somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যোগেন মণ্ডল : নমশূদ্র মুসলিম ঐক্য ও বাংলার তপশিলী রাজনীতির এক অধ্যায়

০২ রা মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যোগেন মণ্ডল বরিশালের মাটি থেকে উঠে এসে গোটা উপমহাদেশের রাজনীতিতে একসময়ে বড়সড় প্রভাব ফেলেছিলেন। বিশেষত বাংলার নমশূদ্র আন্দোলনের একটি ধারার তিনি ছিলেন প্রধান প্রতিনিধি। ১৯০৪ এ তাঁর জন্ম। কৈশোর ও প্রথম যৌবনে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটা অত্যন্ত সংবেদনশীল পর্ব তিনি প্রত্যক্ষ করে থাকবেন অসহযোগ ও খিলাফৎ আন্দোলনের দিনগুলিতে। কিন্তু সেই আন্দোলন বা সক্রিয় রাজনীতি থেকে অনেকদিন পর্যন্ত তিনি যথেষ্ট দূরে ছিলেন। কলকাতা থেকে আইন পাশ করে তখন তিনি বরিশালের এক প্রভাবশালী উকিল। ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনের সময়ে তিনি রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন, তখন যোগেন মণ্ডলের বয়েস ৩৩।
এই নির্বাচনে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং কংগ্রেসী প্রার্থী জমিদার সরল দত্তকে পরাস্ত করেন। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল যে আসন থেকে তিনি বিজয়ী হন সেটি (তপশিলী) সংরক্ষিত আসন ছিল না, একটি সাধারণ আসন ছিল।
নির্বাচনের এই অপ্রত্যাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অনেকে যোগেন্দ্রনাথকে বলেন এই বিজয়ের পেছনে আছে এক নতুন সামাজিক উত্থান। বর্ণহিন্দুদের বিরুদ্ধে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ। তপশিলীরা ছাড়াও মুসলমানরা তাকে বিশেষভাবে সমর্থন করাতেই এই সাফল্য এসেছে। এই সমীকরণটি যোগেন্দ্রনাথকে বিশেষভাবে ভাবিয়ে থাকবে এবং তার সারা জীবনের রাজনৈতিক অবস্থানে এই সমীকরণ ভাবনা গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে।
আইন সভায় প্রবেশের পর যোগেন্দ্রনাথ একটি গুরূত্বপূর্ণ অবস্থান নেন। বিভিন্ন দলের (বা নির্দল) প্রতিনিধি হিসেবে মোট ৩১ জন তপশিলী প্রার্থী আইনসভায় বিজয়ী হয়ে এসেছিলেন। দল নিরপেক্ষভাবে তপশিলী প্রতিনিধিদের একটি মঞ্চে যোগেন মণ্ডল সমন্বিত করেন। বিভিন্ন ইস্যুতে নিজেদের জাতের স্বার্থে যেন তারা ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন – এটাই ছিল এই সমন্বয়ের মূল লক্ষ্য। তাঁর ঘোষণা ছিল নমঃশূদ্রদের স্বার্থে কাজ হলে তাঁরা সরকারকে রাখবেন, নচেৎ তার বিরুদ্ধে গিয়ে সরকার ফেলে দেবার চেষ্টা করবেন। বস্তুত বাংলার আইনসভায় নমঃশূদ্র ব্লকের এটাই ছিল প্রথম স্বাধীন আত্মঘোষণা।
ইংরেজরা যে বর্ণহিন্দু আন্দোলনের বিরুদ্ধে নমঃশূদ্রদের উত্থানকে ব্যবহার করে নিতে চাইছে এবং সেজন্য তাদের কিছু কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলছে - একথা যোগেন মণ্ডল বুঝেছিলেন। কিন্তু এই সুযোগ গ্রহণ নিয়ে তাঁর কোনও দ্বিধা ছিল না। তিনি মনে করতেন একসময়ে ব্রিটিশের দাক্ষিণ্যে জমিদারী বা চাকরী পেয়েই বর্ণহিন্দু বাবুসমাজের উত্থান হয়েছিল। নিজেদের জাতের উত্থানের জন্য ব্রিটিশ রাজের দাক্ষিণ্যগুলিকে ব্যবহার করে নেওয়ার পক্ষেই ছিলেন তিনি।
বর্ণহিন্দুদের বিরুদ্ধে তপশিলীদের নির্দিষ্ট অবস্থান তিনি সবসময়ে বজায় রাখতে চেয়েছেন। তিনি বলতেন এই দেশ হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায় নি, তপশিলীদের আলাদা অবস্থান রয়েছে এবং তারা হিন্দুসমাজের অংশ নন। গান্ধীজীর হরিজন আন্দোলনের সূত্রে তপশিলীদের হিন্দু সমাজের অন্তর্ভূক্ত করে নেওয়ার রাজনীতির বিরোধী ছিলেন তিনি।
বঙ্গীয় রাজনীতিতে যোগেন্দ্রনাথ সুভাষচন্দ্রের অনুগামী হয়েছিলেন। কিন্তু সুভাষচন্দ্রকেও তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর অবস্থান। জাতীয় কংগ্রেস থেকে সুভাষচন্দ্রের বিদায়ের পরও তিনি সুভাষচন্দ্রের সঙ্গেই ছিলেন। সুভাষচন্দ্রের দেশত্যাগের পর তিনি আম্বেদকরের শিডিউলড কাস্ট ফেডারেশনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন।১৯৪৩ সালে শ্যামাপ্রসাদ-হক মন্ত্রীসভার পতন হলে মুসলিম লীগ মন্ত্রীসভা গঠিত হয় এবং যোগেন মণ্ডল সেখানে মন্ত্রীপদ পান। ১৯৪৬ সালে সংবিধান সভার নির্বাচনে আম্বেদকর মহারাষ্ট্র থেকে জিততে ব্যর্থ হলে যোগেন মণ্ডল তাঁকে বাংলা থেকে জিতিয়ে সংবিধান সভায় পাঠান। ভারতীয় রাজনীতিতে এই ঘটনাটি স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক তাৎপর্যে মণ্ডিত হয়ে যায়।
অন্তবর্তীকালীন মন্ত্রীসভায় মুসলিম লীগ যখন যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয় তখন যোগেন মণ্ডল সেখানে ভারতের আইনমন্ত্রী হন। কিন্তু দেশভাগের প্রসঙ্গ রাজনীতিতে যত সামনে আসতে থাকে ততই তপশিলী রাজনীতিতে যোগেন মণ্ডলের অবস্থানটি জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। যোগেন মণ্ডল মনে করেছিলেন এদেশের বর্ণহিন্দুরাই তপশিলীদের প্রধান শত্রু। তপশিলীদের মতোই বাংলার মুসলিমরাও বর্ণ হিন্দুদের দ্বারা শোষিত। বর্ণ হিন্দুদের বিরুদ্ধে তপশিলী এবং মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। মুসলিমরা তপশিলীদের স্বাভাবিক মিত্র – এটাই ছিল যোগেন মণ্ডলের রাজনৈতিক অবস্থানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু যোগেন মণ্ডলের এই অবস্থান দেশভাগ জনিত আবেগের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তপশিলী সম্প্রদায় একেবারেই গ্রহণ করেন নি। যোগেন্দ্রনাথের ঐক্যবদ্ধ বাংলাকে নিয়ে পাকিস্থানে যোগ দেওয়ার পক্ষে জোরদার প্রচার স্বত্ত্বেও বাংলার আইনসভার প্রায় সমস্ত তফসিলি সদস্য বাংলা বিভাজনের দিকে ঝোঁকেন। এই সময় থেকে তপশিলীদের মধ্যে হিন্দু মহাসভার প্রভাব অনেকটা বেড়ে যায়।
যোগেন মণ্ডল দেশভাগের সময় ঐক্যবদ্ধ বাংলার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু সোরাবর্দি শরৎ বসুর ঐক্যবদ্ধ বাংলার প্রস্তাব বাংলার হিন্দু প্রধান জেলাগুলির বাঙালিরা গ্রহণ করে নি। তাদের আশঙ্কা ছিল প্রথমে পৃথক ঐক্যবদ্ধ বাংলা গঠিত হলেও মুসলিম প্রধান এই অঞ্চল একসময়ে পাকিস্থানে যোগ দেবে। তাই হিন্দুপ্রধান জেলাগুলির বাঙালিরা বঙ্গবিভাজনের পক্ষে সোচ্চারে সায় দিয়েছিলেন। বাংলার সে সময়ের অগ্রগণ্য বুদ্ধিজীবীরাও সে সময় লন্ডনে যৌথভাবে টেলিগ্রাম পাঠিয়ে বঙ্গ বিভাজনের অনুরোধ জানান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন যদুনাথ সরকার, রমেশচন্দ্র মজুমদার, মেঘনাদ সাহা, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ খ্যাতিমান বিদ্বৎজন।
তপশিলী রাজনীতির ভেতর থেকে যোগেন মণ্ডলের সম্পূর্ণ উল্টোমত নিয়ে উঠে আসেন লন্ডন ফেরৎ তরুণ ব্যরিস্টার প্রসন্ন ঠাকুর। তিনি ছিলেন হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বংশের সন্তান, যারা নমঃশূদ্রদের কাছে পরম গুরু হিসেবে বন্দিত। দেশভাগ সংক্রান্ত নতুন পরিস্থিতিতে তপশিলীদের বর্ণহিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্ক সংক্রান্ত যোগেন মণ্ডলের তাত্ত্বিক লাইনটি বাস্তবে তেমন কোনও সমর্থন খুঁজে পায় নি। তারা মুসলিমদের বিপরীতে বর্ণহিন্দুদের সঙ্গেই থাকতে পছন্দ করেছে।
যোগেন মণ্ডল তপশিলী রাজনীতির মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাকিস্থানে চলে যান জিন্নার আহ্বানে এবং সেখানকার প্রথম আইনমন্ত্রী হন। কিন্তু জিন্নার মৃত্যুর পরে তিনি সেখানে কোণঠাসা হয়ে পড়েন এবং ১৯৫০ এ পাকিস্থানকে মুসলিম রাষ্ট্র করার দাবি জোরালো হলে এবং সেখানে কেন হিন্দু যোগেন মণ্ডল মন্ত্রী থাকবেন এই প্রশ্ন উঠলে শারীরিক আক্রমণের আশঙ্কায় ভগ্ন মনোরথ হয়ে তিনি আইনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতে ফিরে আসেন। পাকিস্থান ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র থাকবে - জিন্নার এই আশ্বাসের মরীচিকা ততদিনে তাঁর সামনে লুপ্ত হয়ে গেছে, তপশিলী সম্প্রদায়ও কোনওভাবেই বর্ণহিন্দুদের বিরুদ্ধতায় নিজেদের মুসলিমদের স্বাভাবিক মিত্র বলে মনে করে নি। ফলে দেশভাগ পরবর্তী দিনগুলিতে তপশিলী রাজনীতির মূল ধারা থেকে তিনি ভীষণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। ১৯৬৮ তে মৃত্যু পর্যন্ত এই রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা তাঁর সঙ্গী ছিল।
যোগেন মণ্ডলের রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতাকে বোঝা এবং দলিত মুসলিম ঐক্যের সমস্যাগুলিকে বোঝার জন্য আমাদের বিশেষ সহায়ক হতে পারে পাকিস্থানের আইনমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করে ভারতে ফেরার সময় লেখা যোগেন মণ্ডলের দীর্ঘ পদত্যাগ পত্রটি। এই পদত্যাগ পত্রটি বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে দেখিয়েছে আন্তরিক চেষ্টা স্বত্ত্বেও দলিত মুসলিম ঐক্যের সম্ভাবনা কেন কীভাবে বিনষ্ট হল।
[যোগেন মণ্ডলের পদত্যাগপত্র Click This Link
ফজলুল হক মন্ত্রীসভার পতনের পর খাজা নিজামুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগের সরকার বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২১ জন তপশিলী সদস্য নিয়ে গঠিত বিধায়ক দলের নেতা হিসেবে যোগেন মণ্ডল এই সরকারকে সহযোগিতা করতে সম্মত হন। সমর্থনের ভিত্তি ছিল কিছু নির্দিষ্ট বিবেচনা ও শর্ত। তপশিলী ও মুসলিমদের মধ্যে যোগেন মণ্ডল অনেক মিল দেখতে পান। উভয় সম্প্রদায়ই ছিল মূলত কৃষক ও ক্ষেতমজুর। উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই ছিল অনেক জেলে এবং শিক্ষার দিক থেকে উভয় সম্প্রদায়ই তুলনামূলক বিচারে ছিল অনেক পিছিয়ে পড়া। [যদিও হরিচাঁদ গুরুচাঁদ এর সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে মতুয়াদের মধ্যে শিক্ষার বিকাশ ঘটছিল] নিজামুদ্দিনের মুসলীম লীগ মন্ত্রীসভাকে সমর্থনের বিনিময়ে তপশিলীদের জন্য বেশ কিছু আইনী ও প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধে যোগেন মণ্ডল হস্তগত করার সম্ভাবনা দেখেছিলেন। মন্ত্রীসভায় তিনজন তপশিলী সম্প্রদায়ের মানুষকে জায়গা দেওয়া, তপশিলীদের শিক্ষার জন্য বার্ষিক ব্যয় বরাদ্দ পাঁচ লক্ষ টাকা করা এবং সরকারী চাকরীতে সম্প্রদায় ভিত্তিক সংরক্ষণের বিষয়টি তপশিলীদের দাবি হিসেবে সামনে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রথম দাবিটি বাস্তবায়িত হয়েছিল।
১৯৪৬ সালের নির্বাচনের পর সুরাবর্দীর নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ মন্ত্রীসভা ক্ষমতায় আসে। যোগেন মণ্ডল ছিলেন অন্যতম ক্যাবিনেট মন্ত্রী। মন্ত্রীসভা কাজ শুরু করার অনতি পরেই ১৬ অগস্ট সুরাবর্দী ‘ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে’ র ডাক দেন। দাঙ্গায় প্রথমে কোলকাতা ও তারপর নোয়াখালি বিধ্বস্ত হলো। হিন্দুরা যোগেন মণ্ডলের পদত্যাগ দাবি করল মুসলিম লীগ মন্ত্রীসভা থেকে। তার তপশিলী সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষকে দাঙ্গার বলি হতে হত। মহিলারা ধর্ষিতা হলেন নির্বিচারে। এতদ স্বত্ত্বেও যোগেন মণ্ডল সুরাবর্দী মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করা দূরে থাক, সেই মন্ত্রীসভাকে বাঁচানোর জন্য উদ্যোগী হলেন। পদত্যাগ পত্রের এই অংশটি উদ্ধৃত করা দরকার –
The 16th day of August of that year was observed in Calcutta as 'The Direct Action Day' by the Muslim League. It resulted, as you know, in a holocaust. Hindus demanded my resignation from the League Ministry. My life was in peril. I began to receive threatening letters almost every day. But I remained steadfast to my policy. Moreover, I issued an appeal through our journal 'Jagaran' to the Scheduled Caste people to keep themselves aloof from the bloody feud between the Congress and the Muslim League even at the risk of my life. I cannot but gratefully acknowledge the fact that I was saved from the wrath of infuriated Hindu mobs by my Caste Hindu neighbours. The Calcutta carnage was followed by the 'Noakhali Riot' in October 1946. There, Hindus including Scheduled Castes were killed and hundreds were converted to Islam. Hindu women were raped and abducted. Members of my community also suffered loss of life and property. Immediately after these happenings, I visited Tipperah and Feni and saw some riot-affected areas. The terrible sufferings of Hindus overwhelmed me with grief, but still I continued the policy of co-operation with the Muslim League. Immediately after the massive Calcutta Killing, a no-confidence motion was moved against the Suhrawardy Ministry. It was only due to my efforts that the support of four Anglo-Indian Members and of four Scheduled Caste members of the Assembly who had hitherto been with the Congress could be secured, but for which the Ministry would have been defeated.
সম্ভবত এই সময় থেকেই যোগেন মণ্ডলের সঙ্গে তপশিলী সম্প্রদায়ের মনোজগতের গভীর বিচ্ছিন্নতা শুরু হয় এবং তা ক্রমেই বাড়তে থাকে। অবশ্য মুসলিম লীগ সরকারকে বাংলায় বাঁচানোর ব্যক্তিগত পুরস্কার হিসেবে তার কাছে কেন্দ্রীয় সরকারে মন্ত্রী হিসেবে যোগদানের প্রস্তাব আসে সুরাবর্দীর তরফ থেকে। যোগেন মণ্ডল এক ঘন্টার চিন্তাভাবনার মধ্যেই যোগদানে সম্মতি দেন ও লন্ডনে টেলিগ্রাম করে আম্বেদকরের কাছে এর অনুমতি চান। আম্বেদকরের অনুমতি এসে যায়। যোগেন মণ্ডল ভারতের আইনমন্ত্রী হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় যোগ দেন।
যোগেন মণ্ডল জানিয়েছেন ৩ জুন ১৯৪৭ এ ব্রিটিশরা যখন দেশভাগের কথা ঘোষণা করল, তিনি আকাশ থেকে পড়েছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল বাস্তবে দেশভাগ হবে না এবং এটা মুসলিম লীগের তরফে একটি দর কষাকষির অস্ত্র। বাস্তবে যখন পাকিস্থান এর ঘোষণা হল, তখন সেটি শরিয়ত আইন নির্ভর একটি ইসলামিক রাষ্ট্র হয়ে উঠবে – এমনটাই যোগেন মণ্ডল ভেবেছিলেন। ১৯৪০ এর লাহোর অধিবেশনে মুসলিম লীগের নেওয়া প্রস্তাব এরকম ধারণাকে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্রয় দিয়েছিল। বাস্তবে এরকম একটি রাষ্ট্র নির্মিত হচ্ছে জানলে তাতে তপশিলীদের নিয়ে যোগেন মণ্ডল কতটা যোগ দিতে চাইতেন সেটা নিয়ে সংশয় আছে। কিন্তু এই সময় স্বয়ং জিন্না ১৯৪৭ এর ১১ অগস্ট ঘোষণা করেন পাকিস্থানে হিন্দু ও মুসলিম নাগরিকদের সমান অধিকার থাকবে। পরে অবশ্য যোগেন মণ্ডল এই প্রতিশ্রুতির অন্তঃসার শূন্যতা আবিষ্কার করেন এবং লক্ষ্য করেন পাকিস্থানে আসলে যা চলছে তা হল, “dividing the people on the basis of religion into full-fledged Muslim citizens and zimmies being under the perpetual custody of the Islamic State and its Muslims citizens.”
সেই পাকিস্থানের চেহারা দেখার আগে জিন্নার সম অধিকারের কথায় আশ্বস্ত যোগেন মণ্ডল বাংলা ভাগের বিরোধিতা করেন এবং অখণ্ড বাংলাকে নিয়ে পাকিস্থানে যোগ দেবার কথা বলেন। গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং এর সময় যদি যোগেন মণ্ডলের তপশিলী সমাজের চিন্তা ভাবনা থেকে বড় ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়, তবে তা আরো পাকাপাকি চেহারা পায় ঐক্যবদ্ধ বাংলা নিয়ে পাকিস্থানে যোগ দেবার পক্ষে প্রচারাভিযান এর মধ্য দিয়ে। যোগেন মণ্ডলের নিজের ভাষায়, “In launching a campaign in this regard I had to face not only tremendous resistance from all quarters but also unspeakable abuse, insult and dishonour. With great regret, I recollect those days when 32 crores of Hindus of this Indo-Pakistan Sub-continent turned their back against me and dubbed me as the enemy of Hindus and Hinduism, but I remained undaunted and unmoved in my loyalty to Pakistan.”
১৪ অগস্ট ১৯৪৭ এ লিয়াকত আলি খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্থানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় যোগেন মণ্ডল অন্তর্ভূক্ত হন। তিনি ছিলেন পাকিস্থানের আইনমন্ত্রী। বাংলা প্রদেশের (পূর্ব পাকিস্থান) মন্ত্রীসভা গঠিত হয় খাজা নিজামুদ্দিনের নেতৃত্বে। খাজা নিজামুদ্দিন ও লিয়াকত আলি খানের কাছে যোগেন মণ্ডল দাবী রেখেছিলেন যাতে দুজন তপশিলী পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক মন্ত্রীসভায় জায়গা পান। প্রতিশ্রুতি মিললেও বাস্তবে এই দাবী পূর্ণ হয় নি। খাজা নিজামুদ্দিনের পর নুরুল আমীন পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, কিন্তু তিনিও যোগেন মণ্ডল তথা পূর্ববঙ্গের তপশিলীদের দাবী পূরণ করেন নি।
যোগেন মণ্ডল তাঁর পদত্যাগপত্রে পাকিস্থানের মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দের বিশ্বাসঘাতকতার কথা সবিস্তারে বলেছিলেন। দেশভাগের আগে তপশিলী জাতির মনজয়ের জন্য সুরাবর্দী প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন যে তপশিলীরা যে সমস্ত অধিকার ভোগ করেন, পাকিস্থানে এলে তাদের সেই অধিকারের কিছুমাত্র কমানো তো হবেই না, বরং তারা আরো অনেক অধিকার পাবেন। এটা শুধু সুরাবর্দীর ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতি ছিল না, ছিল মুসলিম লীগ মন্ত্রীসভার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার প্রতিশ্রুতি। সেসবের কিছুই রক্ষিত হয় নি। লিয়াকত আলিকে লেখা পদত্যাগ পত্রে যোগেন মণ্ডল নির্দিষ্টভাবে জানিয়েছেন, “after the death of Qaid-e-Azam, the Scheduled Castes have not received a fair deal in any matter. You will recollect that from time to time I brought the grievances of the Scheduled Castes to your notice. I explained to you on several occasions the nature of inefficient administration in East Bengal. I made serious charges against the police administration. I brought to your notice incidents of barbarous atrocities perpetrated by the police on frivolous grounds. I did not hesitate to bring to your notice the anti-Hindu policy pursued by the East Bengal Government especially the police administration and a section of Muslim League leaders.”
এই হিন্দু বিরোধী অবস্থান, হিন্দুদের ওপর আক্রমণের অসংখ্য ঘটনা, তাতে পুলিশ প্রশাসনের পরিকল্পিত নিষ্কৃয়তা ও এগুলির পেছনে সক্রিয় উষ্কানির একের পর এক ঘটনা পদত্যাগপত্রটির ১১ থেকে ৩৫ সংখ্যক অধ্যায়ে তিনি বিস্তারিতভাবে বলেছেন। এগুলির মধ্যে তপশিলী সহ সমস্ত হিন্দুদের কাছে পূর্ব পাকিস্থান তথা পাকিস্থান কীভাবে নরক ও বিভীষিকা হয়ে উঠেছিল, তার জীবন্ত দলিল উপস্থিত। নমশূদ্রদের ওপর চাপানো মিথ্যা মামলা, সশস্ত্র বাহিনীর তপশিলীদের ঘর তল্লাশির নামে লুঠপাট ও অত্যাচার, নাচোলে কমিউনিস্ট দমনের নামে সার্বিকভাবে হিন্দুদের ওপর নামিয়ে আনা অকথ্য অত্যাচার ক্রমাগত চলছিল। এর ওপরেই আসে ১০ ফেব্রুয়ারী ১৯৫০ এ শুরু হওয়া দাঙ্গার আঘাত, যা ঢাকা থেকে পূর্ব বঙ্গের বিস্তৃত অঞ্চলে অচিরেই ছড়িয়ে পড়েছিল। এতে হাজার হাজার হিন্দুকে আক্রান্ত হতে হয়। উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের চোখের সামনেই হিন্দু বাড়িগুলিতে লুঠপাট চালানো হয়, সেগুলিতে আগুন লাগানো হয়। সব মিলিয়ে দশ হাজার হিন্দুকে এই দাঙ্গায় হত্যা করা হয়। এই সময়েই পূর্ব পাকিস্থান থেকে হাজারে হাজারে তপশিলী উদ্বাস্তুসহ ব্যাপক সংখ্যায় হিন্দু পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে পালাতে থাকেন। যোগেন মণ্ডল এই ভয়াবহ অবস্থায় দাঁড়িয়েও শেষবারের মত তার তাত্ত্বিক অবস্থানকে মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পূর্ববঙ্গের জেলায় জেলায় গ্রামে গ্রামে ঘুরে তিনি তপশিলীদের সাহস দিতে থাকেন ও তাদের পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি ছাড়তে নিষেধ করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ৮ মার্চ এর দিল্লি চুক্তির ধারাগুলি কঠোরভাবে কার্যকর করার দরকার ছিল। কিন্তু তা করা হয় নি। পূর্ব পাকিস্থানের সরকার, প্রশাসন ও মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দ হিন্দুদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেওয়া দূরে থাক, সম্পূর্ণভাবেই উলটো কাজ করছিলেন। দিল্লি চুক্তির পর সাহস করে যেসব হিন্দু ঘরে ফিরেছিলেন তাদের বাড়ি বা সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া হয় নি। খাজা নিজামুদ্দিনের পর নুরুল আমিন পূর্ব বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হলেও অবস্থা পাল্টায় নি। সংখ্যালঘু হিন্দুদের আস্থা অর্জনের কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ করা হয় নি। প্রশাসন ও শাসক দলের দিক থেকে যে আচরণ চলতে থাকে, তা থেকে যোগেন মণ্ডলের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় পূর্ব পাকিস্থান থেকে হিন্দু বিতাড়ণই প্রকৃত লক্ষ্য – “I would like to reiterate in this connection my firm conviction that East Bengal Govt. is still following the well-planned policy of squeezing Hindus out of the Province.”
“the present condition is not only unsatisfactory but absolutely hopeless and that the future completely dark and dismal” – এই উপলব্ধি থেকে যোগেন মণ্ডল বাধ্য হন লিয়াকত আলি খানের মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করে ভারতে ফিরে আসতে। পাকিস্থান গঠনের আগে থেকেই তপশিলী ও মুসলিম মেলবন্ধনের যে আদর্শ সামনে রেখেছিলেন যোগেন মণ্ডল, যে আদর্শের ভিত্তিতে তাঁর যাবতীয় সক্রিয়তা, তাকে একের পর এক পর্যদুস্ত হতে দেখলেন তিনি এবং সরে গেলেন সক্রিয় রাজনীতি থেকে। এই বিচ্ছিন্নতা শুধু তাঁর একক বিচ্ছিন্নতা ছিল না, ছিল বাংলার নিম্নবর্গের দুই প্রধান শরিক তপশিলী ও মুসলিমদের মধ্যে তৈরি হওয়া এক বিস্তর ব্যবধানও।
যোগেন মণ্ডল তার তত্ত্বায়নের শুরুটা করেছিলেন একটা সঠিক বিচার থেকেই। তপশিলী এবং মুসলিমদের মূলগত ঐক্যের একটা জায়গা ছিলই। সেটা ছিল একটা শ্রেণি অবস্থান থেকে। উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই ছিলেন ব্যাপক সংখ্যক দরিদ্র কৃষক, ভূমিহীন কৃষক, জেলে, হস্তশিলী। কিন্তু যোগেন মণ্ডল তার রাজনীতি শ্রেণির প্রশ্নটিকে সামনে রেখে বিকশিত করতে চান নি। তিনি সামনে রেখেছিলেন আইডেনটিটিগত প্রশ্নকে। তার মধ্যেই জড়িয়ে রেখেছিলেন তাদের আর্থিক বিষয়কেও। মুসলিম উচ্চবর্গীয় শাসকদের আগ্রাসনের সামনে যোগেন মণ্ডলের নেতৃত্বাধীন তপশিলীরা নিজেদের জাতপাতের অবস্থানটিকে নিয়ে বেশিদূর এগোতে চান নি। উচ্চবর্গীয় হিন্দুদের সঙ্গেই বরং সামীপ্য বোধ করেছিলেন ‘বিধর্মী’ দের বিরুদ্ধে। ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টি এবং যোগেন মণ্ডলের তপশিলী উদ্যোগ প্রত্যক্ষভাবে শ্রেণিগত অবস্থান ও দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন সংগ্রামে সামিল হলে শেষপর্যন্ত উভয় ধর্মের উচ্চবর্গীয় শাসকদের সামনে হয়ত তা এক বড় এবং যৌথ চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারত।
আরেকটি কথাও এ প্রসঙ্গে মনে রাখার। আম্বেদকর ধর্মী আন্দোলনে আমরা বারবার দেখেছি গণ আন্দোলন, সংসদ বহির্ভূত গণ সংগ্রামের পরিবর্তে আইনী ও প্রশাসনিক পথে সমস্যা সমাধানের দিকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব। আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সামাজিক ক্ষমতা-ভারসাম্য বদলের পরিবর্তে শাসকের সঙ্গে প্রশাসনিক স্তরে বোঝাপড়ার চেষ্টা। তপশিলীদের জীবন জীবিকার প্রশ্নে কৃষি আন্দোলন, জমি আন্দোলন ও গণ আন্দোলনের যে ভূমিকা থাকলে তা এক অন্য মাত্রায় পৌঁছতে পারত, কেবল প্রশাসনিক ব্যবস্থাদি ও সংরক্ষণের মধ্যে দিয়ে সেখানে পৌঁছানো সম্ভব নয়। অথচ আম্বেদকার ধারার রাজনীতিবিদ হিসেবে যোগেন মণ্ডল গণ আন্দোলনের চেয়ে প্রশাসনিক পথেই মূলত সমাধান খুঁজতে চেয়েছেন। যোগেন মণ্ডলের পদত্যাগপত্রের প্রথম অংশে আমরা লক্ষ্য করি মন্ত্রীসভায় তপশিলী মন্ত্রীর সংখ্যা নিয়ে ক্ষমতার অলিন্দে তার দীর্ঘ "লড়াই" এর কথা। সংরক্ষণসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আদায়ের চেষ্টার কথা। কিন্তু ভূমি সংস্কার বর্গা ফসলের ভাগ সংক্রান্ত গণ আন্দোলনের মত প্রসঙ্গগুলিতে (সমকালীন সময়ে তেভাগা আন্দোলনে যার তুঙ্গ রূপ দেখা গিয়েছিল) যোগেন মণ্ডল তেমন সক্রিয় বা সোচ্চার নন। এটা অবশ্য যোগেন মণ্ডলের একক ব্যক্তিগত প্রবণতা নয়। আম্বেদকর ধারার আন্দোলনে আমরা এর পরেও এরকম দৃষ্টান্ত বারবার পাই।
আম্বেদকর এর মৃত্যুর পর তার রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষনেতার পদে অভিষিক্ত হন দাদাসাহেব গাইকোয়াড। এই নির্বাচন ছিল নানা নিরিখেই অবশ্যম্ভাবী। বয়সের দিক থেকেও তিনি ছিলেন প্রবীণ, আন্দোলনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতাও তার ছিল। আম্বেদকরের প্রধান সহায়ক ছিলেন তিনিই। সেইসঙ্গে ছিলেন এক যথার্থ জননেতা। শীর্ষনেতার পদে আসীন হয়ে গাইকোয়াড সবচেয়ে বেশি জোর দিলেন ভূমিসংস্কারের ওপর। জমির লড়াই এর আগে কখনোই দলিত আন্দোলনে এত জোরের সাথে সামনে আসে নি এবং এত প্রভাব বিস্তার করে নি। এমনকী বাবাসাহেব আম্বেদকরের সময়েও নয়। অবশ্যই আম্বেদকরের নেতৃত্বে কোঙ্কন এলাকার ক্ষতিপ্রথার মত ভূস্বামীদের স্বার্থবাহী নিয়মের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন হয়েছিল, কিন্তু নতুন পর্যায়ের এই আন্দোলন গভীরতা ব্যাপ্তি ও প্রভাবে তাকে অনেকদূর ছাড়িয়ে যায়। সারা দেশের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে গাইকোয়াডের নেতৃত্বাধীন এই আন্দোলন বিপুল সমর্থনও পেয়েছিল। দলিতদের কাছ থেকে জমি কেন্দ্রিক আন্দোলন ব্যাপক সাড়া পেলেও রিপাবলিকান পার্টির অন্যান্য দলিত নেতারা বললেন - গাইকোয়াডের আন্দোলন কমিউনিস্ট মতাদর্শ প্রভাবিত এবং আম্বেদকরপন্থী আন্দোলনে এর কোনও জায়গা নেই। তারা আম্বেদকরের মত উদ্ধৃত করে বললেন এ ধরনের গণ আন্দোলন নৈরাজ্যকে প্রশ্রয় দেয় এবং সংসদীয় ব্যবস্থায় এর কোনও স্থান থাকতে পারে না। তারা এও বললেন জমি সংক্রান্ত বিষয়ের যদি কোনও সারবত্তা থাকে তবে তা আইনগত প্রক্রিয়ায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সামনে উপস্থাপন করা যেতে পারে।
ref - dalit leaders and movement in india - arun pal. page 155-156 (post ambedkar dalit movement - gaikwad vs others)
"গণ আন্দোলন নৈরাজ্যকে প্রশ্রয় দেয় এবং সংসদীয় ব্যবস্থায় এর কোনও স্থান থাকতে পারে না" "জমি সংক্রান্ত বিষয়ের যদি কোনও সারবত্তা থাকে তবে তা আইনগত প্রক্রিয়ায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সামনে উপস্থাপন করা যেতে পারে" - এই ধারার ভাবনার সঙ্গে যোগেন মণ্ডলের ব্যক্তিগত সামীপ্য কতটা ছিল সেটা অনুসন্ধানের বিষয়। তবে তিনিও যে আইনী ও প্রশাসনিক বিষয়কে জমি আন্দোলন, গণ আন্দোলনের চেয়ে বরাবর বেশি গুরূত্ব দিয়েছেন তা স্পষ্ট। বাংলার তপশিলী আন্দোলনে যোগেন মণ্ডলের নেতৃত্বাধীন ধারাটির সীমাবদ্ধতার এও ছিল আরেকটি দিক।
জাতিয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার তীক্ষ্ণ বিতর্কের পটভূমিতে তপশিলী ধারার নেতৃত্ব যোগেন মণ্ডল ও আম্বেদকরপন্থীদের হাত থেকে ক্রমশ সরে যেতে থাকে। যোগেন মণ্ডল পাকিস্থানের আইনমন্ত্রক থেকে পদত্যাগ করে এপার বাংলায় ফেরেন। কিন্তু তপশিলীদের নেতা হিসেবে তিনি আর নিজের জায়গা ফিরে পান নি। তপশিলীদের একাংশের নেতৃত্ব থাকে কংগ্রেসদের হাতে এবং অন্য অংশটি কমিউনিস্ট আন্দোলন ও গণ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়,যার আলোড়ন তোলা সূত্রপাত হয়েছিল তেভাগা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এবং কৃষক আন্দোলনের বিভিন্ন পর্বের মধ্যে দিয়ে তারা অচিরেই মূল স্রোতের রাজনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে যান।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×