মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলকায়েদার মত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন তৈরি করেছিল কিন্তু বুঝতে পারে নাই,এই আলকায়েদাই তার গলার কাটা হয়ে দাঁড়াবে। এখন ইরাকে মিসরের মত সিসির সরকারকে আবিস্কারের জন্য আইএস কে পাঠিয়েছিল মার্কিন- সৌদি।ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ জর্ডানে এই আইএস কে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আল কায়েদার মত এবার আইএস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পথে কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাতে আমেরিকার একদিক না একদিক থেকে লাভই হচ্ছে, কোন ক্ষতি হচ্ছে না।
আমেরিকার পতন ঘটলে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসাবাদের পতন ঘটবে।এই আমেরিকায় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসাবাদের গটফাদার।ইজারেয়েলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মদদদাতা এই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। বিশ্বের সন্ত্রাসী গুষ্ঠিগুলো অস্ত্র পায় কই থেকে? আজ লিবিয়ায় অস্থিতিসীলতার মদদ কারা দিচ্ছে? বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে মুসলিম বিশ্বকে ঘিরে আমেরিকার রমরমা অস্ত্র বানিজ্য চলছে।
মার্কিন যুক্ত্বরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপ ও ইজরায়েল বিশ্বের সবচেয়ে বেশী আগ্নেয় অস্ত্র প্রস্তুতকারক ও রপ্তানীকারক দেশ। এইদেশ গুলোর বাজেটে একটা বিরাট অংশ থাকে অস্ত্র রপ্তানীর আয় থেকে। ফলে অস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানি গুলোর প্রধান লক্ষ্যই থাকে অস্ত্র বাজার প্রসারিত করা। যদি দেশে দেশে যুদ্ধ না থাকে,তাহলে অস্ত্র বানিজ্য প্রসার লাভ করবে না। এইজন্য প্রথমত, দরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত লাগিয়ে রাখা এবং সংঘাতের উস্কানী দেওয়া। যেমন- জাপান, ভিয়েতনাম, তাইয়ান,ভারতকে উস্কানী দেওয়া হয় চীনের বিরুদ্ধে,দক্ষিন কোরিয়াকে উস্কানী দেওয়া হয় উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে, ইজরায়েলকে ব্যবহার করা হয় ফিলিস্তিন,লেবানন(হিজবুল্লাহ),সিরিয়া,ইরানের বিরুদ্ধে পারস্য উপসাগরীয় রাজতান্ত্রিক ব্লককে(সৌদি আরব, মিসর, কাতার, আরব-আমিরাত, বাহরাইন, জর্ডান, ওমান, কুয়েত) উস্কানী দেওয়া হয় ইরানের বিরুদ্ধে এভাবে যারা আমেরিকার মিত্র তাদের নিকট বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বানিজ্য করা হচ্ছে। যখন মার্কিন অর্থনীতিতে প্রত্যারপন(Recession) শুরু হয় তখনো যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে অস্ত্র বানিজ্য করা হয়। দ্বিতীয়ত, বিশ্বব্যাপী জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গুষ্ঠি লালন পালন করা। এই জঙ্গি গুষ্ঠিগুলোকে তৃতীয় কোন দেশের মাধ্যমে অস্ত্র সরবরাহ করে। যেমন তালেবানকে অস্ত্র সরবরাহ করে ইন্ডিয়ার মাধ্যমে অপর দিকে আফগান সরকারকে আমেরিকা সরাসরি অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য।
আইএসের উত্থানের সময় ইরাকের মালিকি সরকার আমেরিকার কাছে সামরিক সহায়তা চেয়েছিল। অথচ এই সহায়তা ইরাক- আমেরিকার সামরিক চুক্তির অধীনে ছিল তবুও আমেরিকা আইএসকে ঠেকাতে ইরাক সরকারকে সহায়তা করেনি বা টালবাহানা করেছে। কুর্দিদের উপর আইএস এর আক্রমণের পর আমেরিকা কেন আইএসের উপর হামলা করলো ? কুর্দিরা একটা দেশের একাংশ জনগুষ্ঠি। আমেরিকা কেন ইরাক সরকারকে আগে সহায়তা দেইনি? এখন কেন আলাদা ভাবে ইরাকের কুর্দিদের অস্ত্র দিয়ে সুসজ্জিত করছে?
এখানে হিসাবটা এই রকম যে, কয়েকটা কারণে আমেরিকা কুর্দিদের অস্ত্র দিয়ে সুসজ্জিত করছে –
০০০# ইউরোপ, আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া এক যোগে কুর্দিদের অস্ত্র দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। প্রশ্ন হল, আইএসের উত্থানের সময় এই দেশগুলি কেন ইরাক সরকার সহায়তা চাওয়ার পরেও এগিয়ে আসেনি? এখন কেন ইউরোপ, আমেরিকা অস্ট্রেলিয়াকে কুর্দিদের অস্ত্র দিতে এত আগ্রহী দেখা যায়? সহজ হিসাবে বুঝা যায়, দেশ গুলি কুর্দিদের অস্ত্র দিয়ে স্বাবলম্বী করছে। যাতে এই অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও সুপ্রশিক্ষিত কুর্দিরা সহজেই স্বাধীনতা লাভ করতে পারে। গতমাসে ইরাকের নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের আগে প্রধান কুর্দি নেতা স্বাধীনতা ঘোষণার পূর্বাভাষ দিয়েছিল। সর্বশেষ রয়টার্সের প্রকাশিত তথ্য মোতাবেক জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রী আশঙ্কা করেছেন- কুর্দিস্তান স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে। Click This Link
বলাইবাহুল্য যে,ইউরোপ, আমেরিকা অস্ট্রেলিয়ার এক যোগে কুর্দিদের অস্ত্র দেয়া কুর্দিস্তানের স্বাধীনতা ঠেকানোর জন্য নয় বরং স্বাধীনতা অর্জনের সহায়তার জন্য। সাহায্যের তালিকায় রয়েছে ট্যাংক বিধ্বংসী মিলান রকেট, মেশিন গান, হ্যান্ড গ্রেনেড ইত্যাদি। জেহাদিরা ইরাকি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে যে সব ট্যাংক দখল করেছে, তাদের মোকাবিলা করতেই এমন রকেট প্রয়োজন। প্রায় ৪,০০০ কুর্দি যোদ্ধার জন্য প্রায় ৭ কোটি ইউরো মূল্যের এই অস্ত্র পাঠানো হবে। Click This Link#sthash.AKJwLghl.dpuf
০০০# ইরাকের কুর্দিরা মুসলমান হলেও তাদের মধ্যে কুর্দি জাতীয়তাবাদী চেতনাটা প্রবল। কুর্দিরা শুধু ইরাকে নয়, সিরিয়া,তুরস্ক,ও ইরানেও অনেক কুর্দি মুসলমান বসবাস করছে। ইরাকের সংবিধান অনুযায়ী কুর্দিরা ইরাকের পার্লামেন্টের স্পিকারের পদ গ্রহন করে থাকে। তারা ইরাক থেকে বের হয়ে কুর্দিস্তান নামে আলাদা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। ফলে ইরাক থেকে কুর্দিরা আলাদা হয়ে গেলে রাষ্ট্র হিসেবে ইরাক অনেকটায় দুর্বল হয়ে পড়বে। কারণ কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ইরাকের মূল ভূখণ্ডের চেয়ে তুলনামূলক অনেক তেল সম্পদ রয়েছে। যা ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকারের এমনকি ইরাকের সামস্টিক জনগণ অধিকার প্রতিষ্ঠা রহিত হবে। আর ইরাক দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত হলে ইজরায়েলের নিরাপত্তার জন্য কোন হুমকি সৃষ্টি করবে না।
উল্লেখ্য, ইরাকের সাদ্দাম সরকার যখন পারমাণবিক কার্যক্রম শুরু করে। তখন থেকেই শক্তিশালী ইরাক ইজরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।তারপর ইরাকের অসিরা পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র ধ্বংস করে ইসজায়েল এবং ২০০৩ সালে আমেরিকা ইরাকে হামলা চালিয়ে দেশটিকে তছনছ করে দেয়।
০০০# সাধারণ সদ্যস্বাধীন প্রাপ্ত কোন দেশ, যেদেশ থেকে স্বাধীনতা পেয়েছে সেই দেশের প্রতি বৈরী মনোভাব পোষণ করে থাকে যেমন, সুদান- দক্ষিন সুদান, ভারত- পাকিস্তান, বাংলাদেশ- পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড- ব্রিটেন, উত্তর কোরিয়া- দক্ষিন কোরিয়া ইত্যাদি। এইসব বৈরী দেশগুলোর বৈরিতাকে অবলম্বন করে সাম্রাজ্যবাদীরা বিভিন্ন ফায়দা হাসিল করার ষড়যন্ত্র করে থাকে। তাতে একে অপরের বিরদ্ধে উস্কানী দিয়ে অস্ত্র বিক্রির বাজারে পরিণত করা যায় অন্যদিকে উভয়ই দেশকে দুর্বল করে পদাবনত করে রাখা যায়। কুর্দিদের সামরিক সহায়তা করা এটি আরও একটি সুদুর প্রসারী লক্ষ্য। ইজরায়েলের ইনোন পরিকল্পনায় (Enon Plan) বলা হয়েছে, ইরাককে তিনটি( সিয়াস্তান, সুন্নিস্তান ও কুর্দিস্তান) অংশে ভাগ করা এবং তিনটি রাষ্ট্রকেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করে পারস্পারিক সবসময় যুদ্ধ অবস্থায় রাখা। কথিত এই তিনটি রাষ্ট্রের মধ্যে কুর্দিস্তান ইজরায়েল তথা ইউরোপ-আমেরিকার প্রধান টার্গেট। যাতে কুর্দিস্তান ইজরায়েল ও ইউরোপ আমেরিকার বন্ধু রাষ্ট্রের পরিণত হয়।এই জন্য আইএসের উত্থানের কয়েকদিন পর ইজরায়েলের প্রধান মন্ত্রী কুর্দিদের উদ্দেশ্যে বলেছে- কুর্দিরা বীরের জাতি এবং আত্ম ত্যাগী , তাই তাদের স্বাধীনতা পাওয়া উচিত। একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে জায়নবাদী, বর্বর ইজরায়েল কোন সাহসে নাক গলায়।
০০০# ২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনীর ইরাক দখলের পর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে অবস্থান করে ইরাকের ইরবিল শহরে। বর্তমানে ইরবিল নামে এই শহরটিই কুর্দিস্তানের কেন্দ্রভূমি (Centre Point)। তেল সম্পদের জন্য এই শহরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপ আমেরিকা ও ইজরায়েলের শকুনি দৃষ্টি মূলত এই তেল সম্পদের দিকেই। ইরাকে আইএসের উত্থানের পর কুর্দিস্তান কার্যত কেন্দ্র সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে কুর্দির স্বায়ত্তশাসিত সরকার অবাধে ইজরায়েল ও ইউরোপ আমেরিকায় স্বল্প মুল্যে তেল সরবরাহ করে।তেল সম্পদের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠাও একটা লক্ষ্য।
উপরের উল্লেখিত কারণ ছাড়াও আরও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উর্সুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেন, আইসিস জেহাদিরা নিষ্ঠুরভাবে তাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। মানবিক দিক থেকে তো বটেই, জার্মানির নিজস্ব নিরাপত্তার স্বার্থেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে সহায়তা করতে হচ্ছে। Click This Link#sthash.FrWWvBsm.dpuf
যারা বৈশ্বিক সন্ত্রাসীদের মদদ দাতা, অস্ত্র সরবরাহ করে, দিকে দিকে যুদ্ধের দাবানল জ্বালিয়ে অস্ত্রের বানিজ্য প্রসারিত করছে, দেশে দশে আগ্রাসন চালিয়ে মানবতা বিরোধী ধ্বংস যজ্ঞ চালাচ্ছে তারাই আজ ইরাকের কুর্দিদের জন্য মায়া কান্নার জলে নয়ন ভাসিয়ে ফেলছে।
পরিশেষে আমি বলব, ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া ত্রানকর্তা হিসেবে কুর্দি ও ইয়াজিদিদের জন্য এই মায়া শুধু ইসলামী নামধারী একটি সন্ত্রাসী গুষ্ঠির কারনে কিন্তু ইজরায়েলের সন্ত্রাসী বাহিনী বা মায়ানমারের ভিক্ষু সন্ত্রাসী অথবা ভারতীয় বাহিনীর (কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর নির্যাতন) বিরুদ্ধে কেন ফিলিস্তিন, মায়ানমার ও কাশ্মীর, চেচনিয়া- বসনিয়া নিপীড়িত নির্যাতিত জনগণের জন্য কেন নির্মমতা ছাড়া কোন মায়া দেখা যাচ্ছে না ।