somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রসদ (২)

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধীরে ধীরে ইরা নিজের জীবন-যাপন মানিয়ে নেবার ফাঁকে ফাঁকে শশধরকে আকারে ইঙ্গিতে ওকে বিয়ের কথা বলতে চাইতো। শশধর একদিন ওকে বললো--'তোদের মোচলমানদের বিয়ে-শাদি খুবই জটিল ব্যাপার। জলিল তোকে তালাক দিয়ে যায়নি। আমি যদি তোকে হিন্দুমতে বিয়ে করি আর তারপর হঠাৎ যদি জলিল ফিরে এসে তোকে দাবি করে তাহলে কী জগঝম্প ব্যাপার হবে ভেবে দেখেছিস? দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেধে যেতে পারে। তুই এসব নিয়ে ভাবিস না।
কিন্তু ভাবিস না বললেই তো আর না ভেবে থাকা যায় না। পেটে যে শশধরের বাচ্চা এসে গেছে। দু'জনেই বেশ চিন্তায় পড়লো। যদিও এখানে লোকনিন্দের কোনো ভয় নেই। শশধর এই বস্তির প্রতিটি ঘরের কাহিনী জানে। ওকে কেউ ঘাঁটাবে না। তবু একটা কাঁটা তো খচ-খচ করে মনের মধ্যে!
বিপদ যখন আসে তখন অনেক বিপদ একসঙ্গে তেড়ে আসে। রেলের জায়গা ছেড়ে চলে যেতে হবে সকলকে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে সকলের। কলকাতার এই জমজমাট জায়গা ছেড়ে কোথায় যাবে? কলকাতার মধ্যে তো দূরের কথা কলকাতার দশ-বিশ মাইলের মধ্যে জায়গা কোথায়! থাকলেও তাদের বসতির জন্যে কে জায়গা ছেড়ে দেবে? কিছুতেই এই বস্তি ছেড়ে তারা উঠবে না বলে তর্জন-গর্জন করলেও পার্টির দাদা-দিদিরা রক্তগঙ্গা বইয়ে দেবার হুমকি দিলেও এই জায়গা যে এবার ছেড়ে দিতেই হবে সেটা শশধর বিলক্ষণ টের পাচ্ছে। কারণ সে নিজেও পার্টি করে।
এই বস্তির সকলেই ভোটার। অনেকেই আবার বাংলাদেশের ভোটারও বটে। তাই সেই অর্থে ভোটের দিন ছাড়া এরা এই মহানগরের নাগরিক নয়। এক অদ্ভুত পরিচয় নিয়ে এরা রেললাইনের ধারে নরকগুলজার করে বসবাস করে চলেছে বছরের পর বছর। এরা যে পক্ষে ভোট দেয় তাদের বিপরীত পক্ষ এদের জন্যে কিছু করবে কিনা এরা তা জানে না। কিন্তু এটা নিশ্চিত জানে, একদিন বুলডোজার নিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পুলিশ এসে এইসব ভাঙ্গাচোরা ট্যারা-বাঁকা ঝুপরি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবে। গরীব মানুষগুলো হা-হা করে কাঁদবে। টিভি-বাবুরা ছবি তুলবে। শশধর জানে একটা লোকও আহা-উহু করবে না। প্রতিদিন এই বস্তির মাঝখান দিয়ে যাবার সময় ট্রেনের প্রায় সমস্ত প্যাসেঞ্জার বিরক্ত ক্রুদ্ধ হয় ওদের কাণ্ডজ্ঞানহীনতায়। দু'পাশের বীভৎস নরকের জীব যে ওরা!
বেশ কিছুদিন ধরেই ভয়ঙ্কর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শশধর। কোথাও তো যেতেই হবে। যেখানেই যাক্ সেখানেও মাথা গোঁজার মতো একটা ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্যে বেশ কিছু টাকা চাই। কলমিস্ত্রীর কাজ করে যা রোজগার হয়, রোজদিন একরকম হয় না, তাতে কোনোরকমে আড়াইজনের চলে যাচ্ছে। এরমধ্যে ইরা আবার গর্ভবতী হয়েছে। সুতরাং সামনে আরো বেশি খরচ। শশধর দিনরাত ভাবছে। ভাবছে ইরাও। জায়গা যদি জোটে তাহলে এবার একটু শক্তপোক্ত ঘর বানাবার কথা ভাবছে বিশেষ করে ইরা। এবার জায়গা পেলে তো উচ্ছেদ হবার ভয় থাকবে না।

রাতে ভাত খেতে বসে শশধর ইরাকে বলল--
--আমি ভাবছিলাম যদি কোনোরকমে কাঠাখানেক জায়গা কলকাতার আশেপাশে কোথাও পাওয়া যায় তাহলে কিনে নিয়ে--
চোখ দুটো গোল গোল হয়ে যায় ইরার। কে জানে আজ হয়তো একটু বেশি করেই চোলাই গিলেছে শশধর। এককাঠা জমি ঠিক কতটা সেটা ঠিক ঠাক না বুঝলেও কলকাতার আশেপাশেও এককাঠা জমির দাম কম করেও হাজার দশেকের কম নয় বলেই শশধর একদিন বলেছিল। দশহাজার টাকাও ঠিক কতগুলো টাকা ইরা জানে না। কিন্তু সেটা যে তাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ইরা তা বোঝে। তাহলে শশধর এমন অসম্ভব কথা বলছে কি করে? শশধর ইরার মুখের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। বিশেষ কিছু সেদিন আর বলেনি।
বৃষ্টির মধ্যে খুব বেশি কাজ করা যায় না বলে শশধর দুপুরের পর আর ঘর থেকে বেরোয় নি। ইরাও তার ভারি শরীর নিয়ে বিকেলে কাজে যাবে না ঠিক করেছে। মেয়েটাকে ইদানীং খুব বেশি সময় দিতে পারে না ইরা। আজ আর কোল থেকে তাকে নামাতেই চাইছে না।
ইরার রঙটা ফর্সা ঘেঁষা। তাই একটু ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। এই সময়ে অনেককিছু খাওয়া-দাওয়া করা দরকার। ওষুধপত্র-ডাক্তারবদ্যি এসবের তো বালাই নেই। তার ওপর পরিশ্রম। অনেকক্ষণ চুপচাপ মা-মেয়ের খুনসুটি লক্ষ্য করলো শশধর। তারপর বিছানায় উঠে বসে হাত বাড়িয়ে মেয়েটাকে টেনে নিল নিজের কোলে। কচি গালে গাল রেখে বলল--
--মেয়েটা কিন্তু তোর মতোই মিষ্টি হবে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া পেলে বেশ দেখতে হবে। আমার ইচ্ছে ওকে উস্কুলে ভর্ত্তি করে দিই--
--ইস্কুল! কিন্তু ইস্কুলে তো বাপের নাম নাম লেখাতে হবে--
--ভাবছি আমার নামটাই দিয়ে দেব। এখন একটু লেখাপড়া না শিখলে খুব বিপদ--
ইরা কখন নিজের অজ্ঞাতেই শশধরের শরীরের সঙ্গে মিশে গেছে টের পায় নি। এই মুহূর্তে ওর বুকের মধ্যে ওপারে ফেলে আসা হতদরিদ্র ঘরগেরস্থালীর ছবিগুলো ফুটছে। তীব্র অনটনের হলেও একটু জায়গা ছিল, ভাঙ্গাচোরা হলেও একটা ঘর ছিল। লাগোয়া একফালি জায়গায় শাক-সব্জির সবুজ ছোঁয়া ছিল। সেই ছবি কি আরো একটু সুন্দর করে সাজিয়েগুছিয়ে শশধর তার দু'হাতের তালুতে তুলে দেবে? সত্যি সত্যি শশধর এসব ভাবছে নাকি? ইরা প্রায় শশধরের পিঠের ওপর নিজেকে এলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে--
--কি করে হবে এসব! পায়ের নিচে মাটি নেই, মাথার ওপর চাল নেই--
--এসবই হয়, যদি তুই রাজি থাকিস--
শশধর মেয়েটাকে নাচাতে নাচাতে বললো। ইরা এবারে সোজা হয়ে বসলো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল শশধরের মুখের দিকে--
--আমার কি ক্ষমতা? কিসের রাজি?
--যা বলছি ঠাণ্ডা মাথায় শোন্। এখন তোর ওষুধপত্র খাওয়া দরকার। মেয়েটারও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। ডাক্তার দেখানো দরকার। তার ওপর যে কোনো দিন এই বস্তি ছেড়ে কোথায় যেতে হবে কে জানে! তখন তোর অবস্থাই বা কেমন থাকে--
--কিন্তু আমাকে কি করতে হবে?
অসহিষ্ণু জিজ্ঞাসায় অধীর হয়ে ওঠে ইরা। শশধর একটু সাবধানী ভঙ্গিতে ডান হাত দিয়ে ইরাকে একটু কাছে টেনে বলে--
--আমি প্রায়ই এক বাড়িতে কলের কাজ করতে যাই। স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই খুব ভালো লোক। তবে ওদের জীবনে কোনো সুখ নেই। ভগবান ওদের ঘরে একটাও বাচ্চা দিল না। সেদিন কথায় কথায় বাবু বলছিল একটা বাচ্চা পেলে মানুষ করে--
ইরা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে শশধরের মুখের দিকে। শশধর একটু পরে আবার বলতে থাকে--
--ওদের একটা বাচ্চা চাই । আমাদের একটা ঘর চাই। নিজের ঘর। কেউ কোনোদিন বুলডোজার দিয়ে সে ঘর ভাঙবে না। ছেলে বা মেয়ে, একটা বাচ্চার জন্যে ওরা কত দেবে জানিস? বিশ হাজার টাকা! বি-শ-হা-জা-র! আগে দশ, পরে দশ--
শশধরের চোখ দুটো জ্বল জ্বল করে ওঠে। ভয়ে আতঙ্কে নীল হয়ে যায় ইরা। শশধর ওর বাচ্চাটাকে বিক্রি করে দিতে চাইছে! ব্যাপারটা বুঝতে একটু সময় নিয়ে ইরা দ্রুত তার কোমরের শাড়ির ফাঁস আলগা করে শায়ার দড়ি খুলে অনেকটা নিচে নামিয়ে দিয়ে শশধরের হাতটা তার উন্মুক্ত টান টান স্ফীত পেটের ওপর চেপে ধরে প্রায় আর্তনাদ করে ওঠে--
--তুমি বিশ্বাস করো না এটা তোমারই বাচ্চা? কি গো বলো না, তুমি বিশ্বাস করো না এটা তোমার বাচ্চা?
হু হু জল নামে ইরার দু'চোখ বেয়ে। বিচলিত শশধর তাড়াতাড়ি বলে ওঠে--
--আমি কি তাই বলেছি? অস্থির হোস না ইরা! ব্যাপারটা বোঝ--
--আমি রাজি নই। আমার বাচ্চা বিক্রি করবো না। মরে গেলেও না!
--মরতেই হবে তবে। পায়ের নিচে মাটি হবে না, ঘর হবে না। কুকুরের মতো এইভাবে তাড়া খেয়ে খেয়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেতে হবে। মেয়েটা বড় হবে--খেতে পাবে না, একদিন বেবুশ্যে হয়ে রাস্তায় গিয়ে বাবু ধরবে। পারবি তো সেসব দেখতে শুনতে?
একটানা কথাগুলো বলতে বলতে হাঁপিয়ে ওঠে শশধর। গল গল করে ঘামতে থাকে। আকাশের মুখ ভারি বলে গুমোট ভাবটাও বেশি বেশি। ইরা কিছুক্ষণ কাঁদলো মিন মিন করে। তারপর কান্না জড়ানো গলায় বললো--
--নিজের পেটের ধন অন্যের হাতে তুলে দিতে পারে কোনো মা? তুমি কি করে বুঝবে?
--কত মেয়ে তো মরা বাচ্চা বিইয়ে ঘরে ফিরে এসে দিব্যি দু'চার মাস ঘুরতে না ঘুরতেই আবার পোয়াতি হয়ে যায়, জানিস না তুই?
--তুমি কি পাষাণ গো! এমন কথা কেউ মুখে আনে?
--তুই-ই তো বলাচ্ছিস আমাকে। বাচ্চা হওয়া মাত্র ওরা নিয়ে যাবে। তুই তো টেরও পাবি না। ওরাই নার্সিংহোম ঠিক করে দেবে। ডাক্তারের সঙ্গে বোঝাপড়া হবে। বাচ্চাটা ওরা নি:শব্দে নিয়ে যাবে। ভেবে দেখ ইরা, বিশ হাজার টাকা...আমাদের নিজেদের একটুকরো জমি...ঘর...
--আমার বুক ফেটে যাবে। আমার এক ফোঁটা দুধও পাবে না সে। বাঁচবে কেমন করে?
ডুকরে ওঠে ইরা। শশধর ইরার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে--
--এই শহরে বাচ্চার জন্যে বুকের দুধও পয়সা দিলে পাওয়া যায় রে ইরা! ভাবিস না তুই, তোর বাচ্চাও বুকের দুধ পাবে।
কিন্তু ইরা ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। একটা মরিয়া চেষ্টা করে শশধরকে ঠেকাতে। বলে ওঠে--
--কিন্তু আমি যে মোচলমান! অধর্ম হবে না? পাপ হবে না?
--কিসের পাপ? বাচ্চাদের কোনো জাত নেই। আর তাছাড়া আমিও তো মোচলমান নই। তবে?

বেশ কয়েকদিন ধরে অনেকরকম করে ইরাকে বোঝালো শশধর। ওদের সামনে এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই। সামান্য হলেও নিজের একটুকরো জমি, নিজের ঘর, গেরস্থালী--ছবির মতো এক এক করে ইরার চোখের সামনে তুলে ধরার যাবতীয় চেষ্টা করে গেল শশধর। ইরাকে রাজি করাতেই হবে। কারণ ইতিমধ্যে পাঁচহাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে জমির বায়না করে ফেলেছে। যারা বাচ্চা নেবে তারা ডাক্তারও ঠিক করে দিয়েছে। বিনা পয়সায় ওষুধপত্র দেবে তারা।
ইরাকে একদিন ডাক্তারের কাছে নিয়েও গেল শশধর। খুব বড় নয়, ছোটোখাটো নার্সিংহোম। এসব নাসিংহোমে অনেকরকম কাজ-কারবার হয়। শশধর জানে।
শেষপর্যন্ত ইরাকে রাজি হতেই হলো। মাঝে মাঝে ডুকরে কেঁদে ওঠে। প্রায়শ:ই মিনমিন করে কাঁদে। নিজের স্ফীত পেটের ওপর পরম মমতায় হাত বোলায়। নিজের মনকে বোঝাবার চেষ্টা করে, এই নরকে জন্ম নিলে বাঁচানোও তো কঠিন। তবু যাহোক অন্য ঘরে মানুষ হবে। ভালো-মন্দ খাবে-দাবে। পয়সাওলা মানুষ হবে। শুধু ইরা তাকে কোনোদিন দেখবে না, চিনবে না! এসবমনে হতেই ফের হু হু জল নামে তার দু'চোখ বেয়ে।

একটা জমি (আগে জলা ছিল) অনেক খোঁজাখুঁজি করে পেয়েগিয়েছিল শশধর। আশা ছিল, এক কাঠা জমির। একই দামে পেয়ে গেল দেড়কাঠার একটু বেশি! কলকাতা থেকে একটু দূরে হলেও লোকাল ট্রেনে চাপলে বিশ-পঁচিশ মিনিটের বেশি লাগে না। বাঁশের খুঁটি, বাঁশের বেড়া, পুরনো টিনের চাল দিয়ে শশধর যে ঘর বানালো সে ঘরই ওদের কাছে স্বর্গের মতো মনে হলো। আশে-পাশের লোকজনও খারাপ নয় খুব একটা। খিস্তি-খেউড় খুবই কম শোনা যায়। মদ খেয়ে হুল্লোর করার মতো লোকজন কম। বউপেটানো প্রবলপুরুষ নেই বললেই চলে। অন্ধকার নামলে এখানকার মেয়েবউদের নিয়ে ফূর্তির কথা কেউ ভাবে না।
ইরা সংসার সাজানোয় মন দিল। টিনের চালে লাই-কুমড়ো গাছ তুলে দেবার কথা ভাবছে সে। আশেপাশে কয়েকটা ফল-ফুলের গাছ লাগিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে। এসবই ভবিষ্যৎ। হলে বসতটা ভরপুর হবে।
প্রচণ্ড কাজের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলার একটা নেশা তাকে পেয়ে বসেছে। সামান্য দূরে স্টেশন পাড়ায় দু'টো ঠিকে কাজও পেয়ে গেছে ইরা। কাজেই ব্যস্ততার সীমা নেই। শশধরও পরিশ্রম করে যথেষ্ট। তবুও এই ছোট্ট ঘরটুকুও যেন ভরে না কিছুতেই। বিশহাজারের সব শেষ। হাতে বাড়তি একটা টাকাও নেই। মেয়েটাকে স্কুলে দিতে হবে।
এই পড়ায় বেশ কয়েকজন রিক্সা চালায়। বউগুলো অন্যের বাড়িতে ঠিকে করে। ওদের ঘরেও টিভি চলে। ছোট সাদা-কালো। তবু তো টিভি! টুকটাক জিনিসপত্রও আছে ওদের সকলের ঘরেই। ইরার ঘরে নেই বলতে কিচ্ছু নেই। তিনটে পেট চলে যাচ্ছে কোনোরকমে। সমাজে ঘর বেঁধে বাস করতে গেলে আরো অনেক কিছু লাগে। এটা তো রেললাইনের ধারের নরকবাস নয়। এখানে কে কেমন আছে লোকে তার খোঁজ-খবর নেয়। কিন্তু উপায় কি? ইরা হাড়ভাঙা খাটুনির ফাঁকে ফাঁকে ভাবে।

পরিশ্রান্ত শশধর ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘরসংসারের কাজকর্ম সেরে বিছানায় এসে ইরা কিছুক্ষণ হেরিকেনের আলোয় শশধরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। লোকটা আর যাইহোক তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়নি। যে জায়গায় শশধর বাস করতো সেখানে দু'চারদিন ফূর্তি করে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়াটা কোনো ব্যাপারই নয়। আসলে শশধরের মনের মধ্যেও ঘরসংসারের একটা চাহিদা ছিল। ইরার প্রতি টান কমা দূরে থাক ইদানীং একটু বেড়েই গেছে বলে ইরার মনে হয়।
হেরিকেন নিভিয়ে দিয়ে ব্লাউজটা খুলে বালিশের পাশে রেখে কোমরের শাড়ি-শায়ার ফাঁস আলগা করে শশধরের শরীরের সঙ্গে মিশে শুয়ে পড়ে ইরা। ডান হাত দিয়ে শশধরের মুখটা নিজের মুখের দিকে ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করে--
--ঘুমুলে নাকি?
--কিছু বলবি নাকি?
ঘুম জড়ানো গলায় বলল শশধর। ইরা শশধরের গলার আওয়াজ পেয়ে আরো একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে প্রায় চুপি চুপি বলে ওঠে--
--আমাদের বাচ্চাটা কেমন আছে গো? তুমি তাকে দেখতে যাও মাঝেসাঝে?
--দূর! তারা কি এখানে আছে নাকি? কোথায় বদলি নিয়ে চলে গেছে। তার কথা আর মনে করিস না ইরা। ও বেশ ভালো আছে। বড়লোকের ঘরে মানুষ হচ্ছে--
ইরা একটু চুপ করে থাকে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিস্ ফিস্ করে বলে ওঠে--
--আর কেউ বাচ্চা চায় না তোমার কাছে?
অন্ধকারেই চোখদুটো জ্বল জ্বল করে ওঠে শশধরের। ইরার ঘাড়ের কাছে মুখটা গুঁজে দিয়ে বলে--
--চায় বইকি! অনেকেই বলে। কিন্তু--
--এবারে চল্লিশ হাজার টাকা চাইবে। আগে বিশ, পরে বিশ--
বলতে বলতে ইরা শশধরকে নিজের বুকের ওপর উঠে আসতে সাহায্য করে বেশ আগ্রহের সঙ্গেই!

(এই গল্পের পুরোটাই অলীক এবং অবাস্তব নয়)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৪৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×