হলিউডের সবচেয়ে কষ্টের গল্প গুলোর একটি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। এ গল্প অ্যামেরিকার অন্যতম জনপ্রিয় সুপারস্টার Sylvestar Stallone এর লড়াই এর গল্প। পিছনের সময়ে স্ট্যালন এর পরিস্থিতি ছিল সব দিক থেকেই কষ্টের। একবার অবস্থা এতো খারাপ হল যে পাওনাদারের টাকা মেটাতে বউয়ের গয়না পর্যন্ত চুরি করে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল। বাড়ি বিক্রি করে ধারের টাকা পরিশোধ ও করতে হয়েছে। হ্যা, তিন রাত পর পর তিনি নিউ ইয়র্ক এ বাস ষ্টেশন এর যাত্রী ছাউনিতে ঘুমিয়েছেন! বাসা ভাড়া কিংবা খাবার কেনার মতো কোন টাকা তার কাছে ছিলনা তখন। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আসলো তখন যখন সে তার প্রিয় কুকুরটিকে একটা মদের দোকানে অপরিচিত ব্যাক্তির কাছে মাত্র মাত্র ২৫ ডলার এ বিক্রি করে দিলেন। কুকুরটিকে খাওয়ানোর মতো অবস্থা তার ছিলনা। তার কথায়, ‘ও কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল’।
দুই সপ্তাহ পরে মোহাম্মদ আলী এবং চাক উইপনার এর একটা বক্সিং ম্যাচ দেখে তার মাথায় একটা স্ক্রিপ্ট আসে। প্রায় ২০ ঘন্টা ধরে একনাগারে লিখে ফেললেন বিখ্যাত মুভি ‘রকি’।
রকির স্ক্রিপ্ট বিক্রি করতে গেলে একজন প্রযোজক এর কাছ থেকে অফার পান ১,২৫,০০০ ডলার। স্ট্যালন একটা শর্তে রাজী হলেন। তিনি নিজে এই মুভিতে অভিনয় করবেন। কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘রকি’ তে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রাজী হলেন না। তারা সত্যিকারের একজন ‘স্টার’ দিয়ে রকি চরিত্র করাবেন।
তারা বলেছিলেন, ‘Looked Funny and Talked Funny’। স্ট্যালন স্ক্রিপ্ট নিয়ে ফেরত আসলেন। কয়েক সপ্তাহ পরে ওরা ২৫০০০০ ডলার দিতে চাইলো স্ক্রিপ্ট এর জন্য। স্ট্যালন রাজী হলেন না। তারা যখন ৩৫০০০০ ডলার দিতে চাইলো তখনো তার একই কথা। প্রযোজক রা তার ছবি চায়, তাকে দরকার নাই। স্ট্যালন এর একটাই কথা তাকে মুভিতে রাখতে হবেই।
বলা বাহুল্য এতো ভালো স্ক্রিপ্ট ওরা কোনোভাবেই ছাড়তে চাইছিল না। শেষ মেষ ওরা রাজী হল, ওকে অভিনয় করতে দেয়া হবে কিন্তু স্ক্রিপ্ট বাবদ মাত্র ৩৫০০০ টাকার এক টাকাও বেশী দেয়া হবে না এই শর্তে। তার পরের ইতিহাস সবাই জানেন। ‘রকি’ তিন ক্যাটাগরিতে অস্কার জিতে ছিলঃ বেস্ট পিকচার, বেস্ট ডিরেক্টিং এবং বেস্ট ফিল্ম এডিটিং’।
এমনকি সেরা অভিনেতার জন্য মনোনয়ন ও পেয়েছিলেন তিনি। ‘রকি’ অন্যতম সেরা মুভি হিসেবে ‘অ্যামেরিকান ন্যাশনাল ফিল্ম রেজিস্ট্রি’ তে নিবন্ধিত।
স্ক্রিপ্ট বিক্রি করে পাওয়া ৩৫,০০০ ডলার দিয়ে সবার আগে তিনি কি কিনেছিলেন জানেন? হ্যাঁ সেই কুকুরটি যেটাকে খাওয়াতে না পেরে ২৫ ডলার এ বিক্রি করে দিয়েছিলেন। স্ট্যালন কুকুরটিকে এতোই ভালোবাসতেন যে পুরো এক সপ্তাহ ঐ বারটার সামনে দাড়িয়ে ছিলেন যেখানে ওকে বিক্রি করেছিলেন। সাত দিনের মাথায় লোকটির দেখা মেলে। স্ট্যালন তাকে ভালো করে ব্যাখ্যা করলো কোন পরিস্থিতিতে সে কুকুরটা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল এবং এখন তাকে যে কোন মূল্যে কুকুরটি পেতে হবে। লোকটি রাজী হল না। স্ট্যালন ১০০ ডলার দিতে চাইলো। ঐ লোকের না। সে ৫০০ ডলার বলল, ঐ লোকের একই উত্তর। এমনকি স্ট্যালন যখন ১,০০০ ডলার অফার করলো তখনো ও সে নির্বিকার। এবং, বিশ্বাস করুন আর নাই করুন পুরো ১৫,০০০ ডলার গুনে দিতে হয়েছে তাকে ২৫ ডলারে বিক্রি করা কুকুরটা ফেরত নেয়ার জন্য। এবং তিনি তার প্রিয় কুকুর পেয়েছেন শেষ পর্যন্ত।
এখন সেই একই স্ট্যালন যে কিনা রাস্তায় রাত কাটাতো, খেতে দিতে না পেরে প্রিয় কুকুর টি পর্যন্ত বিক্রি করেছিল, সর্বকালের সেরা সুপারস্টার দের একজন!
পরবর্তী সময়ে জীবন জগত সম্পর্কে তার বলা কিছু দর্শনঃ
“ জীবন অনেক টাফ। সুযোগ গুলো তোমার পাশ দিয়ে আস্তে করে চলে যাবে কেননা তুমি কিছুই না, তুমি কেউ ই নও। সবাই তোমার ‘প্রোডাক্ট’ চাইবে, তোমার দাম কারো কাছেই নাই। পুরা দুনিয়াটাই এমনি জঘন্য। যদি তুমি ইতিমধ্যে ‘জনপ্রিয়’, ধনী’ অথবা ‘চ্যানেলের সাথে কানেক্টেড’ না থাকো তোমার জন্য জঘন্নতম দুনিয়া অপেক্ষা করছে। জাস্ট ওয়েট।
দরজা গুলো তোমার চোখের উপর বন্ধ হয়ে যাবে। কাছের মানুষেরা তোমার সুনাম চুরি করে নিয়ে যাবে; তোমার আশার গুড়ে বালি ঢেলে দিয়ে যাবে। তুমি একের পর এক আপ্রান চেস্টা করে যাবে। কিন্তু কিছুই পাবে না।
এক সময় তোমার আশা বলতে আর কিছু থাকবে না। তুমি ভেঙে পড়বে। কঠিন ভাবে মুষড়ে যাবে। সারভাইভালের জন্য তুমি ‘অড জব’ করবে। তোমাকে রাস্তায় ও শুতে হতে পারে। হ্যাঁ এটা হতেই পারে।
কিন্তু, খেয়াল রাখতে হবে এগুলোর কোন কিছুই যেন তোমার সপ্নের উপর আঘাত না হানে। যাই ঘটুক, স্বপ্ন দেখতে থাকো। এমনকি যখন তারা তোমার আশা শেষ করে দিবে তখন ও স্বপ্নকে ছেড়ো না। তারা যখন তোমার প্লান বদলে দিবে, স্বপ্নকে নিয়ে বদলানো পথে হাঁটবে। মুখের উপর দরজা বন্ধ হবার সাথে সাথেই ঘুরে আবার স্বপ্ন কে নিয়ে হাটা শুরু করবে।
একমাত্র তুমি ছাড়া কেউ ই জানে না তুমি কি... তোমার ক্ষমতা... তোমার মধ্যে কি আছে...।
মানুষ তোমায় মাপে তোমাকে দেখতে কেমন, তোমার পোশাক, গেজেট, তোমার যা কিছু আছে তাই দিয়ে। কিচ্ছু যায় আসে না তাদের মাপায়। যুদ্ধ করো যোদ্ধার মতো। এ যুদ্ধ নিজেকে ইতিহাসের পাতায় ঠাই দেয়ার যুদ্ধ। হাল ছেড়ো না কোন কিছুতেই। এ লড়াই শুধু অস্তিত্তের না আরও বেশী কিছুর জন্য যেটা একমাত্র তুমি ই জানো।
এমনকি যদি তোমার সব কাপর চোপড় বিক্রি করে রাস্তার কুকুরের সাথে শুয়ে থাকতে হয়, ভয় পেওনা। কোন সমস্যা না। যতক্ষণ তুমি বেঁচে আছ ততক্ষন তোমার গল্প শেষ হবে না... ’’
লড়াই চলুক স্বপ্ন নিয়ে অস্তিত্তের চেয়ে আরও একটু বেশীর স্বপ্নে..
[ আমার খুব প্রিয় সপ্নবাজ একজন মানুষের জন্য লেখা যার জন্য আমি কখনোই কিছু করার সুযোগ পাই নি। মন খারাপের কোন সময়ে এই লেখা যদি এক কাপ চায়ের কাজ করে এই লোভে স্ট্যালন এর কিছু এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার অনুবাদ করে কিছু একটা করার চেষ্টা ...] —