
মৌসুমের শুরুতে মাছের আকাল থাকলেও এখন চট্টগ্রামের জেলেদের জালে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ছে। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকলে এবার ইলিশে রেকর্ড ভঙ্গ করার সম্ভাবনা রয়েছে। সাগর ছাড়াও মেঘনা, কর্ণফুলীসহ মিঠা পানির খরস্রোতা নদীগুলোতে রেকর্ড পরিমান মাছ পড়ছে। তবে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় বেশী মাছ ধরা পড়লেও দাম সাধারনের নাগালের বাইরে। দেশের অভ্যন্তরে ধরা পড়া মাছ সাগর থেকেই পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। যার ফলে দাম কমছে না। জেলেদের দাবি গভীর সমুদ্র থেকে মাছ পাঠাবার উপায় না থাকা, ট্রলারে মাছ সংরক্ষনের ব্যবস্থা না থাকা ও জেলেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে নৌবাহিনীর উদ্যোগ না থাকায় ভারতীয় জাহাজে মাছ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এরপরও যে মাছ আসছে তারও একটা বড় অংশ অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রামের বৃহত্তর পাইকারি মাছের বাজার সদরঘাট এলাকার ফিশারীঘাট। এছাড়া বহদ্দারহাট মাছের বাজার, নতুন ব্রীজ মাছের বাজার, বাঁশখালী বাজার, মহেশখালী বাজার, কুতুবদিয়া বাজার, কক্সবাজার, টেকনাফ, সীতাকুন্ডসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১’শটি পাইকারী মাছের বাজার রয়েছে। গতকালও এসব বাজারগুলোতে চড়া দামে ইলিশ বিক্রি হয়েছে। সদরঘাট ফিশারি ঘাটে বড় ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকা মন। আর ছোট ইলিশ ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। চট্টগ্রামের মাছের বাজারগুলো থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০ কোটি টাকার ইলিশ মাছ দেশের বিভিন্ন এলাকার খুচরা বাজারগুলোতে যাচ্ছে। এসব পাইকারী বাজারগুলোতে আমদানী হওয়া মাছের মধ্যেও বড় একটি অংশ চোরাকারবারী ও বিভিন্ন মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানীর মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলেরা জানান, জুন থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত চলে ইলিশের মৌসুম। এ সময় ঘন বৃষ্টি হলে সমুদ্রের তলদেশ থেকে উপরে উঠতে শুরু করে ইলিশের ঝাঁক। মা মাছগুলো ডিম ছাড়তে চলে আসে মিঠা পানির খরস্রোতা নদীগুলোতে। চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় ইলিশের ভরা মৌসুমে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ইলিশশূণ্য ছিল জেলেরা। অনেক ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ৮/১০ দিন কাটিয়ে একরকম শূণ্য হাতেই ফিরে আসে। মৌসুমের শেষ দিকে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সাগরে হঠাৎ মাছ পড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে মেঘনা/কর্ণফুলীসহ খরস্রোতা নদীগুলোতেও জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। মাছ ধরার সঙ্গে সংশি¬ষ্ট জেলেরা জানান, এখন যে পরিমান মাছ পাওয়া যাচ্ছে শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকলে এবার ইলিশ ধরা পড়ার রেকর্ড সৃষ্টি হবে।
বাজারে পণ্য বেশি থাকলে দাম কম থাকবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু বাজারগুলোতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। জেলেদের কথার সঙ্গে বাজারদরের কোন সমন্বয় নেই। ব্যবসায়ীরা জানান, জেলেরা যে পরিমান মাছ পাচ্ছে তা বাজারে এলে ইলিশের দাম ১শ টাকার মধ্যে হওয়ার কথা। কিন্তু ইলিশের চাহিদা অনুযায়ী জেলেরা পর্যাপ্ত মাছ না দেয়ায় দাম কমছে না।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাগর থেকেই ইলিশ ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। জেলেরাও ভারতীয়দের কাছে মাছ বিক্রি করার কথা স্বীকার করেন। ফিশারিঘাটে মাছ বিক্রি করতে আসা রামগতি এলাকার জেলে দুলাল, আশরাফ ও সেকেন্দার জানান,- সাগরে মাছ ধরতে গেলে ১৫-২০ দিন সাগরে কাটাতে হয়। এই দীর্ঘ সময় জালে পাওয়া মাছ ট্রলারে সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা নেই। সাগর থেকে মাছ পাঠাবারও সরকারি বা বেসরকারী কোন উপায় নেই। আবার সাগরে দেশী বেদেশী জলদস্যুদের ভয় আছে। যার ফলে ভারতীয় ও মায়ানমারের মাছের জাহাজগুলোতে নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিতে হয়। ভারত ও মায়ানমারের একাধিক জাহাজ গভীর সমুদ্র থেকেই মাছ সংগ্রহ করে। বাংলাদেশের এধরনের কোন ব্যাবস্থা না থাকায় এদেশের জেলেরা এক রকম বাধ্য হয়েই ভীন দেশীদের কাছে ঐতিহ্যবাহী রুপালী ইলিশ নামমাত্র মুল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান জেলেরা। ###

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




