ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষার ফলে গুরুতর ভুল ধরা পড়েছে। শিক্ষার্থীদের আবেদনের সূত্রে ফল পুনঃনিরীক্ষা করতে গিয়ে এ ভুল ধরা পড়ে। গত মাসে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়।
ফল প্রকাশের দিনই বলা হয়, কেউ প্রকাশিত ফল চ্যালেঞ্জ করতে চাইলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে প্রকাশিত ফল চ্যালেঞ্জ করে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থী ১৫ হাজার ৬০টি আবেদন করে। তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে উত্তরপত্র আবার মূল্যায়ন করা হয়। শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ ভুলের সঙ্গে প্রধান পরীক্ষক, পরীক্ষক ও নিরীক্ষকরা জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে শিক্ষাবোর্ড। এসব পরীক্ষক ও নিরীক্ষকদের আজীবন পরীক্ষা সংক্রান্ত্র কাজ থেকে নিষিদ্ধসহ কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল করেছে কিনা তা-ও যাচাই করা হচ্ছে। এসব পরীক্ষক ও নিরীক্ষকদের এ মাসের মধ্যেই বোর্ডে তলব করা হবে। ওদিকে রাজধানীর নটরডেম কলেজসহ নামীদামি কলেজগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় অনেক শিক্ষার্থী ভাল ফল করলেও প্রত্যাশিত কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফলাফলে গুরুতর ভুল ধরা পড়েছে। অনেক পরীক্ষক প্রধান পরীক্ষক, নিরীক্ষকের স্বাক্ষর না নিয়েই উত্তরপত্র জমা দিয়েছেন। আর অনেকে ৬০ নম্বরের জায়গায় ৮০ আবার ৮০ নম্বরের জায়গায় ৬০ দিয়ে বৃত্ত ভরাট করেছেন। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করে। বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারের ফলে যেসব ভুলত্রুটি পাওয়া গেছে, অন্য বছরগুলোতে তা ছিল না। বোর্ডের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঢাকার নামী একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রধান পরীক্ষক ও নিরীক্ষকের স্বাক্ষর না নিয়েই উত্তরপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া তিনি একজন শিক্ষার্থীর উত্তরপত্রে ৮০ নম্বরের জায়গায় ৬০ দিয়েছেন। তাকে চাকরিচ্যুত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশিতে অনুরোধ পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বিষয়টি আমি এখনও জানি না। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেন, এটা অনেক বড় ধরনের ভুল। প্রধান পরীক্ষক, পরীক্ষক নিরীক্ষা করার পরও কিভাবে ভুল হলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ দায়িত্বে অবহেলা বা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ মাসের মধ্যেই এসব পরীক্ষক ও নিরীক্ষকদের বোর্ডে ডেকে কারণ জানা হবে। উপযুক্ত জবাব দিতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাদের ভুল মারাত্মক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হবে।
ফেল করা ছাত্রও জিপিএ পেলো: ৪০৬৩৮৮ রোলধারী শিক্ষার্থী কম্পিউটার স্টাডিজ বিভাগে ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে মোট ৪.৮৮ পেয়েছে। ৪৫৬৭৬৩ রোলধারী শিক্ষার্থী ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ১১৪১৪৬ রোলধারী শিক্ষার্থী সামাজিক বিজ্ঞানে ফেল করে। নিরীক্ষার ফলে ওই শিক্ষার্থী বি গ্রেড পেয়ে জিপিএ-৪.১৩ পেয়েছে। এছাড়া ১১৯৯১১ রোলধারী শিক্ষার্থী পদার্থ বিজ্ঞানে প্রথমবার ফেল করে। নিরীক্ষায় পদার্থে এ গ্রেড পেয়ে জিপিএ-৪-৮১ পায়। ১২২৭৩৫ রোলধারী শিক্ষার্থীও পদার্থে ফেল নম্বর থেকে এ গ্রেড পেয়ে জিপিএ-৪.১৯ পায়। ১২৬৯৮১ নম্বর রোলধারী শিক্ষার্থীকে ইসলাম শিক্ষায় ফেল করানো হয়। ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে সে পায় এ মাইনাস। তার ফল দাঁড়ায় জিপিএ-৪.৬৩। ১৩২৩৯৩ রোলধারী শিক্ষার্থী উচ্চতর গণিতে ফেল থেকে বি গ্রেড পায় ও তার মোট ফল দাঁড়ায় জিপিএ-৪.০০। ১৩৪৯৮৯ নম্বর রোলধারী শিক্ষার্থী পদার্থে ফেল করে প্রথমবারের ফলে। নিরীক্ষায় সে এ মাইনাস পেয়ে জিপিএ-৪.১৯ পায়। ১৩৬৯৩৬ রোলধারী শিক্ষার্থী সামাজিক বিজ্ঞানে ফেল নম্বর থেকে সি গ্রেড পেয়ে মোট জিপিএ পায় ৩.৫০। ১৩৮৫১৬ রোলধারী শিক্ষার্থী উচ্চতর গণিতে ফেল নম্বর থেকে বি গ্রেড পেয়ে জিপিএ-৪.০০ পায়। ১৪১৭৭৮ রোলধারী রসায়নে ফেল নম্বর থেকে এ গ্রেড পেলে তার মোট জিপিএ দাঁড়ায় ৪.৭৫। ১৪২৭৬৬ রোলধারী শিক্ষার্থী উচ্চতর গণিতে ফেল নম্বর থেকে বি গ্রেড পেয়ে জিপিএ-৪.৫৬ পায়। ১৪৯০৭০ রোলধারী শিক্ষার্থী সামাজিক বিজ্ঞানে ফেল নম্বর থেকে ডি গ্রেড পেয়ে মোট জিপিএ ২.৮১ পায়। ১৫২৭৪৬ রোলধারী শিক্ষার্থী পদার্থ বিজ্ঞানে ফেল নম্বর থেকে জিপিএ-৫ পায়। তার মোট জিপিএ হয় ৪.৪৪। ২০২৩৭২ রোলধারী শিক্ষার্থী গণিতে ফেল থেকে সি গ্রেড পেয়ে জিপিএ-২.৫০ পায়। ২০৩১৫৯ রোলধারী শিক্ষার্থ ইসলামী শিক্ষায় ফেল থেকে বি গ্রেড পেয়ে জিপিএ ৪.০৬ পায়। ২০৩২০৭ রোলধারী শিক্ষার্থী ইতিহাসে ফেল নম্বর থেকে ডি গ্রেড পায়। ২১৪০০৭ রোলধারী শিক্ষার্থী সাধারণ বিজ্ঞানে ফেল নম্বর থেকে এ গ্রেড পেয়ে জিপিএ-৪.৩৮ পায়। ২২৮১৪৭ রোলধারী একই বিভাগে ফেল নম্বর থেকে এ মাইনাস পেয়ে জিপিএ ৩.৯৪ পায়। ২৩০৮৯৮ রোলধারী শিক্ষার্থী ইতিহাসে ফেল থেকে বি গ্রেড পেয়ে জিপিএ-৩.১৯ পায়। ২৩২১২১ রোলধারী শিক্ষার্থী সাধারণ বিজ্ঞানে ফেল থেকে বি গ্রেড পেয়ে জিপিএ-৩.৮১ পায়। ২৩৫৯৮৯ রোলধারী শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ফেল থেকে ডি গ্রেড পেয়ে জিপিএ-২.৭৫ পায়। ২৩৬৪৯৮ রোলধারী শিক্ষার্থী গণিতে ফেল থেকে এ গ্রেড পেয়ে জিপিএ-৪.১৯ পায়। ২৪৬৫৮০ রোলধারী শিক্ষার্থী বাংলায় ফেল নম্বর থেকে ডি গ্রেড পায়। ২৫১৩১৫ রোলধারী শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ফেল থেকে ডি গ্রেড পেয়ে জিপিএ-৩.৩৮ পায়। ২৬৩০৪৯ রোলধারী শিক্ষার্থী ইতিহাসে ফেল থেকে এ গ্রেড পেয়ে জিপিএ-৩.৫০ পায়। ২৬৯০৮৮ রোলধারী শিক্ষার্থী সাধারণ বিজ্ঞানে ফেল থেকে বি গ্রেড পেয়ে জিপিএ-৪.৬৯ পায়। ২৮৩৮৩৮ রোলধারী শিক্ষার্থী ভূগোলে ফেল থেকে বিগ্রেড পেয়ে জিপিএ-৩.৩১ পায়। এছাড়া আরও ৩২ জন শিক্ষার্থী ফেল নম্বর থেকে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ সহ অন্যান্য গ্রেড পেয়েছে। ১৭৪ জনের মধ্যে বাকি ১১৫ জনের সবারই জিপিএ উন্নতি হয়েছে।
এক প্রধান শিক্ষকের চাকরিচ্যুতির সুপারিশ: রাজধানী ঢাকার নামী একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির সুপারিশ করতে যাচ্ছে শিক্ষাবোর্ড। ইতিমধ্যে বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। ওই প্রধান শিক্ষক প্রধান পরীক্ষক ও নিরীক্ষকের স্বাক্ষর না নিয়েই উত্তরপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া তিনি মনগড়াভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ণ করেছেন।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: যেসব প্রধান পরীক্ষক, পরীক্ষক ও নিরীক্ষক ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তরপত্র ভুলভাবে মূল্যায়ন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষাবোর্ড। এছাড়া তাদের বেতন-ভাতা, চাকরির মানোন্নয়নের বিষয়েও বিধিনিষেধ জারি করা হবে।
তথ্য সূত্র : মানব জমিন
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১০ সকাল ১০:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




