সময় মার্মা একজন অমুসলিম আদিবাসী ছাত্র। গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি থাকার কারণে শিবির সন্দেহে সপ্তাহ খানেক আগে মেডিক্যাল কলেজের সামনে থেকে গ্রেফতার হন। লেখাটি তার গ্রেফতার অভিজ্ঞতা ও পুলিশ-ছাত্রলীগের বর্তমান রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বর্ণনা সম্বলিত। পড়ুন তাহলে সময় মার্মার আত্মপোলদ্ধি- যা আমাদের বর্তমান দিনবদলের সরকারের শাসনামলের দিনবদলের হাজারো নমুনার একটি ক্ষুদ্র নমুনামাত্র :
ছাত্রলীগ নামের এ দেশের রাজপুত্রদের বদনজর থেকে সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক করো রেহাই নেই। তাদের যেন সাত খুন মাফ। কাদের কারণে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে তারা ছোবল দিতে পারে না? তাদের শক্ত প্রতিদ্বন্ধী কে? ওদের অপতৎপরতার প্রতিবাদ করে কে? অতএব রাজপুত্রদের কর্মকান্ডকে প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে সরকার সে প্রতিপক্ষ সংগঠনের ছেলেদের গ্রেফতার করা শুরু করল। তাদের রিমান্ডে নিল। আমরা সাধারণ মানুষ নিশ্চুপ থাকলাম। জামায়াত-শিবিরকে গ্রেফতার করলে আমাদের কী? আমাদের তো আর ধরছে না। মাঝে মধ্যে খবর পেলাম, শিবির সন্দেহে সাধারণ শিক্ষার্থী গ্রেফতার। আবার অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পুলিশ এদের ছাড়ছে। আমরা ভাবলাম ' পুলিশ আর কয় টাকাই বা পায়। বাড়তি ইনকাম না থাকলে ওদের চলাটা কষ্টকর। ওদেরও বউ পোলাপান আছে।' কখনোই ভাবিনি অথবা ভাবিনা ছাত্রলীগ ও পুলিশের খপ্পরে আমাদেরও পড়তে হতে পারে। সপ্তাহ খানেক আগে মেডিক্যাল কলেজের সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার পাশে পুলিশের গাড়ি এসে থামল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চড়থাপ্পর আর লাথি দিয়ে টেনেহেচড়ে আমাকে ওদের গাড়িতে তুলল। প্রশ্ন করল একজন, শিবির কেন করিস? কোনো সুযোগ না দিয়ে অনবরত চড় থাপ্পর আর ঘুষি চলল। আমাকে যে কক্ষে রাখা হল সেখানে আরো অনেক কিশোর ও তরুণ বয়সী ছেলে ছিল। ওরা সবাই সরকারি সন্ত্রাসীদের বেদম প্রহারে আহত। দুপুরের দিকে আমাকে আরেকটি কক্ষে নিয়ে এক পুলিশ বলল,'কোনটা চাস? অস্ত্র মামলায় জেল, নাকি এক লাখ টাকা দিয়ে খালাস?' এর পর আমার মোবাইল ফোন যেটি আগে কেড়ে নিয়েছিল, সেটি ধরিয়ে দিয়ে বাবাকে ফোন কর টাকা নিয়ে আসতে বলল। বাকি সব ছেলের সাথে একই রকম আচরণ করার পর সবার মোবাইল সেট কেড়ে নেয়া হয়। আমরা সারাদিন অভুক্ত থাকলাম। রাতে বাবা পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে থানায় এলেন। সাথে তার বন্ধু যিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা। আওয়ামী লীগ করার কারণে মুক্তিযোদ্ধা খেতাবপ্রাপ্ত। এ নেতার কৃপায় পঞ্চাশ হাজারে আমাকে খালাস দেয়া হলো। ওখানে থাকতে জেনেছি, গালের খোঁচা খোঁচা দাড়িই আমাকে এ বিপদে ফেলেছিল। যারা শিবির করে তাদের নাকি এ রকম দাড়ি থাকে। আমাদের সাথে একটা ছেলে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর অ্যারেস্ট হয়েছিল। তার মাথায় টুপি থাকাই ছিল তার অপরাধ।
তাই বন্ধুদের পরামর্শে এখন নিজেকে অনেকখানি বদলে ফেলেছি। সব সময় গায়ে বাঙালি আর চেগুয়েভারা মার্কা গেঞ্জি থাকে। রপ্ত করেছি সিগারেট টানা। নতুন মোবাইল সেটে অশ্লীল আর পর্ণো ছবি রেখেছি। অর্থ্যাৎ শিবিরের ছেলেরা যা করেনা, সেসবে অভ্যস্থ হচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা, ক'দিন আগে যোগ দিয়েছি ছাত্রলীগে। কারণ আমি বাচলে বাপের নাম। জনগণের প্রতি আহ্বান, যারা মুখে দেশপ্রেমের শ্লোগান ধরলেও অন্তরে আমার এ শ্লোগানকে লালন করেন, তার লীগের পতাকা তলে শামিল হয়ে ভাল খান, ভাল থাকুন এবং পুলিশি ঝামেলা থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখুন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





