somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিরিজ রিভিউঃ চেরনোবিল - ইতিহাস থেকে উঠে আসা পারমাণবিক বিপর্যয়ের কাহিনী

১৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



Chernobyl(2019) রাশিয়ার ইউক্রেনের চেরনোবিল শহরে ঘটে যাওয়া পৃথিবীর ভয়ংকরতম নিউক্লিয়ার দূর্ঘটনা নিয়ে তৈরি একটি মিনিসিরিজ।
HBO and SKY UK এর প্রযোজনায় তৈরি এই সিরিজটিতে পর্ব আছে মোট পাঁচটি। পর্বগুলো সময় দৈর্ঘ্য প্রায় এক ঘন্টা।
Craig Mazin এবং Johan Renck পরিচালিত সিরিজটির নির্মাণ থেকে শুরু করে অভিনয় সবকিছুই অসাধারন।যারা ঐতিহাসিক সিনেমা বা ধারাবাহিক পছন্দ করেন তাদের কাছে এটি চমৎকার লাগবে।যারা পছন্দ করেন না তারাও বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করবেন। বিষয়টি যেহেতু নিউক্লিয়ার দূর্ঘটনা তাই নিউক্লিয়ার বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনাই বেশি ফলে জানা অজানা অনেক তথ্য জেনে যাবেন সকলেই।


1986 সালের এপ্রিল মাসের 26 তারিখে ইউক্রেনে ঘটে যায় পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ নিউক্লিয়ার দূর্ঘটনা। চেরনোবিল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের চতুর্থ রিএক্টরটি বিস্ফোরিত হয় যার ফলে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এবং তেজস্ক্রিয়তা।সমসাময়িক সময়ে অল্প কিছু মানুষ মারা গেলেও দিনে দিনে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে আরো অনেক মানুষ মৃত্যু বরন করে।তবে বিজ্ঞানী ও টেকনিশিয়ানদের মেধা,পরিশ্রম আর আত্মত্যাগের কারনেই বিপদের পরিমান তুলনামূলকভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল।এই সব কিছুই চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই মিনিসিরিজটিতে।এখানে দেখতে পাবেন দূর্ঘটনা কবলিত মানুষের কষ্ট, মানবকল্যানের জন্য আত্মত্যাগের চিত্র,দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া ও সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা।সবকিছুই কিন্ত সত্য ঘটনা কে অবলম্বন করে বানানো হয়েছে।








এবারে কিছু সায়েন্স।
ইউরেনিয়াম, প্লুটোনিয়াম এইসকল তেজস্ক্রিয় পদার্থকে একটি মৌলিক কনা নিউট্রন দিয়ে আঘাত করলে পদার্থগুলো ভেঙে তুলনামূলক কম ভরের দুটি পদার্থ তৈরি হয়।সেই সাথে আরো কিছু নিউট্রন তৈরি হয়।সেই নিউট্রনগুলো আরো কিছু ইউরেনিয়াম কে ভেঙে দেয়।ফলে আরো কিছু নিউট্রন তৈরি হয়।এভাবেই চলতে থাকে তাই একে বলে চেইন রিয়াকশন।বড় পরমাণুকে উচ্চগতি সম্পন্ন নিউট্রন দিয়ে আঘাত করে ভেঙে ফেলার এই প্রক্রিয়াকে বলে নিউক্লিয়ার ফিশান বিক্রিয়া।এই বিক্রিয়ার ফলে অনেক অনেক শক্তি উন্মুক্ত হয়।পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সেই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।(বিক্রিয়াতে তাপ উৎপন্ন হয়-সেই তাপে পানি বাষ্পীভূত করা হয়- সেই পানিএকটা টারবাইন ঘুরায়- সেখান থেকে বিদ্যুৎ তৈরি হয়)

পারমানবিক বোমাও কিন্ত এই একই বিক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে বানানো হয়।বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিক্রিয়া থাকে নিয়ন্ত্রিত, তেজক্রিয়তাও একটা নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে থাকে।পারমাণবিক বোমাতে অচিন্তনীয় অনিয়ন্ত্রিত শক্তি আচমকা উন্মুক্ত হয় বলে তার ফল হয় ভয়ানক।আমরা সবাই হিরোশিমা - নাগাসাকির কথা জানি।চেরনোবিলের দূর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রভাবও কিন্ত কম ছিলনা।তেজস্ক্রিয়তা কিন্ত ভাল কোনো জিনিস নয়।জীবদেহে তাৎক্ষণিক নানা সমস্যা সৃষ্টি ছাড়াও পরবর্তীতে ক্যান্সার এর কারন এই তেজষ্ক্রিয়তা।চেরনোবিলের দূর্ঘটনার ফলে শুধু ইউক্রেন না,ইউরোপের অনেক দেশ পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল।গাছপালা মাটি অন্যান্য জিনিসও তেজস্ক্রিয় পরমানু শোষন করে তেজস্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল।সরকার তাই আসেপাশের 30 কিলোমিটার পর্যন্ত জায়গা ইভ্যাকুয়েশন করতে বাধ্য হয়েছিল।যাদের বাসা খালি করতে বলা হয়েছিল তারা কিন্ত আজও বসত ভিটায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি পায়নি।ভাবুন একবার তেজস্ক্রিয়তা শোষন করা পানি,ফল,মাছ-মাংস খেলে আপনার শরীরেও তা প্রবেশ করবে!!

চেরনোবিলের দূর্ঘটনা ইচ্ছাকৃত ছিলনা।একটা টেস্ট করতে গিয়ে অজ্ঞতাবশত এই দূঘটনাটি ঘটে।এর ফলে শুধু মৃত্যুই না, মৃত ও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম আর ক্যান্সার হয়েছে আসেপাশে উপস্থিত থাকা অনেকের।যে লোকগুলো সেদিন অগ্নিনির্বাপণ এর কাজ করেছিল তারা কিছুদিনের মধ্যে মারা গিয়েছিল।তাদের পরিত্যক্ত পোষাকগুলো আজও অনেক বেশি তেজস্ক্রিয়। ধ্বংস প্রাপ্ত রিয়াক্টরের ছাদে এতবেশি তেজস্ক্রিয়তা ছিল যে চন্দ্র অভিযানে ব্যবহার করা 'মুন রোভার' দিয়ে ছড়িয়ে থাকা জিনিস গুলোকে সরানো হয়েছিল।এতবছর ধরে এত ক্ষয়ক্ষতির পর 2065 সালে এই দূর্ঘটনার তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব পুরোপুরি কেটে যাবে বলে ধারণা করা হয়।



এই সিরিজ দেখার সময় মনে হয়েছিল চোখের সামনে ইতিহাস দেখছি।ভাবছিলাম আমাদের রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা।আমরা যতটা অসচেতন,দায়িত্বে অবহেলা এখানে নিত্যকার ঘটনা। যদি এমন কিছু এখানেও ঘটে তাহলে কি হবে!!!তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব এমন সুদূরপ্রসারি যে ভাবলেই আমার শুধু ভয় লাগে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৫০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×