রাবিতে গত রাতে শিবির-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে ফারুক নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হবার ঘটনা এখন “টক অব দ্য কান্ট্রি”। সংবাদমাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। আগামীকালের পত্রিকাগুলোতেও বিষয়টি নিয়ে যে তুলকালাম হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারেও চলছে প্রচ্ণ্ডরকম রণপ্রস্তুতি। এরই মধ্যে এলজিআরডি মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী তাদের প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনীদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আইজিপি স্বয়ং এখন রাজশাহীতে। আশপাশের জেলা থেকে পর্যন্ত পুলিশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাবিতে মোতায়েনের উদ্দেশ্যে। এ যেন এক মহাতুলকালাম!
দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের খুনের ঘটনায় এমন তৎপরতা সকলেরই কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু প্রশ্ন উঠে তখন, যখন দেখা যায় নিজ দলের কর্মীর মৃত্যুর উদ্বেগের তুলনায় সাধারণ বা অন্য দলের ছাত্রের মৃত্যুতে সরকারের কোনো মাথাব্যাথাই নেই!
গত ক’দিন আগে ঢাবিতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত মেধাবী ছাত্র আবু বকরকে নিয়ে সংবাদমাধ্যম ততটা তোলপাড় করে নি, যতটা না আজ হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকেও রাবি’র ছাত্রলীগ কর্মীর হত্যাকাণ্ড নিয়ে যতটা উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার সামান্যটুকুও হয় নি ঢাবির আবু বকরের মৃত্যুতে। ঢাবির আবু বকরের মৃত্যুর পর সাহারা খাতুন এটাকে “বিচ্ছিন্ন ঘটনা” বলে উড়িয়ে দেবার চ্ষ্টো করেছেন। রাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে অন্য দলের সদস্যের মৃত্যুর নজির আছে। তখনও এরকম কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় নি সরকারের তরফ থেকে।
এই অসম নীতির কারণগুলো অবশ্য স্পষ্ট। আবু বকর একজন সাধারণ ছাত্র আর রাবির নিহত সেই ফারুক ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের কর্মী। এ কারণে ঢাবির মেধাবীর মৃত্যুর চেয়েও রাবির হত্যাকাণ্ডই সরকারের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এবার আসা যাক ভিন্ন প্রসঙ্গে। রাবিতে গতকালের যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা শিবিরই ঘটিয়েছে কিনা, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় নি। কয়েকটি ব্যাপার এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য-
১. বঙ্গবন্ধু হলে ওঠা নিয়ে যে ছাত্রটিকে শিবির বেধড়ক পিটিয়েছে, সে ছাত্রটি নিহত হয় নি। হয়েছে আরেকজন।
২. শিবিরের বেধড়ক পিটানোকে কেন্দ্র করে রাতে ঐ হলে শিবির-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ চলাকালে উক্ত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, যে মুহূর্তে ঐ হলে প্রচুর পরিমাণ পুলিশের উপস্থিতি ছিল।
৩. ফারুককে কে মেরেছে, তার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা সে সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারে এমন কাউকে পাওয়া যায় নি। হত্যাকারী হিসেবে শিবিরের ব্যাপারে যে অভিযোগ উঠেছে, তা কেবলই পুলিশি সন্দেহ থেকে।
৪. বঙ্গবন্ধু হলে পুলিশের তল্লাশী চলাকালে ঐ হত্যাকাণ্ড কিভাবে সংঘটিত হলো, সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তা কিভাবে ম্যানহোলে রাখা হলো এবং কিভাবে আবার সেই লাশের খোঁজ পেয়ে তা ম্যানহোল থেকে উদ্ধার হলো- এসব নিয়ে প্রচণ্ড সংশয় উঠেছে।
এসব অসঙ্গতি বিশ্লেষণ করলে সংশয় ঘনীভূত হয় যে, এই হত্যাকাণ্ড স্বয়ং ছাত্রলীগই ঘটিয়েছে কিনা। কারণ, বিগত কয়েকদিনে ঢাবির মেধাবী ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় সরকার দারণভাবে বিপাকে পড়েছিল। সারা দেশের সুশীল মহলের প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে ছিল আ’লীগ এবং তার ছাত্রসংগঠন। সেই ঘটনা থেকে দেশবাসীর চোখ অন্যদিকে ফেরাতেই কি রাবির হত্যাকাণ্ড? এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে কি ছাত্রলীগের প্রতি সহানুভূতি ফিরিয়ে আনতে চাইছে আ’লীগ সরকার? কারণ, সাহারা খাতুন এরই মধ্যে দেশের সকল সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের দোষ চাপিয়েছে বিরোধীদলের ওপর।
আ’লীগের এমন পরিকল্পনা থাকলে তা তেমন ফল দেবে বলে মনে হয় না। কারণ, আজকেই ছাত্রলীগের দু’গ্রুপ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে ঢাকা কলেজে। যুবদলের নেতা খুন হয়েছে ঢাকায়।
যেকোনো হত্যাকাণ্ড মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। রাবির ছাত্রলীগ কর্মীর প্রকৃত হত্যাকারীরা সাজা পাক- এটাই আমাদের চাওয়া। তবে সাথে সাথে সাধারণ ছাত্র কিংবা অন্য মতের ছাত্রদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। নয়তো দিনবদলের বুলির প্রকৃত অর্থ কখনোই আলোর মুখ দেখবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




