সকাল ৮ টার মধ্যেই আমরা দিল্লী পৌছে গেলাম মাঝে অবশ্য গাড়ী ২-১ বার থেমেছিল নাস্তা, হিসু এবং তেল নেবার জন্য, কোনটাই মিস দেইনি কেননা আমরা আবার সেই রকম বিড়ি খোড় যাক দিল্লী নেমেই একটা ট্যক্সি নিয়ে সোজা পাহাড়পুর দেশী ভাইয়ের কাছে গেলাম কিন্তু ওনার দোকান আজ বন্ধ কিন্তু সমস্যা নেই ফোনেই উনি একটা সল্প দামের হোটেল ব্যবস্থা করে দিলেন, আমরা হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে করতে ১০ টা বেজে গেল, যেহেতু আমাদের হাতে সময় কম তাই পরবর্তী প্লান তৈরী করে ফেললাম নাস্তার টেবিলেই,
একটা ব্যপার লক্ষ্য করলাম ছোট গ্রুপে ট্যুর করলে হুট হাট প্লান করা যায় আবার চেঞ্জ ও করা যায় দ্বিমত হওয়ার চান্স কম থাকে, আমারা যেহেতু ২ জন আর আমিই প্লান করি সেহেতু শিমলা যাবার কথা ছিল কিন্তু হুট করেই বাদ দিয়ে দিল্লী চলে আসলাম কোন ঝামেলা ছাড়াই, যাই হোক মাথায় ভুত চাপলো তাজমহল দেখব, যেই কথা সেই কাজ, আমাদের দেশী দাদা কে ফোন দিলাম সে তো এক কথায় না ! এখন গেলে অনেক দেরী হয়ে গেছে গাড়ী পাবে না আসতে পারবে না কাল যেও হাবিজাবি অনেক কথা কিন্তু আমি বললাম যাবই ... সুতরাং সম্পূর্ণ নতুন এই শহরে কেমনে কি করব ভেবে, নিলাম একটা রিকশা সোজা দিল্লী রেল স্টেশন, গিয়ে কাউন্টারে বললাম আগ্রা যাবার কোন ট্রেন আছে কিনা, যাক বলল আছে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সিট নাই নিয়ে নিলাম টিকিট ২ টা। ১১.০০ টায় ছাড়বে বেশী সময় নাই তাই সোজা প্লাটফর্ম ধরে ট্রেনে গিয়ে বসলাম, সেই রকম লোকাল ট্রেন কিন্তু চলা ফেরার ধরন আমাদের দেশের আঃন্ত নগর ট্রেনের মতন, যাক অনেক অনেক স্টেশন থেমে অবশেষে দুপুর ১.৩০ মিনিটে আগ্রা স্টেশনে পৌছলাম।
শহরের মাঝে এই ধরনের স্ট্যাচু দেখা যাবে,
[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/snrl/snrl-1491623249-ade32dc_xlarge.jpg
খুবই ভাল লাগছে তাজমহলের কথা ভেবে জীবনের একটা বিশাল সপ্ন পুরন হতে যাচ্ছে... যাই হোক স্টেশনের বাইরে অনেক অটো দাঁড়িয়ে আছে সবাই যাবে তাজমহলে... যাক একটা অটো রিজার্ভ নিলাম ৫০ রুপিতে, এমনিতে শেয়ারিং এ গেলে জনপ্রতি ১০ রুপি, যাক শহরটা অসম্ভব সুন্দর খুবই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন একটা রাজকীয় ভাব আছে... যাক ১০ মিনিটের মধ্যেই নেমে পড়লাম এবং আগে একটা খাবার হোটেলে ঢুকে ভাত খেয়ে নিলাম তারপর আস্তে আস্তে তাজমহলের বাহিরের গেট দিয়ে প্রবেশ করলাম অনেক মানুষ যাচ্ছে দেখার জন্য পৃথিবীর এই সপ্তম আশ্চর্জের একটি দেখার জন্য যাক কিছুক্ষনের মধ্যেই তাজমহলের মুল ফটকের কাছে টিকিট কাটার জায়গায় চলে আসলাম, মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসলো টিকিটের মুল্য দেখে ,বিদেশীদের জন্য ৫০০ রুপি ! যাক আমি দেশী লাইনেই দাড়ালাম দেখি একটা চান্স নিয়ে, ৫০ রুপিতে সারতে পারি কিনা, কিন্তু না... হলো না বললাম মে কলকাতা সে আয়া কাউন্টারের মহিলা বলে আই ডি দেখাও, বললাম কাছে নাই বাসায়, মহিলা বলে, মোবাইলে ছবি দেখাও অথবা বাসা থেকে নিয়ে আসো ! আমি বললাম কেমনে? মহিলা বলে হোয়াটস আপ অর ভাইবার পে, আমি বললাম বাসার মোবাইলে ইন্টারনেট চলে না মহিলা বলে তাইলে হবে না, যাক বুইজা গেলাম দেশ অনেক আগাইয়া গেছে, এই ফাকে আমার আশে পাশে ৪-৫ জন দালাল লাইগা গেছে, বলতেছে তারা ব্যবস্থা করবো, এইটা দিব ওইটা দিব যাক আমি ঝাড়ি দিয়া সরাইয়া দিলাম। ভাবতেছি কি করা যায়, এই দিকে পাসপোর্ট ও আনি নাই তাড়াহুড়াড় ঠেলায়, খুব খারাপ লাগছে এত কাছে আইসা তাজমহল দেখতে পারবো না ... আবার অন্য একটা কাউন্টারে গেলাম গিয়ে যিনি বসা তাকে বললাম আমরা ২ জন বাংলাদেশ থেকে এসেছি তাজমহল দেখতে কিন্তু পাসপোর্ট আনতে ভুলে গেছি কি করা যায় ? যাক সে বলল আপনি যে বাংলাদেশী কোন প্রমান আছে? দেখাতে পারলেই যেতে পারবেন, সাথে মানি ব্যগ ঘেটে ঘুটে দেখলাম আমার ন্যশনাল আইডি কার্ড ফটোকপি আছে কিন্তু মানিব্যগে থাকতে থাকতে ঘষায় ঘষায় কালি উঠে গেছে কিন্তু কিছু কিছু লেখা হাল্কা বোঝা যাচ্ছে মহিলা বলল চলবে টাকা দেন, ব্যস আমার বন্ধুর টা ওর মানিব্যগে ছিল সমস্যা হয়নি, ১০০০ রুপি দিয়ে ২ টা টিকিট কিনলাম এবং বিনা লাইনে ভি আই পি ভাবে ভেতরে প্রবেশ করলাম।
শুরু হয়ে গেল ফটোগ্রাফি সত্যি অসাধারন সুন্দর যেটা বলার অপেক্ষা রাখে না, অনেক ঘুরে ঘুরে চারপাশ দেখলাম একদম ভেতর পর্যন্ত প্রায় ২-৩ ঘন্টা ছিলাম ভেতরে ভাবছি এই তাজমহলের নাকি অনেক কিছু চুরি হয়ে গেছে তাই এত সুন্দর আর যখন অনেক কিছু ছিল তখন কি অবস্থা ছিল।
যাক তাজমহলের অপুরুপ এই রুপের কথা সবাই জানে তাই এখানে বেশী কিছু লিখলাম না। আগ্রা শহর টা অনেক ছিম ছাম গোছানো মনে হয়েছে আমার কাছে, রাস্তার মাঝে মাঝেই বিভিন্ন রাজা, সম্রাটদের স্ট্যাচু করা আছে এক কথায় আগ্রা শহরটা অনেক ভাল লাগবে, যদি ওখানে এক দিন থাকা যায় তাহলে হয়তো বা আরো অনেক কিছু দেখা যেত।
যাক আমাদের হাতে যেহেতু সময় কম তাই আমরা সন্ধ্যা নামতেই রওনা দিলাম স্টেশনে এবং গিয়েই একটা ট্রেন পেলাম তবে আমরা ২ টা স্টেশন পরেই নেমে যাব, যেই জায়গার নাম “মথুরা” হিন্দু ধর্মালম্বীদের একটা তীর্থস্থান ।
পরের অংশে গভীর রাতের মথুরার কাহিনী শোনাবো, এখানে আর বলছি নে,
সবাইকে সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আগের চার পর্বের লিঙ্ক দেয়া হলোঃ
৭ দিনে ভারতের ৩ প্রদেশ ভ্রমণ ( দৌড়ের উপরে ট্যুর ) প্রথমাংশ
৭ দিনে ভারতের ৩ প্রদেশ ভ্রমণ ( দৌড়ের উপরে ট্যুর ) ২য় অংশ
৭ দিনে ভারতের ৩ প্রদেশ ভ্রমণ ( দৌড়ের উপরে ট্যুর ) ৩য় অংশ
৭ দিনে ভারতের ৩ প্রদেশ ভ্রমণ ( দৌড়ের উপরে ট্যুর ) চতুর্থ অংশ