somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্যাস: ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ এক অতৃপ্ত আত্মার আখ্যান

০৪ ঠা মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আকাশেতে চাঁদ নেই
মধ্যরাত্রি ঘোর অন্ধকার,
কোন এক দয়ালু মানব
যাবে নিয়ে শবদেহ-দেহটি তোমার
প্রাণহীন ভীষণ শীতল;
ঠান্ডা সেই মৃত্তিকার দেহ
শোয়াবে সে মাটির ভেতরে
ধ্বংসস্তুপে-ভরা এক প্রাচীন প্রান্তরে,
সে সময় পবিত্র পান্ডুর নক্ষত্রের
চোখ হবে ভারি গভীর ক্লান্তিতে।

তারপর তোমার সে পঁচাগলা শবদেহে
মাকড়শা বুনিবে তাহার জাল,
বিষাক্ত সাপেরা জন্ম দেবে বিষাক্ত সাপের,
সেইখানে তুমি নিঃসহায় রবে শুয়ে
হাজার বছর ধরে।

(শার্ল্ বোদলেয়ার, অভিশপ্ত কবির শেষশয্যা)



শিল্পী জীবনের এ সংঘর্ষ ও সংঘাত নানান নৈর্ব্যত্তিক সর্বনামে। কিন্তু তার পরও নিজের ভিতরে শিল্পকে প্রবেশ করিয়েছিলেন বিদ্রোহ এবং স্বচ্ছতা নিয়ে। যে পৃথিবী সুন্দর হতে হতে থেমে গেছে, ভ্যানগঘ সে ব্যর্থতার মানে খুঁজতে উদ্বেলিত হয়েছিলেন, স্বপ্ন তরীতে নিষিদ্ধ জ্যোৎস্না স্নান করতে করতে হলুদ-লাল-নীলের মাঝে। ১৮৯০ সালের ১৭জুলাই সন্ধ্যায় ঔর্ভস এর শান্ত-স্নিগ্ধ প্রকৃতিতে হঠাৎ করেই কালো মেঘ হানা দেয়। লাল চুল গুলো যেন আরো লাল হতে চাইলো, নিজের ইচ্ছেকে অভিজাত অভিঘাত হিসেবে নিয়ে নিজের বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করলেন। মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে স্বপ্নের হলুদ-লাল-নীলকে মুক্তি দিলেন জীবন থেকে। ছেলেবেলা থেকেই একটু অসামাজিক প্রকৃতির ছিলেন, কারো সাথে খুব মেলামেশা পছন্দ করতেন না। প্রকৃতি তাঁকে বার বার হাতছানি দিয়ে ডাকতো, প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ প্রাণভরে আহরণ করতেন । নিসর্গের মাঝে তিনি নিজেকে ব্যপ্ত করে দিতে চাইতেন।

ভিনসেন্ট উইলেম্ ভ্যানগঘ দক্ষিণ হল্যান্ডের এক ছোট্ট গ্রাম গ্র“ট-জুনভার্ট-এ ১৮৫৩ সালের ৩০ মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা গ্রামের চার্চের পাদ্রী। পরিবার ছিল দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত। জন্মের পর তিনি আর দশটা শিশুর মত স্বাভাবিক ও সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারেননি। ভেতরে ছিল এক আশ্বর্য রকমের উগ্রতা। পরিবারকে অর্থকষ্টের অভিশাপ হতে মুক্তি দেয়ার জন্যে মাত্র ১৬ বছর বয়সে গোপীল এন্ড কোম্পানিতে সহকারি হিসেবে যোগ দেন। কাজের সুবাদে কোম্পানি থেকে লন্ডনে যান, ছোটভাই থিও কে সেখানে নিযুক্ত করে । অথচ লন্ডনে এসে ঐ কাজে মনযোগ দিতে পারেন নি। আর্ট গ্যালারির কেনা বেচার চেয়ে তাকে বেশি আকৃষ্ট করতো টেমসন নদীর শোভা। ক্রেতাদের পছন্দ মতো ছবি সরবরাহ না করে ভিন্ন ধর্মী ছবি ক্রয়ে উৎসাহিত করতেন এবং সুযোগ পেলেই ক্রেতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন। এই প্রবল খেয়ালীপনা করায় কোম্পানী তাকে চাকুরি চ্যুত করে। এ সময় তিনি বাড়ির মালিকের কণ্যা উরসুলার প্রেমে পড়েন। বাকদত্তা উরসুলা শিল্পীকে, শিল্পীর থরো থরো স্বপ্নগুলোকে ফিরিয়ে দেন। ভালোবাসার শুণ্য চাতালে ঘুরতে ঘুরতে শিল্পী নিজ ঘরের দিকে যাত্রামুখ ফেরান। এরপর সামান্য দিন বইয়ের দোকানে; বইয়ের সাথে ঘরবসতি। বাবা থিওডোরাস ভ্যানগঘের মতো যাজক হওয়ার স্বপ্ন তাকে পেয়ে বসল, আর যাজক হওয়ার এই নেশা তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা পর্যন্ত নিয়ে গেল। কিন্তু যে মানুষটা সারা জীবন প্রথাগত জীবনযাপনের নিয়মকে বৃদ্ধঙ্গুলি দেখিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন খ্যাপাটে বাউলের মতো, তাকে বেধে রাখে এমন প্রতিষ্ঠান কই! এরপর ১৮৭৭ সালের দিকে বেলজিয়ামের বোরিন্যাজ কয়লা খনিতে যাজক হিসেবে যোগ দিয়ে খনির গভির অন্ধকারে নিজস্ব আলো খুজতে চেয়েছিলেন। শ্রমিকদের সীমাহীন দুঃখ দারিদ্র তাকে বিচলিত করে তুলল।

ভগ্ন হৃদয়ের সবচেয়ে প্রিয় জায়গায় যাকে স্থান দিয়েছিলেন সেই প্রিয় মানুষ তার ভাই থিও কে চিঠিতে লিখেছিলেন, ঞযধঃ রং যিধঃ যধং ঃঁৎহবফ সব ভৎড়স ধ ভরৎস পধঃযড়ষরপ ঃড় ধ নরঃঃবৎ ধৎঃরংঃ. ও পধহ হড়ঃ ঁহফবৎংঃধহফ যড়ি ধ মড়ড়ফ রহ যবধাবহ ড়িঁষফ ঢ়ঁৎঢ়ড়ংবষু পৎবধঃব ংঁপয ধ পড়হফরঃরড়হ ড়ভ ড়নলবপঃ ...সরংবৎু ভড়ৎ যঁসধহ নবরহমং.”
একদিকে শ্রমিকদের সাথে গভির সহানুভূতি অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের সাথে চরম বিরোধ ঘটলো। এ সময় তিনি অমানবিক জীবন যাপন করতে থাকেন। সেখান হতে বিতাড়িত হন। মনের আবেগকে সযতœ লালন করে কয়লা মজুরদের স্কেচ শুরু করেন । সাতাশ বছরের ভ্যানগঘ চিত্র শিল্পীর জীবন গ্রহন করবেন স্থির করে ভাই থিও কে এক চিঠিতে লিখলেন- ‘অবশেষে আমি আমার জীবনের চরমতম সিদ্ধন্ত গ্রহন করছি। আমি শিল্পী হবো, আর কিছু নয়। আমি নিজেকে বললাম, আমি চরম হতাশায় যে পেন্সলটিকে নামিয়ে রেখেছিলাম, তা আবার হাতে তুলে নিলাম এবং শিল্প সৃষ্টিতেই নিবেদিত করলাম নিজেকে। মূহুর্তের মধ্যে যেন আমার চারপাশ রুপান্তরিত হয়ে গেল। ”

যতদিন তিনি খনিতে ছিলেন, ততদিন তার শিল্পচর্চা অব্যহত ছিলো। শিল্পসাধনায় হতে পারে তার রক্তাত্ত হ্দয়ের একমাত্র মুক্তির পথ। প্রিয় ভাই থিও জানতেন শিল্পীর জীবন অত্যন্ত কষ্টের এবং এ পথে অর্থ উপার্জনের প্রত্যাশা করা একেবারেরই ভুল। তাই ভাইয়ের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রয়োজন মতো অর্থের যোগান দিতেন। থিও’র আর্থিক সহযোগিতায় তিনি ব্রাসেলস্ -এ কিছুদিন শিল্প শিক্ষা গ্রহন করেন । পরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন এবং প্রচুর রেখাচিএ আঁকতে থাকেন যাতে মিলের প্রভাব প্রত্যক্ষ ভাবে বোঝা যায় । ভ্যানগঘ শিল্প চর্চায় তন্ময় হয়ে গেলেও নারীর প্রনয়লিপ্সা তাকে অত্যন্ত বিব্রত করতো । এ সময় গঘ তার মামাতো বোন ‘কে’ ্এর প্রতি আকৃষ্ট হন । কিন্তু এ ব্যাপারে তার মামার প্রচন্ড বিরোধিতা করে ‘কে’ এর সাথে দেখা সাক্ষাৎ সম্পূর্ন বন্ধ করে দিলেন ।

ভ্যান গঘ তাঁর প্রবল আবেগ সামলাতে না পেরে বাড়ি না ফেরার শপথ করে মোমের আগুনে নিজের আঙুলগুলো পুড়িয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে দিলেন কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। শেষ পর্যন্ত ‘কে’র সাথে দেখা করতে পারেন নি ভ্যানগঘ।
এ ঘটনাটির পরে তিনি বুঝতে পারলেন কোনো ভদ্র ঘরের কণ্যার সাথে তাঁর বিয়ে হওয়া সম্ভব নয়। প্রনয় ব্যর্থতা তাঁকে আরও ক্ষুব্ধ ও পাগল করে তুলল। এ সময় ভ্যানগঘ সিয়েন নামক নামক এক পতিতার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

এ বিশৃঙ্খল, বাউন্ডুলে, অভিমানী ভাইকে নিজের সামান্য উপার্জন থেকে টাকা পাঠাতেন থিও। ভাইয়ের অর্থ সাহায্যেই উভয়ের একমাত্র ভরসা। কিন্তু এভাবে যে সংসার টেকে না। অভাব অনটন দেখে পতিতাও একদিন ভ্যানগঘকে রেখে চলে যায় । এরপর ভ্যানগঘ আবার নিজেকে নিয়ে শিল্পের দোরগোড়ায় অসম সাহসিকতা আর ধৈর্য নিয়ে হাজির হলেন। রঙ আর রঙতুলির স্বপ্ন তাকে আছন্ন করে নিলো আবার সেই অসম্ভব হলুদ মায়াবী প্রকৃতির কোলে। ভাইয়ের দেয়া কিছু টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় রঙ আর তুলি কিনলেন। রঙতুলির আচঁড়ে ফুটিয়ে তুললেন হলুদের বন্যা আর সূর্যমুখী ফুলের অনন্ত সৌন্দর্যধারা। খুজে পেলেন নিজস্ব সুর আর রঙের বিন্যাস। আলাদা, খুব ব্যাক্তিগত সৌন্দর্যের উৎসমুখ। এ সময় ভ্যানগঘের করা ২৫ টি তৈল চিত্র, ৩০০ টি জল রং ও রেখাচিত্র পাওয়া যায়।


১৮৮৬ সালে প্যারিসে গিয়ে তেও-র সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর কামিল পিসারো ও জর্জ সিওরারদের নিও-ইমপ্রেসনিজম ধারা দ্বারা প্রভাবিত হন। এবং খুব তাড়াতাড়ি, আশ্চর্য কর্মকুশলতায় উল্লেখিত ধারার প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে নিজস্ব চিত্রন কৌশল সৃষ্টি করলেন । তাতে ভ্যানগঘ তাঁর ভেতরকার আবেগ আর সংবেদনশীলতা প্রকাশ করার স্বচ্ছন্দতা যেন আরও বেশি করে আয়ত্ব করলেন। তাঁর আবেগের প্রধানতম বিষয় হল মানবতা। একটি চিঠিতে তিনি লিখেন-আমি আকঁতে চাই মানবতা, মানবতা এবং মানবতা।

তেত্রিশ বছর বয়সে প্যারিসের শিল্প জগতে ভ্যানগঘ একজন নবাগত শিল্পী । ভাই থিও’র মাধ্যমে এক অদম্য ইচ্ছায় অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সুরাত, লুত্রেক, গঁগ্যা, সেজান, পিসারো প্রমুখ শিল্পীদের সাথে পরিচিত হন। এসব শিল্পীদের প্রভাবে উজ্জ্বল বর্ণের ছোট ছোট ছবি আকেন। বিষয়বস্তু হিসেবে ছিলো নগর জীবনের পথঘাট, গৃহ অভ্যন্তর, ফুল, ভূ-দৃশ্য ইত্যাদি। ভ্যানগগ তাঁর ছোট ভাই থিও কে এক চিঠিতে লেখেনÑ আমার চোখের সামনে যা দেখি, তার পুনরাবৃত্তি না করে আমি ইচ্ছে মতোন রঙ ব্যবহার করে বলিষ্ঠ ভাবে নিজেকে প্রকাশ করি। সন্তের হৃদয়ের উত্তাপ পাওয়া যায় ভ্যানগঘের আঁকা ছবির পরতে পরতে, রঙ তুলির অসামান্য বুনটে।

অস্থির চিত্ত আবার যেন উড়াল দিতে চাইছে। কৃত্রিম আলো, ইট, কাট, পাথরের শহর তার কাছে বিষময় হয়ে উঠল। হঠাৎ একদিন রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থিওকে লিখলেনÑ প্যারিসের কোলাহলে কখনো বড় শিল্পী হওয়া সম্ভব নয়। নিজের মতো করে বাঁচার জন্য নিঃসঙ্গ জীবন ই ভালো।


এরপর তল্পিতল্পা নিয়ে ফ্রান্সের দক্ষিনাঞ্চলীয় গ্রাম আর্লেতে পাড়ি জমালেন। আর্লের প্রকৃতি তাঁকে আপন করে নিলো। বার্চ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ ক্যানভাসে একের পর এক ছবি এঁকে চলেছেন ভিনসেন্ট। অস্থির হৃদয়ের উত্তাপ কিছুটা কমে এসেছিলো বোধহয়। সে সময় থিওকে আবার লিখলেনÑ সবচেয়ে ভালো দিন কাটছে এখন জীবনের। কেউ যদি ক্যানভাসের সব রঙ মিলিয়ে ছবি সৃষ্টি করতে চায় , তাহলে আর্লের নিসর্গ যথার্থ।

আর্লের সরল মানুষগুলোকেও অতি সযতেœ ফুটিয়ে তুললেন ক্যানভাসে। কিষান কিষানীর হৃদয়ের মমত্ববোধ, সরল ভাবনা, তাদের দুঃখ, হাসি, প্রতিদিনকার জীবন যাপনের সজীবতা প্রকাশ পেল ভিনসেন্টের হলুদ ক্যানভাসে। কিছুদিন বেশ ভালোই কাটলো। তারপর আবার একাকিত্বের ভুত মাথায় চাপলে গঁগ্যাকে লিখলেনÑ চলে আসো দক্ষিনে। আমি নিশ্চিত এখানে এলে আঁকতে পারবে ভবিষ্যতের ছবি, নতুন ছবি। এখানকার বারবণিতারা আমার মডেল। ওদের দেহের বাঁকের রেখারা কথা বলে।



প্রতিদিন অনেকদুর হেঁটে গিয়ে প্রকৃতির মাঝ হতে বিষয় নির্বাচন করার পর ভ্যানগঘ কাঁধে ইজেল ক্যানভাস তুলি নিয়ে ছুটে যেতেন স্বপ্ন আর স্বপ্নের মতোন ছবি আঁকার জন্য। এবং ঐ সময় তিনি একেছেন তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠতম ছবিগুলো। হলুদ লাল নীল রঙমাখানো স্বপ্নগুলো। ১৫ মাসব্যাপি সময়ে ভ্যানগঘ একেঁছেন দুই শাতধিক তেলচিত্র ছাড়াও হাজার হাজার রেখাচিত্র । অসম্ভব দৃড়তা আর তুলির ক্ষিপ্র গতি আর নিটোল রঙের প্রয়োগ রক্তিম হলুদ ও প্রদীপ্ত নীলের এমন সমাহার আগে কখনো দেখা যায় নি।


১৮৮৮ এর ২০ অক্টোবর গঁগ্যা আসলেন। ভ্যান গঘ তাঁর প্রিয় শিল্পী বন্ধুকে পেয়ে আহলাদে আটখানা হলেও দুটি বাস্তব বুদ্ধিজ্ঞান বর্জিত মানুষ এক সাথে হলে যা হয়, তাই ঘটলো। ভ্যানগঘের প্রবল পাগলামি ও গঁগ্যার আধিপত্যবাদী আচরণের কারনে তাদের মধ্যে প্রায় ই সংঘর্ষ বাঁধতে শুরু করে। সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে ক্ষ্যাপা গঘ বন্ধু গঁগ্যাকে ক্ষুর নিয়ে তাড়া করে। আবার সেই একই ভ্যানগঘ এ ঘটনার পর ঘরে ফিরে নিজ হাতে নিজের কান কেটে ফেলেন। মূলত শিল্পের অর্চনাতেই গঁগ্যার সাথে তার পরিচয় এবং বন্ধুত্ব ভাব গড়ে ওঠে। গঁগ্যার ব্যক্তিত্ব ছিলো একরোখা
ও শিল্প বিশ্বাসে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। তিনি প্রচলিত সব নিয়মকানুনকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতেন। গঁগ্যাই প্রথম বস্তুর উপর বর্ণ ও আলোছায়াকে ব্যবহার করেছেন নিজস্ব আবেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। এ সময়ে ভ্যানগঘের সাথে গঁগ্যার সংঘাত ও নানাবিধ সমস্যা তাঁকে অস্থির চিত্তকে আরও বিচলিত করে তুলল। তিনি থিও কে লিখে জানালেনÑতার ও গঁগ্যার মধ্যে সংঘর্ষহীন ভাবে একসাথে বাস করা অসম্ভব। এবং তিনি প্যারিসে ফিরে যাচ্ছেন।

গঁগ্যা ফিরে যাওয়ার আগে ঘটল আর এক মারাত্মক দুর্ঘটনা। ১৮৮৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর লে ফোরাম রিপাবলিকেইন-এ খবর ছাপা হয়-‘গত রোববার রাতে ভিনসেন্ট ভ্যানগঘ নামের এক ওলন্দাজ শিল্পী একটি ক্যাফেতে গিয়ে র‌্যাচল নামের এক পরিচারিকাকে ডেকে পাঠায় এবং তার হাতে নিজের কর্তিত কান দিয়ে বলে একি সাবধানে রেখ। এরপর সে দ্রুত পারিয়ে যায়। এ কাজটি একজন হতভাগ্য উন্মাদ ছাড়া আর কারও পক্ষে করা সম্ভব নয়।’ পুলিশ পরদিন সকালে যখন তাকে খুজে পায় তখন তাঁর দেহে কোন রকমে প্রান ছিলো। খবর পেয়ে থিও দ্রুত ছুটে আসে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এসব পাগলামির জন্য তাঁর ঘর থেকে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাস্তায় নামলেই সবাই তাঁকে নানাভাবে উত্যক্ত করতে থাকে। শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভ্যানগঘ একেবারে ভেঙে পড়লে সেন্ট রেমির মানসিক হাসপাতালে তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। হাসপাতালটি ভ্যানগঘের পছন্দ হয়। রোমান পুরানো সব স্থাপত্য কীর্তিতে হাসপাতালটি সাজানো ছিলো। এখানে এস বিপন্ন এ পৃথিবীতে জোছনার সব মায়াকে আপন করে বাতাসের আশ্চর্য উচ্ছাসে করোটির অন্ধ তিমির জুড়ে পরম নিশ্চতায় সপে দিয়ে দীর্ঘ এক বছর থাকলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে একটি কক্ষ স্টুডিও হিসেব ব্যবহার করতে দিলেন। এখানে তিনি ১৫০ টি তেলচিত্র এবঙ অসংখ্য জল রঙ ও রেখাচিত্র আঁকলেন। ১৮৯০ সালে সেন্ট রেমির হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে ভ্যানগঘ প্যারিসে চলে যান। প্রিয় ভাই থিওর সাথে কিছুদিন থাকার পর ঔভর্স চলে গেলেন কামিল পিসারোর সহযোগিতায় ডা. গ্যাচেটের অধীনে চিকিৎসার জন্য। এ সময় প্রচন্ড ক্ষিপ্রতার সাথে কাজ করেছেন। শিল্পের মাঝে বিলীন করে দিয়েছেন নিজেকে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি অসুস্থাতার মাঝেও জীবনের শেষ সত্তর দিনে তিনি এঁকেছেন ৭০ টি তেলচিত্র ও ৩০ টি জলরঙ চিত্র। ১৮৮০ থেকে ১৮৯০, এই দশটি বছর নিজেকে খুজে পেয়েছিলেন শিল্পের মাঝে উত্তেজক সঙ্গীতের মতো। উজ্জ্বল ধূসরতর দিগন্তকে ভেঙে ভেঙে রেখা ও টেকচারে সাজিয়ে দিলেন স্বপ্নের ক্যানভাসে।

ভ্যানগঘ করুণ নাটকীয় ভাংচুর আর ছন্নছাড়া জীবদ্দশায় সুখ শব্দটার সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন নি কখোনোই। তাঁর চিত্রকলা আমাদের কাছে এক নতুন বিশ্বাস, জীবনের এক নতুন সম্ভবনা বয়ে নিয়ে আসে। ভ্যানগঘ যেন এক অনন্ত প্রতিভা, মহান শিল্পী। যিনি শিল্পের বেদিমূলে আহুতি দিয়েছেন নিজেকে । ঈশ্বরের আত্মা যেন কথা বলতে চেয়েছিল শিল্পীর কল্পনার চত্বরে। সূর্যের আদেশ পেয়ে গঘ রাখাল বালকের মতো চেয়ে থাকতেন নীল হলুদ দিগন্তের দিকে। উন্মাদনার সব প্রকরন ও দুর অজানার এক অদ্ভুত কল্পনা ছড়িয়ে আছে সেখানে শার্ল বোদলেয়ারের কবিতার মতো।


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×