০০০১ [কিছু সাম্প্রতিক প্রশ্ন]
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বুয়েট দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের তীর্থস্থান - এ কথা সর্বজনবিদিত। বুয়েটের ছাত্রছাত্রীদের প্রশংসনীয় ফলাফলের কারণে দেশের বাইরে বুয়েটের সুনাম একেবারে কম নয় - এটা আমাদের দেশের জন্য একটা গর্ব। বুয়েটের ৯৯% ছেলেমেয়েই নিজেদেরকে নিজের জগতে সীমাবদ্ধ রাখতেই পছন্দ করে। পড়াশুনা-আড্ডা-গান-টিউশনি-ক্লাস-মুভি দেখা - এগুলোই তাদের দিনলিপি। বুয়েটের ছেলেপেলে যে রাজনীতি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না - এটা দেশের সবাই জানে।
কিন্তু তাহলে বুয়েট ছাত্রলীগ, বুয়েট সমাজতান্ত্রিক ছাত্র-ফ্রন্ট - এরা কারা ???
পত্রিকায় চাঁদাবাজি-মারামারি শিরোনামে যে বুয়েট ছাত্রদের কথা শোনা যাচ্ছে - তারা কারা ???
যারা বুয়েটে ক্যাম্পাসের নিয়মিত বাসিন্দা - এদের যে কাউকে একটু আড়ালে (!!!) জিজ্ঞেস করলেই বেরিয়ে আসবে সব কটা নাম। খুব বেশি না সব মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জনের নাম বলবে, যার মধ্যে ১০/১৫ জন আসলে বুয়েটে প্রাক্তন ছাত্র (!!!)। পাস করার পরেও হলে রুম দখলে রেখে রাজনীতির কলকাঠি নাড়বে - এমন রীতি বুয়েটে কোনদিনই ছিল না। কিন্তু খুব সম্ভবত এটা চালু হওয়ার পথে। বুয়েটের সবাই জানে, ছাত্রলীগ বলতে বুয়েটে যা আছে তার মধ্যে:
*রওনক (রনক) - ২০০৪ ব্যাচের যার সহপাঠীরা ২০০৯ সালেই বুয়েট ছেড়ে বেড়িয়ে গেছে, তিতুমীর হলের ডন - এই রওনক হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র-ফ্রন্ট পিটানোর মূল সেনাপতি।
*ফাইরুজ - ২০০৬ ব্যাচের বেয়াদব এই কালপ্রিটটা হচ্ছে ফুটবল ওয়ার্ল্ডকাপ চলাকালীন বুয়েটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মূল হোতা। বর্তমান সময়ে বুয়েটে ছাত্রলীগের অত্যন্ত (!!!) ক্ষমতাধর এই কুকুরটার সাথে কথা বললে আপনার এক মূহুর্তের জন্যও মনে হবে না যে এটা বুয়েটের ছাত্র। এবার ফুটবল ওয়ার্ল্ডকাপের সময় বুয়েট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনার সাথে সাধারণ ছাত্রদের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না।
*সুমন - বুয়েট ছাত্রলীগের নতুন আহ্বায়ক; কিন্তু তার বুয়েট-জীবন আরও কত বছর দীর্ঘায়িত হবে - কে জানে । তার সহপাঠীরা বুয়েট ছেড়েছে প্রায় ৩ বছর হয়ে গেছে। অথচ তিনি এখনো বুয়েটের মায়া ছাড়তে পারছেন না (!!!) ।
* এদের সাথে আর ০৬ ও ০৭ ব্যাচের যেগুলো আছে, সেগুলো নিতান্তই বোকা। কারণ তারা ০৪ /০৫ ব্যাচের এই সব আদু ভাইদের তেল দিয়ে লীগ করে। সারা দিন পা-চাটা কুকুরের মতই এই সব নেতা-নামক মেয়াদউত্তীর্ন ছাত্রদের তোষামোদগিরি করে। এই দলে আছে বিতু(০৫), রানা(০৬), মোকাম্মেল(০৬), পলাশ(০৬), মম(০৭), সামি(০৭), তন্ময়(০৭), মাসুম(০৭), সোয়েব(০৬), ওয়ালিদ(০৭), জিয়া(০৭), লিমন (০৭) সহ আর কয়েকজন ।
এবার গুণে দেখুনতো বুয়েট ছাত্রলীগ বলতে মোট কয়জন হয়েছে ???
এবার আসি বুয়েটের অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর বিষয়ে । বুয়েটে বর্তমানে ছাত্রদলের একগুচ্ছ চুলও নেই। আর শিবির ? বুয়েটে "শিবিরকে সমর্থন করে" - এমন অনেক ছেলে আছে, কিন্তু বুয়েট ক্যাম্পাসে শিবিরের নিজস্ব বলতে একটা পোস্টারও নেই। অর্থাৎ "বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির-বুয়েট শাখা" - এই ধরণের কোন সংগঠনের বর্তমানে কোন অস্তিত্ব নেই। অথচ কিছুদিন আগে ছাত্রলীগ "শিবির করার অপরাধে" বেশ কয়েকজন বুয়েট ছাত্রের রুম ভাংচুর, বই-খাতা পুরিয়ে দেয়া, দামী কম্পিউটার-ল্যাপটপ ভেঙে ফেলল, রুমের দামী মালামালসহ নগদ টাকা ছিনতাই করল !!! বাকি থাকল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র-ফ্রন্ট। বুয়েটে সকল যুগে এবং কালে এরা ছিল। যখন বুয়েটে ছাত্রদল কুকুরের ন্যায় কামড়াকামড়ি শুরু করেছিল, তখনো এরা ছিল; আজ যখন ছাত্রলীগ কামড়াকামড়ি করছে, তখনও এরা আছে । তবে মজার বিষয় হচ্ছে, কোন কালেই এদের দলে ১২/১৫ জনের বেশি ছিল না। অনেকেই হয়ত মনে মনে এদের সমর্থন করে, কিন্তু "সমাজতান্ত্রিক ছাত্র-ফ্রন্ট, বুয়েট" - এই সংগঠনের active কর্মী এবং নেতা সব মিলিয়ে ১৫ জনের বেশি কখনোই ছিল না। এবং এটাও ঠিক বুয়েটের একজন সাধারণ ছাত্র হিসেবে আমি কোনদিন এই অভিযোগ করতে পারব না যে, ফ্রন্ট ওমুক জায়গায় চাঁদাবাজি করেছে, বা ওমুক ছাত্রকে পিটিয়েছে। তাছাড়া এদের অনেক দাবি-দাওয়ার সাথেই সাধারণ ছাত্রদের অনেক স্বার্থ জড়িত থাকে। একজন সাধারণ বুয়েটিয়ান হিসেবে এদেরকে আমার কাছে "ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো" কর্মীই মনে হয়েছে। তাদের নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শ যাই হোক না কেন, বুয়েটে পড়াশুনার পরিবেশ নষ্ঠ করার মত কোন কাজ এরা আগ বাড়িয়ে করে না। কিংবা কোন ছাত্রকে threat বা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে দলে ভেড়ানোর মত কাজও আমার বুয়েট-জীবনে করতে শুনিনি।
আশা করি, এতক্ষণে বুয়েটে মোট ছাত্র-রাজনীতিবিদ (!!!) এর সংখ্যাটা আপনারা অনুমান করতে পেরেছেন। আঙুল গুণে গুণে আগালেও এই সংখ্যা ৫০/৬০ এ পৌছবে না।
আচ্ছা, এসব কথা এতক্ষণ কেন বললাম ! এগুলোতো বুয়েট সংশ্লিষ্ট সবাই জানেই ! বুয়েটে ভিসি থেকে শুরু করে হলের দারওয়ান, শিক্ষক থেকে শুরু করে অ্যালামনাই - সবাই জানে যে বুয়েটে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ছাত্রের সংখ্যা একেবারে হাতেহাতে গোনা যায়।
কিছু প্রশ্ন :
১.ভিসি থেকে শুরু করে প্রশাসনের সবাই জানেন যে বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ , তাহলে বুয়েটের মেইন গেট, হল-ক্যান্টিন সহ বিভিন্ন জায়গায় ছাত্র-রাজনৈতিক পোস্টার-ব্যানারগুলো বুয়েট-অথরিটি সরিয়ে ফেলে না কেন ???
২.সবাই জানে কতগুলো আদুভাই-ছাত্র এই নষ্টামির গোরা, তাহলে অথরিটি এদের হল থেকে বের করে দেয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন ???
৩."শিবির করার অপরাধ চাপিয়ে" কিছু সাধারণ ছাত্রের রুম-ভাংচুরের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ দোষীদের কাউকে কোন শাস্তি দেয় নি কেন ??? কিংবা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে নি কেন ??? অথচ দেশের সব শীর্ষ পত্রিকায় সেই খবর এসেছিল ।
৪. বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালীন বুয়েটে অস্থিরতা সৃষ্টির ঘটনায় কাউকে শাস্তি দেয়া হয় নি কেন ??? অথচ ঐ ঘটনায় ঠিকই বুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল !!!
৫. সাম্প্রতিক ফ্রন্ট-পেটানোর ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে কোন শাস্তি দেয়া হচ্ছে না কেন ??? বুয়েটের সবাই জানে ঐ সন্ত্রাসী কয়টার নাম, অথচ তাদেরকে বুয়েট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কিছুই বলা হচ্ছে না কেন ??? তারা দিব্বি এখনো বুয়েটের হলে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে বেড়াচ্ছে !!!
৬. বুয়েটের হলে, ক্যান্টিনে, গেটে সব জায়গায় এখন পুলিশ মোতায়েন করা আছে । আরে পুলিশ কি সারাজীবন রাখবে নাকি ? পুলিশ যখন থাকবে না তখন কি আবার মার খাবে সাধারণ কোন ছাত্র; অপরাধ হিসেবে বলা হবে: শিবির করে, কিংবা ফ্রন্ট করে।
অনুরোধ:
প্রশাসন যদি ছাত্রলীগের ভয়ে ভীত হয়, কিংবা তাদের যদি যথাযথ ব্যস্থা নেয়ার মত সাহস বা ক্ষমতা না থাকে, তাহলে তারা তা স্বীকার করুক। সাধারণ ছাত্রদের তথা বুয়েটের ভবিষ্যত নিয়ে নোংরা রাজনীতির খেলায় মেতে উঠার কোন অধিকার তাদের নেই। বুয়েটে কোন মাস্তানের স্থান নেই। মনে মনে কে শিবির করে, আর কে বিএনপি করে - এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়; বুয়েট ক্যাম্পাসে কে কী করল - এটাই আমাদের মাথা ব্যাথা। ক্যাম্পাসে আমরা সবাই "বুয়েটিয়ান"। তাই অবিলম্বে এই সব সন্ত্রাসী ও মেয়াদউত্তীর্ন ছাত্রদের ক্যাম্পাস তথা হল থেকে বের করে দিয়ে বুয়েটকে একটি "শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান"এ পরিনত করুন। দয়া করে, বুয়েট-কে অস্ত্রাগার কিংবা সন্ত্রাসীদের আড্ডাখানা বানবেন না।
হতাশা:
যাদের ঘাড়ে দায়িত্ব ছিল বুয়েটে পড়াশুনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা, তারাই আজ নোংরা রাজনীতিতে নেমেছে। নিজেদের স্বার্থে দেশের নামকরা একটি প্রতিষ্ঠানকে চিরতরে ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে বর্তমান প্রশাসন। আমরা কি নিরূপায় ??? বুয়েটের সব শিক্ষকই কি নোংরা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে ? না, সবাই না । এমনকি ছাত্রদের মত স্যারদের ক্ষেত্রেও রাজনীতিবিদের সংখ্যা ১% এর বেশি না। অথচ দিনে দিনে চোখের সামনে নষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে আমাদের বুয়েট ... আমরা জিম্মি কতিপয় মাস্তানের হাতে ... "বুয়েটের বঙ্গবন্ধু পরিষদ" আর "বুয়েট ছাত্রলীগ" আজ মাসতুতো ভাই ... আর আমরা সাধারণ ছাত্ররা সবাই "*ুদির ভাই" ... ...
০০০২: পরের পর্বে সাম্প্রতিক চাদাবাজি ও হলে ছাত্রদের বর্তমান জিম্মি দশা আলোচনা করব।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ১২:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





