অনলাইন ফ্রিলেন্সিং আগের মতো খুব সহজ নয়। মার্কেট প্লেস প্রতিযোগীতা বেড়েছে। বায়ার নতুন ওয়ার্কারের পরিবর্তে যার প্রফাইল বেশী সমৃদ্ধ তাকেই কাজ বেশী দিচ্ছে। নতুনদের জন্য ঠিকে থাকা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে।
দুই দিন আগে বন্ধুর এক পরিচিত আত্নীয় আমাকে ফোন দিয়ে অনেক অনুরোধ করে যেন তাকে ফ্রিলেন্সিং বিষয়ে একটু গাইড লাইন দেই। তার সাথে দীর্ঘ এক ঘন্টা আলোচনা করি। তাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে গিয়ে উপলব্ধী করি, নতুন ফ্রিলেন্সাররা একটু কৌশলী হলে তারাও মাসে লাখ টাকা আয় করতে পারেন
কিভাবে কৌশলী হতে হবে?
প্রফেশনাল ফ্রিলেন্সিং করতে হলে আপনাকে কিছু বিষয়ে অবশ্যই জানা থাকতে হবে। তবে অনেকেই তেমন কিছু না জেনেও অনলাইন থেকে আয় করছেন একটু কৌশলী হয়ে। বিষয়টি একটু সহজ করে না বললে বুঝতে কষ্ট হবে। দুই বছর আগে ইন্ডিয়ার এক ক্লায়েন্ট আমাকে একটি নিউজ সাইট ডেভলাপ এবং একইসাথে সেই ওয়েবসাইটের এসইও এর কাজ থেকে। সব কিছু করতে তার মুটোমুটি ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা (বাংলাদেশী টাকায়) লেগেছিল। তার ওয়েবসাইটটি এখন ইন্ডিয়ার টপ ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে একটি। নিয়মিত এখনো সে এসইও করায়। এখন সে নিউজ ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন থেকে মাসে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় করছে। সাইটে অনেক ভিজিটর থাকায় সে সহজে বিজ্ঞাপন কালেক্ট করতে পারছে। লোকাল মার্কেটে তার সম্ভবত বিজ্ঞাপন সংগ্রাহক আছে। বড় বড় কোম্পানী গুলোর এক একটি বিজ্ঞাপন থেকে সে মাসে ২ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা আয় করছে।
তো প্রথমেই যেটা বলেছিলাম। একটু কৌশলী হতে হবে। আমাদের দেশে বিক্রয় ডট কমের কথাই একটু চিন্তা করুন। তার আগেও কিন্তু কেনাবেচা করার ওয়েবসাইট আমাদের দেশে ছিল। বিক্রয় ডট কম ইউজার ফ্রেন্ডলী একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে এবং প্রচুর মার্কেটিং করে। কথায় আছে প্রচারেই প্রসার। বিক্রয় ডট কম এখন দিনে সম্ভবত ৬০-৮০ হাজার টাকা আয় করছে।
এখনো অনেক কিছু করার আছে। অনলাইনে বাংলাদেশে যদিও প্রায় সব বিষয়েই ওয়েবসাইট আছে তবুও আমি বলব এখনো অনেক কিছু করার আছে। অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করতে হবে। মার্কেটপ্লেসগুলো কাজের প্রতিযোগীতা অনেক বেশী। সেখানে কোন কাজ পাওয়া আর সোনার হরিণ পাওয়া নতুনদের জন্য একই অবস্থা। একটু চিন্তা করুন তো... মার্কেটপ্লেসগুলোতে এতো কাজ কেন আসছে। যারা কাজ করাচ্ছে তাদের লাভ কোথায়। সেই কাজ থেকে তারা যদি লাভ বের করতে না পারে তবে আপনাকে টাকা দিয়ে কাজ তারা কেন করাবে? অন্যের হয়ে কাজ না করে নিজেই উঠে দাড়াতে শিখুন।
যদি নিজেই কোন একটি বিষয়ে ব্লগিং করতে পারেন আর তাতে এসইও করে দিনে লাখ খানেক ভিজিটর নিয়ে আসতে পারেন তবে আপনি সফল হতে কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমাদের নতুনদের সমস্যা আর হবে কি হবে না এই দ্বন্ধে আটকা পড়ে হতাশ হয়ে যাই।
যা শিখতে হবে
আপনি যে সেক্টরেই যেতে চান না কেন এসইও আপনাকে জানতেই হবে। আর ওয়েবসাইট ডিজাইন ও ডেভরাপিং , এপস ডেভলাপিং , ভিডিও এডিটিং, এ্যানিমেশন ইত্যাদি কাজে যদি প্রফেশনাল হতে পারেন তবে এখনো মার্কেটে নিজের একটি অবস্থান গড়ে তুলা খুব কঠিন নয়।
নিজের সম্পর্কে দুটি কথা
আমি ২০১২ থেকে ওয়েব ডেভলাপিং করছি। তার আগে এসইও ও ইমেল মার্কেটিং কাজ করতাম। গত মাসে একজন লন্ডন থেকে আমাকে ফোন করে এবং প্রথমে একটি কাজ করায় যা আমি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। কারণ এসইও কাজ এখন আমি আর সময়ের অভাবে করি না। তাছাড়া সে কাজে আমার বেশ প্রফিটও ছিল না। বেশ জুড়াজুড়িতে কাজটি আমার অফিসের এক ওয়ার্কারকে দিয়ে করাই। সে কাজের ১৫-২০ দিনের মাথায় তার কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকার একটি কাজ পাই। সে এক এখন করছি। আশা করছি আরো ২ সাপ্তাহের মধ্যে কাজটি শেষ হয়ে যাবে। তাই ক্লায়েন্টকে নিজের সেরাটা দিতে পারলে কাজের অভাব হয় না। যে আমাকে পারসনালী দেখেও নি সে লন্ডনে বসে আমার সাথে ১ লক্ষ টাকার একটি প্রজেক্ট ফাইনাল করল। বিষয়টি একেবারেই ছোট নয় কিন্তু। কাজের মাধ্যমেই বায়ারের সাথে সুসম্পর্ক গড়তে হবে। কাজ কিভাবে কোথায় থেকে আসবে তা ভাবতেও পারবেন না।
শেষ কথা
আমি প্রথমেই বলছিলাম যে, কৌশলী হতে হবে। নতুন একটি আইডিয়া নিয়ে আসতে হবে। লেগে থাকতে হবে। যে কাজটি হাতে নিয়েছেন সে কাজে নিজের মেধার সর্বচ্ছ দিতে হবে। কোন পরামর্শের জন্য আমার প্রফাইল থেকে আমার নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন। ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৩৩