড় হওয়া যায় না।”
১৮৮২ সালের নভেম্বর মাসে ভ্যান গঘ এঁকেছেন দুঃখের ছবি। লিথোগ্রাফ মাধ্যমে আঁকা ‘দুঃখ’ ছবিতে দেখা যায় একজন নগ্ন রমণী দুই হাত হাঁটুর ওপর রেখে মাথা নিচু করে বসে আছেন। তার পিঠের ওপর ছড়িয়ে আছে কিছু চুল। চোখ হাতের নিচে ঢাকা। মুখ দেখা যায় না। দেহ ছন্দিত হয়ে উঠেছে দুঃখের ভারে। দুঃখকে দেহের মাধ্যমে প্রকাশের এই রীতি চিত্রকলার জগতে নতুন। তার আরেকটি ছবির ক্যাপশন হচ্ছে ‘গার্ল ইন ফরেস্ট’ অর্থাৎ ‘অরণ্যে বালিকা’ (সেপ্টেম্বর, ১৮৮২)। ছবিতে প্রাধান্য বিস্তার করে রয়েছে তিনটি গাছের গোড়া এবং হেট মাথায় সাদা ফ্রক পরা একজন বালিকা। অরণ্য নেই। বরং ছেদন করা বৃক্ষের চিত্র রয়েছে। এই চিত্রে ভ্যান গঘ পরিত্যাগ করেছেন বর্ণনাধর্মী রীতি। তিনি অরণ্যকে অরণ্য হিসাবে দেখেননি। ‘অরণ্যে বালিকা’ চিত্রের মাধ্যমে বালিকার গতি-ভঙ্গির দোলাচলকে স্থিরচিত্রে পরিণত করেছেন। অরণ্যে দণ্ডায়মান তিনটি গাছের গোড়া এবং একজন বালিকার মাধ্যমে বিশেষ মুহূর্তকে তুলে ধরেছেন। তিনি ধ্রুপদী শিল্পীদের মতো সুশৃঙ্খল শৈলীর অনুসরণ করেননি। বরং তার চিত্রকর্মের মধ্যে এক ধরনের রহস্য রয়ে গিয়েছে। যেমন লিওনার্দোর মোনালিসার পেছনের নিসর্গের দৃশ্যে। ভ্যান গঘের ছবির পেছন বন্ধ নয়, মুক্ত। বিস্তীর্ণ নয়। সংক্ষিপ্ত। তিনি বিস্তীর্ণ নিসর্গের মধ্যে থেকে তুলে এনেছেন লাইট পোস্ট, পত্রবিহীন বৃক্ষ এবং নারী-পুরুষের চিত্র। তার নাম দিয়েছেন ‘ক্যানেল ব্যাঙ্ক’ (১৮৮০-১৮৮১)।
ভ্যান গঘের জন্ম হল্যান্ডে হলেও তার মনোভূমি জুড়ে ছিল প্যারিস। তিনি বার বার ফিরে গিয়েছেন প্যারিসে। ১৮৮৭ সালে হঠাৎ তিনি প্যারিসে যান এবং দেখা করেন অনেক শিল্পীর সঙ্গে। এর ফলে তার মধ্যে শিল্পচেতনায় জাগরণ ঘটে। কিন্তু প্যারিসের নাগরিক চেতনা তাকে আচ্ছন্ন করেনি। বরং তার শিল্পকর্মের প্রধান বিষয়বস্তু সাধারণ মানুষ। তিনি তাঁতীদের ছবি এঁকেছেন। এঁকেছেন কৃষাণীর ছবি। এসব ছবিতে রয়েছে কর্মজীবী মানুষের পরিচ্ছন্ন পরিচয়। তার আত্ম-প্রতিকৃতিতে রয়েছে বিষাদের ছায়া। এর দুটি দিক রয়েছে। একটি বাস্তব দিক। অন্যটি অন্তর্মুখী দিক। চিত্রকর্ম অবশ্যই দৃষ্টিগ্রাহ্য শিল্প। এর নির্দিষ্ট আকার ও রং রয়েছে। কখনো কখনো শিল্পকর্ম নিরাকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিচ্ছায়া সৃষ্টি করে। সেখানে রং ও মোটিফই প্রধান হয়ে ওঠে। কলিংউড প্রকৃত শিল্পকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কল্পনাশ্রয়ী অভিজ্ঞতা হিসাবে দেখেছেন। কারুপণ্য তৈরি করা হয় বস্তুজগতের উপকরণের সাহায্যে। সবসময়েই এর আকার ও প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট থাকে। এতে পরিকল্পনা অনুসারে উপকরণ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু একজন চিত্রশিল্পী তার চিত্রকর্মের অবভাস সৃষ্টি করেন মনোজগতে, কল্পনার মাধ্যমে। এর ফলে অভিজ্ঞতা বিজারিত হয়ে শিল্পকর্মে রূপ নেয়। ভ্যান গঘ অরণ্যের রূপ এঁকেছেন দণ্ডায়মান গাছের গোড়ার মাধ্যমে। হয়ত তিনি এভাবেই শেকড়ের সন্ধান করেছেন। তার কাছে অরণ্যের রূপ ধরা দিয়েছে বালিকার রূপে। আর এটাই হচ্ছে শিল্পীর অন্তর্মুখী দিক। এই তত্ত্ব অনুসারে শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়া শিল্পীর মনে বিরাজ করে। তা বাস্তব জগতে প্রকাশ করার জন্য শিল্পী বিভিন্ন বস্তুর আশ্রয় নেন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, কাগজে-কলমে একটি ব্রিজে নক্শা আঁকার কথা। নক্শাবিদ ব্রিজের নক্শা আঁকেন ধারণা ও আকার বোধগম্য করে তোলার জন্য, প্রয়োজনের নিরিখে। এই পরিকল্পনা অনুসারে ব্রিজটি নির্মিত হয়। ‘মোনালিসা’ কিংবা পিয়েতা’ এভাবে নির্মিত হয়নি। বরং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য ছাড়াই এই শিল্পকর্ম সৃষ্টি করা হয়েছে।
কলিংউড শিল্পকলা ও কারুশিল্পের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। কারুশিল্প একটি নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। এই প্রক্রিয়াকে তিনি বলেছেন ফ্যাব্রিকেশন। এর অধিষ্ঠান কল্পনার জগতে নয়, বাস্তব জগতে। প্রকৃত শিল্পকলা আবেগকে জাগ্রত করে। এর কোনো পূর্ব পরিকল্পিত রূপ থাকে না। শিল্পী এখানে বিশেষ প্রকাশ ভঙ্গি অনুসরণ করেন। তাতে আলো ও রঙের ভূমিকা থাকে।
ঊনবিংশ শতকে জীবন ও শিল্পে আলোর ভূমিকা প্রবলভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আলো বিচ্ছুরণের নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। প্রথমে আসে কেরোসিনের বাতি। তারপর গ্যাসের বাতি। সবার শেষে আসে বৈদ্যুতিক আলো। এর ফলে আলোকপাতের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় পরিবর্তন আসে। স্থাপত্যকলা ও চিত্রকলায় আলো ব্যবহারের সুনিনয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়। চিত্রকলায় আলোর এই ধারাকে ঘিরে যে আন্দোলনের বিস্তার ঘটে, তাকে বলা হয় ইমপ্রেসনিজম। ইমপ্রেসনিস্ট শিল্পীরা ফটোগ্রাফি দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত হন। রঙের অবদমন তারা মেনে নেননি। তারা মনে করতেন, রং ও গতির সমন্বয়ে মনস্তাত্ত্বিক দৃশ্যাবলী ধারণ করতে ব্যর্থ হয় আলোকচিত্র। কিন্তু শিল্পকলা কখনই মনস্তাত্ত্বিক ধারণা ছাড়া সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। ভ্যান গঘের চিত্রকর্মে আলোকচিত্রধর্মী গুণ বিরাজ করলেও মনস্তাত্ত্বিক দিকটিও প্রতিফলিত হয়েছে। ১৮৮৭ সালে তিনি বিস্তৃত পটভূমিতে এঁকেছেন ‘কর্নফিল্ড উইথ লার্ক’। ক্যানভাসের শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁচেছে তুলির আঁচড়। নীল আকাশ ছড়িয়ে রয়েছে সবুজ শস্যক্ষেতে। শস্যক্ষেতের ওপর উড়ছে একটি ছোট গানের পাখি। ক্যানভাসের নিচের অর্ধ্বেক জুড়ে রয়েছে সবুজ শস্যক্ষেত। ক্যানভাসের উপরের অর্ধ্বেক জুড়ে রয়েছে নীল আকাশ। মাঝখানে দৃশ্যমান একটি ভরতপাখি। তার ছোট গানের পাখি হলো নৈঃসঙ্গ্যের প্রতীক। ‘সাইপ্রাস গাছ’ কিংবা ‘তারকা ঝলমল রাত’ হলো মনোজগতেরই মোহনচিত্র।
ভ্যান গঘ তার জীবনকে সন্ধান করেছেন মগ্ন চৈতন্যের গভীরে। তার ছবিতে একাকার হয়ে গিয়েছে সবুজ শস্যের মাঠ, নীল আকাশ এবং ভরতপাখির গান। আধুনিক কবিদের মতো তুচ্ছ বিষয়ও তার চিত্রের বিষয়বস্তু হয়েছে। তিনি ১৯৯৬ সালে এঁকেছেন ‘ওল্ড বুটস উইথ লেসেস’। একাকীত্বের প্রতীক হিসাবেই এঁকেছেন এই চিত্রটিকে। চিত্রটির মধ্যে অবোধ্য হেঁয়ালি কিছু আবৃত হয়ে আছে।
ভ্যান গঘ সারা জীবনই ছুটোছুটি করেছেন আশ্রয়ের সন্ধানে। কখনো চেয়েছেন প্রেমের আশ্রয়, কখনো বা নীড়ের আশ্রয়। কিন্তু কোনো কিছুই তিনি স্থায়ীভাবে পাননি। তার জীবন প্যারিস কিংবা লন্ডনের মতো নগরে কাটলেও মন ছিল যাযাবর। তিনি যেমন জিপসি ক্যাম্পের ছবি এঁকেছেন, তেমন এঁকেছেন রাতের কাফের ছবি। ‘জিপসি ক্যাম্প’ ছবিতে দেখা যায়, কয়েক জন কর্মব্যস্ত মানুষ ও ঘোড়ার ছবি। ঘোড়ার গাড়িগুলো পড়ে রয়েছে ক্যাম্পের পাশে। ঘোড়া হচ্ছে যুগ-যুগান্তরের স্মৃতি। নিওলিথিক ঘোড়ার মাধ্যমে তিনি মানুষ ও পশুর চিরায়ত সম্পর্ক ফুটিয়ে তুলেছেন। আঙ্গিকের ব্যবহার বিবেচনায় ভ্যান গঘ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের অন্যতম। আধুনিক শিল্পকলার যে মেজাজ এবং বিষয়বস্তু রয়েছে, সে সব বিষয়বস্তু নিয়েই গড়ে উঠেছে তার চিত্রকলার জগৎ। সামর্থ্যের বিবেচনায় তিনি কবি বোদলেয়ারের সমকক্ষ। রক্ত ক্ষরণের দাগ রয়েছে তার চিত্রে। সেই অর্থে তিনি প্রতীকবাদী শিল্পী। তিনি বিশুদ্ধ রূপের সাধনা করেননি। তাই বিষয়বস্তু নির্বাচনে উচ্চকণ্ঠ মননের দুর্লভ মুহূর্ত ধরা দেয় তার তুলির কাছে। তা কখনো সূক্ষ্ম রেখায়, কখনো বা মোটা রেখায় মূর্ত হয়ে ওঠে। ভ্যান গঘের পছন্দ ছিল মোটা রেখা, ঢেউয়ের মতো ভাঙা ভাঙা কাঠামো। প্রতীকবাদী কবি ব্যাঁরো (১৮৫৪-১৮৯১) প্রতীকবাদের সন্ধান করেছেন ব্যক্তির অবচেতনায়। ভ্যান গঘের ছবিতে আদিম পুরাণ ছাড়াও বিশ্ব প্রকৃতির বহু উপাদান প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে আলো-অন্ধকার, আকাশ-সমুদ্র, গাছপালা, পশু-পাখিসহ অনেক কিছু। আধুনিক কবিরা এসব উপাদান ব্যবহার করেছেন অহরহ। এর উদাহরণ বোদলেয়ারের ‘সিন্ধু-শকুন’, মালার্মের ‘রাজহাঁস’ রিলকের ‘ডুমুর গাছ’ এবং এলিয়টের ‘ফনিমনসার বন’ ইত্যাদি। ভ্যান গঘ সাইপ্রাস গাছ, সূর্যমুখী ফুল ও সাদা গোলাপকে প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করেছেন। তিনি ছিলেন নতুন যুগের প্রধান সাধক। এই কারণে তিনি নিসর্গ এবং আত্ম-প্রতিকৃতি এঁকে ফুরিয়ে যাননি। বরং সব সময়েই বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য খুঁজেছেন।
রেনেসাঁসের কালে আত্মজীবনী এবং আত্ম-প্রতিকৃতি রচনার হিড়িক পড়ে যায়। এর কারণ, নিজের বোধ বা উপলব্ধির জাগরণ। নিজের সম্পর্কে কৌতূহল মানুষের চিরকালই ছিল। কিন্তু রেনেসাঁসের যুগে মানুষ তার দেহ নিয়েও ভেবেছে। লিওনার্দো তার চিত্রকর্মে মাধ্যমে মানুষের দেহের অভ্যন্তরীণ কাঠামোও তুলে ধরেছেন এবং মানবদেহ ব্যবচ্ছেদ করেছেন। ভ্যান গঘ তা করেননি। তিনি নিজের আত্ম-প্রতিকৃতি এঁকেছেন বিভিন্ন দৃষ্টিতে, বিভিন্ন ভঙ্গিমায়। ১৮৮৭ সালে আঁকা একটি আত্ম-প্রতিকৃতিতে দেখা যায় ভ্যান গঘ হেট পরে আছেন। মুখে খোঁচা-খোঁচা দাঁড়ি। চোখ স্বাভাবিক। কোর্ট পরা অবস্থায় তাকে মৃদু হাসতে দেখা যায়।
১৮৮২ সালের জানুয়ারি মাসে তার সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয়ে যায় ক্রিস্টিন নামের একজন যৌনকর্মীর সঙ্গে। ক্রিস্টিনের চেহারা ছিল কুৎসিত। তিনি ছিলেন সন্তান-সম্ভবা। ভ্যান গঘ তাকে বাসায় নিয়ে যান এবং তাকে মন-প্রাণ ঢেলে দেন। তার সঙ্গে বসবাস মাত্র বিশ মাস স্থায়ী হয়। ১৮৮৩ সালে নিঃস্ব হয়ে ফিরে যান বাবার বাড়ি। এই সময়েই তিনি এঁকেছেন কৃষক, তাঁতী ও কুটিরের ছবি। তার এই সময়ের ছবির মধ্যে রয়েছে ‘দি লুম’ (১৮৮৫)। ১৮৮৫ সালে গভীর হতাশার মধ্যে পড়েন তিনি। ১৮৮৫ সালের নভেম্বরে মারা যান বাবা। তার বড় ভাই থিও তাকে কিছু অর্থ পাঠান।
১৮৮৭ সালের দিকে ভ্যান গঘ আক্রান্ত হন মানসিক রোগে। তার কাছে ধূসর আকাশ, বিষণ্ন সড়ক এবং রাজধানী প্যারিস অসহ্য হয়ে ওঠে। তা সত্ত্বেও ছবি আঁকা বন্ধ রাখেননি। ১৮৮৮ সালে তিনি রেজারের এক পোচে একটি কান কেটে রুমালে মুড়ে উপহার দেন প্রেমিকাকে। এর এক বছর পর অর্থাৎ ১৮৮৯ সালে এঁকেছেন ‘সেলফ্-প্রোট্রেট উইথ সার্ভড ইয়ার’। ক্যানভাসের ওপর দিক লালচে হলুদ। মুখে পাইপ। চোখের কোণা লাল। একটি কান রুমাল দিয়ে ঢাকা। আরেকটি কান আঁকেননি তিনি। ওভার কোট পরা ভ্যান গঘকে দেখলে মনে হয়, তিনি রেগে আছেন। একই বছর তিনি আত্ম-প্রতিকৃতি এঁকেছেন নীল রঙের ক্যানভাসের ওপর তুলির মোটা টানে।
১৮৯০ সালে তিনি এঁকেছেন ‘ফিল্ড অ্যান্ড বস্নু স্কাই’। তুলির মোটা টানে আকাশটাকে একটু বড় করে এঁকেছেন। একজন দুঃখবাদী শিল্পী হলেও এঁকেছে মেঘমুক্ত আকাশ। ১৮৯০ সালে তার আঁকা আরেকটি ছবি হচ্ছে ‘কর্নফিল্ড অ্যান্ড র্যাভেনস’। এই ছবিতে ভূ-তলকে আকাশের চেয়ে বড় দেখানো হয়েছে। শিল্পীদের কাছে জীবন হলো স্বপ্নের অভিব্যক্তি। তাই তারা বুকে যন্ত্রণা চেপে রেখেও ছবি আঁকতে পারেন। ভ্যান গঘ নিদারুণ অর্থ সংকটের সময়েও অজস্র ছবি এঁকেছেন। ছবি আঁকার মধ্যে ছিল প্রথা ভাঙার দুর্মর সাহস। তার চিত্রে প্রকাশ পেয়েছে বর্ণের উচ্ছ্বাসময় উল্লাস। ইমপ্রেসনিস্টদের কাছে এই ধরনের উচ্ছ্বাস গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসাবে স্বীকৃত। ইমপ্রেশনিস্টদের মতোই ভ্যান গঘের সৃষ্টির পটভূমি হচ্ছে বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত ও উন্মুক্ত আকাশ। প্রকরণের সূক্ষ্ম কৌশলের দিকে চোখ রেখে খরদৃষ্টিতে এঁকেছেন এসব চিত্র। পৃথিবীকে তিনি গ্রহণ করেছেন আত্মিক শূন্যতায়। হয়ত ভ্যান গঘ বিশ্বাস করতেন পৃথিবী আলো, আনন্দ ও প্রেম শূন্য। বিশ্বাসের ধ্রুবতারা বলে কিছু নেই। মানুষ দেখে তিনি মাঝে মাঝে বিচলিত হয়েছেন। তাই তার শস্যক্ষেত মানুষ শ
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×