somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭১-এ দৈনিক সংগ্রাম (পর্ব-৪)

১০ ই জুন, ২০০৮ রাত ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব
২২এপ্রিল
দৈনিক সংগ্রাম এতোদিন প্রচার করে এসেছে দেশে মুক্তিযুদ্ধ বলে কিছু নেই। যা হচ্ছে তা বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা মাত্র। আর তা ঘটাচ্ছে ভারতীয় চর আর দালালেরা। দেশের কোন নাগরিক কোন রকম যুদ্ধের সাথে নেই। কিন্তু ২২ এপ্রিল এপিপি থেকে ধার করা একটি সংবাদ প্রথম পাতায় ছাপা হয় যার শিরোণাম ছিলো ”১৬ জন সেনা ও ইপিআর আত্ম সমর্পন করেছে”। এই নিউজটির মাধ্যমেই দৈনিক সংগ্রামের মূর্খতা এবং দালালি স্পষ্ট ধরা পরে। “জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি” নামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়। যেখানে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার পক্ষের সংবাদপত্র গুলোর ব্যাপক সমালোচনা করা হয়। যেখানে বলা হয়, “পাকিস্তান সৃষ্টির ফলে যে সকল পত্রিকা সংবাদ বিক্রি করে দু’পয়সা কামানোর সুযোগ পেয়েছে তাদের উচিৎ ভারতীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অন্তত দৈনিক দু’টি করে কলাম লেখা”।

২৩ এপ্রিল
“গুজব বন্ধ হোক” শিরোনামে উপসম্পাদকীয়তে লেখা হয়, “ভারতীয় গুপ্তচররা এখনও গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে, যার ফল শুভ হবে না। পূর্ব পাকিস্তানিরা যাদের বন্ধু মনে করছে তারাই কিন্তু ব্রিটিশদের উত্তরসূরী। ভারতের এই ন্যাক্কারজনক গুজব ছড়ানোর বিষয়ে জনগনকে সজাগ থাকতে হবে। নইলে এর জন্য অনেক উচ্চ মূল্য দিতে হবে।

এভাবে ২৪ এপ্রিল ও ২৫শে এপ্রিলও ভারতীয় গুজব রটানো, গুপ্তচর বৃত্তি, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন বিষয়ে নাক গলানোর সমালোচনা করে সংবাদ, কলাম, সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় ছাপা হয়।

২৫ এপ্রিল
এইদিনে বাংলাদেশের প্রথম হাইকমিশনারকে দুষ্কৃতকারী ও অবাঞ্চিত ঘোষনা করে দৈনিক সংগ্রাম। কলকাতায় নিযুক্ত পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার জনাব হোসেন আলী বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে নিয়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। এতে পাকিস্তানের পা চাটা কুত্তা দৈনিক সংগ্রাম নেড়ি কুত্তার মতো ঘেউ ঘেউ করে উঠে। “ভারতের দ্বিমুখী নীতির জের” নামের সম্পাদকীয়তে জনাব হোসেন আলীর কঠোর সমালোচনা করা হয়।

২৬ এপ্রিল
“জাতীয় আদর্শভিত্তিক শিক্ষা” নামে একটি উপসম্পাদকীয় লেখা হয় এদিন। যাতে বলা হয় “আযাদীর অব্যহতির পর থেকে দেশে যদি ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু থাকেতো তবে দেশের বর্তমান পরিনস্থিতি এমন হতো না।” এ উপ-সম্পাদকীয়তে মাদ্রাসা শিক্ষার পক্ষে জোর প্রচারনা চালানো হয় এবং রচনায় বারবার কুমির প্রসঙ্গ টেনে আনার মতো তখন পাকিস্তানের যেকোন সংবাদেই ভারত প্রসঙ্গ টেনে আনা ছিলো দৈনিক সংগ্রামের এক ধরণের স্বভাব।

২৯ এপ্রিল
২৯ এপ্রিল পাকিস্তানের প্রতি সৌদী আরবের সমর্থন করাকে দৈনিক সংগ্রাম খুব ফলাও করে ছাপে। মূল খবর দুই কলামে শেষ হলেও শিরোণাম ছিলো পুরো ৮ কলাম ব্যাপী। যে শিরোণামে বড় বড় হরফে লেখা হয় “পাকিস্তানের সংহতি রক্ষার সংগ্রামে সৌদী আরবের সমর্থন”।

“বেআইনী ঘোষিত দলটি মীরজারফরের ভূমিকায় অবতীর্ন” এই কথাটি উল্লেখ করে দৈনিক সংগ্রাম ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃনিত সংবাদের রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলো। যেখানে বলা হয়েছিলো “বাংলাদেশের মানুষ সরল বিশ্বাসে বেআইনি ঘোষিত আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়ী করে। অথচ তারা ক্লপনাও করতে পারেনি যে, এদের দ্বারা কি সম্ভব এতো বড় একটা প্রদেশ পরিচালনা করা? এবং যে দলটি আমাদের চির শত্র“ ভারতের দালাল, তার হাতে কি পাকিস্তানের পাক জমিন নিরাপদ?” জনগনকে আরও একবার হুশিয়ার করে দিয়ে বলা হয় “এখনু সময় আছে শঅন্তি কমিটিতে নাম লেখাও এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা কর।”

৩০ এপ্রিল
যখন খুনী পাক সেনাদের নির্মম অত্যাচারে এদেেশর মানুষ দিশেহারা তখন দৈনিক সংগ্রাম নৈরাজ্যের অবসান নামের এক সম্পাদকীয়তে লিখে “মাত্র একমাসে আমাদের ঐতিহ্যবাহী পাক সেনারা গোটা ভুখন্ডকে নাপাক হিন্দুস্তানী অনুপ্রবেশকারী ও অনুচরদের কাছ থেকে মুক্তি দিয়েছে। না বললেও চলে এ এক বৎসর দু’মাসকাল এদেশে গনতন্ত্রের নামে বনতন্ত্র চলেছিলো, নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছিলো, রাজ্য চালানোর নামে নৈরাজ্য চালিয়েছিলো, স্বাধীনতার নামে সেচ্ছাচারী চলেছিলো।

“নৈরাজ্যের অবসান” নামের এ সম্পাদকীয়তে আরও লেখা হয়, “ যারা জিন্নাহ হলকে সূর্যসেন হল বানিয়েছে, যারা রবীন্দ্রনাথকে জাতীয় কবি করেছিলো আর তার গানকে জাতীয় সংগীত করেছিলো তারা পাকিস্তানী হবার যোগ্যতা হারিয়েছে। তাদেরকে নাপাক ভুমি হিন্দুস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হোক”

চলবে..................

লেখাটি আমার রাজাকার বিষয়ক বিষয়ক যত পোস্ট এ সংরক্ষিত আছে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ ভোর ৪:০২
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×