“হিজড়া" ইংরেজি: Hijra - Common Gender, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের জন্মপরবর্তী লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়, মূলত তারাই হিজড়া। হিজড়া শব্দের অপর অর্থ হচ্ছে ‘ট্রান্সজেন্ডার’, ট্রান্সজেন্ডার বলতে এমন এক লৈঙ্গিক অবস্থাকে বুঝায় যা দৈহিক বা জেনিটিক কারণে মেয়ে বা ছেলে কোন শ্রেণীতে পড়ে না। বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় পনের হাজার, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অস্থায়ী ভাসমান। বসবাসকারী প্রান্তিক হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ২৫০-৩০০ জন।
যৌন প্রতিবন্ধী প্রান্তিক এই হিজড়া জনগোষ্ঠীর রয়েছে আলাদা ভাষা ও সংস্কৃতি। আগে সামাজিক বিভিন্ন বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ ছিল। বর্তমানে আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে তা হারিয়ে গেছে। হিজড়াদের মধ্যে স্থান ভেদে বেশ কয়েকজন গুরু থাকে। বয়স ও মান ভেদে তাদেরকে নানগুরু, দাদগুরু, গুরুমা বলে সম্বোধন করা হয়। চট্টগ্রামে হিজড়াদের মধ্যে নেতৃস্থানে যারা রয়েছে তাদের মধ্যে গুরু মধুমালা, সীতা, গীতা, নাসু, শাবনূর, লিমা, রীনা, রঙিলা, রত্মা, নার্গিস কবিতা, শোভা উল্লেখযোগ্য। হিজড়ারা সাধারণ মানুষের কটূক্তি থেকে রেহাই পেতে সবাই দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। চট্টগ্রামে, ঝাউতলা, হালিশহর, নীমতলা, নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, পাহাড়তলী বন্দরটিলা এলাকায় তাদের বসবাস।
হিজড়াদের বৈশিষ্ট্যগতভাবে দুইটি ধরন রয়েছে, নারী ও পুরুষ। নারী হিজড়ার মধ্যে নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য থাকলেও স্ত্রীজননাঙ্গ না থাকায় তার শারীরিক গঠন অস্বাভাবিক। পুরুষ হিজড়াদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তবে হিজড়ারা নারী বা পুরুষ যাই হোক, নিজেদেরকে নারী হিসেবেই এরা বিবেচনা করে থাকে। সারা বিশ্বে প্রকৃতি প্রদত্ত হিজড়াদের ধরন একইরকম। শারীরিকভাবে পুরুষ, কিন্তু মানসিকভাবে নারীস্বভাবের হিজড়াদেরকে বলা হয় ‘অকুয়া’। অন্য হিজড়াদেরকে বলা হয় ‘জেনানা’। এছাড়া সামাজিক প্রথার শিকার হয়ে পুরুষত্বহীন খোজা বানানো, মনুষ্যসৃষ্ট হিজড়াদেরকে বলা হয় ‘চিন্নি’।
সুত্র – উইকিপিডিয়া
৪ বছর বয়সে ববিকে পরিবার থেকে বের করে দেওয়া হয়। ‘হিজড়া’ হওয়ার কারণে নিজের পরিবারই পরিত্যাগ করে তাকে।
এত অল্প বয়সে পরিবার থেকে বের হয়ে ববি পরবর্তীতে ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়ের কাছেই আশ্রয় পান। কিন্তু, সমাজ, রাষ্ট্র থেকে বৈষম্যের শিকার হয়ে পদে পদে অবহেলা আর বঞ্চনা নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি।
শুধু ববিই নয়, তার মতো আরো অনেকেই ‘হিজড়া’ হওয়ার কারণে পরিবার থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কাউকে কাউকে আবার জোর করে বের করে দেওয়া হচ্ছে। সে কারণে আজ পরিবার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ১৫ বছর পরও সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে মৌলিক অধিকারটুকু চেয়ে পাননি ববি।
দেশে বহু নাগরিক মানবাধিকার থেকে বিভিন্নভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন সমাজের প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠী ‘হিজড়া’। কেউ কেউ এ জনগোষ্ঠীর মানুষদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ বা ‘থার্ড জেন্ডার’ বলে থাকেন। কেউ আবার ‘বৃহন্নলা’ বলেও উপাধি দেন।
তবে যে নামেই তাদের ডাকা হোক না কেন আচার-আচরণ, চালচলনের কারণে এই জনগোষ্ঠীর মানুষ সমাজে চরমভাবে নিগৃহীত। সমাজের কাছে ন্যায্য পাওনার পরিবর্তে পাচ্ছেন ঘৃণা, অবজ্ঞা ও অবহেলা; নানা ধরনের বিদ্রুপ ও হয়রানির শিকার। এ কারণে তারা কোথাও সামান্য কাজও পান না।
এ বিষয়ে ববি বলেন, “একটু কাজের জন্য কোথায় না গেছি! কিন্তু কেউ কাজ দেয় না। বিনিময়ে শুধু ঠাট্টা আর বিদ্রুপ করে। চিকিৎসার জন্য কোথাও গেলে কেউ চিকিৎসা দেয় না। জাতীয় পরিচয়পত্রও পাইনি।”
একই অবস্থা পিংকিরও। লিঙ্গীয় পরিচয় হিজড়া হওয়ায় তার অভিজ্ঞতাও অন্যদের থেকে ভিন্ন কিছু নয়। সমাজ ও পরিবার থেকে বঞ্চনা নিয়েই বেড়ে উঠেছেন তিনি।
‘হিজড়া’ হওয়ার কারণে জাতীয় পরিচয় দেয়নি নির্বাচন কমিশন। পরবর্তীতে নারী পরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র পান তিনি। তবে পিংকি হিজড়া সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি চান, যে স্বীকৃতির মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রে আর সবার মতোই অধিকার পাবেন তারা।
নিজের বঞ্চনা আর অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে সাগরিকা ‘হিজড়া’ বলেন, “আমাদের মূল সমস্যা, কাজ না পাওয়া। সিটি কর্পোরেশনে রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার কাজটাও পাই না। নিজের অধিকারটাও পাই না। বয়ঃসন্ধিকালে আমাদের পরিবার থেকে বের করে দেওয়া হয়। এভাবে পারিবারিক সম্পত্তি থেকেও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।”
তিনি বলেন, “কেউ কেউ কাজ দিলেও যে টাকা দেওয়ার কথা, তার অর্ধেকও দেয় না।”
সাগরিকা বলেন, “যানবাহনে আমাদের নিতে চায় না। আদমশুমারিতে ‘হিজড়া’ হিসেবে গণনা করা হচ্ছে না। আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, নেই পাসপোর্টও। কাজ পেলেই তো আমাদের জীবন চালানো অনেকটা সহজ হয়ে যায়। টাকা যেদিকে, আইন চলে সেদিকে। আইনের আশ্রয় থেকেও আমরা বঞ্চিত। আমরা মানুষ হিসেবে অন্যদের মতো বাঁচতে চাই।”
‘হিজড়া’ সম্প্রদায় ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না। বাসস্থান, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, তথ্য ও আইনি সহায়তাসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকেই বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠী।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে চলছে এ জনগোষ্ঠীর জীবন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষ্যমের শিকার হয়ে তারা সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রান্তিক সীমায় এবং দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে বঞ্চিত হচ্ছেন মানবাধিকার থেকে।
হিজড়াদের জীবন নিয়ে বাংলাদেশে পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র নির্মাণ ফেলেছেন নোমান রবিন। চলচ্চিত্রের নাম কমন জেন্ডার: দ্য ফিল্ম।
এই সম্পর্কিত আর্টিকেল পড়ার জন্য সামুর একজন ব্লগারের লেখা দেখতে পারেন ।
লিঙ্ক দেখুন
সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:৩০