আজকাল ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধ লোকের গাছ থেকে চুরি করে ফল পেড়ে খাওয়ার মত সহজ হয়ে গেছে।একটা অপরাধ যখন খুব বেশি বেড়ে যায় তখন বুঝে নিতে হয় যে সেই অপরাধের একটা সহজ ক্ষেত্র বা পরিবেশ তৈরি হয়েছে।শতভাগ আদর্শ সমাজ পাওয়াটা বাস্তব অর্থে সম্ভব নয়।কারন মানুষ শেষকালে গিয়ে কিন্ত এক ধরনের উন্নত জাতের প্রানী।যে প্রানীর একটা উন্নত মস্তিষ্ক রয়েছে সেই প্রানী কখন কি করবে তা আগে থেকে বলাটা খুব কঠিন। তাই খুব উন্নত সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেও বড় বড় অপরাধ ঘটতে দেখা যায়।তবে বড় অপরাধগুলো যখন খুব ঘন ঘন ঘটতে থাকে বা সমাজের সব স্তরে ছড়িয়ে যায় তখন সেটাকে সামাজিক ব্যাধি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।যেমন এই সনয়ে ধর্ষণ আমাদের দেশে একটা ভয়ানক সামাজিক ব্যাধি।
কেন ধর্ষণ এত বেশি হচ্ছে তা নিয়ে অনেক থিওরি দিচ্ছেন অনেকে।আলোচনা সমালোচনা যাই হোক সমাধানের পথে হাঁটা এখন সময়ের দাবী।গা শিউরে উঠবে এমন কঠোর আইন এবং তার প্রয়োগ অপরাধীর মনে ভয় ধরিয়ে দিতে সক্ষম হলে অপরাধ অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসবে।আর এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনি এই মুহুর্তে! খুনের আসামি কে তো আমরা কখনো দয়া দেখাতে যাই না তাহলে ধর্ষণের সাজা নিয়ে সমাজ এত দ্বিধা বিভক্ত কেন?একটি মেয়েকে জীবিত অবস্থায় মৃততে পরিনত করার একটা প্রক্রিয়া হচ্ছে ধর্ষণ তাহলে এর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড কেন হবে না?
আমার কাছে মনে হয় মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি ধর্ষককে পুরুষত্বহীন করে দেয়া একটি কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে।যে অন্য একটি মানুষের স্বাভাবিক জীবনের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে তার জন্য স্বাভাবিক জীবন কেন থাকবে?কি দরকার তার বংশবৃদ্ধি করার?একজন ধর্ষকের জীন থেকে আসা প্রজন্ম দিয়ে আমরা কি করব?ধর্ষক বাবার সন্তান কিভাবে সাধু হবে?তারা যে নর্দমার কীট হবে না তার গ্যারান্টি কে দেবে?
একটা ধর্ষিতা নারী মানসিকভাবে চিরদিনের মত পঙ্গু হয়ে যায়।সমাজে সে বা তার পরিবার আগের মত মাথা উঁচু করে চলতে পারেনা।সম্মান সম্মান করে চারিদিকের মানুষ অস্থির হয়ে ওঠে।কিন্ত ভালো করে ভেবে দেখুনতো কি জিনিস এই সম্মান।ধরা ছোঁয়া যায় না এমন একটা ধারনা।অথচ মাথা নিচু করে চলার কথা অপরাধীর।পুরুষের উচ্চতর সামাজিক অবস্থানের জন্য ধর্ষক পুরুষটি জানে তার উপরে সেই চাপটি আসবে না যেটি মেয়েটির উপরে আসবে।তাই আইনের হাতে না পড়লে সব দিকেই সে জয়ী হয়।
যারা ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাককে দায়ী করেন তারা বুঝতে চান না অপরাধমূলক বিকৃত মানসিকতা ধর্ষণের প্রধান নিয়ামক।পর্ণগ্রাফিক কনটেন্টের ছড়াছড়ি,নেশা দ্রব্য ও স্নায়ুউত্তেজক ঔষধের অবাধ ব্যবহার তরুন প্রজন্মটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।নারীকে তুচ্ছ ভোগ্যপণ্য মনে করার মানসিকতা লালিত হয়ে আসছে এই সমাজে অনেক আগে থেকেই।তবে তখন সবত্র নারীদের এত বিচরন ছিলো না।এখন আছে তাই অতর্কিতে যেকোনো নারীর উপর সহজ কারন কঠোর আইন বা তার প্রয়োগ নেই।
অনেক ব্যক্তি মনে করেন ঘরে থাকলে ধর্ষণ হবেনা।তাদের কাছে আমার প্রশ্ন এসকল হায়েনাগুলো কি জঙ্গল থেকে আসে?এরাও তো কোনো ঘরে,কোনো পরিবারে থাকে।তাদের আশেপাশের নারীরা কি নিরাপদ।অনেকে তো মা,বোন এমনকি মেয়েকেও ছাড়ে না।
নারীকে ঘরে বন্দী রাখার দিনটি শেষ হয়ে গেছে।এখন পর্দার উসিলা দিয়ে হাজার চেষ্টা করলেও তাদের ঘরে আটকে রাখা যাবেনা।উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় নারীরা ভূমিকা রাখছে,ভবিষ্যতেও রাখবে।শুধু তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে আমাদের।
মানসিকতা পরির্তন হয়তো একদিনে হবে না কিন্ত শুরুটা হোক এখন থেকেই।ছেলে সন্তানকে সঠিক শিক্ষাটা দেয়া হোক ঘর থেকেই।আমরা মেয়ে সন্তানকে পড়তে শিখিয়েছি,উপার্যন করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখিয়েছি কিন্ত ছেলে সন্তানকে নারীর প্রতি যত্নশীল হতে শেখাইনি।নারীকে শ্রদ্ধা করতে এবং তাকে নিজেরই সমকক্ষ মানুষ হিসাবে মনে করতে শেখাইনি।
আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।এখন থেকে ধর্ষনের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। আর বিচার কার্যকর করতে হবে ১৮০ দিনের মধ্যেই।এটি জাতীয় জীবনে একটি স্মরণীয় দিন।আইনের সঠিক প্রয়োগ থাকলে কথায় কথায় ধর্ষণের বাতিক ওঠা লোকগুলো কাজটা করার আগে অনেকবার ভেবে দেখবে।
এই ধরনের অপরাধ বাইরের দেশেও হয়।তবে সেখানে ভিক্টিমকে আইনের আওতায় এনে সাজা দেয়া যায়।কোনো সাজা দিয়েই যদিও ধর্ষণের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া সম্ভব নয় কিন্তু ভিক্টিমকে সেখানে সামাজিকভাবে হ্যারেস করা হয় না।সে স্বাভাবিক জীবন যাপনের একটা সুযোগ পায়।তাকে মাথা নিচু করে বেড়াতে হয়না।উন্নত দেশের সাথে এখানেই আমাদের পার্থক্য।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৩