১
ডোরেমন।
ভারতীয় ডিজনি চ্যানেলে প্রচারিত একটি জনপ্রিয় কার্টুন সিরিয়াল।
মুক্ত আকাশের কল্যাণে ডোরেমন এখন ড্রয়িংরুমে থাকা টেলিভিশনে চলমান শিশুদের বিনোদনের একমাত্র খোরাক ।এই প্রজন্মের শিশুরা ঘুম থেকে উঠে ডোরেমন দেখে, খাবার খেতে খেতে দেখে, ঘুমাতে যাওয়ার আগেও দেখে।
তবে,এটাকে নির্দোষ কার্টুন বলা সঙ্গত কারণেই যুক্তিযুক্ত নয়। কারন হিসেবে বলা যায়, এ কার্টুনে প্রচারিত হিন্দি ভাষা শিশু তার সহজাত অনুকরণের প্রভাবে হিন্দি ভাষায় তার মনের ভাব প্রকাশ করছে।
তাছাড়া অতিরিক্ত টেলিভিশনের দেখার কারনে শিশুর চোখের সমস্যার পাশাপাশি নানা শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যায় ভুগছে। শিশুদের জেদি মনোভাব, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সামান্য উদাহরণ। অনুকরনের কারনে শিশুরা কার্টুন দেখে “নবিতা”র মত আলসে আর ফাকিবাজি শিখবেনা সে টা কি জোর গলায় বলা যায়?
শিশু বিশেষজ্ঞ ও মনো রোগবিশেষজ্ঞদের মতে, এটি আর শুধু অনুষ্ঠান হিসেবে সীমাবদ্ধ নেই, ম্যানিয়া পর্যায়ে চলে গেছে।
রোগের নাম ডোরেমনম্যানিয়া!
২
এবার অন্য প্রসঙ্গ ।
আমার আট বছর বয়সি গ্রাম্য ছোটো খালাত ভাই,যে কিনা শুদ্ধ করে বাংলা বলতে পারেনা,তার মুখে যখন “কাল মিলুঙ্গি” জাতিয় হিন্দি মিক্সচার ভাষা শুনি,আমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে।কেন?
কারন,হিন্দি মিক্সচার ভাষার প্রাথমিক শিক্ষকও ডোরেমন!
একটি শিশু যে সারাদিন বাসায় কার্টুন চ্যানেলে ডোরেমন দেখে, সে নিজের অজান্তেই হিন্দি ভাষা অনুকরন করে শিখছে আর ব্যবহার করছে।আধুনিক মা-বাবা হয়ত তাদের বাচ্চাদের মুখে এমন কথা শুনে পুলকিত হন,গর্বিত হন…
অথচ,এই সব শিশুরা বেড়ে উঠছে নিজস্ব সংস্কৃতি আর নিজের মায়ের ভাষা বাংলা কে ছেড়ে- ভাষার শেকড়হীন হয়ে।এগুলো এখন করুন বাস্তবতা হয়ে দেখা দিয়েছে।
আর,করুন বাস্তবতা বলেই ঠিক ৬০ বছর আগে ভাষার জন্য জীবন দেয়া কতগুলো তরুণ প্রাণের প্রিয় মায়ের বাংলা ভাষার দেশে শিশুরা ডোরেমন নামের নিদোর্ষ কা্র্টুনের আড়ালে নিরব ঘাতক হিসেবে হিন্দির প্রকট উপস্থিতি না চাইলেও দেখতে হচ্ছে।
এমন কোন দেশ আছে যে দেশের সন্তান-রা মায়ের ভাষা বাংলার জন্য জীবন দিয়েছে?অথচ,আমরা এতটাই অকৃতজ্ঞ জাতি যে,আমরা সব ভুলে গিয়ে প্রতিদিন,প্রতিনিয়ত ভাষা শহিদ-দের অপমান করে যাচ্ছি। আমরাই প্রকারান্তরে আমাদের সন্তানদের হিন্দি ভাষা চর্চা ও ব্যবহারে উৎসাহিত করছি।
তবে কি আমরা কি আমাদের বিবেকবোধটুকুও হারিয়ে ফেলছি?
কিন্ত এর শেষ পরিণতি কি আমরা ভাবছি?
এভাবে একটি প্রজন্ম যদি নিজের মাতৃভাষা না শিখে, না ব্যবহার করে তবে আমাদের পরের প্রজন্ম কেমন হতে পারে, তা ভাবতেই গা শিউরে উঠে ।
৩
তাই,এখনই সময় সচেতন হওয়ার ।
আমাদের সন্তানদের আমরা দেশীয় সংস্কৃতির সাথে সংগতি পূর্ণ নানা মজাদার,আকর্ষণীয় ও শিক্ষণীয় উপাদানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি।
ছড়া, ধাঁধা ,পাপেট, এগুলো হতে পারে দেশীয় সংস্কৃতির সাথে তাদের পরিচয়ের প্রাথমিক ধাপ।
তাছাড়া,দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি , তাদের উপযোগী করে তাদের কাছে উপস্থাপন করলে তা হতে পারে তাদের জন্য ইতিবাচক উদ্যোগ।
আমাদের দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও শিশুদের উপযোগী নানা আকর্ষণীয় ,তথ্যমূলক ও মজাদার অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার করে অগ্রণী ভুমিকা রাখতে পারে।
আর এভাবেই,আমাদের পরিবার-সমাজ এর সচেতনতা ও সম্মিলিত উদ্যোগই পারে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে নিজ সংস্কৃতির উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে আর মায়ের ভাষা বাংলা কে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে।
মা কে ভালবাসলে এটুকু আমাদের করতেই হবে...।