জাপানে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র এখনও দেশটির জন্য বড় হুমকি হয়ে আছে। ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণকারী কোম্পানীর কর্মকর্তারা ওই কেন্দ্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য গোপন করায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
দৈনিক লা মন্ড পত্রিকায় ‘অপরাধমূলক নিরবতা' শীর্ষক এক নিবন্ধে লেখা হয়েছে, জাপানের পরমাণু বিষয়ক প্রেসার গ্রুপ পরমাণু সংকট বিষয়ক অনেক খবর সেন্সর করছে। দৈনিকটির ইন্টারনেট সংস্করণে আরো বলা হয়েছে, জাপানের জনগণ পরমাণু সংকট সংক্রান্ত বাস্তব পরিস্থিতি ক্রমেই উপলব্ধি করতে পারছে এবং এ সমস্যা নিরসনে সরকারের ব্যর্থতায় তারা ভীষণ উদ্বিগ্ন। জাপানের প্রেসার গ্রুপ সম্পর্কে দৈনিক লা মন্ড লিখেছে, দেশটির অর্থমন্ত্রণালয়ে এই মহলটি বেশ সক্রিয় এবং বিদ্যুত উৎপাদন কোম্পানী ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি এন্ড এটমিক এজেন্সিতে তাদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। জাপানের এ প্রভাবশালী মহলটি অনেক টেলিভিশন ও গণমাধ্যমকে অর্থ যুগিয়ে থাকে যাতে পরমাণু প্রকল্পের নিরাপত্তার বিষয়ে তারা ইতিবাচক খবরা খবর প্রচার করে। সম্প্রতি পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রের ক্ষয়ক্ষতি এবং এ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত বেশ কয়েক জন কর্মচারির বিষয়ে নানা খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
জাপানের গণমাধ্যমও ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রের সমস্যা নিরসনে কর্মকর্তাদের ধীর গতির কারণ সম্পর্কে লিখেছে, আটজন ফরাসী পরমাণু বিশেষজ্ঞ সম্ভাব্য বিপর্যয়ের আশঙ্কায় এবং এ কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বনিম্নে নেমে আসায় কালবিলম্ব না করে তারা নিজ দেশে ফিরে গেছেন। জাপানে সম্ভাব্য পরমাণু বিপদের বিষয়ে নানা তথ্য গোপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দেশটির মন্ত্রীসভার মুখপাত্র আজ এক সংবাদ সম্মেলনে টোকিওর বিদ্যুত বিভাগের তথ্য সরবরাহের ধরণ বা প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, পরমাণু বিপদের বিষয়ে বিদ্যুত বিভাগের হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। জাপান সরকারের মুখপাত্র বলেছেন, ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় নি:সরণের উৎস চিহ্নিত করার জন্য কর্মকর্তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, দ্বিতীয় চুল্লি থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ চুইয়ে পানিতে মিশে ভয়াবহ দুষণ ছড়াচ্ছে এবং বিদ্যুত কেন্দ্রের পরমাণু জ্বালানি রড গলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মান কোম্পানীর সাবেক কর্মকর্তারাও এটা স্বীকার করেছেন, স্বল্প সময়ে বেশী বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় উপেক্ষা করা হয়েছিল। তারা আরো বলেছেন, এ বিদ্যুত কেন্দ্রটি ভূমিকম্প প্রতিরোধক হলেও শীতলকরণ ব্যবস্থার ঝুকিকে খুবই কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল । টোকিওর বিদ্যুত উৎপাদন কোম্পানী গত সোমবার জানিয়েছে, ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে এক কোটি গুন বেশি বলে যে খবর দেয়া হয়েছিল তা আসলে ঠিক নয়। ওই খবর প্রকাশের পর বিদ্যুত কেন্দ্রের কর্মচারীরা তাদের কাজ আপতত স্থগিত করে দেয়। এদিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আই এ ই এ যে কোন বড় ধরনের পরমাণু বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে জাপান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কারণ দুই নম্বর চুল্লির জ্বালানী রড গলে গেলে বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন হয়ে যাবে। #
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ৭:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




