somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পড়িয়ে দিলাম টিপ

১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কচ কচ কচ কচ। কয়েক মিনিট ধরে শব্দটা হচ্ছে।
মনে হচ্ছে ইঁদুর তার দাঁত দিয়ে কিছু কাটছে। কচ
কচ শব্দে আমি ভীষণ বিরক্ত হচ্ছি। চরম
বিরক্তি নিয়ে বার বার পাশের প্রাণীটির
দিকে তাকাচ্ছি। সুন্দর একটা প্রাণী। কিন্তু
এমন শ্রুতিকটু শব্দ করে খাচ্ছে কেন?
শসা খেলেও এমন বিশ্রী শব্দ করে খেতে হয়?
মেয়েটা কি জানেনা সুন্দরী মেয়েদের
কখনো শব্দ করে খেতে নেই? এতে তাদের
সৌন্দর্য্যহানি ঘটে। কিন্তু নীরা তবুও শব্দ
করেই খাচ্ছে। এতেই সে খুব মজা পাচ্ছে।
নীরার ভাষ্যমতে কিছু খাবার
আছে যেগুলো শব্দ করে খেতে হয়।
তাছাড়া সেই খাবারগুলো খেয়ে কোন টেস্ট
পাওয়া যায় না। তার মতে শসা, চিপস,
চানাচুর, টোস্ট বিস্কিট এ জাতীয় খাবার।
এগুলো খেতে যতটা না মজা, এগুলো খাওয়ার
সময় চিবালে যে শব্দ হয় সেই শব্দ
শুনতে আরো বেশি মজা। আমার
ইচ্ছে হচ্ছে নীরাকে বলি ভদ্রভাবে খেতে।
ওর মত মায়াবী একটা মেয়েকে এমন
বিশ্রী শব্দে খাওয়া মানায় না। কিন্তু কিছু
বললেই ব্যাগ থেকে ইয়ারফোন বের
করে কানে দিয়ে দিবে আর
বলবে হানি সিংকে শুনতে। যা একদম অসহ্য
লাগে। আর এটা জেনেই নীরা এই
শাস্তিটা আমাকে দিবে।
- কিরে, একটু পর পর এমন করে তাকাচ্ছিস কেন?
- এমনি।
- এমনি মানে কি? আমার মাথায়
দুইটা শিং গজাইছে? নাকি তোরও
শসা খেতে ইচ্ছে করতেছে?
- শিং গজালে সুন্দর লাগতো তোকে। অনেক
সুইট। এক্কেবারে হাট্টিমা টিম টিমদের মত।
- হুম।
- তখন তোর এই বিশ্রী শব্দ করে খাওয়াটাও
তোর সাথে মানিয়ে যেত।
- আমার খাওয়া নিয়ে কোন কথা বললে কিন্তু
রিকশা থেকে ফেলে দিব তোকে।
ইচ্ছে করছিলো বলি যে ফেলে দে। কিন্তু
আগের ঘটনার কথা মনে করে একেবারে চুপ
হয়ে গেলাম। এই মেয়েকে দিয়ে কোন
বিশ্বাস নাই। মাথায় কিঞ্চিৎ
সমস্যা আছে মনে হয়। ফেলে দিতেও পারে।
একবার রেষ্টুরেন্টে গিয়ে মাথায় নুডুলস
ঢেলে দিয়েছিলো। ভেবেছিলাম পাবলিক
প্লেসে ঢালতে বললেও ঢালবে না।
এখনো যদি সত্যি সত্যি ফেলে দেয়,
তাহলে শুভ কাজটা করতে পারবো না। কত দিন
যাবৎ এই শুভ কাজটা করি করি করেও সাহস
হয়নি। আজ করতেই হবে। আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
আজকের পর থেকে প্রতিদিন আর এই মেয়েটার
মায়াবী মুখ দেখা হবে না, তার
পাগলামিতে মুখরিত হওয়া যাবে না। তাই
আজ বলতেই হবে যেন প্রতিদিন
দেখতে না পারলেও তার
মায়াবী মুখটা মাঝে মাঝে দেখার সুযোগ
করে দেয়।
ভার্সিটি থেকে কি একটা কালো বোরখা টাইপ
ড্রেস, একটা টুপি পড়িয়ে আমাদের
প্রতিদিনকার দেখা সাক্ষাতের ইতি টানার
ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভার্সিটিতে প্রথম ক্লাসের দিন
একটা মেয়ে দশ মিনিট
দেরি করে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আসলো।
পেছনের দরজা দিয়ে লুকিয়ে প্রবেশ
করছিলো। কিন্তু স্যার
দেখে তাকে মিষ্টি সুরে সামনে ডাকলো।
কাচুমাচু ভঙ্গিতে স্যারের
সামনে এসে দাঁড়ালো।
যতটা না মিষ্টি গলায়
তাকে ডাকা হয়েছিলো, ততটাই
ঝাঁঝালো গলায় তাকে বকা হলো। প্রথম
দিনেই দেরি করে আসা, আবার পারমিশান
ছাড়াই পেছনের দরজা দিয়ে লুকিয়ে প্রবেশ
করা! অন্য কোন মেয়ে হলে বোধহয়
কান্না করতো প্রথম দিনেই এমন
শানটিং খেয়ে। কিন্তু মেয়েটা অসম্ভব
রকমের নির্লজ্জ। বকা খেয়েও ফিক
করে হেসে দিয়ে চশমাওয়ালা একটা ভদ্র
যুবকের পাশে বসে পড়লো। সেই ভদ্র
ছেলেটা আমি।
- দেখলেন তো, স্যার কত আদর
করে ডাকলো আমাকে? অন্য কোন
মেয়েকে হয়তো আর ক্লাস করার পারমিশানই
দিতো না আজকে।
চরম বিরক্তি নিয়ে মেয়েটার
দিকে তাকালাম। দেরি করে এসেও কত কথা!!!
বিরক্তিভরা দৃষ্টিও মেয়েটার
বকবকানি থামাতে পারলো না। তার
ফিসফাস টেপরেকর্ডার বাকি পঁয়ত্রিশ মিনিট
সহ্য করা লাগলো।
- আসলে আমি অনেক সুইট তো। তাই স্যার
আমাকে কিছু বলেনি। হি হি হি হি ........
কথাটা শুনেই আর
তাকাতে ইচ্ছে করেনি মেয়েটার দিকে।
এমন মেয়েতো জীবনে দেখিনি বাবা!!
নিজের প্রশংসা নিজেই করে।
সেদিন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে যাচাই
করা হয়নি সে সত্যিই সুইট কিনা। কিন্তু
তারপরের দিন যখন ক্যাফেটরিয়ায় নতুন
পরিচিত সহপাঠীদের সাথে বসে ছিলাম, তখন
একজন হঠাৎ করে ক্যাফেটরিয়ার দরজার
দিকে তাকিয়ে বললো মেয়েটা কি হুমায়ূন
আহমেদের মায়াবতী নাকিরে! তার
দৃষ্টি অনুসরণ
করে সেদিকে ভালো করে তাকাতেই
বুঝলাম এটা গতকালকের সেই নির্লজ্জ
মেয়েটা।
তবে ঠান্ডা মেজাজে তাকিয়ে বুঝলাম
মেয়েটা সত্যিই সুইট। না, সে মায়াবতী।
হে ঈশ্বর!! মেয়েটা কি আমাদের টেবিলের
দিকেই আসছে নাকি? কথা শুরু করলে তো আর
থামে না। আবারো অসহ্য বকবকানি সহ্য
করতে হবে।
- কেমন আছেন? আপনাদের
সাথে বসতে পারি?
- ভাল আছি। পারমিশানের
অপেক্ষা না করেই তো বসে পড়েছেন।
- তাহলে কি উঠে যাবো?
- জ্বী না। কষ্ট করে বসেছেন যখন আর
উঠতে হবে না।
- গতকাল তো আপনাকে আমার নামই বলা হয়নি।
আমি নীরা। আপনি? হি হি হি হি।
- আদিব। নাম বলা হয়ে গেলে উঠুন। ক্লাসের
সময় হয়ে গেছে।
সেই প্রথম দিন থেকে চার বছর
ধরে মায়াবী মেয়েটার বকবকানি সহ্য
করে যাচ্ছি। ওর অসহ্য বকবকানিগুলো একদিন
না শুনলেই মনে হয় কি যেন একটা বাদ
পড়েছে আজ। একসাথে এতদিন ধরে পথ
চলতে চলতে কখন যেন মেয়েটার
ভালোবাসায় পড়ে গেছি।
এমনভাবে পড়েছি যে আর উঠতে পারছি না।
তাই তাকেও আমার
সাথে পড়ে যেতে বলবো ভেবেছি।
রিকশা শহীদ মিনারের সামনে আসতেই
সে চেঁচিয়ে উঠলো।
- এই মামা রিকশা থামান।
রিকশা থেকে নাম তো আদিব।
আমি বাধ্য, ভীত ছেলের মত মায়াবতীর আদেশ
পালন করলাম। আজকে তাকে কোনভাবেই
রাগিয়ে দেয়া যাবে না।
- এই জুব্বা আর টুপিটাও তুই পড়ে থাক। ডাবল
ডাবল। তোকে আরো বেশি ব্রিলিয়ান্ট
লাগবে। ডাবল গ্র্যাজুয়েট।
- তোর পোজ
দিয়ে ছবি তুলতে ইচ্ছে করছে তাই বল।
আমাকে ডাবল গ্র্যাজুয়েট বানানোর অজুহাত
দিতে হবে না।
সে লাল শাড়ি পড়ে এসেছে আজ।
পরী পরী লাগছে তাকে। টুকটুকে লাল
শাড়িতে শ্যামলা পরী। আচ্ছা, হুমায়ূন
আহমেদের মায়াবতী কি লাল শাড়ি পড়ে,
নাকি নীল শাড়ি? এখন ঠিক
মনে করতে পারছি না। মাতাল মাতাল
লাগছে। আকাশে হঠাৎ কোথা থেকে যেন
মেঘেরা এসে ভিড় করেছে। দমকা বাতাস
তার চুল উড়িয়ে দিচ্ছে।
- আচ্ছা আদিব, কি যেন একটা নেই নেই
মনে হচ্ছে না?
- তোর কপালে টিপ নেই।
- এম্মা!! তাই তো। তুই এমন
হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?
- আমার কাছে একটা টিপ আছে। পড়বি তুই?
- তোর কাছে টিপ! তুই আজকাল টিপ নিয়েও
ঘুরিস?
- হ্যা, আছে তো।
আমি কোন পারমিশানের অপেক্ষা না করেই
তার
মুখটা দু'হাতে আলতো করে ধরে কপালে আলতো করে একটা চুমু
দিয়ে দিলাম।
- শোন মায়াবতী, আমার কাছে এই
টিপটা আজীবনের জন্য আছে। তোমার যখন
খুশি কপালে পড়তে পারবে।
তুমি অনুমতি দিবে সারাজীবন তোমার
কপালে টিপ পড়ানোর?
মায়াবতীর মুখে হ্যা বা না নামক কোন শব্দ
উচ্চারিত হতে শুনিনি। কিন্তু তার চোখে জল।
আমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×