গ্রিক পুরাণের দেব-দেবী : বিচিত্র ,বীরত্ব, প্রেম-বিশ্বাস-ত্যাগে পরিপূর্ণ জীবনকাহিনী ২ দেখতে : Click This Link
গ্রিক পুরাণের দেব-দেবী : বিচিত্র ,বীরত্ব, প্রেম-বিশ্বাস-ত্যাগে পরিপূর্ণ জীবনকাহিনী ৩ দেখতে : Click This Link
এবার জানব গ্রিক পুরাণের সঙ্গীতের দেবতা অর্ফিউস সর্ম্পকে:
অর্ফিউস হলেন মহাকাব্যের উপদেবী ক্যালিওপির পুত্র। কেউ বলেন, অর্ফিউসের পিতা গ্রিক দেবতা অ্যাপোলো। কারও মতে থ্রেসের এক রাজকুমার হলেন অর্ফিউসের পিতা।
অর্ফিউস ছিলেন সঙ্গীতবিদ্যায় জন্মসিদ্ধ পুরুষ। সঙ্গীতের উপদেবী মিউজ স্বয়ং তাকে সঙ্গীত শিক্ষা দিয়েছিলেন।
অর্ফিউস যে বীণাটি বাজাতেন সেটি ছিল সোনার। এ বীণা অ্যাপোলো তাকে দান করেন। এই সোনার বীণায় অর্ফিউস যখন সুর তুলতেন তখন বনের পশুরা তাদের হিংস্রতা ভুলে অর্ফিউসের পাশে ভিড় করে দাঁড়াত। প্রবহমান নদীর স্রোত, ঝরনাধারা যেত থেমে। এমনকি নিশ্চল পাহাড় ও গাছপালাও সচল হয়ে উঠতো অর্ফিউসের বীণাবাদনে।
শুধু গায়ক ও বীণা বাদকই নন, বীর হিসেবেও খ্যাতি ছিল অর্ফিউসের। গ্রিক বীর জ্যাসন যে বীরদের নিয়ে কোলবিসে সোনালি চামড়া আনতে যান তাদের মধ্যে অর্ফিউসও ছিলেন। কবি হিসেবেও খ্যাতি ছিল অর্ফিউসের।
ওই অভিযান থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে ইউরিদাইস নামে এক বন পরীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে বিবাহদেবতা হাইমেন স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে এক চরম দুর্লক্ষণ দেখা গেল। হাইমেনের হাতের মশালটিকে কোনোভাবেই জ্বালানো গেল না। সবাই বুঝে নিলো এই পরিণয়ের পরিণাম শুভ হবে না।
হলোও তাই। সুন্দরী ইউরিদাইসকে একদিন বনের মধ্যে একাকী দেখে মুগ্ধ হলেন মৌমাছির দেবতা অ্যারিস্টিউস। আসক্তির বসে তিনি ইউরিদাইসের পশ্চাদ্ধাবন করলেন। পলায়নপর ইউরিদাইসকে ঘাসের মধ্য থেকে হঠাৎ বেরিয়ে আসা একটি সাপ দংশন করল। কোনোমতে তিনি উপস্থিত হলেন অর্ফিউসের কাছে। তারপর স্বামীর পদপ্রান্তে মরণঘুমে লুটিয়ে পড়লেন। শোকার্ত অর্ফিউস ইউরিদাইসকে ফিরিয়ে আনতে মৃতের রাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করলেন। হাতে তার বীণা। বীণার সুরে শোকের বিলাপ। সেই সুর শুনে বিহ্বল পাতালপুরীর নদীর মাঝি ক্যারন তাকে পাতালপুরীর নদী স্টিক্স পার করে দিলো। অর্ফিউস পেঁৗছালেন পাতালের রাজা রানী হেডিস ও পার্সিফোনের সম্মুখে। তাদের সামনে এসে বীণায় নতুন সুরের ঝঙ্কার তুললেন তিনি। তার অনিন্দ্য সঙ্গীত প্রার্থনায় পাতাল রাজ হেডিস ও পাতাল রানী পার্সিফোন মুগ্ধ হলেন। হেডিস অনুমতি দিলেন ইউরিদাইস স্বামীর সঙ্গে মর্ত্যজীবনে ফিরে যেতে পারবে।
কিন্তু একটা শর্ত দিলেন পাতালরানী পার্সিফোন। অর্ফিউস সামনে থাকবেন আর ইউরিদাইস তার অনুগামিনী হবেন কিন্তু যতক্ষণ পাতালের সীমা দু'জনে পার না হবেন ততক্ষণ অর্ফিউস পেছন ফিরে তাকাতে পারবেন না। তাকালেই ইউরিদাইসকে চিরকালের জন্য হারাতে হবে। অর্ফিউস ধীরে ধীরে অগ্রসর হলেন মর্ত্যভূমির উদ্দেশে। পেছনে হউরিদাইস। সর্পাহত পা নিয়ে তখনও ভালো করে হাঁটতে পারছেন না তিনি।
দু'জনে যখন পাতালের তমসারাজ্য প্রায় পেরিয়ে এসেছেন তখন সংশয় দেখা দিল অর্ফিউসের মনে। মনে হতে লাগলো ইউরিদাইস বুঝি তার পিছু পিছু আসছেন না। ক্ষণিকের দুর্বলতায় অর্ফিউস পেছন ফিরে তাকালেন আর সেই মুহূর্তেই আর্তরবে শেষ বিদায় জানিয়ে মৃত্যুর রাজ্যে চিরকালের মতো হারিয়ে গেলেন ইউরিদাইস।
এবার অর্ফিউস তার ভুল বুঝতে পারলেন। কোনো রকম মর্ত্যভূমিতে ফিরে এসে নীরব নিস্পন্দ অবস্থায় পাগলের মতো পড়ে রইলেন অর্ফিউস। তার বীণার তার গেল ছিঁড়ে। তার কণ্ঠ নীরব হয়ে গেল চিরতরে।
আজ এ পর্যন্ত , ইচ্ছে আছে আর ও দেবতা-দেবীদের গল্প শোনানোর ।