somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের নোটবাতিলের আসল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতের ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল নিয়ে একপ্রস্থ তর্ক বিতর্ক, যুক্তির চাপান উতোর শুরু হয়েছিল নোট বাতিল প্রক্রিয়াটি ঘোষণার পর থেকেই। মানুষের হয়রানি, অনেক মানুষের মৃত্যু, অর্থনীতির ওপর এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে নানা চেতাবনী স্বত্ত্বেও শাসক দল ও তার সমর্থকেরা সেই সময় জোর গলায় দাবি করছিলেন এই সাময়িক দুর্ভোগ আমাদের মেনে নিতেই হবে বৃহত্তর স্বার্থের জন্য। তাদের বক্তব্য ছিল ভারতের কালো টাকার অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্য এই ইকনমিক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক অতি দরকারি এক পদক্ষেপ। ভারতের অর্থনীতিকে সাদা করার জন্য নেওয়া এই পদক্ষেপে দুর্নীতিবাজদের কাছে থাকা সব জাল নোট ধরা পড়ে যাবে, আটকে যাবে কর না দিয়ে বাড়িতে সাজিয়ে রাখা নোটের পাহাড়ও।

অবশেষে রিজার্ভ ব্যাঙ্কই কালো টাকা উদ্ধারের গল্পটাকে ফাঁসিয়ে দিল

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ৩০ অগস্ট, ২০১৭ তাদের যাবতীয় হিসাবনিকাশের পর জানিয়ে দিল যে ১৫.৪৪ লক্ষ কোটি টাকার নোট বাতিল করা হয়েছিল, তার ৯৯ শতাংশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কে আবার ফিরে এসেছে, যার পরিমাণ ১৫.২৮ লক্ষ কোটি টাকা। ফেরেনি মাত্র ১৬ কোটি টাকা বা ১ শতাংশ। এই ঘোষণার পর আমরা সবাই জেনে গেছি যে ভারতীয় অর্থনীতির যে টাকাটা নোটে সার্কুলেটেড হত, তার প্রায় সবটাই ফিরে এসেছে পুরনো পাঁচশো হাজার টাকার নোট বাতিলের পর। কালো টাকা বা জাল টাকা তেমন কিছুই ধরা পড়ে নি। কেন এই ঘটনাটা ঘটল তা আমাদের যেমন বুঝে নিতে হবে, তেমনি বুঝে নিতে হবে নোট বাতিলের আসল উদ্দেশ্যটা তাহলে কী ছিল! কেন মোদি এত ঢক্কানিনাদ করে এত বড় একটা প্রক্রিয়া আদৌ নামিয়েছিলেন? পুরোটাই মিস ক্যালকুলেশন নাকী না প্রচার করা কোনও গোপন অভিসন্ধি ? কোনও হিডেন অ্যাজেন্ডা যাকে চাপা দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও কালো টাকা বাতিলের জনমোহিনী গল্প দেশবাসীকে শোনানো হয়েছিল ?

কালো টাকা বা সম্পদ আসলে কীভাবে থাকে ?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিমুদ্রাকরণের নীতি নেবার পেছনে দুটি কারণের কথা উল্লেখ করেছিলেন। এক – সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর অর্থের যোগান বন্ধ করা এবং জাল টাকা উদ্ধার করা। দুই – কালো টাকা উদ্ধার করা। এই কালো টাকার পরিমাণ অত্যন্ত বেড়ে গেছে এবং ভারতের দারিদ্র ও অন্যান্য আর্থিক সঙ্কটের মূল কারণ। কিন্তু জাল টাকার পরিমাণ ভারতে খুব বেশি এরকম তথ্য নেই। দশ লক্ষ পিছু তা চারশোর বেশি নয় এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার তথ্যমতো সামগ্রিক ভাবে তা ৪০০ কোটি টাকার বেশি নয়। যদি আমরা মাথায় রাখি ১৭.৫ লক্ষ কোটি টাকার নোট বাজারে ঘোরাফেরা করে তবে শতাংশমাত্রার নিরিখে একে খুবই সামান্য মনে হবে। সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি টাকার প্রয়োজনে নোট জাল করে ঠিকই, কিন্তু রাষ্ট্রের ভেতরকার কিছু লোকের সাহায্য ব্যতীত এটা তারা করতে পারে না। এই অসাধু যোগাযোগ বন্ধ না করে বিমুদ্রাকরণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কারণ নতুন নোট ছাপার পরেও একইভাবে তা জাল হতে পারে।

কালো টাকা বা কালো সম্পত্তি কি নেই ? অবশ্যই আছে। বিপুল পরিমাণেই আছে। কিন্তু মোদী যেভাবে বোঝাতে চেয়েছিলেন - সিনেমায় যেভাবে দেখানো হয় - কালো টাকা আলমারীতে বা সিন্দুকে পাঁজা করে করে ভরে রাখা থাকে, তেমনটা আদৌ নয়। কালো টাকা বা কালো সম্পদের বিষয়টি, অর্থাৎ যে সম্পদের জন্য সরকারকে কর দেওয়া হয় নি, তা কীভাবে থাকে তা একটু বুঝে নেওয়া যাক।

যে কোনও আয়ের একাংশকে যখন আমরা সঞ্চয় করি, তখন সেই সঞ্চয়ের মাধ্যমে থাকে জমি বাড়ি ফ্ল্যাট, সোনা, শেয়ারে বিনিয়োগ ইত্যাদি। এর পাশাপাশি কিছুটা থাকে নোট হিসেবে। অর্থাৎ গোটা সঞ্চয়ের একটা অংশমাত্র নোটে থাকে। ভারতের জিডিপি ১৫০ লক্ষ কোটি টাকার মতো হলে অনুমান এর ৬২ শতাংশ হল কালো অর্থনীতি, যার পরিমাণ হবে ৯৩ লক্ষ কোটি টাকার মতো। এটা জমতে থাকে এবং সম্পদে পরিণত হয়। কালো সম্পদের পরিমাণ হবে ৩০০ লক্ষ কোটি টাকার মতো। এর মাত্র এক শতাংশ, তিন লক্ষ কোটি টাকার মতো নোটে থাকা সম্ভব।

এই তিন লক্ষ কোটি টাকার পুরোটাকেও যদি পাকড়াও করা যায়, তাও কালো সম্পদের মাত্র এক শতাংশকে পাকড়াও করা যাবে। বাস্তবে সেটাও সম্ভব নয়। কারণ নোট বাতিলের দিন ভোর রাত অবধি সোনার দোকান খোলা ছিল আর সেখানে ব্যাকডেটে কেনাবেচা হয়েছে। জনধন যোজনায় প্রচুর টাকা ফেলা হয়েছে পরে তুলে নেওয়া হবে বলে। ক্ষমতাবানেরা সাময়িকভাবে বিভিন্ন লোকের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে রেখেছে যাতে টাকাটা নষ্ট না হয়। অনেকে কর্মীদের বেশ কয়েক মাসের মাইনে আগাম হিসেবে দিয়ে দিয়েছে। এর ফলে শেষমেষ পঞ্চাশ থেকে সত্তর হাজার কোটি টাকার বেশি কালো টাকা উদ্ধার করা যাবে না বলে অরুণ কুমার সহ অনেক কালো টাকা বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদই ডিমানিটাইজেশন প্রক্রিয়া চলাকালীন মত প্রকাশ করেছিলেন। এখন আমরা দেখছি পরিমাণটা তার চেয়েও অনেক কম। যে টাকা ফিরেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে তার মধ্যে আয়কর ইত্যাদি না দেওয়া টাকা আইনী প্রক্রিয়ায় ও তদন্তের মাধ্যমে বাজেয়াপ্ত করলে হয়ত এই অঙ্কটায় পৌঁছানো যাবে।

এই প্রসঙ্গে যেটা আবারো নতুন করে বলার, তা হল - এক বছরে খানিকটা কালো টাকা উদ্ধার করে প্রকৃতপক্ষে খুব বেশি লাভও হবে না। কারণ কালো টাকা যে পদ্ধতিতে জন্ম নেয়, সেই পদ্ধতিটা আটকাতে না পারলে কালো টাকা আগের মতোই তৈরি হতে থাকবে নিয়ম করে। ড্রাগের ব্যবসা আটকানো, ক্যাপিটেশন ফি নেওয়া বন্ধ করা, ব্যবসার লাভ ক্ষতির অঙ্কর হিসেবকে কমিয়ে বাড়িয়ে দেখিয়ে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া – এগুলো আটকাতে না পারলে কালো টাকার উৎপাদনকে আটকানো যাবে না।

ডি মানিটাইজেশন ভারতীয় অর্থনীতির ওপর বড় ধাক্কা কেন ?

ডি মানিটাইজেশনের ঢক্কা নিনাদ মানুষের জন্য প্রচুর দুর্ভোগ ডেকে এনেও কালো টাকার সমস্যা সমাধানেই যে শুধু ব্যর্থ হল তাই নয়, এর মধ্যে দিয়ে অর্থনীতির ওপর নেমে এলো আরো নানা আঘাত এবং সেগুলোর অনেকগুলিই বেশ দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করার মতো।

ভারতে কালো টাকা এবং সাদা টাকা অনেকটাই হাত ধরাধরি করে চলে। রিয়েল এস্টেটের সম্পত্তি (জমি বাড়ি ফ্ল্যাট ইত্যাদি) কেনাবেচা করলে একই সাথে সাদা টাকা এবং কালো টাকা তৈরি হয়। এই নীতি তাই কালো টাকার পাশাপাশি সাদা টাকার অর্থনীতিকেও ভীষণভাবে আঘাত করেছে। বাজারে কোনও জিনিসের চাহিদা ভীষণভাবে কমে গেছে। মলের বিক্রিবাটা যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে বেলুন বিক্রেতার বিক্রি। ছোট ছোট দোকানিদের জিনিস বিক্রিতে সমস্যা হয়েছে। বড় দোকানিরাও মুশকিলে পড়েছেন। অর্থনীতির সঞ্চালনই সমস্যার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

এই প্রক্রিয়ার ফলে আয়ের সঞ্চালনের গতি কমে যায়। এর ফলে কমে বাজারে জিনিসপত্রের চাহিদা। চাহিদা কমায় উৎপাদন কমে। উৎপাদন কমায় কর্মসংস্থান হ্রাস পায় এবং লগ্নীও হ্রাস পায়। লগ্নী কমলে তার প্রতিক্রিয়া হয় দীর্ঘমেয়াদী।

গোটা প্রক্রিয়ায় ফলে বিরাট সংখ্যক মানুষ অর্থনৈতিক পঙ্গুত্বের শিকার হলেন। গ্রামীণ কৃষকেরা বীজ সার কিনতে পারেন নি। মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধারও পান নি। এর ফলে কৃষি উৎপাদন আগামী মরশুমে সঙ্কটের মুখোমুখি হবে।

গরীব মানুষ নোটবন্দি শুরু হবার পরেই বিরাট দুর্ভোগ এর মুখোমুখি হয়েছেন। মধ্যবিত্তরা, যাদের কাছে ডেবিট কার্ড ক্রেডিট কার্ড আছে, তারা তুলনায় কম সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু যেই উৎপাদন কমতে শুরু করবে তাদের চাকরি সঙ্কটে পড়বে।

কালো টাকার মোকাবিলা করার আসল রাস্তা কোনগুলো ?

কালো টাকার সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যান্য অনেক রাস্তা নেওয়ার ছিল। এই কালো টাকা সত্তর বছর ধরে তৈরি হয়ে আসছে এবং এক মুহূর্তে কোনও এক জাদুদণ্ড বুলিয়ে তা নির্মূল করা সম্ভব নয়। গোটা ব্যবস্থাকে দায়বদ্ধ করে তোলার জন্য লোকপাল নিয়োগ করা সম্ভব। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা – এরা দায়বদ্ধ নয়। এদের দায়বদ্ধ করে তোলার মধ্যে দিয়েই কালো টাকাকে ধ্বংস করা সম্ভব।

রাজনৈতিক দলগুলির আয়ের ক্ষেত্রে আর টি আই কে প্রসারিত করা দরকার। কিন্তু তারা তাতে রাজী নয়। প্রয়োজন হুইসল ব্লোয়ার আইনকে দৃঢ় করা। যারা দুর্নীতি ফাঁস করে দেবে, দেয় – সেই হুইসল ব্লোয়ারদের পক্ষে আইনকে শক্ত করার পরিবর্তে তাকে আরো দুর্বল করা হচ্ছে। অথচ আদর্শ আবাসন কেলেঙ্কারি বা ব্যাপম কেলেঙ্কারির কথা হুইসল ব্লোয়ারদের মাধ্যমেই জানা গেছে। হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা লেনদেন এর খবর গোয়েন্দাদের কাছে থাকে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করা হয় না।

১৯৯৭ সালে ষষ্ঠবারের মতো এককালীন ভলিন্টিয়ারী ডিসক্লোসার স্কিম আনা হয়েছিল। সেই সময়ে সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বলতে বাধ্য হয়েছিল এরকম স্কিম আর কখনো আনা হবে না। কারণ এতে সৎ আয়করদাতারা বঞ্চিত হন। ১৯৯৭ সালের ভলিন্টিয়ারি ডিসক্লোসার স্কিম সম্পর্কে ক্যাগ রিপোর্ট বলেছিল অনেকে অভ্যাসগতভাবে কর ফাঁকি দেন। আগে পাঁচবার যারা এই স্কিমের সুবিধে নিয়েছিলেন, তারা ষষ্ঠবারেও নিয়েছেন। তাঁরা অপেক্ষায় থাকেন আবার কবে এই স্কিম আসবে, এবং কর ফাঁকি দিয়ে চলেন। সৎ করদাতারা বঞ্চিত হন। সুপ্রিম কোর্টের হলফনামার জন্য ১৯৯৭ এর পরে আর ভলান্টিয়ারি ডিসক্লোসার স্কিম সরকার আনতে পারে নি। কিন্তু সাম্প্রতিক ইনকাম ডিসক্লোসার স্কিম ভিন্ন নামে একই ধরনের একটা ব্যবস্থা।

মরিসাস পথটিও অনেকটা ভলান্টিয়ারি ডিসক্লোসার স্কিম এর মতো। টাকাকে প্রথমে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর মরিসাস ঘুরে টাকা ভারতে ফেরে এবং তাকে আর কর দিতে হয় না। এভাবেই ব্যবস্থাটার মধ্যেই থেকে যাচ্ছে কালো টাকা ও কালো সম্পদ তৈরির পথ। আমাদের অনেক ভালো ভালো আইন আছে। কিন্তু আমরা সেগুলোকে প্রয়োগ করি না। সেগুলো প্রয়োগ করার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার।

কালো টাকা উদ্ধারের জন্য যা যা করা দরকার তা তো করা হয় না। কিন্তু যেটা করে কালো টাকা উদ্ধার করা সম্ভব নয়, সেটাই করা হল কেন ? কী ছিল এর পেছনে আসল উদ্দেশ্য ? সেই আলোচনা ক্রমশ ঘনীভূত হয়ে উঠছে।

ডিমানিটাইজেশন এর আসল উদ্দেশ্য বা হিডেন অ্যাজেন্ডা কী ছিল?

কালো টাকা কোথায় কীভাবে থাকে তা কি মোদি জানতেন না? জেনেশুনে আম আদমির ওপর দুর্ভোগ নামিয়ে আনা এই পদক্ষেপ কেন, কাদের লাভের স্বার্থে -এই প্রশ্নের উত্তরটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

দেখতে হবে ডিমানিটাইজেশন বা বিমুদ্রাকরণের ফলে লাভ কি কারো হয় নি? সবারই ক্ষতি? তা বলা যাবে না। যাদের লাভ হল তাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর নামে ভূয়সী প্রশংসা আমরা শুনেছি। তাদের দেওয়া পাতা জোড়া বিজ্ঞাপনে থেকেছে প্রধানমন্ত্রীর ছবি। নোট বাতিলের ফলে প্রাথমিকভাবে সবচেয়ে বেশি লাভ হচ্ছে দেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে আছে, সেই আম্বানী আদানি মিত্তল জিন্দল ইত্যাদি কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের। তাঁরা কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে রেখেছেন ব্যাঙ্কগুলো থেকে কিন্তু ফেরৎ দিচ্ছেন না। বিপুল অনাদায়ী ঋণের ভারে ব্যাঙ্কগুলো দেউলিয়া হতে বসেছিল আর তা হলে গোটা দেশের আর্থিক ব্যবস্থাটাই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ত। ব্যাঙ্কগুলোকে বাঁচাতে যারা তাকে ছিবড়ে করে দিচ্ছে, তাদের দিকে আইনি হাত বাড়ালো না সরকার। বাড়াতে পারল না। কেন না তাদের দেওয়া টাকাতেই বিপুল প্রচার করে মোদি সিংহাসনে বসেছেন। তাই শিল্পপতিদের ঋণের ভার ঘুরিয়ে চাপিয়ে দেওয়া হল জনগণের ওপর। জনগণকে ভয় দেখানো হল টাকা বাতিল হয়ে যাবে। কদিনেই ব্যাঙ্কগুলোতে জমা হল সাধারণ মানুষের বিপুল টাকা। ব্যাঙ্কগুলো দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচল। জমা টাকা এখন ক্যাশলেস এর নামে আর ফিরবে না জনগণের ঘরে। এভাবে শিল্পপতিদের হাত না মুচড়েই কৌশলে কালো টাকা উদ্ধারের গল্প ফেঁদে ব্যাঙ্কগুলোকে বাঁচানোর কাজ হাসিল করতে চাইলেন চতুর মোদি।

বড় বড় ঋণ খেলাপী শিল্পপতিদের পাশাপাশি লাভ হয়েছে, হতে চলেছে কাদের ? পেটিএম কোম্পানির। শপিং মলগুলোর। বিগ বাজার, মোর, রিলায়েন্স ফ্রেস, স্পেনসার্স এর মতো একচেটিয়া খুচরো ব্যবসার কারবারিদের,যারা খুচরো ব্যবসায়ে ক্রমশ জাঁকিয়ে বসেছে গত কয়েক দশকে আর অধিকার করে নিতে চাইছে দেশের খুচরো ব্যবসার বিশাল বাজারটা,যার সিংহভাগ এখনো ছোট মাঝারি ব্যবসায়ীদের দখলে আছে। লেসক্যাশ ও ক্যাশলেস ট্রানজাকশান এর প্রায় বিকল্পহীন বন্দোবস্তের মধ্যে দিয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের হটিয়ে খুচরো ব্যবসার বৃহৎ বাজারে একচেটিয়া ব্যবসায়ীদের জাঁকিয়ে বসার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।

সরকার পক্ষ থেকেই ক্রমশ প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে তারা ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। কেনাবেচায় ইলেকট্রনিক কার্ডের ব্যবস্থা,মানি ওয়ালেট এর ব্যবস্থা ইত্যাদির কথা জোরের সাথে বলা হচ্ছে। এর অবশ্যম্ভাবী ফলাফল ব্যবসার ধরণটির পরিবর্তন। হকদোকানদো অসংগঠিত খুচরো ব্যবসা থেকে ক্রমশ সংগঠিতদের একচেটিয়াদের বড় ব্যবসার দিকে সরে যাওয়া। পাড়ার অসংগঠিত ছোট ছোট দোকানের চেহারাটা বদলে শপিং মল, বিগ বাজার, স্পেনসার, রিলায়েন্স ফ্রেস, মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারির আউটলেট এর রমরমা হওয়া। এর সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই হবে ব্যাপক। কারণ সাড়ে চারশো বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৫ লক্ষ কোটি টাকা) মূল্যের ভারতীয় খুচরো ব্যবসা দেশের জিডিপির প্রায় ১৪ শতাংশ,যা চার কোটির বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের উপায়। বস্তুতপক্ষে কৃষির পরে ভারতে এটিই প্রধান জীবিকার ক্ষেত্র। খুচরো ব্যবসা কৃষির পরে ভারতের সবচেয়ে বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের জায়গা। ভারতীয় সমাজে এই পেশা অনেক ক্ষেত্রেই বেঁচে থাকার শেষতম উপায়। বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার মজুর, বেকার যুবক, বৃদ্ধিহার হারিয়ে ফেলা কৃষিক্ষেত্রের বাইরে থাকা উদবৃত্ত গ্রামীণ মানুষ সপরিবার যে খুচরো ব্যবসাকে অবলম্বন করে টিঁকে থাকেন তাকে সামান্যতম আঘাত করার অর্থ দেশে অনাহার মৃত্যুমিছিল ও সামাজিক নৈরাজ্যের পথ খুলে দেওয়া। একদিকে ডিমানিটাইজেশন, অন্যদিকে জিএসটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা হিসেবে ভারতের অর্থনীতির এই জায়গাটিকে পাকাপাকিভাবে বদলে দিতে চাইছে। এখানে আমরা ডিমানিটাইজেশন নিয়েই আলোচনা করলাম, সামগ্রিক ছবিটা বুঝতে এর সাথেই মিলিয়ে পড়তে হবে “জি এস টির নীল নক্সা” সংক্রান্ত আলোচনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০৫
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×