somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই টাকার জীবন!

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি মানুষের জীবন খুবই সস্তা না? কেউ রাস্তায় পুঁড়ে যাচ্ছে, পুলিশ এক লাশের বিপরীতে দুই লাশ ফেলার হুমকি দিচ্ছে! আমি/আপনি দিন গুনছি আমার আপনজন কবে কোথায় "শেষ" হয়ে যায়!!

আমার ছেলে আবরার। এখন পৃথিবীতে তার পঞ্চম মাস। যেদিন প্রথম শুনলাম আমার স্ত্রীর গর্ভে ছোট্র একটি ভ্রুন দানা বেঁধেছে ওই দিনে থেকেই মনের গভীরে সে কি আবেগ-উৎকন্ঠা!
মোবাইলে দুইটি প্রেগ্নেন্সি রিলেটেড এপ্লিকেশান ইনস্টল করলাম - সপ্তাহ সপ্তাহে বাচ্চার বেড়ে উঠা; কোন সপ্তাহে হাত পা হচ্ছে, কোন সপ্তাহে তার চোখ খুলেছে, কখন থেকে সে শব্দ শুনতে পারে - এপ্লিকেশ্যানে এসব পড়ে প্রায়শঃ আমার পশম দাড়িয়ে যেতো।

মহান আল্লাহর কত মহিমা - তিনি কি দারুন করেই গড়ে তুলছিলেন একটি শরীরের ভিতর আরো একটা শরীর!

একবার হঠাৎ দুই দিন পেটে বাচ্চা নড়ছিলো না। আিম রাস্তায় হাটতে হাটতে ফোনে খবরটি পেলাম। হঠাৎ আমার চোখ অন্ধকার লাগলো। আমি ওখানেই বসে পড়লাম। ডাক্তারের কাছে আমার স্ত্রী গেলো; আলট্রাসনোগ্রাম করার পর জানা গেলো - না বাচ্চা ঠিক আছে... ওই একটা মুহুর্ত ছিলো যখন আমি মনে হয় পৃথিবী ফিরে পেয়েছি।

এটাতো আমি পুরুষের আবেগ বললাম। আমার স্ত্রী তখন কি রকম ঘোরে!!??

অমানুষিক পরিশ্রম যাচ্ছিলো তার। সোজা হয়ে ঘুমাতে পারেনা; আবার কাত হয়েও ঘুমাতে পারেনা। বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা; আবার কিছুক্ষন বসে থাকলে কোমর ব্যাথা শুরু হয়...

এমন করে বাচ্চার জন্মের ক্ষন এলো। আগের দিন সন্ধ্যা থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত জীবন মরন যুদ্ধের পর পৃথিবীর আলো দেখলো আমাদের ছেলে আবরার।

এখানে ঝামেলা শেষ হলেও পারতো। কিন্তু না - সারাদিন সারারাত ছেলে জাগে আর ঘুমায়। এই কান্না, এই পায়খানা, এই প্রস্রাব। এসব ঝামেলা সমাধান করতে করতে আমার স্ত্রী এবং আমার ঘরের অন্য সদস্যদের ঘুম হারাম। বাচ্চা জন্মের ৩৫ দিন এর মাথায় প্রবাস থেকে শুধুমাত্র ছেলেকে একনজর দেখার জন্য ১২ দিনের ছুটিতে দেশে আসলাম। এ ১২ দিনে আমার চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। নির্ঘুম থাকতে থাকতে আমার স্ত্রী এতটাই ক্লান্ত হয়ে গেছে - বাচ্চা চিৎকার করে কাঁদলেও মাঝে মাঝে তার ঘুম ভাঙতো না।

এ বাচ্চা দিন দিন বড় হবে। মায়ের কিন্তু শান্তি থাকবে না। একটু বড় হলে সারাদিন পাহারা দিবে ছেলে পানির দিকে যাচ্ছে কিনা - খাটের থেকে পড়ে যাচ্ছে কিনা। তারপর আসবে স্কুলে দেবার - পড়ালেখা করাবার দুশ্চিন্তা। তার পর বিয়ের বিয়ের চিন্তা...

এইযে একজন মা কিংবা বাবার কত পরিশ্রমে একটি ভ্রুন থেকে মহিরুহ হয়ে আমি আপনি পৃথিবীর আলো বাতাস হজম করছি তার জন্য আমাদের কোন চিন্তা আছে?

কত সহজেই সামান্য স্বার্থে হাজার রাত্রি নির্ঘুম কাটানোর ফসল - হাজারো কষ্টের কেষ্ট "সন্তান" একজন মানুষকে কিছু মানুষরুপি জানোয়ার খুন করছে/জ্বালিয়ে দিচ্ছে!!

কি নিষ্ঠুরতা - কি বর্বরতা!! মায়ের সে কলিজার টুকরার উপর।

কোথায় পাচ্ছি আমরা এ শিক্ষা? কিসে আমাদের মনুষত্বকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। কি কারনে মানুষ হয়ে পশুর আচরন করছি আমরা। কার জন্য?


_______________

আমার বাবা ডাক্তার এর কাছে রিপোর্ট নিয়ে যাবার কথা ছিলো ২১ জানুয়ারী। আজ ৫ ফেব্রুয়ারী! আমরা কেউই সাহস পাচ্ছিনা উনাকে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় যেতে দিতে।

আমার ছোট বোন এর হাজবেন্ড বর্তমানে সাইন্স ল্যাব থেকে উত্তরা গিয়ে অফিস করতে হয়। সারাক্ষন দুশ্চিন্তায় থাকি।

কেউ মনে হয় আজ ভালো নেই। দেশ ভালো নেই - দেশের মানুষ ভালো নেই। কিন্তু রাজনীতিজীবি গণতন্ত্র ব্যাবসায়ীদের এটা কবে বোধগম্য হবে? আর কত মানুষ পুড়লে বিএনপির গণতন্ত্র উদ্ধার হবে কিংবা আওয়ামীলীগের গণতন্ত্র রক্ষা হবে?

________________

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×